অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য | NCTB BOOK

ব্যক্তির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সামাজিকীকরণ প্রয়োজন। জন্মের পর থেকেই মানব শিশু সমাজের নিয়ম- কানুন ও রীতিনীতি শিখতে থাকে। একেই বলা যায় তার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। এই অধ্যায়ে আমরা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পর্কে জানব।

পরিবার : সামাজিকীকরণের প্রথম ও প্রধান বাহন পরিবার। পরিবারে বসবাস করতে গিয়ে শিশু পরিবারের সদস্যদের প্রতি আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধর্মচর্চা, শিক্ষা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে পারিবারিক সংস্কৃতির প্রতিফলন সরাসরি ব্যক্তির উপর পড়ে। এজন্যেই বলা হয় সামাজিকীকরণের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বাহন হচ্ছে পরিবার ।

স্থানীয় সমাজ : মা-বাবা বা পরিবারের পর স্থানীয় সমাজই শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চারপাশের মানুষের আচার-আচরণ ও রীতিনীতি দেখতে দেখতে শিশু বেড়ে উঠে। এভাবে সে সহজেই সমাজের রীতিনীতি শিখে যায়। স্থানীয় মানুষের ভাষা, আচার-আচরণ ও মূল্যবোধ তার আচরণে প্রভাব ফেলে।

স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদান : স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, সমিতি, সাংস্কৃতিক সংঘ, খেলাধুলার ক্লাব, সংগীত শিক্ষা কেন্দ্র, বিজ্ঞান ক্লাব প্রভৃতি। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা এসব সংগঠন ব্যক্তির চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার-আচরণের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ব্যক্তি এসব সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে জড়ায়। সংগঠনভুক্ত অন্যদের সঙ্গে মিশে তার বুদ্ধিবৃত্তি, সুকুমার বৃত্তি ও সৌন্দর্যবোধ জেগে উঠে। এই বোধ তাকে সহনশীল হতে শেখায়। এভাবেই ব্যক্তি স্থানীয় সমাজের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ায় এবং তাদের অংশ হয়ে উঠে।

সমবয়সী সঙ্গী : শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সমবয়সী বন্ধু বা সঙ্গীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শৈশবে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলার আকর্ষণ থাকে অপ্রতিরোধ্য। এভাবে খেলার সাথিরা একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে। কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও চালচলনের ক্ষেত্রে তারা একে অন্যকে প্রভাবিত করে। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সহনশীলতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে একে অপরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি অর্জন করতে পারে। এভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান : রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব এবং আন্দোলন-সংগ্রামও ব্যক্তির সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করার মাধ্যমে নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ করে।

কাজ : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখ করো।  

Content added By