যে ছবিটি তৈরি করব তাতে সাদা, লাল, হলুদ, কমলা, বেগুনি প্রভৃতি নানা রঙের ফুল থাকবে, আর থাকবে সবুজ পাতা ও ডাটা। থাকবে ফুলদানি, তাই নানা রঙের তুলার প্রয়োজন। পানিতে গোলানো যায় এ রকম পাউডার রং বাজারে পাওয়া যায়। যদি প্রয়োজনীয় সব ধরনের রং না পাওয়া যায় তাহলে এক রঙের সাথে অপর রং মিশিয়ে প্রয়োজনমতো রং তৈরি করে নিব। লাল ও হলুদ মিলিয়ে কমলা রং পাব, লাল ও নীল মিলিয়ে পাব বেগুনি রং। বাজারে যে সবুজ রং পাব তা গাছের পাতার সবুজ রং নয়। এই সবুজ রঙের সাথে সামান্য একটু লাল রং মিশিয়ে দিলে গাছের পাতার সবুজ রং হবে। ছবিতে যতগুলো রং ব্যবহার করব তার সব কয়টি রঙের তুলা আগেই রং করে শুকিয়ে রাখব।
তুলা দিয়ে যে ছবিটি তৈরি করব, এবার পেনসিল দিয়ে কাগজে তার ছবি আঁকি। তুলার ছবি যত বড়ো করব কাগজের ছবি ঠিক তত বড়ো করে আঁকব। ছবিতে বিভিন্ন রঙের ফুল থাকবে, তাই ফুলগুলো হবে বিভিন্ন জাতের ও ছোটো বড়ো বিভিন্ন আকারের। বিভিন্ন জাতের ফুলের পাতাও হবে বিভিন্ন আকার আকৃতির। এসব বিষয় মনে রেখে ছবিটি আঁকি। কার্বন কাগজের কালি বিছিয়ে তার ওপর পেনসিল দিয়ে আঁকা ছবিটি বসাই। ক্লিপ বা আলপিন দিয়ে কাগজগুলো একসাথে আটকিয়ে নেই, যাতে নাড়াচাড়া করলেও সরে না যায়। এবার ছবির ওপর দিয়ে প্রত্যেকটি রেখা ধরে পেনসিল চালিয়ে ছবিটি এঁকে নিব। কার্বন কাগজের ওপর বিছানো কাগজে উল্টো হয়ে ছবির ছাপ পড়ে গেছে। এ রকম আরও দু-তিনটি উল্টো ছবির ছাপ দিব। পেনসিলে আঁকা ছবিটিতে রং দিয়ে ঠিক করে নেব তুলার তৈরি ছবিতে কোন ফুলের কী রং হবে? ফুলদানির রং কী হবে? পাতার রং কেমন হবে?
আলাদা আলাদাভাবে কেটে রাখা এক এক ভাগ কাগজ নিই। ছবির ছাপের উল্টো পিঠে ময়দার আঠা লাগিয়ে নির্দিষ্ট রঙের তুলা প্রায় ১ সেমি. পুরু করে বসিয়ে চাপ দিই, যাতে ভালো করে লেগে যায়।
কাগজের সব কয়টি টুকরো এভাবে তুলা লাগিয়ে একটু শুকিয়ে নিই। ছবির চারপাশে বেশকিছু জায়গা থাকবে। এমনি মাপের এক টুকরো শক্ত পিচবোর্ড এবং পিচবোর্ডের চাইতে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ৫ সেমি. করে বড়ো এক টুকরো কালো রঙের ভালো কাপড় নিই। কাপড় ভালো করে ইস্ত্রি করা প্রয়োজন, যাতে কুঁচকানো না থাকে। কাপড়ের ওপর পিচবোর্ড বসিয়ে চার কিনারায় ভালো করে আঠা লাগিয়ে চারপাশের বাড়তি কাগজ ভাঁজ করে বোর্ডের সাথে সেঁটে দিই। খেয়াল রাখব বোর্ডের ওপর কাপড় যেন টান হয়ে থাকে, কোথাও যেন ঢিলা না হয়। এবার তুলা লাগানো কাগজগুলো কার্বন কাগজের ছাপ বরাবর ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে তুলার ফুল, পাতা, ডাঁটা, ফুলদানি ইত্যাদি তৈরি করব।
কাগজে আঁকা রঙিন ছবি দেখে তুলার ফুলদানি, ফুল, পাতা, ইত্যাদি পিচবোর্ড লাগানো কালো কাপড়ের ওপর ছবির মতো সাজাই। ঠিকভাবে সাজানো হলে এক এক অংশ তুলে পেছনের কাগজে ভালো করে আঠা লাগাই এবং আবার ঠিক জায়গায় বসিয়ে চাপ দিয়ে কাপড়ের সাথে সেঁটে দিই। খেয়াল রাখব ছবির অংশগুলো চারদিকে যেন কাপড়ের সাথে ভালো করে লাগে, কোথাও যেন উঠে না থাকে। এবার দেখি, বিভিন্ন রঙের তুলা দিয়ে তৈরি ছবিটি বেশ সুন্দর লাগছে। ফুল ও পাতাগুলো আসল ফুল ও পাতার মতো নরম নরম মনে হচ্ছে! আমরা চেষ্টা করলে এই নিয়মে আমাদের খুশিমতো সুন্দর সুন্দর ছবি তৈরি করতে পারব। ফুলের ভেতর কেশর দিতে চাইলে পাপড়িগুলো আলাদা-আলাদাভাবে কেটে মাঝখানে অন্য রঙের তুলার কেশর বসিয়ে চারদিকে পাপড়িগুলো বসিয়ে দিতে হবে। শুধু ফুল-পাতার ছবি নয়, এই নিয়মে বিভিন্ন রঙের জামা-কাপড় পরিয়ে মানুষের ছবি, পশু, পাখি, গাছপালা প্রভৃতির ছবি তৈরি করতে পারি। তুলা দিয়ে করা ছবি কাচ দিয়ে ফ্রেম করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখলে খুবই সুন্দর দেখাবে।