ধানের বিভিন্ন অংশ নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১) তুষ (Husk) : এটি ধানের বহিরাবরণ। ধানের দুইটি বন্ধ্যা গুম, লেমা ও প্যালিয়া একত্রে মিলে তুষ তৈরি হয়। ধানের বহিরাবরণ বা খোসা ছেটে তুষ বের করে নিলে লাল আবরণসহ চালের দানা পাওয়া যায়। তুষ মানুষের ভক্ষণযোগ্য নয় ।
২) কুঁড়া (Bran) : চালের বহিরাবরণকে কুঁড়া বলে। ধানের তুষ বের করে নেওয়ার পর চাল বা দানার উপরের লাল ও খুবই পাতলা আবরণ ছাঁটাই করলে তা কুঁড়া হয়ে বেরিয়ে আসে। এই আবরণ সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। এই আবরণসহ চাল খেলে সেলুলোজের জন্য শরীরে খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণে বাধা ঘটে। সেজন্য কুঁড়া ছেটে বাদ দেওয়া হয়।
(৩) অ্যালুরেন স্তর : তুষ ও কুঁড়া বের করে নেওয়ার পরও চালের উপর হালকা বাদামি রঙের গুঁড়ার মতো যে স্তরটি থাকে তাকে অ্যালুরেন স্তর বলে। এই স্তরের জন্য চাল আকাড়া থাকে। আকাড়া চাল সহজে শোষিত হয় না। অ্যালুরেন স্তরে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ থাকে। ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গালে চালের উপর এই স্তর থেকে যায়। কিন্তু মেশিনে ধান ছাঁটাই করলে অ্যালুরেন স্তর আলাদা হয়ে চাল সাদা ও মসৃণ হয় । অ্যালুরেন স্তর আলাদা হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে চালের ভিটামিন ও প্রোটিন কমে যায়।
(৪) শস্য (Endosperm) : ধানের মূল দানাই হচ্ছে শস্য বা এন্ডোসপার্ম। এটি ধানের ৭৫ ভাগ অংশ । চালের দানার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ হচ্ছে ৭৭-৭৯% শ্বেতসার। এন্ডোসপার্মের প্রান্তদেশে আয়োডিন, প্রোটিন এবং সামান্য লৌহ থাকে ।
(৫) ভ্রূণ (Embryo) : চালের দানার নিম্ন প্রান্তে অর্থাৎ বোঁটার দিকের প্রান্তে অবস্থিত ভ্রূণ খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ। ভ্রূণে ভিটামিন-ই, রিবোফ্লোভিন, থায়ামিন, নায়াসিন, লৌহ এবং স্নেহ পদার্থ থাকে ।
চালের পুষ্টিমান : চালের পুষ্টি উপাদানের মধ্যে বেশিরভাগই শ্বেতসার যা চালের ভিতরের দিকে বা সস্যল অংশে থাকে। কিন্তু চর্বি, আঁশ এবং খনিজ লবণ থাকে দানার বাহিরের দিকে। চালে আমিষের ভাগ গম বা ভুট্টা থেকে কম থাকে। কলে ছাঁটা ও ঢেঁকি ছাঁটা চালের পুষ্টিমান নিম্নে দেওয়া হলো—
সারণি : চালের পুষ্টিমান (শতকরা হারে)
চালে আমিষের পরিমাণ শতকরা গড়ে ৭.৫ ভাগ এবং চালের আমিষের জৈবিক মান কম-বেশি ৬৮ ভাগ । অর্থাৎ চালে যে আমিষ থাকে দেহ তার ৬৮ ভাগ কাজে লাগাতে পারে। চালে ১৭টি অ্যামাইনো এসিড থাকে। এর মধ্যে অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিড-গুলো হলো- আইসোলিউসিন, লিউসিন, লাইসিন, ফিনাইল- এলানিন, মেথিওনিন, থায়ামিন, ট্রিপ্টোফেন, ও ভ্যালিন। শর্করা ও আমিষ ছাড়াও চাল ‘বি’ পরিবারের কয়েকটি ভিটামিন যথা- ‘বি১' (থায়ামিন), বি২ (রিবোফ্লোভিন), নায়াসিন ও ফলিক এসিড এবং লৌহের ভালো উৎস। ধানের বিভিন্ন অংশে উক্ত চারটি ভিটামিন ও লৌহের পরিমাণ দেখানো হলো-
ধানের পুষ্টি অপচয় : যে প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশে ধান কলে ছেটে চাল তৈরি ও চাল থেকে ভাত, রান্না করা হয় তাতে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের প্রায় সবটুকুই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য আমাদের দেশের লোকজন পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল পুষ্টির দিক দিয়ে উন্নত কিন্তু শ্রমসাধ্য বিধায় কৃষকেরা ধান ঢেঁকিতে না ভেঙে কলে ভাঙাতে ইচ্ছুক। কলে ও ঢেঁকিতে ভাঙানো সিদ্ধ ও আতপ চালে প্রাপ্য তিনটি ভিটামিন ও লৌহের পরিমাণ নিচের সারণীতে দেখানো হলো ।
সারণি : আতপ ও সিদ্ধ ধান থেকে কলে ও ঢেঁকিতে ভাঙানো চালে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান (মিলিগ্রাম ১০০ গ্রামে)
আরও দেখুন...