মাটিস্থ দ্রবণে কোনো আয়নের ঘনত্ব মূলের শোষণ অঞ্চলের কোষরসে সেই আয়নের ঘনত্ব অপেক্ষা কম হলেও দেখা যায় মাটির দ্রবণ হতে ঐ আয়ন কোষের অভ্যস্তরে প্রবেশ করছে। ঘনত্ব আনতির (concentration gradient) বিপরীতে এই শোষণ ঘটে বলে এতে বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন পড়ে। বিপাকীয় কার্যাবলির কারণে শ্বসন হার বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই এ জাতীয় পরিশোষণকে সক্রিয় পরিশোষণ ( Active salt absorption) বলে। অধিকাংশ খনিজ লবণ সক্রিয় পরিশোষণ পদ্ধতিতেই মূল কর্তৃক পরিশোষিত হয়ে থাকে। সক্রিয় শোষণেরও বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে; যেমন- সাইটোক্রোম পাম্প মতবাদ, প্রোটন-অ্যানায়ন কোট্রান্সপোর্ট মতবাদ, লেসিথিন মতবাদ ইত্যাদি। তবে প্রত্যেক মতবাদই আয়ন বাহক ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সক্রিয় শোষণে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন একই সাথে পরিশোষিত হতে পারে।
আয়ন বাহক ধারণা (The carrier concept of ion) :
আয়ন বাহক ধারণার উপর নির্ভরশীল তিনটি মতবাদ নিচে বর্ণনা করা হলো :
(i) লুনডেগড় মতবাদ (Lundegardth theory 1955) : এ মতবাদকে Cytochrome pump মতবাদও বলা হয়। এ মতবাদ অনুযায়ী বাহক হচ্ছে cytochrome (Cyt.)। লুনডেগরের, মতানুযায়ী অ্যানায়ন পরিশোষণ প্রকৃতপক্ষে cytochrome system এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। লুনডেগড় এর মতে কোষঝিল্লির ভেতরের তল-এ ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের বিক্রিয়ার ফলে প্রোটন (H + ) এবং ইলেকট্রন (e -) সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনটি সাইটোক্রোম চেইন এর মাধ্যমে কোষঝিল্লির বাইরের দিকে চলে আসে এবং
0 2 এর সাথে মিলে প্রোটন চিত্র সহযোগে পানি তৈরি করে। এর ফলে কোষঝিল্লির বাইরের তলে সাইটোক্রোমের বিজারিত লৈৗহ (reduced iron) ইলেকট্রন হারিয়ে জারিত (oxidised) হয় এবং একটি অ্যানায়ন গ্রহণ করে।
কোষঝিল্লির ভেতরের তলে (inner space) সাইটোক্রোমের জারিত লৌহ ডিহাইড্রোজিনেজ বিক্রিয়া হতে প্রাপ্ত ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় এবং কোষঝিল্লির বাইরের তলে (outer space) সাইটোক্রোমের জারিত লৌহ যে অ্যানায়ন গ্রহণ করে তা বিক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে ভেতরের দিকে মুক্ত করে দেয়। এভাবে ভেতরের দিকে অ্যানায়ন জমা হতে থাকে। কিন্তু ক্যাটায়ন শোষণ নিষ্ক্রিয়ভাবে বহিঃস্থ দ্রবণ থেকে কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
(ii) প্রোটন-অ্যানায়ন কো-ট্রান্সপোর্ট মতবাদ (Proton-Anion co-transport theory): আধুনিক ধারণায় কোষঝিল্লির উভয় দিকে একটি তড়িৎ রাসায়নিক নতিমাত্রা (electrochemical gradient) সৃষ্টির মাধ্যমে আয়নগুলো কোষের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়।
এ আধুনিক মতবাদ অনুসারে, আয়ন নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক প্রোটিন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে বাইরের দ্রবণ থেকে কোষের ভেতরের দ্রবণে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোটিন নির্দিষ্ট আয়নের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ধারণা করা হয় কোষঝিল্লির ভেতরের তলের দিকে ATP-ase এনজাইমের ক্রিয়ায় ATP ভেঙ্গে শক্তি নির্গত হয়। যার প্রভাবে প্রোটন কোষের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। একে প্রোটন পাম্প বলে। প্রোটন পাম্পের কারণে কোষের বাইরের সাথে ভেতরের দিকে pH gradient (বাইরে pH কম) এবং potential gradient (কোষের বাইরের +ve চার্জ বেশি, কোষের ভেতরে +ve চার্জ কম) তৈরি হয় যাকে একত্রে Electrochemical potential gradient বা Proton motive force বলে। কোষ পর্দার অভ্যন্তরে Proton motive force তৈরি হলেই বাহক প্রোটিনগুলো সক্রিয় হয় এবং ক্যাটায়নগুলোকে বহন করে বাইরের দ্রবণ থেকে কোষের ভেতরে নিয়ে আসে। প্রোটনও বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতে চায়, আর সে সময় অ্যানায়নগুলো প্রোটনের সাথে (প্রোটন ও অ্যানায়ন একসঙ্গে প্রোটিন বাহকের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এজন্য একে প্রোটন-অ্যানায়ন কো-ট্রান্সপোর্ট বলা হয়। এ ধারণাটি Peter Mitchel (1968) এর কেমি-অসমোটিক মডেলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
(iii) লেসিথিন বাহক ধারণা (Lacithin carrier concept) : Bennet Clark (1956) নামক বিজ্ঞানী মনে করেন, লেসিথিন নামক ফসফোলিপিড আয়ন বাহক হিসেবে কাজ করে। লেসিথিন কোষঝিল্লির বাইরের তলে অ্যানায়ন ও ক্যাটায়ন গ্রহণ করে একটি যৌগ তৈরি করে ভেতরের তলে নিয়ে যায়। যৌগটি ভেতরের তলে কোলিন ফসফেটাইডিক অ্যাসিড এ ভেঙ্গে গিয়ে আয়ন দুটিকে মুক্ত করে ATP প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয়।
যে পরিশোষণ প্রক্রিয়ায় আয়ন শোষণের জন্য কোনো বিপাকীয় শক্তির প্রত্যক্ষ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না সেই পরিশোষণই হলো নিষ্ক্রিয় পরিশোষণ (Passive Salt absorption) । এতে শ্বসন হার স্বাভাবিক থাকে। নিষ্ক্রিয় পরিশোষণ প্রক্রিয়া নিম্নলিখিত উপায়ে ঘটে থাকে :
(i) ব্যাপন মতবাদ (Diffusion Theory): মাটিতে অবস্থিত দ্রবণ হতে কোষের অভ্যন্তরে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কিছু আয়ন প্রবেশ করে। উদ্ভিদের লবণ শোষণ অঞ্চলের কোষরসে কোনো আয়নের ঘনত্ব মাটির দ্রবণে অবস্থিত ঐ আয়নের ঘনত্ব হতে কম হলে আয়নটি মাটির দ্রবণ হতে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষরসে প্রবেশ করে। এভাবে ক্রমান্বয়ে আয়ন পরিশোষিত হতে থাকে। (Hope & Stevens, 1952)
(ii) আয়ন বিনিময় মতবাদ (lon exchange theory) : উদ্ভিদমূলের কোষরস হতে হাইড্রোজেন
(H +) আয়ন বাইরের দ্রবণে নির্গত হয়। তখন কোষের বৈদ্যুতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বাইরের ভরণ হতে ক্যাটায়ন (K + ) কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। একইভাবে হাইড্রোক্সিল (OH −) আয়নের বিনিময়ে অ্যানায়ন (Cl − আয়ন) কোষরসে প্রবেশ করে। আয়ন এক্সচেঞ্জ বলতে আয়নের এরূপ বিনিময়কে বোঝানো হয়। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন একসাথে পরিশোষিত হয় না। ডেভলিন (১৯৬৯), পান্ডে ও সিনহা (১৯৭২) এই মতবাদের প্রবক্তা।
(iii) ডোন্যান সাম্যাবস্থা মতবাদ (Donan equilibriam theory) : কোষঝিল্লির অভ্যন্তরে অব্যাপনযোগ্য কিছু স্থির ঋণাত্মক চার্জ থাকলে, একে নিরপেক্ষ করার জন্য বাহির হতে কিছু ধনাত্মক চার্জাবিশিষ্ট ক্যাটায়ন ঝিল্লির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্লাজমাঝিল্লির ভেতর এরূপ স্থির আয়নের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বাইরে থেকে ভেতরে একটি সাম্যাবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত ক্যাটায়নের ব্যাপন চলতে থাকে একে ডোন্যান সাম্যাবস্থা বলে। বিজ্ঞানী F. G. Donnan (1911-1914) এই মতবাদের প্রবক্তা।
(iv) ব্যাপক প্রবাহ মতবাদ (Mass flow theory): অনেক বিজ্ঞানী (Hylmo (1955) ও Kramen (1956) মনে করেন যে, প্রস্বেদন টানে যখন ব্যাপক হারে পানি পরিশোষিত হয় তখন পানির সাথে সাথে খনিজ লবণের আয়নও পরিশোষিত হয়।
Read more