পরিবেশের উপাদানের আন্তঃসম্পর্ক এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা (পাঠ ৭-৮)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - পরিবেশের ভারসাম্য এবং আমাদের জীবন | NCTB BOOK
833
Summary

পরিবেশে জীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে ক্রমাগত পারস্পরিক ক্রিয়া ও আদান-প্রদান ঘটে। জীবরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং এই নির্ভরশীলতা বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমে প্রকাশ পায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীব হলো তিমি এবং ক্ষুদ্রতম হলো ব্যাকটেরিয়া, আর এসব জীবের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান।

পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে সম্পর্ক এবং আশেপাশের অজীব উপাদানের উপর তাদের নির্ভরশীলতা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। উদাহরণ হিসেবে, উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করে এবং প্রাণীরা শ্বসনের মাধ্যমে শক্তি সংগ্রহ করে। এই দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবমন্ডলে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়।

পর্যবেক্ষণ করে দেখে নাও কিভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের উপর ও অজীব উপাদানের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে মৌমাছির মাধ্যমে উদ্ভিদের পরাগায়ন এবং কীটপতঙ্গের মাধ্যমে বংশবিস্তার উল্লেখ করা যায়। এরকম আরও উদাহরণের মাধ্যমে জীব ও অজীব উপাদানের সম্পর্ক বোঝা সম্ভব।

পরিবেশের সকল অজীব বা জড় উপাদানের সাথে জীব উপাদানসমূহের সবসময়ই পারস্পরিক ক্রিয়া, আদান-প্রদান চলছে। এমনকি জীব পরিবেশে যে উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে, তাদের মধ্যেও চলছে এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। বেঁচে থাকার জন্য এরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কোন অঞ্চলের জীব উপাদান ও জড় উপাদানের নির্ভরশীলতার সম্পর্কে নাম বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম।

পৃথিবীতে যত প্রকার জীব আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো তিমি- এটা তোমরা জান। আর ক্ষুদ্রতম হলো ব্যাকটেরিয়া। বড় থেকে ক্ষুদ্র সকল জীবই কিন্তু পরস্পর পরস্পরের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পর্কিত।
পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক আছে। এদের সাথে আবার বায়ু, মাটি ও পানির যে সম্পর্ক তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছে। এর মধ্যে কোনো প্রক্রিয়া অতি সাধারণ, আবার কোনোটি অতি জটিল।

কাজ: তোমার নিকট পরিবেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ কর। পর্যবেক্ষণের সময় খেয়াল কর বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশে কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আরও খেয়াল কর উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে পরিবেশের অজীব উপাদানের উপর নির্ভরশীল এবং তোমার নোট খাতায় লিখে রাখ। অজীব ও জীব উপাদানের নির্ভরশীলতার প্রবাহচিত্র পোস্টার কাগজে এঁকে শ্রেণিতে প্রদর্শন কর।

জীব জড়ের উপর নির্ভরশীল, আবার একটি জীব অপর একটি জীবের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তোমরা এ বিষয়টি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেমন উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য সৌরশক্তিকে কাজে লাগায়, যা সালোকসংশ্লেষণ নামে পরিচিত। সালোকসংশ্লেষণ (উদ্ভিদ) এবং শ্বসন (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) পদ্ধতি পরিবেশের বিভিন্ন অজীব ও জীবের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রধান দুটি উপায়।
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি ব্যবহার করে গ্লুকোজ এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনে কাজে লাগে। প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এভাবেই সালোকসংশ্লেষণ এবং শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
জীবমণ্ডলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তোমরা জেনেছ, জীব পরিবেশের প্রধান উপাদান হলো উদ্ভিদ ও প্রাণী। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এরা একে অপরের থেকে ভিন্ন। কিন্তু জীবন ধারণের জন্য এরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল।

কোনো কোনো উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটে কীটপতঙ্গের মাধ্যমে। জীবন ধারণের জন্য মৌমাছি যখন ফুলে ফুলে বিচরণ করে, তখনই পরাগায়ন ঘটে। আবার বিভিন্ন প্রাণী যেমন পশু পাখি ইত্যাদির মাধ্যমেও উদ্ভিদের বংশবিস্তার হয়। আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যারা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল। তোমরাও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের নির্ভরশীলতার অনেক উদাহরণ দিতে পারবে। এরকম আরও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উদাহরণ তৈরি কর।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...