প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন নাগরিক সেবা পাওয়া আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক সহজ। যে কোনো নাগরিক সেবাই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের অনেক সেবা বিভিন্ন অ্যাপ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রদান করে, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেবা প্রাপ্তির অবস্থা জানা যায়। সেবা নেওয়ার জন্য আমরা এখন সহজেই জানতে পারি আমাকে কী করতে হবে, কে সেবাটি দিবে, কতদিনের মধ্যে দেওয়া হবে ইত্যাদি। যিনি সেবা দিচ্ছেন আর যিনি নিচ্ছেন সকলেই ডিজটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হতে পারছি সেবাটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতা শেষে আমরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করব যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এমন তথ্য সংরক্ষণ করব।
নুজহাত জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য এবছর যোগ্য হয়েছে, তাই এবছর তার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার জন্য তাকে নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে বলা হলো। তার ছবি তোলার পর একটি ফর্মে সে সব তথ্য লিখে জমা দিয়ে এলো। কিছুদিন পর তার বাবার মোবাইল নম্বরে মেসেজ এলো যে তার জাতীয় পরিচিতি নম্বর সম্পন্ন হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় পর তাকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে, এবং অনলাইনে একাউন্ট নিবন্ধন করে সে এখনই ডাউনলোড করতে পারবে। বাবার সহায়তায় জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করে নিজের ছবিসহ তার পরিচয়পত্রটি দেখতে পেয়ে সে আনন্দে আত্মহারা! সে নিজের ছবিসহ তার পরিচয়পত্রটি দেখতে পাচ্ছে।
সেটা সে ডাউনলোডও করে ফেলল। কিন্তু পরক্ষণেই একটা ভুল চোখে পড়ায় তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বাবার নামের বানানে ভুল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে তো তথ্য ফর্মে সব তথ্য ঠিকই দিয়েছিল, তাহলে কি যারা তথ্য টাইপ করেছিলেন তারাই ভুল করলেন? পরের দিন নুজহাতের বাবা নির্বাচন অফিসের তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারলেন যে এটার সংশোধন ওয়েবসাইটে তার একাউন্টে গিয়েই সম্ভব। কিন্তু এই সেবাটা পেতে গেলে মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। নুজহাতের বাবা ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী ভুল সংশোধনের আবেদন করেন।
এজন্য আবেদনের সাথে কিছু প্রমাণও দাখিল করতে হয়। কিছুদিনের মাঝে মেসেজের মাধ্যমে নুজহাত জানতে পারল যে তার সংশোধনের আবেদন উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ায় অনুমোদিত হয়েছে। ওয়েবসাইটেও তার সংশোধিত পরিচয়পত্রটি পাওয়া গেল। সে এখন ভীষণ খুশি!
উপরের ঘটনাটিতে নুজহাতের একটি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আনন্দ ও উদ্বিগ্নের কারণ জানা গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল প্রযুক্তিই তার কাজকে খুব সহজ করে দিলো এবং সে তার কাঙ্ক্ষিত সেবাটি পেল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নুজহাত সেবাটি পেতে কী কী ধাপে কাজটি সম্পন্ন করল তা নিচের ঘরে আমরা প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে লিখে ফেলি।
|
ছক- ৩.১: সেবার গ্রহণের ধাপ
এই ধাপগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে সন্তুষ্ট হয়েছে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে উদ্বিগ্ন ছিল। এবার আমরা নিচের চিত্রে নুজহাতের সেবা পাওয়ার যাত্রায় যে যে ধাপে সন্তুষ্ট হয়েছে তার পয়েন্টগুলো উপরে আর যে যে ধাপে উদ্বিগ্ন হয়েছে তার পয়েন্ট নিচে চিহ্নিত করে সেবা গ্রহণের অভিজ্ঞতাটা দেখাব। এখানে দুইটি ধাপ দেখানো হয়েছে, বাকিগুলো আমরা করি...
জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন একটি নাগরিক সেবা। এই সেবাটিকে সহজ করার জন্য প্রায় প্রতিটি ধাপেই একজন নাগরিক জানতে পারছেন তার সেবাটি পাওয়ার জন্য তিনি কোন পর্যায়ে রয়েছে আর এজন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু উপরের ঘটনাতে সম্পূর্ণ সেবাটি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল না বলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেবাটি নিতে একজন নাগরিক সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাহলে এখান থেকে আমরা চিহ্নিত করি যে এই সেবাটির কোন কোন স্তরে নন ডিজিটাল আর কোন কোন স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল। তবে এখনো সকলের সুবিধার জন্য সকল নাগরিক সেবা সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজড করা হয়নি।
নন-ডিজিটাল | ডিজিটাল |
|
|
ছক- ৩.২: নাগরিক সেবার বিভিন্ন ধাপে ডিজিটাল ও নন ডিজিটাল মাধ্যম
আগের সেশনে আমরা দেখেছি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক সেবা কতটা সহজ হয়। সহজ হওয়ার কারণ হলো আমরা জানতে পারছি যে আমরা কীভাবে একটি সেবার জন্য আবেদন করতে পারি, কীভাবে সেবাটি পাব, আবেদন করার পর সেবাটি কোন পর্যায়ে আছে ইত্যাদি। তার মানে সেবা সম্পর্কিত সকল তথ্য ও কাজ আমাদের কাছে খুবই স্বচ্ছ। শুধু তাই নয় সেবা সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য আমরা সহজেই জানতে পারছি। সেবা প্রদানকারী সংস্থাও আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে কীভাবে আমরা সেবাটি সহজে পেতে পারি। অর্থাৎ ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে।
স্বচ্ছতা সাধারণভাবে স্বচ্ছতা বলতে নাগরিকের জন্য কোনো সেবা দিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটা জানার অধিকার বোঝায়। এভাবেও বলা যায় যে স্বচ্ছতা হলো একজন নাগরিক যে সেবা দাবি করছেন বা পাবেন তার সকল তথ্য প্রবাহ অবাধ করা এবং তথ্য জানার অধিকার উন্মুক্ত করা। এই তথ্য প্রবাহ দেশের সকল স্তরের জনগণের কাছে সহজবোধ্য করা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য আইনও রয়েছে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে সকল নাগরিকের কাছে সকল সেবা পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ রাখা হয়েছে।
জবাবদিহিতা সকল প্রতিষ্ঠান নাগরিকের নিকট এবং সার্বিকভাবে জনসাধারণের নিকট তাদের কাজকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে এবং জবাবদিহি করবে। যে প্রতিষ্ঠান যে সেবা দিবে তা সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে দিবে এবং এজন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের সকলে সেবার আবেদনকারীর কাছে দায়বদ্ধ। যিনি সেবা নিতে আসবেন তার সকল ধরনের সেবা দ্রুত কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় সেজন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের সকলে নিয়োজিত। এজন্য সেবা নিতে আসা ব্যক্তির আবেদন কোন অবস্থায় আছে এবং কখন তা সম্পন্ন করে তা বুঝিয়ে দিবে, তার জন্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি জবাবদিহি করতে বাধ্য। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল নাগরিকের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন আরও সহজ হয়েছে। |
তথ্য ছক- ৩.১: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
দিনিয়াতের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে আগামী মাসেই। যেহেতু এখনো তার বয়স আঠারো হয়নি, তাই তার মাকেই অনলাইনে একাউন্ট খুলে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হচ্ছে। একটি একাউন্ট থেকে একাধিক পাসপোর্টের আবেদন করা যায়, তাই তার বোন আর মায়ের পাসপোর্টের আবেদনও একই সাথে করা হবে।
শুরুতে দিনিয়াতের মা ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশনাগুলো ভালোমতো পড়ে নিলেন। ই-পাসপোর্টের জন্য কী কী তথ্য লাগবে তা আগেই জেনে নেওয়ায় অনলাইন আবেদনের আগেই তিনি সকল তথ্য হাতের কাছেই রাখলেন। এজন্য দিনিয়াতের মা ধাপে ধাপে সকল তথ্য পূরণ করে নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দিলেন। দিনিয়াত খুবই অবাক হলো যে এখন রাতের বেলায়ও তার মা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি জমা দিলেন যেটা পাঁচ বছর আগেও নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে তার বাবাকে জমা দিতে হয়েছিল। আরও ভালো লাগল যে তার মায়ের মোবাইলে অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার সাথে সাথে একটি মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হলো যে কোন দিন ও কখন তার ই-পাসপোর্টের ছবি তোলার জন্য যেতে হবে।
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হলো। তবে একই দিনে অনেক আবেদনকারী বায়োমেট্রিক্স তথ্য দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে আসায় অনেক ভিড় ছিল এবং নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে তাদের তথ্য দেওয়ার জন্য ডাক পড়ে। এজন্য কাজ শেষে দিনিয়াত কিছুটা ক্লান্তও হয়ে পড়ে। পাসপোর্ট অফিসে সব বায়োমেট্রিক্স তথ্য দেওয়া সম্পন্ন করে বাসায় ফিরে আসতেই ম্যাসেজে জানতে পারল কবে কোথা থেকে তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
নির্দিষ্ট দিনে দিনিয়াতের মা পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমার রশিদ জমা দিলে তাকে একটি সিরিয়ালের টোকেন দেওয়া হলো। নির্দিষ্ট কাউন্টার হতে তার মায়ের সিরিয়াল অনুযায়ী ডাক এলে তিনি দিনিয়াত ও তার বোনকে নিয়ে কাউন্টার হতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করলেন। পাসপোর্ট গ্রহণ করতেও দিনিয়াতকে অনেক ভিড় ঠেলে সামনে যেতে হয়েছে, তাই বাসায় এসে সে খুব ক্লান্ত হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সকল নাগরিক এখন ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন। ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যাতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ থাকে। এই ইলেকট্রনিক চিপের মধ্যে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে যেখানে পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ব্যক্তির ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের মণির বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল তথ্য ও ১৮ বছর বয়সের নিচের ব্যক্তির জন্য জন্ম নিবন্ধনের তথ্য পাসপোর্টে দেওয়া হয়। |
তথ্য ছক-৩.২: ই-পাসপোর্ট
দিনিয়াতের ই-পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হলো তা নিচের ঘরে লিখি...
|
ছক-৩.৩: ই-পাসপোর্ট পাওয়ার বিভিন্ন ধাপ
উপরের ঘটনায় একটি ই-পাসপোর্ট করতে প্রতিটি ধাপে একজন নাগরিকের সেবা পাওয়ার জন্য যেসব স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো হলো-
আবার যেসব জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো হলো-
এবার ডিজিটাল মাধ্যমে পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদনের জন্য ব্যবহৃত ওয়েবসাইটের ছবিতে গোল চিহ্ন দিয়ে স্বচ্ছতা ও চতুর্ভুজ চিহ্ন দিয়ে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করি।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূলত: একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত। আমরা যখন কোনো তথ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে চাই তা অবমুক্ত রাখাটা যেমন স্বচ্ছতার পর্যায়ে পড়ে, ঠিক সেই সেবা গ্রহণের প্রতিটি ধাপে আমাকে জানানোর দায়িত্ব হলো সেই প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানকারী সংস্থার জবাবদিহিতার অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা মানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল মাধ্যমে এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় সবচেয়ে কার্যকরভাবে, কেননা এখন প্রতিটি নাগরিকই কম-বেশি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা পোর্টালে তাদের সেবা সম্পর্কিত সকল তথ্য উন্মুক্ত রাখা আছে। কোথায়, কার কাছ থেকে, কী প্রক্রিয়ায়, কতদিনের মধ্যে একটি সেবা পাওয়া যাবে তা খুব সহজে বোঝা যায়। এভাবে তথ্য উন্মুক্ত রাখার পদ্ধতিকে সিটিজেন চার্টার বলে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত কীভাবে করতে হবে তার জন্য সরকারি নীতিমালা রয়েছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে 'তথ্য অধিকার আইন ২০০৯' প্রণীত হয়।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ২০ নং আইন) |
[এপ্রিল ৬, ২০০৯] |
যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং; যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং; যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে; এবং যেহেতু সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়: |
এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব, যা সকল কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করবে। এই আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল তথ্য নাগরিকের জন্য অবমুক্তকরণে ডিজিটাল মাধ্যম কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। আগের সেশনগুলোতে আমরা দেখতে পেলাম যে নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য কোথায়, কার কাছে, কী তথ্য বা কাগজপত্র নিয়ে গেলে কত টাকা সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে... এসব কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। এত স্বচ্ছতার সাথে যে কোনো নাগরিক সেবা পাচ্ছেন সেটা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের জন্য। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তথ্য অধিকার, তথ্য সংরক্ষণ, তথ্য প্রকাশ, তথ্য প্রদান পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়াদি বলা আছে। তবে এ আইনে এটাও বলা আছে যে আমরা সব তথ্যই আবার প্রকাশ করতে পারব না। কোনো গোপনীয় তথ্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, কারো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে, কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা প্রকাশের আগেই পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর ইত্যাদি তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অবমুক্তকরণ নীতিমালা-২০১৫ অনুযায়ী সকল নাগরিকের জন্য তথ্য পাওয়া সহজ করতে হবে। এজন্য সকল প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদান তথ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। |
তথ্য ছক-৩.৩: তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
নিচের ছকে তথ্য অধিকার আইন অনুসারে আমরা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কী করতে পারি আর কী পারি না তার কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করি-
কী করতে পারি | কী পারি না |
|
|
ছক-৩.৪: তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী করনীয়
এবার আমরা নিজেদের এলাকার স্থানীয় সরকারি সংস্থার একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখে আসব যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সেই ওয়েবসাইটে কী কী তথ্য ও সেবা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
যার যার এলাকার স্থানীয় সংস্থার ওয়েবসাইটের প্রথম পেইজ, অন্যান্য লিংক ও যে কোনো একটি সেবা গ্রহণের পেইজে গিয়ে দেখব যে, কোন কোন ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যে কোনো নাগরিক সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নিচের খালি ঘরে সেসব ক্ষেত্রের তালিকা লিখি-
|
ছক-৩.৫ : ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রসমূহ
এটি মনে রাখতে হবে যে কোনো ওয়েবসাইটে তথ্যসমূহ এখন যেমন দেখছি কিছুদিন পর তেমন নাও থাকতে পারে, প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইট আপডেট বা সংস্কার হয়। নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়, সেবা প্রদানের কৌশল পরিবর্তন হয়, সেবা প্রদানকারী ব্যক্তির পরিবর্তন হয়। তাই সেগুলোও আমাদের লক্ষ রেখে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেবা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি সকল অফিসের এখন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ বা গ্রুপ থাকে যেখানে সকল নোটিশ, অগ্রগতি প্রতিবেদন, প্রয়োজনীয় ফর্ম, বিভিন্ন কার্যাবলির ছবি ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। এমনকি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগও করা যায়। অনেক অফিসে সপ্তাহে প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা যোগাযোগ করা যায়। বেসরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও গ্রাহক সেবাকে সহজলভ্য ও ব্যবহারকারীর জন্য সহজ করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপও চালু করেছে। কিছু কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেইজের অ্যাপে গ্রাহকেরা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমরা এই অভিজ্ঞতায় নিজেদের জন্য একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন করব যেখানে আমাদের ক্লাসের সকল তথ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অন্যদের জন্য উন্মুক্ত রাখব ঠিক যেমন অন্যান্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। শুরুতে খুব সাধারণ একটা ওয়েবসাইট তৈরি করলেও পরবর্তি সময়ে আরও সমৃদ্ধ একটা ওয়েবসাইটও আমরা তৈরি করতে পারব। কিন্তু আমরাতো এখনোও ওয়েবসাইট তৈরী করা জানি না! উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ওয়েবসাইট তৈরি করা এখন অনেক সহজ। এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম বা মাধ্যম রয়েছে যেগুলো দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রীতে খুব সহজেই তৈরি করা টেমপ্লেটে বা ডিজাইনে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়। এজন্য আমাদের প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনায় যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে সেগুলো ছকে উল্লেখ করা হলো:
|
তথ্য ছক-৩.৪: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এমন ওয়েবসাইট/পেইজ তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়াবলি
এসব বিষয় আলোচনার জন্য আমরা দলে কাজ করব। এর বাইরে আরও কোনো বিবেচ্য বিষয় থাকলে তা আমরা দলে অনুসন্ধান করব। উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রত্যেক দল একটি করে ওয়েবসাইট বা পেইজের ডিজাইন করব। নিচে দেওয়া ডিজাইনের মতো করে খাতা বা পোস্টারে নিজেদের প্রতিষ্ঠান বা ক্লাসের জন্য একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন করব। ডোমেইনের নাম, ওয়েবসাইট/প্রতিষ্ঠান/ক্লাসের নাম, মেন্যুর নাম, ছবি/গ্রাফিক্সের বর্ণনা, মেধাস্বত্ব/কপিরাইটের তথ্য ইত্যাদি বিষয়গুলোর সমন্বয়ে কাজটি করব। ওয়েবসাইট ডিজাইনে সব সময় মনে রাখব যে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেন আমাদের কার্যাবলির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
বর্তমান সময়ে অনলাইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে পাবার জন্য ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক বা নাগরিকের কোনো তথ্য পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে খোঁজ করে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই ঐ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। যেমন কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় বিভিন্ন স্কুলের খোঁজ নেওয়ার জন্য স্কুলগুলোর ওয়েবসাইটে খোঁজ নেয়। এছাড়া অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নোটিশ এবং বিভিন্ন তথ্যের জন্য ওয়েবসাইটে খোঁজ করে। তাই আগের সেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা একটি ওয়েবসাইট কীভাবে বানানো যায় তা অনুশীলন করব। তার আগে ওয়েবসাইট তৈরির বিভিন্ন খুঁটিনাটি আমরা একটু জেনে নিই।
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য দুইটি জিনিসের ধারণা থাকতে হবে, প্রথমটি হলো ডোমেইন নাম এবং দ্বিতীয়টি ওয়েব হোস্টিং। ডোমেইন নাম হলো একটি ওয়েবসাইটের নাম যেমন- youtube.com, google. com, Wikipedia.org ইত্যাদি যা দিয়ে সবাই ওয়েবসাইটটিকে চিনে বা কাউকে যদি কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে বলা হয়, তাহলে ওয়েবসাইটটির ডোমেইন নাম দিয়ে খুঁজলেই সহজে প্রবেশ করা যায়। ডোমেইন নাম ক্লায়েন্ট কম্পিউটারকে ওয়েবসার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস (যেমন- 180.102.434.8) থাকে। কিন্তু এধরনের সংখ্যা বা নিউমেরিক ভ্যালু মনে রাখা মানুষের জন্য কষ্টকর বিধায় এই আইপি অ্যাড্রেসকে নির্দিষ্ট ডোমেইন নাম বা ক্যারেক্টার দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। ডোমেইন নাম এর দুইটি অংশ থাকে সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন এবং টপ লেভেল ডোমেইন, যেমন- youtube.com-এর youtube হচ্ছে সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন এবং .com হচ্ছে টপ লেভেল ডোমেইন। তাছাড়াও টপ লেভেল ডোমেইন আরও হতে পারে- .net, .org, .info, .gov, .edu ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশের নামেও টপ লেভেল ডোমাইন (ccTLD) রয়েছে, যেমন.bd বাংলাদেশের জন্য: .us যুক্তরাষ্ট্রের এর জন্য; uk যুক্তরাজ্যের জন্য ইত্যাদি। আবার একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামের অংশ যে কয়টি থাকতে পারে সেভাবে লেভেল হবে। যেমন- টপ লেভেল, সেকেন্ড লেভেল, থার্ড লেভেল ইত্যাদি (www.example.gov.bd)। এখানে টপ লেভেল ডোমেইন.bd-এর আওতায় সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন হচ্ছে .gov এবং.gov.bd-এর আওতায় থার্ড লেভেল ডোমেইন হলো example.
চলো নিচের দেওয়া ছকটি আমরা পূরণ করি-
ওয়েসসাইটের ডোমেইন নাম | সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন | টপ লেভেল ডোমেইন | কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন |
www.moedu.gov. bd | |||
www.nubd.info | |||
www.microsoft. com | |||
www.oecd.org | |||
www.gov.uk | |||
www.du.ac.bd |
ছক-৩.৬: বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন চিহ্নিতকরণ
এবার আমরা জানব ওয়েব হোস্টিং কী-
একটি ওয়েবসাইটে নাম ছাড়াও বিভিন্ন ডকুমেন্ট থাকে, যেমন-ছবি, বিভিন্ন তথ্য, ভিডিও ইত্যাদি। এছাড়া ওয়েবসাইটটি সচল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের কোডিং করা হয়। এই ডকুমেন্টগুলো এবং কোডগুলো নিশ্চয়ই কোথাও সংরক্ষণ করে রাখতে হয়েছে। কোনো এজেন্সি অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই ডকুমেন্ট এবং কোডগুলো সংরক্ষণ, সংগ্রহ, বিতরণ এবং মেরামতের যে অনলাইনভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে তাই ওয়েব হোস্টিং নামে পরিচিত। এই ওয়েব হোস্টিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন এজেন্সি অথবা প্রতিষ্ঠান কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং ইন্টারনেটে হোস্ট করার সুযোগ করে দেয়। অনেক বড় পরিসরের ওয়েবসাইট তৈরি ও হোস্ট করার জন্য বিভিন্ন এজেন্সি থেকে ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করে নিতে হয়। তবে বিভিন্ন ওয়েব হোস্টিং এজেন্সি অথবা প্রতিষ্ঠান প্রারম্ভিক স্তরের ওয়েবসাইট তৈরি ও অল্প পরিমাণের ডকুমেন্ট হোস্টিং করার জন্য বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকে। নিচের দুটি ছবিতে যে ডকুমেন্টগুলো ওয়েব হোস্টিং-এ সংগ্রহ করে এবং যে ধাপে ওয়েব হোস্টিং-এর মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইট প্রস্তুত হয়ে ব্যবহারকারী ডিভাইস স্ক্রিনে আসে তা দেখানো হয়েছে।
নিচের ছবিটিতে ওয়েব হোস্টিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসের সম্পর্কগুলো নিচের দেওয়া ছকের ভিতরে লিখি।
|
বিভিন্ন ওয়েব হোস্টিং এজেন্সি তাদের ওয়েবসাইট থেকে ওয়েবসাইট বানানোর ইন্টারফেস প্রদান করে। এই ইন্টারফেসগুলোতে কেউ কোডিং-এর ধারণা ছাড়াও খুবই সহজে কিছু টুল ব্যবহার করেই একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারে। এই সাইটগুলোতে তৈরিকৃত ওয়েবসাইট হোস্টিং করার জন্য বিনামূল্যে কিছু জায়গা দিয়ে থাকে, যেখানে অল্প জায়গা নেয়া ওয়েবসাইট বানানো ও হোস্টিং করার অনুশীলন করা যায়। Google Sites, WordPress, Wix, Squarespace, Weebly, GoDaddy এ রকম কিছু প্ল্যাটফর্ম যারা ওয়েবসাইট তৈরি ও হোস্টিং করার সুযোগ দেয়। এবার আমরা এই সকল ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ সম্পর্কে জেনে নিই।
নাম | লোগো | সুবিধা |
Google Sites | গুগলের এই ফ্রি টুলটির সাহায্যে কোনো রকম কোডিং স্কিল ছাড়াই সহজ ও দৃষ্টিনন্দন ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। এখানে অনেক ব্যবহারকারীবান্ধব ইন্টারফেস। পাওয়া যায়, যেখানে অনেক টেমপ্লেটস, থিমস এবং বিকল্প থাকে যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডিজাইন করা যায়। এখানে খুব সহজেই গুগলের অন্যান্য সার্ভিসও (যেমন-গুগল ড্রাইভ, গুগল ম্যাপ ইতাদি) সংযুক্ত করা যায়। যদিও এটি বিনামূল্যে। ওয়েবসাইট করার সুযোগ করে দেয়, তারপরও এটিতে বিভিন্ন আধুনিক থিম ব্যবহার করে অনেক প্রফেশনাল করা সম্ভব। এর ওয়েব অ্যাড্রেসটি হলো: http://sites. google.com | |
WordPress | এটি একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যা দিয়ে অল্প। টেকনিক্যাল জ্ঞান দিয়েও এখানে কাজ করা সম্ভব। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার, ফরচুন 500 কোম্পানী এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট তৈরিতে এটি ব্যবহার করে। এর দুইটি সাইট রয়েছে- ফ্রি ভার্সনের জন্য wordpress.com এবং পেইড ভার্সনের জন্য wordpress.org ওয়েব অ্যাড্রেস। এটির ফ্রি ভার্সন দিয়ে একাধিক পেইজে কাজ করা যায় এবং পেইড ভার্সন আরও অত্যাধুনিক ফিচার নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে এখানে কাজ শুরু করা সম্ভব। | |
Wix | Wix এর ওয়েব অ্যাড্রেসটি হলো: www.wix. com, এটি আরেকটি ফ্রি ওয়েবসাইট বিল্ডার, এছাড়া এর বিভিন্ন প্রিমিয়াম ও ই-কমার্স প্ল্যান আছে। এখানে ফ্রি লেভেল-এ ফাংশনগুলো খুবই লিমিটেড, তবে পেইড ভার্সনে 500'র মতো টেমপ্লেট ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। এর ড়েগ এন্ড ড্রপ ফিচার ব্যবহার করে প্রারম্ভিক ব্যবহারকারীরা কারিগরি বিশেষ জ্ঞান ছাড়াও কাজ করতে পারবে। ভিজিটর ট্র্যাকিং-এর জন্য এটি কোডিংও প্রকাশ করে থাকে। | |
Squarespace | দৃষ্টিনন্দন ও প্রফেশনাল লুকিং টেমপ্লেট-এর জন্য এটি একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট টুল। যদিও এটি বিনামূল্যে হোস্টিং করার সার্ভিস দেয় না কিন্তু ক্রয়কৃত সার্ভিসের ফিচারগুলো দেখার জন্য ১৪ দিনের ফ্রি ট্রায়াল করার সুযোগ দেয়। নিজের যে কোনো ইমেইল একাউন্ট, জিমেইল বা ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে সাইন আপ করা যায়। ড্যাগ এন্ড ড্রপ পদ্ধতিতে ওয়াবসাইট তৈরি করা যায়। এটি একটি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডেটার অনেক বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেয়, এর ফলে ওয়েবসাইটকে জনপ্রিয় করার জন্য অপটিমাইজ করা যায়। এর ওয়েব অ্যাড্রেসটি হলো: www.square- space.com | |
Weebly | ব্যক্তিগত, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ই-কমার্স সাইটের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য এখানে ফ্রি এবং পেইড বিভিন্ন প্ল্যান আছে। কোনো রকম ওয়েব ডিজাইনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই এখানে সহযে ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ পদ্ধতিতে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। এর ওয়েব অ্যাড্রেস হলোঃ www.weebly.com | |
GoDaddy | এটি প্রাথমিকভাবে ডোমেইন রেজিস্টার এবং হোস্টিং প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত থাকলেও এটি ব্যবহার বান্ধব ওয়েবসাইট তৈরির টুল। এটির কোনো ফ্রি প্ল্যান নাই, তবে সাবস্ক্রিপশন করার পূর্বে এর ফিচারসমূহ এক্সপ্লোর করার জন্য এক মাসের ট্রায়াল করার সুযোগ দেয়। শুরুর দিকে কোনো ডেভেলপারের কোনো রকম টেকনিক্যাল দক্ষতা ছাড়াই এখানে ড়েগ এন্ড ড্রপ পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করতে পারে। এটির ওয়েব অ্যাড্রেস হলো: www.godaddy.com |
তথ্য ছক-৩.৫: মুক্ত উৎসের প্ল্যাটফর্মসমূহ
এবার আমরা কোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারের ওয়েব অ্যাড্রেসগুলো লিখে সার্চ করব। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো এক্সপ্লোর করে যে কোনো ওয়েবসাইট সম্পর্কে নিচের ছকে লিখব।
ওয়েবসাইটের নাম |
ওয়েব অ্যাড্রেস |
ওয়েবসাইটটিতে কী কী তথ্য আছে:
|
ছক-৩.৮: একটি ওয়েবসাইটের কনটেন্ট তালিকা
আগের সেশনে আমরা ওয়েবসাইট তৈরি করার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সাথে পরিচিত হয়েছি। এবার আমরা নিজেরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করব। যেহেতু আমরা প্রথমবার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করব, তাই আমরা মুক্ত উৎসের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করব। এই অভিজ্ঞতায় আমরা দুটি মুক্ত প্ল্যাটফর্মের পরিচিতি দেখব, কিন্তু দলে যখন আমাদের ক্লাসের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করব তখন আমাদের কাছে যেটি সুবিধাজনক মনে হয় সেই প্ল্যাটফর্মেই কাজ করব।
এবার আমরা আমাদের নবম শ্রেণির জন্য নতুন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার ধাপসমূহ অনুসরণ করে কাজ করি:
কাজ-১: Google Sites ওপেন ও টেমপ্লেট পরিচিতি
শুরুতে আমরা একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার (যেমন- Google Chrome) ওপেন করে, অ্যাড্রেস বারে sites. google.com লিখে এই Google Sites-এ প্রবেশ করব।
এর পর একটি Gmail একাউন্ট দিয়ে Sign-in করতে হবে। কারো যদি Gmail একাউন্ট না থেকে থাকে, তবে আগে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে।
Sign-in করার পরে একটি নতুন পেইজে প্রবেশ করব, যেখানে Blank লেখা থাকবে এবং সেখানে একটি প্লাস (+) চিহ্নিত আইকন থাকবে। আইকনটিতে ক্লিক করলে একটি ব্ল্যাঙ্ক ওয়েবসাইট দেখতে পাব। এই ব্ল্যাঙ্ক ওয়েবসাইটটিতে বিভিন্ন তথ্য ও ডকুমেন্ট ইনপুট দেওয়ার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যায়।
আমরা ব্ল্যাংক আইকনটিতে ক্লিক না করে আরও কিছু টেমপ্লেট এক্সপ্লোর করার জন্য, এর উপরে বাম দিকে Template Gallery লেখা জায়গায় ক্লিক করব।
কিছু নির্দিষ্ট করা টেমপ্লেট থেকে Education সেকশনে যাব। যেহেতু আমরা আমাদের নবম শ্রেণির জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বানাব তাই এই সেকশনে Class নামের টেমপ্লেটটি সিলেক্ট করব।
এই টেমপ্লেটটিতে প্রবেশ করে আমরা টাইটেল CLASS NAME টাইটেলটি দেখতে পাব। এখানে Home, Schedule ও Newsletter নামক তিনটি পেইজ রয়েছে এবং ডানপাশে Insert, Pages ও Themes নামক তিনটি অপশন রয়েছে।
Insert নামক অপশনটিতে ক্লিক করে আমরা বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং গুগল-এর বিভিন্ন সফটওয়্যার ওয়েবসাইটটিতে সংযুক্ত করতে পারব।
Themes নামক অপশনটিতে ক্লিক করে আমারা ওয়েবসাইটটির ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারব। Pages নামক অপশনটিতে ক্লিক করে আমরা Home, Schedule ও Newsletter নামক তিনটি পেইজে আমরা প্রবেশ করতে পারব।
কাজ-২: ওয়েবসাইটের নাম, লোগো এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ সেট করা
এবার আমরা Google Sites-এর লোগোর ডান পাশে Site document name-এর জায়গায় আমাদের ডকুমেন্টের নাম লিখব। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে লেখা হয়েছে Anandalok School
এবার টেমপ্লেটটির উপরের বামদিকের কোনায় class name লেখা জায়গায় আমাদের বিদ্যালয়ের নামটি লিখি। উদাহরণস্বরূপ- বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে লেখা হয়েছে Anandalok High School
এর ঠিক নিচে লেখা রয়েছে Add Logo, এবার আমরা এখানে আমাদের বিদ্যালয়ের লোগোটি এড করব। এজন্য আমাদের বিদ্যালয়ের লোগোটি আমাদের কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে সংরক্ষণ করে রাখব। লোগোটির কালারের উপর নির্ভর করে ব্যাকগ্রাউন্ড কালার ঠিক করব, যাতে করে লোগোটি সুন্দর ফুটে উঠে। উদাহরণস্বরূপ - বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে লেখা হয়েছে Anandalok High School এর একটি লোগো এড করা হয়েছে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড কালারটি কালো করা হয়েছে, বিদ্যালয়টির নাম ও লোগোটি সুন্দর করে ফুটে উঠেছে।
এবার আমরা হোম পেইজের মাঝের CLASS NAME নামের হেডার লেখাটিতে আমরা লিখি CLASS NINE। লেখাটিতে আমাদের পছন্দসই লেখার ফন্ট এবং কালার ইউজ করতে পারব। যেমন- বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে CLASS NINE লেখা হয়েছে সবুজ কালার ব্যবহার করে।
এবার আমরা CLASS NINE লেখার পেছনের ইমেজ অপশনে আমাদের বিদ্যালয়ের এ কটি ছবি আপলোড করি। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে Anandalok High School-এর একটি ছবি আপলোড করা হয়েছে।
কাজ-৩ : Class Overview লেখা এবং কিছু ইমেজ আপলোড করা
CLASS NAME-এর নিচে Class Overview অপশনে আমরা আমরা আমাদের বিদ্যালয় এবং আমাদের শ্রেণি সম্পর্কে পরিচিতিমূলক একটি লেখা লেখব, যাতে কেউ ওয়েবসাইটটি সার্চ করলে আমাদের বিদ্যালয় এবং আমাদের শ্রেণি সম্পর্কে একটি ধারণা পায়। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে Anandalok High School এবং নবম শ্রেণির একটি Class Overview লেখে আপলোড করেছেন।
Class Overview-এর নিচে দেওয়া ইনসার্ট ইমেজের দুইটি অপশন থেকে অথবা টেমপ্লেটটির ডানপাশে ইনসার্ট অপশনের ইমেজ থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের ক্লাস নাইনের একটি শ্রেণির এবং শিক্ষার্থীদের একটি ছবি পেইজটিতে আপলোড করি। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে Anandalok High School এর নবম শ্রেণির একটি শ্রেণির ও একটি শিক্ষার্থীদের ছবি আপলোড করা হয়েছে।
কাজ-৪ গুগলের বিভিন্ন সার্ভিস ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করা
টেমপ্লেটটির ডানপাশের ইনসার্ট অপশন থেকে আমাদের স্কুলের মানচিত্রে অবস্থান নির্দিষ্ট করে গুগল ম্যাপ হোম পেইজে ইনসার্ট করব।
আবার একইভাবে ইনসার্ট অপশন থেকে স্কুলের একটি ইউটিউব চ্যানেল সংযুক্ত করব, যদি চ্যানেল না থাকে তাহলে একটি ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করে আমরা হোম পেইজে ইনসার্ট করব।
উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে Anandalok High Schoo-এর গুগল ম্যাপ ও ইউটিউব চ্যানেল আপলোড করা হয়েছে।
কাজ-৫ : শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তালিকা সংযুক্ত করা
আবার টেমপ্লেটটির ডানপাশের ইনসার্ট অপশন থেকে Google Sheets অথবা Google Docs ফাইলে প্রস্তুতকৃত শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের তালিকা হোম পেইজে সংযুক্ত করব। এজন্য আমরা আগে Google Sitesটিতে সাইন-ইন করার সময় ব্যবহৃত Gmail একাউন্ট দিয়ে Google Sheets অথবা Google Docs-এ শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের তালিকা প্রস্তুত করে নিব। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে Google Sheets প্রস্তুতকৃত শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের তালিকা হোম পেইজে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এভাবে আবার ডান পাশের ইনসার্ট অপশন থেকে Social links-এ ক্লিক করে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের লিংক (যেমন- ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি) হোম পেইজে সংযুক্ত করব। যদি বিদ্যালয়টির এই ধরনের কোনো সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট না থেকে থাকে তাহলে আমরা একটি একাউন্ট খুলে নিব এবং সেটির ওয়েব অ্যাড্রেস লিংক পেস্ট করে সংযুক্ত করব। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে আনন্দলোক স্কুলের ফেসবুক লিংকটি হোম পেইজে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কাজ-৬: ক্লাসরুটিন ও একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের একাধিক ছবি আপলোড
Class নামের টেমপ্লেটটির দ্বিতীয় পেইজটির নাম হচ্ছে Schedule। এই পেইজটিতে আমরা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একটি ক্লাস রুটিন আপলোড করব। এজন্য আমরা টেমপ্লেটটির ডানপাশের ইনসার্ট অপশন-এর Images-এ ক্লিক করে কম্পিউটারে ইমেজ ফরম্যাটে সংরক্ষিত নবম শ্রেণির ক্লাস রুটিনটি সংযুক্ত করি। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে আনন্দলোক হাই স্কুলের একটি বার্ষিক পরিকল্পনা এবং নবম শ্রেণির ক্লাস রুটিনটি Schedule পেইজে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আবার Class নামের টেমপ্লেটটির তৃতীয় পেজটির নাম Newsletter। সাধারণত প্রতিমাসে ঘটা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা আয়োজনের ছবি ইনসার্ট করার মাধ্যমে এই নিউজ লেটারটি সাজাতে বলা হয়েছে। আমরা প্রথমে Newsletter এর টেক্সবক্সটিতে একটি মাসের এবং বছরের নাম লেখি। এরপর আমরা আমাদের বিদ্যালয়ে এক মাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আয়োজনের ছবি, Google Sitesটিতে সাইন-ইন করার সময় ব্যবহৃত Gmail একাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল সেটির Drive-এর একটি ফোল্ডারে আপলোড করি। এরপর Newsletter পেজটির Drive আইকন-এ ক্লিক করে সংযুক্ত করি। এরপর ছবিগুলো পেইজটিতে দেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে Newsletter পেজটিতে মার্চ, ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত হওয়া বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চারটি ছবি দেখা যাচ্ছে।
কাজ-৭ : ওয়েবসাইট পাবলিশ করা
আমরা একটি ওয়েবসাইট সফলভাবে ডিজাইন করলাম, এবার আমাদের কাজ হবে ওয়েবসাইটটিকে পাবলিশ করা। পাবলিশ করার জন্য গুগল সাইটের পাবলিশ বাটনে ক্লিক করতে হবে। পাবলিশ করার আগে যদি তুমি চাও কেউ তোমার এই ওয়েবসাইটটিকে দেখে এডিট করে দিবে তাহলে তোমাকে পাবলিশ বাটনের বাঁদিকে শেয়ার উইথ আদার অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। অ্যাড পিপলের ঘরে কারো ইমেইল অ্যাড্রেস লিখে তার সাথে তোমার ওয়েবসাইটটিকে পাবলিশ করার আগে শেয়ার করতে পারো। ওয়েবসাইটটিকে রেসট্রিকটেড রাখতে হবে যাতে করে যে কেউ ইচ্ছার বাইরে এডিট না করতে পারে এবং এর নিচে পাবলিশ সাইটটি পাবলিক করে দিতে হবে যাতে সার্চ করলে ওয়েবসাইটটিকে খুঁজে পেতে পারে।
এরপরে পাবলিশ বাটনটিতে ক্লিক করলে দেখতে পাবে একটি ওয়েব অ্যাড্রেস সাজেস্ট করছে, তুমি এটি ব্যবহার করতে পারো কিন্তু এটির নাম পরিবর্তন করতে চাইলে ডোমেইন কিনে নিতে হবে। যাতে সবাই ওয়েবসাইটটিকে সার্চ করলে দেখতে পায়, সেজন্য সার্চ সেটিং অপশনের চেক বক্সে টিক দেওয়া যাবে না। এবার নিচের পাবলিশ বাটনটিতে ক্লিক করব, দেখব নিচে সফলতার সঙ্গে পাবলিশ করার একটি নোটিফিকেশন দেখাচ্ছে। পাবলিশ বাটনের পাশে ক্লিক করে বিভিন্ন পাবলিশ অপশন দেখতে পাব এবং ভিউ পাবলিশ সাইটে ক্লিক করার মাধ্যমে আমরা আমাদের তৈরিকৃত ওয়েবসাইটটিকে দেখতে পাব। আমরা কোনো ব্রাউজারে অ্যাড্রেস বারে এই ওয়েবসাইটটিকে ডোমেইন নাম দিয়ে সার্চ করলে ওয়েবসাইটটিকে দেখতে পাব। উদাহরণস্বরূপ বইয়ে প্রদত্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে আনন্দলোক হাই স্কুলের তৈরিকৃত ওয়েবসাইটটির ডোমেইন নাম (http://sites.google.com/view/anandalok-high-school/home) দিয়ে সার্চ করলে ওয়েবসাইটটি দেখা যাচ্ছে।
শুরুতে আমরা জেনেছিলাম যে অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেখান থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি তে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। আমরা আগের সেশনগুলোতে গুগল সাইট ব্যবহার করে একটি সাইট তৈরি করা শিখেছি। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস নামক আরেকটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কীভাবে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় তার ধারণাও আমরা নিতে পারি। কেননা, পৃথিবী জুড়ে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে প্রচুর ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরিকৃত এসব ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ ও আপডেট (হালনাগাদ) করতে আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী ও ব্যক্তি আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করছে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের বা ক্লাসের যে কোনো কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যে ওয়েবসাইট তৈরি করব সেটা ওয়ার্ডপ্রেস প্লাটফরম দিয়েও করতে পারি। গুগল সাইট বা ওয়ার্ডপ্রেস অথবা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা নিজেদের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করব।
ওয়ার্ডপ্রেস একটি মুক্ত প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই সহজ এবং এ জন্য নিজেদের মতো করে পেইজ ও মেন্যু যুক্ত করে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।
শুরুতে আমরা ইমেইল, ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একটি একাউন্ট তৈরি করব। পরবর্তীকালে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলে আমাদেরকে নিচের ছবির মতো করে ডোমেইন নাম দিতে হবে। ডোমেইনের নাম অনুযায়ী ওয়েবসাইটের ঠিকানা কেমন হতে পারে তার একটি তালিকা নিচে দেখাবে। সেখান থেকে ফ্রি ডোমেইন নির্বাচন করতে হবে।
ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করলে একটি মেন্যুলিস্ট দেখা যাবে। আমাদের মূলত: মেন্যুর কয়েকটি অপশন যেমন: পোস্টস, মিডিয়া, পেইজ ও অ্যাপিয়ারেন্সে বেশি কাজ করতে হবে।
প্রতিটি অপশনে গেলে আমরা ওয়েবসাইটটি পরিমার্জন বা কাস্টমাইজড করতে পারি। কাস্টমাইজড করার সময় আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় যা যা কনটেন্ট (ছবি, লেখা, রুটিন ইত্যাদি) দরকার তা আগেই কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
Add new page বাটনে ক্লিক করে নতুন পেইজ যুক্ত করা যায়, সেখানে গিয়ে পেইজের ডিজাইনমতো নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য, কনটেন্ট যুক্ত করা যায়। টাইটেল, ইমেজ, ফাইল আপলোড করে Publish বাটনে ক্লিক করে ওয়েবসাইটটিকে আপডেট (হালনাগাদ) করা যায়। তবে একটা বিষয় আমাদের জেনে রাখতে হবে যে কনটেন্ট সংরক্ষণ করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ সুবিধা দেয়। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পেইজের মাধ্যমে গ্রাহকদের
সবশেষে আমরা সবাই আমাদের তৈরিকৃত ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে আমাদের শিক্ষক, বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের জানাব। পরবর্তীকালে আমাদের সকল কাজের ডিজিটাল কনটেন্ট ও নোটিশ এই ওয়েবসাইটে আপলোড করব। ডিজিটাল মাধ্যমে এ ধরনের নাগরিক সেবায় কী করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুযোগগুলো গ্রহণ করতে হবে এবং অন্যদের সেবা দিতে ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করব তা সকলকে অবগত করব। পরবর্তী শ্রেণিতেও আমাদের ক্লাসের সকল তথ্য এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের নিকট অবগত করব যা আমাদের সকল শ্রেণি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারি।
আরও দেখুন...