Summary
কাজের উদ্দেশ্য: কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয় করা।
গলনাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি:
- প্রয়োজনীয় উপকরণ: বিকার, মোম, থার্মোমিটার, টেস্টটিউব, স্পিরিট ল্যাম্প।
- মোমের টুকরা টেস্টটিউবে নিয়ে, স্পিরিট ল্যাম্পের ওপর বিকার রাখুন এবং পানির তাপ দিতে থাকুন।
- তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মোম গলতে শুরু করবে। এই তাপমাত্রা হলো মোমের গলনাঙ্ক।
স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি:
- প্রয়োজনীয় উপকরণ: বিকার, পানি, থার্মোমিটার, স্পিরিট ল্যাম্প।
- পানিকে উষ্ণ করে থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।
- যখন পানি ফুটতে শুরু করবে, তখন তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে, যা পানির স্ফুটনাঙ্ক।
আঘাতে ধাতু ও অধাতুর পরিবর্তন:
- লোহার প্লেট ও তামার পাত্র আঘাত করার পর তারা ঝনঝন শব্দ করে কিন্তু ভাঙে না।
- সালফার ও কয়লা সহজেই ভেঙে যায়।
- সাবধানতা: সালফার ও কয়লা ব্যবহার করার সময় নিরাপত্তা চশমা ও হাতমোজা পরা আবশ্যক।
হিমাঙ্ক নির্ণয়ের পদ্ধতি:
- প্রয়োজনীয় উপকরণ: টেস্টটিউব, বিকার, পানি, থার্মোমিটার, স্পিরিট ল্যাম্প।
- মোম নিয়ে বিকারের পানিতে গরম করুন এবং তাপমাত্রা লক্ষ্য করুন।
- যখন মোম জমতে শুরু করবে, তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে, যা মোমের হিমাঙ্ক।
শেখার মূল পয়েন্ট:
- পদার্থ তিন ধরনের: কঠিন, তরল ও বায়বীয়।
- কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক একই। গলনাঙ্ক হলো কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার তাপমাত্রা।
- প্রতিটি তরলের স্ফুটনাঙ্ক আছে, যার মানে হলো তরল থেকে বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার তাপমাত্রা।
কাজ: কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক সম্পর্কে জানা। প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১টি বিকার, মোম, থার্মোমিটার, টেস্টটিউব ও স্পিরিট ল্যাম্প।
পদ্ধতি: টেষ্টটিউবে কিছু ছোটো ছোটো মোমের টুকরা নাও। বিকারটিতে পানি নিয়ে স্পিরিট ল্যাম্পের উপর রাখ। চিত্রের মতো করে স্ট্যান্ডের সাথে আটকিয়ে টেস্টটিউব ও থার্মোমিটার বিকারের পানিতে ডুবাও যাতে এদের কোনটিই বিকারের তলা স্পর্শ না করে বা গায়ে না লাগে। স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে বিকারের তলায় তাপ দিতে থাক। থার্মোমিটারের ও টেস্টটিউবে রাখা মোমের দিকে খেয়াল কর। থার্মোমিটারে কি তাপমাত্রা বাড়ছে? মোমের অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন ঘটেছে? থার্মোমিটারে তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি আসলে মোমের অবস্থা খুব ভালোভাবে খেয়াল কর।

মোম কি গলে যাচ্ছে? মোম গলা শুরু হলে থার্মোমিটারে তাপমাত্রা দেখ। কত আছে তাপমাত্রা? ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস? এই ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো মোমের গলনাঙ্ক। তাহলে যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে রূপান্তরিত হয়, ঐ তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। মোমের মতো প্রতিটি কঠিন পদার্থের একটি গলনাঙ্ক আছে। তোমরা বরফের গলনাঙ্ক নির্ণয় কর।
স্ফুটনাঙ্ক
কোনো পাত্রে পানি নিয়ে তাপ দিতে থাকলে কী ঘটে? পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ফুটতে শুরু করে। যে তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে সেই তাপমাত্রাই হলো এর স্ফুটনাঙ্ক। পানির ন্যায় প্রতিটি তরল পদার্থের একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক আছে। চলো আমরা পানির স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয় করি।
কাজ: পানির স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয়। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি বিকার, পানি, থার্মোমিটার ও স্পিরিট ল্যাম্প।
পানি ফুটতে শুরু করলে থার্মোমিটারের তাপমাত্রা দেখ। এই তাপমাত্রাই হলো পানির স্ফুটনাঙ্ক। এই তাপমাত্রা কত? ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তোমরা ইথার বা স্পিরিটের স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয় করতে পার। তবে জৈবপদার্থ দাহ্য হওয়ায় সরাসরি তাপ দেওয়া যাবে না। একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে পানি নিয়ে তাতে ইথার বা স্পিরিটের বিকারটি রেখে তাপ দিতে হবে। |
আঘাতে ধাতু ও অধাতুর পরিবর্তন
| কাজ: আঘাতে ধাতু ও অধাতুর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ: লোহার প্লেট, তামার পাত্র ও একটি হাতুড়ি। পদ্ধতি: এক হাতে লোহার প্লেট নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত কর। কী ঘটল? লোহার প্লেটটি কি আঘাতের ফলে ভেঙে গেল? একইভাবে তোমরা তামার পাত্রটি নিয়েও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত কর। কী ঘটল? এবার গন্ধক ও কয়লা নিয়ে তাতে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে দেখ। |
লোহার ও তামার প্লেটে আঘাতের ফলে ঝনবান শব্দ হলো এবং ভাঙল না। তাহলে আমরা বলতে পারি যে আঘাতে ধাতব পদার্থসমূহ সাধারণত ঝনঝন শব্দ করে এবং খুব সহজে ভাঙে না। অর্থাৎ ধাতুসমূহ ভঙ্গুর নয়। অপর দিকে সালফার ও কার্বন ভেঙে যাবে এবং ঝনঝন শব্দ হবে না।
সাবধানতা: সালফার (গন্ধক) বা কার্বন (কয়লার ছোটো টুকরা) যেন চোখে না ঢুকে বা হাতে না লেগে যায়, সেজন্য নিরাপত্তা চশমা, হাতমোজা পরে নিতে হবে।
হিমাঙ্ক
আমরা জন্মদিনে বা বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি জ্বালাই। এখানে কী ঘটে? মোমবাতির একটি অংশ পুড়ে আলো দেয় আর আরেকটি অংশ আগুনে গলে মোমবাতির গা বেয়ে পড়তে থাকে যা কিছুক্ষণ পরে আবার জমে কঠিন মোমে পরিণত হয়। তরল মোম থেকে কঠিন মোম হওয়ার প্রক্রিয়া হলো কঠিনীভবন। যে তাপমাত্রায় তরল মোম জমে কঠিন হয়ে যায় তাকে বলে এর হিমাঙ্ক। মোমের ন্যায় প্রতিটি তরল পদার্থের ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে।
| কাজ: হিমাঙ্ক নির্ণয়। প্রয়োজনীয় উপকরণ ১টি টেস্টটিউব, ১টি বিকার, ১টি স্ট্যান্ড, কিছু মোম, পানি, ১টি থার্মোমিটার, স্পিরিট ল্যাম্প, তারজালি, ত্রিপদী স্ট্যান্ড ও ক্ল্যাম্প। পদ্ধতি: টেস্টটিউবে কিছু মোম নাও। বিকারের তিন-চতুর্থাংশ ভরে পানি নাও। ত্রিপদী স্ট্যান্ডের উপর তারজালি রেখে তার উপরে বিকারটি বসাও। টেস্টটিউবটি বিকারের পানিতে চিত্রের মতো করে ডুবাও। স্পিরিট ল্যাম্প দিয়ে মোম পুরোপুরি না গলা পর্যন্ত বিকারের তলায় তাপ দিতে থাক। এবার থার্মোমিটার টেস্টটিউবের ভিতরে প্রবেশ করাও যাতে এর নিচের অংশ গলন্ত মোমে ডুবে থাকে। থার্মোমিটারসহ টেস্টটিউবটি বিকার থেকে তুলে এনে স্ট্যান্ডের সাথে আটকিয়ে রাখ। টিস্যু পেপার দিয়ে টেস্টটিউবটি মুছে ফেল। থার্মোমিটারে তাপমাত্রা খেয়াল কর। যে মুহূর্তে মোম জমে যাওয়া শুরু করল সেই মুহূর্তে তাপমাত্রা কত তা দেখে নাও। |
কত তাপমাত্রায় মোম জমতে শুরু করল? ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস? হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই তাপমাত্রা অর্থাৎ ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসই হলো মোমের হিমাংক। তোমরা মোমের গলনাংকও পেয়েছিলে ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ একটি বস্তুর গলনাংক ও হিমাঙ্ক একই। তোমরা বলতো পানির হিমাঙ্ক কত? শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাহলে পানির গলনাঙ্কও কিন্তু শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কোনো একটি বস্তুর তাপমাত্রা যদি হিমাঙ্কের উপরে থাকে এবং হিমাঙ্ক যদি পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয়, তবে পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রায় বস্তুটিকে রেখে দিলে তা ধীরে ধীরে তাপ হারাতে থাকে, ফলে এর তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কে চলে আসে, তখন এটি কঠিনে পরিণত হয়। যেমনটি মোমের ক্ষেত্রে হয়েছে। মোম যখন তরল অবস্থায় ছিল, তখন এর তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। মোমসহ টেস্টটিউবকে বিকার থেকে তুলে আনায় এটি ধীরে ধীরে তাপ ছেড়ে দেয়। ফলে তাপমাত্রা কমতে থাকে, এভাবে কমতে কমতে যখন তা হিমাঙ্কে পৌঁছায় অর্থাৎ ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আসে, তখন মোম জমে কঠিন অবস্থায় চলে আসে।
এই অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম
• যার ভর আছে ও যা জায়গা দখল করে তাই পদার্থ। অবস্থাভেদে পদার্থ কঠিন, তরল ও বায়বীয় -এই তিন রকম হয়।
• কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি, আয়তন ও দৃঢ়তা আছে। তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকলেও আকার ও দৃঢ়তা নেই।
• বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি, আয়তন ও দৃঢ়তা কোনোটিই নেই।
• মৌলিক পদার্থ ধাতু ও অধাতু এই দুইরকম হয়। ধাতুসমূহ সাধারণত চকচকে হয়। এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করে এবং আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়। ধাতুসমূহ সহজে ভাঙে না।
• অধাতুসমূহ সাধারণত চকচকে হয় না। এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করে না এবং আঘাত করলে বঝনঝন শব্দ করে না। অধাতুসমূহ সহজেই ভেঙে যায়।
• যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়, ঐ তাপমাত্রাই হলো ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক। গলনাংক ও হিমাঙ্ক পরিমাণগতভাবে একই।
• যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়, ঐ তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।
Read more
