সংবেদি অঙ্গ (পাঠ ১-৩)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - সংবেদি অঙ্গ | NCTB BOOK
651

আনিকা এবার বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে যষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ও বরাবরই লেখাপড়ায় ভালো। সবাই বলে ওর মাথা ভালো। মাথা ভালো মানে মগজ ভালো। আমাদের দেহের চালক হচ্ছে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ককে আমরা মগজ বলে থাকি। আমাদের দেহের সব কাজই চলছে মস্তিষ্কের হুকুমে। মস্তিষ্ক থাকে মাথার খুলির মধ্যে। খুলির মাঝখানে বসেই আমাদের দেহের বাইরের ও ভিতরের কাজকর্ম চালায় কীভাবে? চোখ, কান, নাক, ত্বক ও জিহ্বা বাইরের সকল খবরা-খবর জোগাড় করে মস্তিষ্ককে জানিয়ে দেয়। চোখ দিয়ে দেখি, কান দিয়ে শুনি, জিহ্বা দিয়ে আমরা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করি, ত্বক দিয়ে গরম, ঠান্ডা, তাপ, চাপ অনুভব করি। এগুলো সংবেদি অঙ্গ। এদের সাহায্যে মস্তিষ্ক জানতে পারে বাইরের সকল খবরা-খবর। যেমন: তুমি রাস্তা পার হবে, হঠাৎ করে গাড়ি তোমার সামনে এসে পড়ল। তোমার চক্ষু তখনই জানিয়ে দেবে মস্তিষ্ককে। মস্তিষ্ক তখন তোমার মাংসপেশিদের বলবে দাঁড়িয়ে যাও, এখন রাস্তা পারাপারের দরকার নেই। অমনি তোমার পা দুটো দাঁড়িয়ে যাবে।

চোখ

আমরা চোখ বা অক্ষি দিয়ে পৃথিবীর সকল জিনিস দেখতে পাই। চোখ কীভাবে গঠিত? মাথার সামনে দুটো অক্ষি কোটরের মধ্যে এক জোড়া চোখ থাকে। ছয়টি পেশির সাহায্যে প্রতিটি চোখ অক্ষি কোটরে আটকানো থাকে। এই পেশিগুলোর সাহায্যে অক্ষিগোলক নড়াচড়া করানো যায়। আমরা যাকে অশ্রু বলি তা হলো চোখের পানি। এ অশ্রু আসে কোথা থেকে? অশ্রুগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তরল যা চোখের পানি বা অশ্রু নামে পরিচিত। অশ্রু সবসময় চোখকে ভেজা রাখে, বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণু পড়লে তা ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। চোখের ত্বক স্বচ্ছ আর পেছনের অংশ কালো। তার ফলে আমাদের চোখ হয়েছে ছোট্ট ক্যামেরার মতো। চোখের বিভিন্ন অংশ ও কাজগুলো নিম্নরূপ-
(১) চোখের পাতা: চোখের বাইরের আবরণ। চোখের পাতা খোলা ও বন্ধ করা যায়। এটা বন্ধ করে চোখকে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা যায়।
(২) কনজাংকটিভা: চোখের পাতা খুললেই চোখের যে অংশটুকু আমরা দেখতে পাই, সে অংশটুকু একটা পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে তার নাম কনজাংকটিভা। এই পর্দাটি জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হলেই তাকে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ উঠা রোগ বলে।
(৩) অক্ষিগোলক: এটি গোলাকার বলের মতো অঙ্গ। গোলকটি তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত।
ক) স্ক্লেরা: অক্ষিগোলকের বাইরের সাদা, শক্ত ও পাতলা স্তরটি হলো স্ক্লেরা। এটি চোখের আকৃতি রক্ষা করে। এর ভিতর দিয়ে কোনো আলো প্রবেশ করতে পারে না।
কর্নিয়া: স্ক্লেরার সামনের চকচকে অংশটি হলো কর্নিয়া। এ অংশটি একেবারেই স্বচ্ছ। এর ভিতর দিয়েই আলো চোখের ভিতর প্রবেশ করে।

আইরিশ: কর্নিয়ার পেছনে কালো গোলাকার পর্দা থাকে। একে আইরিশ বলে। এটি কোরয়েডের অংশ আইরিশের মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে, যাকে পিউপিল বলে। আইরিশ পেশি দিয়ে তৈরি। একে আমরা সাধারণত চোখের মণি বলে থাকি। আইরিশের পেশিগুলো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। আইরিশের পেশি সংকোচন প্রসারণের ফলে পিউপিল ছোটো বড়ো হতে পারে। এর ফলে আলোকরশ্মি রেটিনায় প্রবেশ করতে পারে।

লেন্স: পিউপিলের পেছনে একটি দ্বি-উত্তল লেন্স থাকে। লেন্সটির মাঝখানের দুই দিক উঁচু আর আগাটা সরু। লেন্সটি এক বিশেষ ধরনের সিলিয়ারি পেশি দ্বারা আটকানো থাকে। এ পেশিগুলো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। এদের সংকোচন প্রসারণ দরকার মতো লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে।

গ) রেটিনা: রেটিনা অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভিতরের স্তর। এটি একটি আলোক সংবেদি স্তর। এখানে রড ও কোন নামে দুই ধরনের কোষ রয়েছে।

চোখের লেন্সটি চক্ষু গোলককে সামনে ও পেছনে দুটি অংশে বিভক্ত করে। এই অংশগুলোকে প্রকোষ্ঠ বলে। সামনের প্রকোষ্ঠে জলীয় এবং পেছনের প্রকোষ্ঠে এক বিশেষ ধরনের জেলীর মতো তরল পদার্থ থাকে, যা চক্ষুগোলকে আলোকরশ্মি প্রবেশ, পুষ্টি সরবরাহ এবং চক্ষুগোলকের আকার বজায় রাখতে সহায়তা করে।

চোখের যত্ন: চোখ একটি কোমল অঙ্গ, খুব যত্নে রাখতে হবে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে চোখে নানা অসুখ হতে পারে। যেভাবে চোখের যত্ন নেওয়া যায় তাহলো-

• ঘুম থেকে উঠে ও বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে চোখ দুটি পরিষ্কার করা।
• চোখ মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা।
• নিয়মিত সবুজ শাকসবজি ও রঙিন ফলমূল খাওয়া। এগুলোতে ভিটামিন এ থাকে। এগুলো চোখের জন্য খুবই ভালো। এগুলো খেলে রাতকানা হওয়া এড়ানো যায়।

কাজ: মডেল বা চার্টের সাহায্যে চোখের বিভিন্ন অংশগুলো চিনে নাও। এবার খাতার মানুষের চোখের একটি চিত্র এঁকে এর অংশগুলোর নাম লিখ।

নতুন শব্দ: সংবেদি অঙ্গ, রেটিনা, লেন্স, অক্ষিগোলক, পিউপিল, আইরিশ, স্ক্লেরা ও কনজাংকটিভা।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...