একবিংশ শতকের শুরুতেই মানুষের জীবনে যে ব্যাপক পরিবর্তন ও অভিনবত্বের জন্ম নিয়েছে এবং যার প্রভাবে সারা বিশ্ব আজ বৈশ্বিক গ্রাম (Global village) এ পরিণত হয়েছে তার মূলে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আজ থেকে বিশ বছর আগেও এতটা পরিবর্তন হবে মানুষ ভাবতে পারেনি। কিন্তু তা-ই ঘটেছে। ভবিষ্যতে এ পরিবর্তন যে আরও দ্রুতশীল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ প্রযুক্তির উচ্ছাসে ভাসছে এখন সমগ্র বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি। E-Business, E-Commerce, E-Marketing, E-Retailing এ ভাবে নতুন নতুন পরিভাষায় সিক্ত হচ্ছে ব্যবসায় জগত। হাতের ছোট মোবাইল সেটটিই হয়তোবা ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে সকল যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র । তাই এরূপ প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের আগামী প্রজন্মকে অবশ্যই ধারণা দিতে হবে। আগামী দশকগুলোর জন্য তাদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। সেজন্যই ব্যবসায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়টি ব্যবসায় পরিচিতি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যায় এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারবে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা (শিখন ফল)
১. ব্যবসায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে
২. ব্যবসায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাখ্যা করতে পারবে
৩. অনলাইন ব্যবসায় ধারণা, গুরুত্ব ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে
8. ই-কমার্স এর ধারণা ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে
৫. ই-বিজনেস এর ধারণা ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে
৬. ই-মার্কেটিং এর ধারণা, গুরুত্ব ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে
৭. ই-রিটেইলিং এর ধারণা, পদ্ধতি ও সুবিধা ব্যাখ্যা করতে পারবে
৮. ই-ব্যাংকিং এর ধারণা, পদ্ধতি ও সুবিধা ব্যাখ্যা করতে পারবে
৯. ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এর ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে
১০. মোবাইল ব্যাংকিং এর ধারণা ও এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে
আমির, জহির ও জেহাদ প্রত্যেকে ২,০০,০০০ টাকা মূলধন দিয়ে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। জহির ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ না করেও অর্জিত মুনাফার ২.৫০,০০০ টাকার অংশ দাবি করে। পরবর্তী সময়ে জহিরের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে তারা ব্যবসায়টি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
মাহিম একটি কার্ড ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হতে পণ্য বাকিতে ক্রয় করতে পারেন। নানান সুবিধা পাওয়ায় তিনি তার স্ত্রীর জন্যও একটি কার্ড সংগ্রহের কথা ভাবছেন।
পাবনা শহরে মো. আলম একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। বাড়ির মালিক চট্টগ্রামে থাকে। প্রতি মাসের প্রথম ৫ তারিখের মধ্যে আলম সাহেব পাবনায় একটি ব্যাংকের নিকট তার বাড়িভাড়ার টাকা জমা দেন এবং মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির মালিকের একাউন্টে টাকা পৌছে যায়। এছাড়া তিনি বাড়ির বিদ্যুৎ ও পানির বিলও একই ব্রাঞ্চে পরিশোধ করে থাকেন।
মি. সামদানি গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটা বড় বড় গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তুলেছেন। তিনি বনানী অফিসে বসেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে যেয়েই প্রতিটা ফ্যাক্টরির দিনের কর্ম পরিকল্পনা কম্পিউটারের মাধ্যমে দেখে নেন। সব শ্রমিক-কর্মী অফিসে এসেছে কি না, নির্ধারিত সময়ের পরে কতজন এসেছে- তার তথ্যও কারখানার ওয়েবসাইটে যেয়ে চোখ বুলিয়ে নেন । কাজ কেমন চলছে সেটাও তার অফিসে বসেই ভিডিও ফ্রীনে দেখেন। কোনো নির্দেশনা দেয়ার থাকলে কারখানা ম্যানেজারকে ই-মেইল করেন। মোবাইলে কথা বলেন। এরপর শিপমেন্ট-এর অবস্থা নিয়ে C&F এজেন্টের সাথেও আলাপ করেন। তাদের পাঠানো Message গুলো কম্পিউটারে পড়েন । বন্দরে তার মালের শিপমেন্ট কোন পর্যায়ে তাও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে যেয়ে জেনে নিশ্চিত হন। বিদেশী ক্রেতা বায়িং হাউজগুলোর সাথে ই-মেইল, ভয়েস মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান হয় । মাঝে-মধ্যেই সব কারখানার ম্যানেজারদের সাথে অডিও কনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্স করেন। বাসায় ফিরতে গাড়িতে বসেই প্রতিটা কারখানার উৎপাদন কী হলো, পরবর্তী দিনের ওয়ার্ক প্লান ও শিপমেন্টে কী যাচ্ছে তা ল্যাপটপে বাটন টিপেই জানতে পারেন। এত কাজ করা মি. সামদানির পক্ষে সম্ভব হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবাদেই ।
উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদির পাশাপাশি ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্যের দ্রুত আদান-প্রদান ও যোগাযোগ স্থাপনের প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে । এর দু'টি অংশ- একটি তথ্য প্রযুক্তি ও অন্যটি যোগাযোগ প্রযুক্তি। তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ সংশ্লিষ্ট আধুনিক কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থাকে তথ্য প্রযুক্তি বলে। কম্পিউটার নির্ভর ডাটাবেজ তৈরি, সফটওয়ার কেন্দ্রিক তথ্যের ইনপুট ও আউটপুট ব্যবস্থা, তথ্যের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নানামুখী উপস্থাপন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনে দ্রুত তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে তথ্য প্রযুক্তি অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই অভিনব যাত্রা এখানেই থেমে থাকেনি । এই প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের সম্পর্ক ঘটায় দ্রুত তথ্যের আদান-প্রদানে ও পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় এখন তথ্য প্রাপ্তি ও যোগাযোগের এতটাই উন্নতি ঘটেছে যে, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষকে টেলিফোনে ডায়াল করে নিমিষেই কথা বলা যাচ্ছে । তথ্য পাঠানো যাচ্ছে, তথ্য জানানো যাচ্ছে । ই- মেইল ও ভয়েস মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাচ্ছে । চাইলে পৃথিবীর যে কোনো টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যাচ্ছে । অডিও কনফারেন্সিং, ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাচ্ছে। ওয়েব সাইটে যেয়ে যে কোনো তথ্য মূহুর্তে সংগ্ৰহ করা সম্ভব হচ্ছে । ইন্টারনেটে রেল, বিমান, যানবাহন, হোটেল ইত্যাদির বুকিং দেয়া যাচ্ছে । কম্পিউটারে বসে বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরির যে কোনো বই খুলে পড়া সম্ভব হচ্ছে। সমগ্র বিশ্ব একটা বৈশ্বিক গ্রাম (Global village) এ পরিণত হয়েছে। তাই সারাবিশ্বই এখন কার্যত একটা কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে অথবা হাতে ধরে রাখা মোবাইলের মধ্যেই সীমিত হতে চলেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থার সম্প্রসারিত রূপ। যেখানে উপাত্ত (Data) সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবর্তন-পরিবর্ধন ইত্যাদির পাশাপাশি ইন্টারনেট নির্ভর যোগাযোগ প্রযুক্তির ১৩ সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যে কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্রুত তথ্যের আদান-প্রদান ও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তাই ICT এর সাথে একদিকে যেমনি // সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি; যেমন- কম্পিউটার, সফট্ওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও এতদসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি সম্পৃক্ত তেমনি যোগাযোগের প্রয়োজনে মডেম, টেলিফোন, সেলুলার ফোন, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, রেডিও ভয়েস, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিও সম্পর্কযুক্ত। যে কারণে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদির সমন্বিত রূপকেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব পড়েনি। অনলাইন ব্যবসায়, ই-বিজনেস, ই-কমার্স, ই-মার্কেটিং, ই-রিটেইলিং, ই- ব্যাংকিং, ই-টিকেটিং ইত্যাদি পরিভাষা এখন ব্যবসায় মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া ICT সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় এখন খাত হিসেবে অন্যতম বড় ব্যবসায় । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ততিতে বর্তমানকালে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে GSM প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৮২ সালে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি Group Special Mobile (GSP) যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে Global System for Mobile Communication ব্যবসায় ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কো- ব্যবহার্য ICT প্রযুক্তি।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থার প্রয়োগকে ই-ব্যবসায় বলে । যখন আমরা ই-ব্যবসায়, ই-বাণিজ্য, ই- খুচরা ব্যবসায় বলি তখন মনে হয় ব্যবসায় বাণিজ্যের ধ্যান-ধারণাতেই পরিবর্তন ঘটেছে কি না । বাস্তবে বিষয়টি তেমন নয় । ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, যোগাযোগ পদ্ধতি, তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, এখানে ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যাবলির কোনো পরিবর্তন ঘটেছে। মুনাফার্জনের উদ্দেশ্যে আছে, ক্রেতা-বিক্রেতা আছে, উৎপাদন ও উপযোগ সৃষ্টির কাজ বিদ্যমান । ব্যাংক, বিমা, পরিবহণ, গুদামজাতকরণ, বিজ্ঞাপন, মোড়ককরণ, ঝুঁকি গ্রহণ-এর সবই রয়েছে। আগে বিভিন্ন রেজিস্টারে প্রয়োজনীয় তথ্য ও হিসাব লিখে রাখা হতো যা এখন কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। কোনো হিসাব বা তথ্য কারও কাছে পাঠানো দরকার। আগে রেজিস্টার বহি পাঠানো হতো । এখন দরকার হয় না। ই-মেইল ব্যবস্থায় বাটন টিপে মূহুর্তে তথ্য সবার কাছে পৌঁছানো যায় । আগে ফরমায়েশ লিখে ডাকে পাঠানো হতো এখন তার প্রয়োজন হয় না। ই-মেইল বা ইলেক্ট্রনিক অন্য কোনো ব্যবস্থায় সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় । আগে বিদেশে পণ্যের ফরমায়েশ দিতে ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের নানান কাজে অনেক সময় যেতো। এখন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদকের ওয়েব পেজে যেয়ে তথ্য জানা যাচ্ছে। ওয়েব পেজগুলো এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যেখানে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যও একত্রে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতা বা গ্রাহক আগে দোকানে যেয়ে দেশে শুনে পণ্য কিনতো। এখন আর তার প্রয়োজন হয় না, বাসায় বসে ইন্টারনেটেই ফরমায়েশ দিয়ে ও একই উপায়ে মূল্য পরিশোধ করে শপিং সেরে নেয়া হচ্ছে । তথ্য প্রযুক্তির ফলে ব্যবসায়ে যতই পরিবর্তন ঘটুক পরিবহণের ও গুদামের প্রয়োজন কিন্তু রয়েই গেছে । তাই ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তি তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবসায়ের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বহুমাত্রিক পরিবর্তন আনতে সমর্থ হয়েছে । আজকে বলতে যেয়ে ব্যবসায়ের ধরন, কার্যত যোগাযোগের ধরনকে নির্দেশ করছে। যেমন, আমরা বলছি B2B ব্যবসায় (ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীর মধ্যকার ব্যবসায় / পাইকারি), B2C ব্যবসায় (ব্যবসায়ের সাথে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর ব্যবসায় / খুচরা), B2G (ব্যবসায়ের সাথে সরকারের ব্যবসায়) ইত্যাদি ।
মি. আলী বেড়াতে যাবেন। বিমানের টিকেট, হোটেল বুকিংসহ অনেক কাজ কম্পিউটারে বসে আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সেরেছেন। অর্থাৎ বিমান কোম্পানি, হোটেল কোম্পানি এভাবে বিভিন্ন ব্যবসায় এখন ICT নির্ভর। মি. চৌধুরী ব্যাংকে যান। One stop service। একজন ব্যাংক কর্মী চেক পাওয়ার পর কম্পিউটারে মি. আলীর হিসাবে যেয়ে দ্রুত পোস্টিং দিয়ে এক মিনিটেই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। ATM (Automated teller machine) বুথে যেয়ে নিজেই টাকা উঠাচ্ছেন। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান Walmart তাদের মালামাল সংগ্রহে ফরমায়েশ দেয়ার পদ্ধতি বাদ দিয়েছে। কোনো মাল বিক্রয় হওয়ার সাথে সাথে সরবরাহকারীর সার্ভারে তথ্য উঠে যাচ্ছে। ফলে নির্দেশিত পর্যায়ে গেলেই সে মাল সরবরাহ করছে। এখন ব্যবসায়ে স্টক রেজিস্টার লাগে না, হিসাবের খাতা • নেই- সব কম্পিউটারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবাদে ব্যবসায় ও ব্যবসায় কার্যক্রম এক নতুন রূপ লাভ করেছে । কত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে । এর সব কিছুই এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্বের দিক নির্দেশ করে। নিম্নে ব্যবসায়ে এর প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
যেখানে ই-মেইল করে মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে তথ্য পৌঁছানো সম্ভব তখন কে চিঠি লিখে ডাকে ফেলে অপেক্ষা করতে চায়? একটা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের মধ্যে যখন তথ্য ভাণ্ডার সংরক্ষণ করা যায়, মুহূর্তে যে কোনো তথ্য বের করা যায়- তখন কে কাগজ আর ফাইলের স্তুপ অফিসে সংরক্ষণ করে তা ঘাটাঘাটি করতে পছন্দ করে? ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ওয়েবসাইটে যেয়ে যখন প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ তথ্য মুহূর্তে জেনে নেয়া যায়, সিদ্ধান্ত নেয়া যায়- তখন কে নিজেকে ঐ প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখবে? প্রযুক্তির সুবাদেই যেখানে সকল তথ্য পাওয়া যায়, দেখা যায়, লেনদেন করা যায় তখন যে কোনো সচেতন মানুষ তার ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক । দূরে বসে যখন অডিও কনফারেন্স ও ভিডিও কনফারেন্স করা যায় তখন ব্যস্ত মানুষগুলোর সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে সামনা সামনি বসে সভা করার তেমন প্রয়োজন থাকে না । তাই ব্যবসায়ের এমন কোনো দিক নেই যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না । নিম্নে ক্ষেত্রগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. কল-কারখানায় ব্যবহার (Use in factory) : কল-কারখানায় বৃহদায়তন উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করেছে। মজুদ ব্যবস্থাপনা, পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ, উপকরণের যথাযথ ব্যবহার, অপচয় হ্রাস, শ্রমিক-কর্মীদের তথ্য সংরক্ষণ, হাজিরা নিয়ন্ত্রণ, বেতন-ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরূপ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়, বিক্রেতা, প্রতিনিধি, ডিলার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান, লেনদেন ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এরূপ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয় ।
২. বিক্রয়ধর্মী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার (Use in trading organization) : বিক্রয়ধর্মী প্রতিষ্ঠানের পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রয়ে এরূপ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। এরূপ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের ক্যাটালগ, মূল্য তালিকা, শর্তাদিও ওয়েবসাইট তথা ভার্চুয়্যাল স্টোর (এমন সদৃশ স্টোর যা সপ্তাহের সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে) এ দেয়া পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বা নিকটস্থ এজেন্টের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। মূল্য হ্রাস বা কোনো অফার ওয়েবসাইটে বা ওয়েবপেজে দেয়া হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কোনো পণ্যের মূল্য কত তা দ্রুত নির্ধারণ করে। মূল্য পরিশোধেও এ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে । মজুদ নিয়ন্ত্রণ, হিসাব রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজে এরূপ প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ।
৩. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার (Use in bank & other financial institutions) : ব্যাংকে ICT এর ব্যবহার এতটাই দৃশ্যমান যে আজকের ব্যাংক ব্যবস্থা কার্যত এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবহার ও লেনদেনের সকল পর্যায়েই এ প্রযুক্তি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করছে । সঠিক ও নির্ভুল লেনদেনে এবং গ্রাহকদের দ্রুত ও উন্নত সেবা দিতে এ প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ফাও ট্রান্সফার, হোম ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড-এ ভাবে নানান সেবা ব্যাংক ব্যবস্থাকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করেছে।
৪. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যবহার (Use in import and export business) : আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে তথ্যাদি অনুসন্ধান, ফরমায়েশ প্রদান, দলিল-পত্রাদি হস্তান্তর, শুল্ক সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা পালন, মূল্য পরিশোধসহ সকল ক্ষেত্রেই ICT -এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। ইলেক্ট্রনিক ক্যাটালগ, ই-মেইল, ভয়েস মেইল, ইন্টারনেট সেবা, ফ্যাক্স ইত্যাদি ICT সেবার মাধ্যমে এর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীগণ খুবই স্বল্প সময়ে একদেশ থেকে অন্যদেশে পণ্য সরবরাহ করতে পারায় ও লেনদেন সম্পন্ন হওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৫. পর্যটন শিল্পে ব্যবহার (Use in tourism industry) : পর্যটন শিল্পেও ICT এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। পর্যটকদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন তথ্য ওয়েবসাইটগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার প্রদর্শিত হচ্ছে। ই-টিকেটিং এর সুবাদে বিমান, রেল, বাসসহ সকল যানবহনের টিকেট সহজেই কাটা হচ্ছে। হোটেল রিজার্ভেশনসহ সব কাজ এ প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত আগাম সেরে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। পর্যটন স্থানগুলোর অধিক নিরাপত্তা বিধান এবং পর্যটকদের অধিক সেবা প্রদানও এর ফলে সম্ভব হচ্ছে। ফলে পর্যটন শিল্প বিগত দশকগুলোতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
৬. পরিবহণ শিল্পে ব্যবহার (Use in transport industry) : আকাশ, জল ও স্থলপথে দ্রুত ও নিরাপদে যাত্রী, ও পণ্য পরিবহণে ICT এর ব্যবহার অভাবনীয় । যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক কন্ট্রোলিং, টিকেট বুকিং, সিডিউল নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এরূপ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। বিমান পরিচালনায় ফ্লাইং, ল্যান্ডিং, বোর্ডিং কার্ড প্রদান, ইমিগ্রেশন, ফ্লাইট কন্ট্রোল, টিকেট বিক্রয় সবকিছুই এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। রেল পরিবহণ ব্যবস্থাও এখন এরূপ প্রযুক্তির আওতাধীন। স্টেশনে থাকা, স্টেশন ত্যাগ, সিগন্যালিং সিস্টেমসহ কন্ট্রোলিং ব্যবস্থা এখন প্রযুক্তিনির্ভর । জলযানের ক্ষেত্রেও আবহাওয়া সংকেত, অবস্থান নির্ণয়সহ সকল কাজেই ICT সহযোগিতা করছে ।
৭. দুর্ঘটনা হ্রাসে সহায়তা (Help in reducing accident) : মানবীয় ভুল দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ । চালক যখন ঘুমায় ও ভুল করে তখন দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যাংক কর্মী যখন অসতর্ক হয় বা ইচ্ছাকৃত কোনো অপরাধ করে তখন দুর্ঘটনার কারণ সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রযুক্তি ঘুমায় না, ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করতে পারে। অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত। উন্নত বিশ্বে এরূপ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার পরিবহন সেক্টরে দুর্ঘটনার মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে । সাইবার ক্রাইমের মত কিছু ঘটনা ঘটলেও ব্যাংকসহ সর্বত্রই আর্থিক লেনদেন এরূপ প্রযুক্তির সুবাদে অনেক নির্ভুল ও নিরাপদ হয়েছে ।
৭. শেয়ার, বিল ও বন্ড বাজারে ব্যবহার (Use in share, bill & bond market): শেয়ার, বিল ও বন্ড বাজারে এর সংশ্লিষ্ট ক্রয়-বিক্রয়ে ICT এর ব্যাপক ব্যবহার এ ব্যবসায়কে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে । নিউইয়র্ক, লণ্ডন, টোকিও ইত্যাদি বড় বড় শেয়ার ও বন্ড বাজার থেকে বাংলাদেশের যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত নিয়মে শেয়ার ও বন্ড ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছে এরূপ প্রযুক্তির কারণেই । মোবাইলেই এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধসহ সবকিছুই এরূপ প্রযুক্তি করে দিচ্ছে। এজেন্ট বা ব্রোকাররা এরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের এ সংক্রান্ত সকল লেনদেন সম্পাদন ও তথ্য সংরক্ষণের কাজ নির্ভুলভাবে দ্রুত করতে পারছে।
উপরোক্ত শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেবা বিক্রয়ধর্মী সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান; যেমন- স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসেবা, বিনোদন সেবা, হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সর্বত্রই ICT এর ব্যাপক প্রয়োগ সামগ্রিক ব্যবসায় প্ররিস্থিতিকেই উন্নত, সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করেছে। যার সহযোগিতা ব্যতিরেকে ব্যবসায় পরিচালনার চিন্তায় কার্যত এখন অসম্ভব ।
নেটওয়ার্কের আওতায় কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত ও কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলমান ব্যবস্থার অধীন ব্যবসায়কেই অনলাইন ব্যবসায় বলে। কেন্দ্রীয় সার্ভারের আওতায় ব্যাংকের শাখাসমূহের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে এক শাখার চেকের অর্থ অন্য শাখায় প্রদান বা অর্থ জমা গ্রহণের কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থাকে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং বলি। এভাবে একজন ব্যবসায়ী আরেকজন ব্যবসায়ীর সাথে, ব্যবসায়ী গ্রাহকের সাথে, গ্রাহক গ্রাহকের সাথে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করলে তাকে অনলাইন ব্যবসায় বলা হয়ে থাকে । অনলাইন ব্যাংকিং এর বাইরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন ব্যবসায় নিম্নে তুলে ধরা হলো:
অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে । ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) এক্ষেত্রে সহায়তা করে। হোম ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইনে ফান্ড ট্রান্সফার করা যায় ।
ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য, সেবা ও তথ্য বণ্টন তথা ক্রয় বিক্রয়, হস্তান্তর বা বিনিময় কার্যকেই ই-কমার্স বলা হয়ে থাকে । ই কমার্স মূলত বিক্রয়ের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন পক্ষ; যেমন- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সহযোগী অংশীদার ইত্যাদির সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং পণ্য ও সেবা বিক্রয় ও সরবরাহের ব্যবস্থা করে। ফরমায়েশের আলোকে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বেলায় পণ্য উৎপাদনও ই কমার্সের অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হয় । ই-বিজনেস (E-Business) এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ (Subset) হলো ই-কমার্স ।
ই-ব্যবসায় যেখানে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ, ক্রয়-বিক্রয় হস্তান্তর ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে তখন ই কমার্স ক্রয়-বিক্রয় সংশ্লিষ্ট বাইরের বিভিন্ন পক্ষের সাথে ICT নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা (B2B, B2C, P2P (P=Business Partner), C2C) গড়ে তুলে ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে ব্যাপৃত থাকে। ই কমার্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ হলো-
ইন্টারনেট মার্কেটিং (Internet marketing);
মোবাইল বাণিজ্য (Mobile commerce);
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT);
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমন্টে (Supply chain management);
অনলাইন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ (Online transaction processing);
ইলেক্ট্রনিক তথ্য বিনিময় (Electronic data interchange);
মজুদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Inventory management system) ও
স্বয়ংক্রিয় তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা (Automated data collection system)।
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগ ও চুক্তি সম্পাদনের সাথে মূল্য পরিশোধ ও পণ্য সরবরাহের বিষয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ । মূল্য পরিশোধে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম (EPS) ব্যবহৃত হয় । এক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিং, হোম ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ক্যাশ, ইলেক্ট্রনিক চেক, স্মার্ট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদি পদ্ধতি চালু রয়েছে। পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিবহনে ক্রেতার নিকট পণ্য প্রেরণ, আঞ্চলিক পরিবেশকের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য সরবরাহ বা পরিবেশকের মাধ্যমে পার্শ্বেল করে পণ্য প্রেরণ করা যেতে পারে ।
ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষতার সাথে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনাকেই ই-মার্কেটিং বলে । মার্কেটিং হলো গ্রাহকদের চাহিদা যথাযথভাবে চিহ্নিত্বপূর্বক পণ্য ও সেবাসামগ্রী তাদের নিকট পৌছানোর সর্ববিধ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন সম্ভব হয় । ওয়েব, ই- মেইল, ডাটাবেজ, ডিজিটাল টেলিফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে মার্কেটিং কার্য সম্পাদন ও সেবা প্রদান এর লক্ষ্য ।
ই-মার্কেটিং ই-বিজিনেস এর একটা উপশাখা (Subset)। ব্যবসায়ের উৎপাদন, বন্টন, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বিতরণ সকল ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ই-বিজনেস হিসেবে গণ্য। অন্যদিকে গ্রাহকদের চাহিদা শনাক্তকরণ, এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ, গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ, মার্কেট Place শনাক্ত করে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন ধরনের বিপণন প্রসার কার্যক্রম গ্রহণ, এজন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কৌশল নির্ধারণ, বিভিন্ন ধরনের বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ই-মার্কেটিং কাজ করে । ই মার্কেটিং বিশেষভাবে গ্রাহক সম্পর্কিত । পণ্য কিভাবে আসবে বা সরবরাহ Chain কী হবে এ বিষয়ে ই-মার্কেটিং ততটা সম্পৃক্ত নয় ।
ব্যবসায়ের বিজনেস স্ট্রাটিজির সাথে ই-মার্কেটিং পরিকল্পনার সম্পর্ক নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো
ই-রিটেইলিং হলো ই-কমার্স তথা ই-বিজিনেসের একটা বিশেষ রূপ বা ধরন যেখানে কোনোরূপ মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সুযোগ প্রদান করা হয় । ই-রিটেইলিংকে e-shop, e-store, Internet shop, Web shop, Web store, Online store, Virtual store, e-terling ইত্যাদি নামেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে । একজন গ্রাহক দোকানে যেয়ে দেখেশুনে মূল্য যাচাই করে যেভাবে পণ্য ক্রয় করে এবং মূল্য পরিশোধ করে পণ্য নিয়ে আসে, ই-রিটেইলিং এর ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয় না । এক্ষেত্রে ক্রেতা ইন্টারনেটে দোকানের ওয়েব সাইটে যেয়ে পণ্য ও মূল্য তালিকা সার্চ করে । অনেক সময় একই ধরনের পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সম্মলিতভাবে ওয়েব পেজ খুলে গ্রাহকদের পণ্য ও মূল্য বিষয়ে তুলনা করার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয় ।
অতঃপর সে যে প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী তাদের নিকট ইন্টারনেটে ফরমায়েশ দেয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ই-চেক, ই-মানি ইত্যাদির মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে । অতঃপর সরাসরি পণ্য গ্রাহকদের ঠিকানায় নিজস্ব গাড়িতে করে বা পার্শ্বেলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় । অনেক সময় স্থানীয় কোনো চেইন স্টোর থেকে তা সরবরাহ করা হয়ে থাকে । ক্রেতাদের ব্রান্ড আনুগত্যের কারণে এখন আর পণ্য দেখে শুনে কেনার তেমন প্রয়োজন পড়ে না । ফলে উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তা পর্যায়ে কেনা-বেচায় রিটেইলিং হাউজগুলোতে ই-রিটেইলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে বিপণন প্রতিষ্ঠানে ভিড় যেমনি কমেছে তেমনি জনশক্তির প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পেয়েছে । একদিকে গ্রাহকদের সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচের পরিমাণও কমছে। ২০১২ সালের খুচরা পর্যায়ের (B2C) কেনা-বেচায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮% বিক্রয় ই-রিটেইলিং পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে। যার অর্থমূল্য ছিল ১৪২.৫ বিলিয়ন ডলার । ২০১২ সালে চীনে ২৪.২ কোটি লোক অনলাইনে শপিং করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ই রিটেইলিং পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবা হলো ভ্রমণ সংক্রান্ত বুকিং, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এন্ড সফটওয়্যার, ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সামগ্রী, অফিস সামগ্রী, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা সামগ্রী, বই, ম্যাগাজিন, সংগীত সামগ্রী, খেলনা, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, পোশাক ও কাপড় চোপড়, জুয়েলারি সামগ্রী, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সেবা (ই-ব্যাংকিং ও অন্যান্য) ইত্যাদি ।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি হলো ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদানের আধুনিক কৌশল বা পদ্ধতি । এটি এমন এক ধরনের ব্যাংকিং সেবা পদ্ধতি যেখানে উন্নততর ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতিদ্রুত, নির্ভুল এবং ব্যাপক বিস্তৃত সেবা প্রদান সম্ভব। এ ধরনের ব্যাংকিং পদ্ধতি সনাতন, প্রথাগত, কায়িক শ্রমনির্ভর, সীমিত সেবাসম্বলিত, মন্থর, কাগজ ও নথির জমাকৃত স্তুপের সেকেলে ব্যাংকিং পদ্ধতির অবসান ঘটিয়েছে ।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বিশারদ এইচ. লিপিস এর মতে, Electronic banking systems are electronic systems that transfer money and record data relating to these transfer." অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং হলো এমন যেখানে ইলেকট্রনিক পন্থায় অর্থ স্থানান্তর করা হয় এবং এরূপ স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্যাবলি একই পদ্ধতিতে লিখে রাখা হয়। তিনি আরও বলেছেন, "Electronic banking services are developing tools in the overall banking services delivery system." অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা হলো সার্বিক ব্যাংকিং ডেলিভারি সেবা ব্যবস্থার উন্নততর পদ্ধতি ।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকের সেবা সুবিধাসমূহ হলো নিম্নরূপ :
১. স্বয়ংক্রিয় গণনা যন্ত্র (Automated Teller Machine / ATM);
২. ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড;
৩. অন-লাইন ব্যাংকিং;
৪. হোম ব্যাংকিং;
৫. মোবাইল ব্যাংকিং
৬. বিক্রয় বিন্দু (Point of Sales / POS) সেবা;
৭. স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর (Automated clearing House /ACH) সেবা;
৮. আন্তঃব্যাংক নিকাশঘর পরিশোধ পদ্ধতি ইত্যাদি ।
উপসংহারে বলা যায়, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক তড়িৎবাহী পদ্ধতি যেখানে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে অতিদ্রুত নির্ভুলভাবে সম্প্রসারিত ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে অর্থ উত্তোলন, সংগ্রহ, স্থানান্তর, লেনদেন সম্পন্নকরণ, তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদান, যোগাযোগ ইত্যাদি কাজ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয় ।
ATM কার্ড দু'ধরনের হয়; ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড । তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন ও ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ব্যৱস্থানির্ভর ডেবিট কার্ড একটা অন্যতম পদ্ধতি । এটি চুম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন সাংকেতিক নম্বরযুক্ত এবং গ্রাহকদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সম্বলিত এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড । এক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রাহকের আলাদা PIN (Personal Identification Number) থাকে। যা ব্যবহার করে এর গ্রাহক ATM বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারে । আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো এ বুথ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পর্যন্ত একবারে উঠানোর সুযোগ দেয় । সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় দুইবার এরূপ কার্ড ব্যবহার করে ATM বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় । গ্রাহকের হিসাবে ডেবিট জের (Balance) থাকলেই শুধুমাত্র এরূপ কার্ড ব্যবহার করা যায় বিধায় একে ডেবিট কার্ড বলা হয়ে থাকে । ক্রেডিট কার্ডে যেভাবে নির্দিষ্ট বিপণি থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয় সুবিধা লাভ করা যায় ডেবিট কার্ডের বেলায়ও তা সম্ভব। এ ছাড়া বিভিন্ন সেবা সুবিধা (Utility charge)-এর বিল এবং ঋণের ও প্রিমিয়ামের কিস্তি সহজেই প্রদান করা সম্ভব হয় । এরূপ কার্ড সুবিধার কারণেই ই রিটেইলিং, ই- টিকেটিং ইত্যাদি কাজ সহজ হয়েছে । আমাদের দেশে এখন বিভিন্ন ব্যাংক ডেবিট কার্ড সরবরাহ করে ।
নির্দিষ্ট মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ক্রেডিট কার্ড একটা বহুল ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সেবা পদ্ধতি । এরূপ কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহককে ক্রেডিট বা ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয় বিধায় তা ক্রেডিট কার্ড নামে পরিচিত । এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনেও ডেবিট কার্ডের ন্যায় এই কার্ড ব্যবহার করা যায় । অধুনা বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ গ্রহণের সামর্থ্য রয়েছে এমন মর্যাদাবান গ্রাহকদেরকে চুম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন সাংকেতিক নম্বরযুক্ত এবং গ্রাহকদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সম্বলিত এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড সরবরাহ করে । একজন গ্রাহককে কতটাকা পর্যন্ত Credit limit বা ঋণ সুবিধা দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় । এই ক্রেডিট সীমা বা সর্বোচ্চ অনুমোদিত ডেবিট ব্যালান্স-এর মধ্যে থেকে গ্রাহক নির্দিষ্ট দোকান বা প্রতিষ্ঠান (Merchant) থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ বাবদ তা বারবার ব্যবহার করতে পারে। ই-রিটেইলিং, ই-টিকেটিং এর জন্যও এরূপ কার্ড সহজে ব্যবহার করা যায় ।
তারবিহিন টেলিকম্যুনিকেশন ব্যবস্থায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রদান ও লেনদেন করাকেই মোবাইল ব্যাংকিং বলে। ব্যাংকের আর্থিক ও হিসাব সংক্রান্ত ডাটাবেজে ঢুকে দ্রুততার সাথে নিজের তথ্য বের করে আনার এবং অনুমোদিত লেনদেন করতে পারার এক চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা । হোম ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের Pin (Personal Identification Number) ব্যবহার করে তথ্য জানা, ব্যাংক হিসাব বিবরণী সংগ্রহ ও সীমিত ফান্ড ট্রান্সফারের যে সুযোগ প্রচলিত রয়েছে তাকে আরও সহজতর করার জন্যই মূলত মোবাইল ব্যাংকিং এর উৎপত্তি ।
একজন গ্রাহককে এজন্য ব্যাংক প্রদত্ত ফরম পূরণ করে মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হয় । অতঃপর এই মোবাইল নম্বর থেকে নির্দিষ্ট কোডের বিপক্ষে SMS (Short Message Service) করে সাথে সাথে তার হিসাবের ব্যালেন্স জানতে পারে । যা নতুন চেক কাটতে বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সর্বশেষ কী লেনদেন হয়েছে তার তথ্যও সীমিত পরিসরে জানা যেতে পারে । এ ছাড়া SMS পাঠিয়ে বিল প্রদান ও ফাণ্ড অন্য কোনো হিসাবে স্থানান্তরের নির্দেশও দেয়া যায়। মোবাইল বিজিনেস (Mobile Business) বা M-Business এর ক্ষেত্রে মোবাইল হ্যান্ডসেটে ইন্টারনেট সংযুক্তির সুবাদে নির্দিষ্ট ওয়েবে যেয়ে যেভাবে ক্রয়সহ বিভিন্ন সার্ভিস গ্রহণ ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে তার সুযোগ থাকে । বাংলাদেশে ২০১১ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রচলন করে । তাদের এ সেবা ‘মোবাইল ব্যাংকিং' নামে পরিচিত । পরবর্তীতে ব্রাক ব্যাংক bkash (বিকাশ) নামে এরূপ ব্যাংকিং সেবা চালু করে যা এখন দেশের সর্বত্র খুবই জনপ্রিয় । এছাড়া ইসলামী ব্যাংক এমক্যাশ, ইউসিবিএল ব্যাংক ইউক্যাশ এবং অন্যান্য কিছু ব্যাংক বিভিন্ন নামে এরূপ সেবা প্রদান করছে ।
উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত ব্যবসায়িক সকল কার্যক্রমের সহায়তায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগকেই ই-বিজিনেস বলে। ই-কমার্সসহ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রমই এর অন্তর্ভুক্ত । এর উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকদের চাহিদা ও প্রত্যাশা যথাযথভাবে পূরণের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ দক্ষতা ও নমনীয়তার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত করা । সেই সাথে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পক্ষের সাথে বাইরের সরবরাহকারী ও অন্যান্য সহযোগীরা যেন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে তার সামর্থ্য সৃষ্টি করা। এটি ওয়েব, ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট ও এক্সট্রানেট বা এগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থা ।
প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ধারণাকে পণ্য বা সেবায় পরিণতকরণ (Designing), পণ্য ও সেবা উৎপাদন (Producing), বিপণন (Marketing) এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা বা সাপোর্ট প্রদান (Rendering services and supports) কাজকে ফলপ্রদ করতে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ প্রযুক্তিগত সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য ই-বিজনেসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ হলো-
ই বিজনেসের ক্ষেত্রে এমন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় যাতে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মরত সকল জনশক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বাইরের গ্রাহক, সহযোগী অংশীদার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান (Stackholders) এর সাথে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দ্রুত তথ্য বিনিময় ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা যায়। Amazon.com ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সম্পূর্ণভাবে ই-বিজনেস পদ্ধতির প্রয়োগ করে বলে মনে হয় ।
উৎপাদক/সরবরাহকারী (Provider) এবং গ্রাহক/ভোক্তা (Client) বিবেচনায় ই-বিজনেস নিম্নোক্ত ধরনের হতে পারে:
ই-রিটেইলিং এ সাধারণত সরাসরি ভোক্তাদের নিকট (B2C) পণ্য বিক্রয় করা হয়ে থাকে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ভোক্তাদের 'পাশাপাশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকেও পণ্য সরবরাহ করে থাকে (B2C & B2B)। Amazon.com তাদের প্রকাশিত বই B2C পদ্ধতিতে, তাদের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান barnesandnoble.com তাদের প্রকাশিত বই B2C ও B2B পদ্ধতিতে বিক্রয় করে । বিশ্বখ্যাত খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান Walmart পরবর্তী পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে । সর্বপ্রথম ব্যবসায় ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ই-বিজনেস প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম Amazon.com ।
Read more