নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - মাদকাসক্তি ও এইডস | NCTB BOOK

বিশ্বে যে কয়টি ঘাতক ব্যাধিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে এইডস অন্যতম। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক বা নিরাময় ব্যবস্থা থাকলেও এইডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ঔষধ এখনও তেমনভাবে আবিষ্কার করা যায়নি। ফলে এইডস-এর পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে শরীরে কোনো রোগের জীবাণু প্রবেশ করলে সেটা সহজে শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু এমন কিছু ভাইরাস আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আস্তে আস্তে দুর্বল করে এবং এক সময় তা সম্পূর্ণভাবেই নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। এমনই একটি ভাইরাসের নাম এইচআইভি (HIV)।

এইচআইভি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী : এইচআইভি ও এইডস দুটি ইংরেজি শব্দ। শব্দ দুটির পূর্ণাংগ রূপ হচ্ছে— Human Immuno Deficiency Virus (HIV) এবং Acquired Immune Deficiency Syndrome (AIDS)। এইচআইভি একটি অতি ক্ষুদ্র বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা কোনো মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপায়ে প্রবেশ করে রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংসের মাধ্যমে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রোগ যেমন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া প্রভৃতিরোগে ঘন ঘন আক্রান্ত হয় এবং কোনো চিকিৎসায় এ সমস্ত রোগ ভালো হয় না। এইচআইভি সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির এরূপ অবস্থাকে এইডস (AIDS) বলে। এইচআইভি কোনো ব্যক্তির শরীরের প্রবেশের পর সাথে সাথে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। এইডস হিসেবে প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। সাধারণত এটা মনে করা হয়ে থাকে যে এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বছর হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় পরে এইডস ধরা পড়ে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে ৷

এইডস এর লক্ষণসমূহ : এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। তবে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে রোগে আক্রান্ত হয় সে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। যেমন- (১) এক মাসের বেশি সময় ধরে এক টানা কাশি, (২) সারা দেহে চুলকানিজনিত চর্মরোগ, (৩) মুখ ও গলায় এক ধরনের ঘা, (৪) লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, (৫) স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এইডস-এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো-
১। শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া ।
২। এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা বা থেমে থেমে পাতলা পায়খানা হওয়া।
৩। বার বার জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
৪। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা ।
৫। শুকনা কাশি হওয়া ইত্যাদি ।
উল্লেখ্য যে, কারোর মধ্যে উপরের একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে HIV সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।

এইচআইভি এবং এইডস-এর বিস্তার : এইচআইভি একটি নীরব ঘাতক। এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এইচআইভি ও এইডস কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা আমাদের জানা প্রয়োজন। বায়ু, পানি, খাদ্য বা কারোর সংস্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরের ভিতরে রক্ত, বীর্য, যোনিরস, মায়ের বুকের দুধ এগুলোতে HIV বাস করে। সেই HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনিরস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলে বা মায়ের বুকের দুধ খেলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি বিস্তার লাভ করে, তা হলো-
১। অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন- এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বের এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৮০% অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের কারণে হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যোনিরসের মাধ্যমে জীবনসঙ্গীর দেহে এইডস-এর ভাইরাস প্রবেশ করে।
২। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ-এইডস আক্রান্ত কোনো মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন কিংবা তার ব্যবহৃত সুচ- সিরিঞ্জ অন্য মানুষ ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই একই সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করে মাদক গ্রহণ করে থাকে।
৩। মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ—এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত মায়ের নিকট থেকে তিনটি পর্যায়ে শিশুর শরীরে এর ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-
(ক) গর্ভকালীন সময়ে।
(খ) প্রসবকালীন সময়ে ।
(গ) মায়ের দুধ পান করে।
যে সব কারণে এইচআইভি-এইডস-এর বিস্তার লাভ করে না তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
(১) হাঁচি, কাশি, কফ-থুতু বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ।
(২) এক সাথে এক ঘরে বসবাস করলে, একসাথে বা একই থালা-বাসনে খাওয়া দাওয়া করলে।
(৩) একসাথে খেলাধুলা বা একই ক্লাসে পড়াশোনা করলে।
(৪) আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মেলালে, কোলাকুলি করলে এবং তার কাপড় ব্যবহার করলে।
(৫) মশা বা কোনো পোকা-মাকড়ের কামড়ে।
(৬) আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে।
(৭) একই গোসলখানা বা শৌচাগার ব্যবহার করলে। এইচআইভি ও এইডস এর মতো মরণব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলের এ বিষয়ে জানতে হবে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কাজ-১ : এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত হলে যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা বোর্ডে লেখ এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
কাজ-২ : এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় এবং ছড়ায় না এ বিষয়ে নিচের বিবৃতির বিপরীতে সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি' লেখ
 

 

                       বিবৃতি        স/মি                                     বিবৃতি         স/মি                 
১. এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে  
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা করলে
 
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই থালায় খাবার খেলে   ৮. আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে  
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিজ শরীরে গ্রহণ করলে   ৯. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে
 
 
৪. সুস্থ ব্যক্তির শরীরে জীবাণুমুক্ত রক্ত সঞ্চালন
করলে
  ১০. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির
মাধ্যমে
 
৫. মশা বা পোকা-মাকড়ের কামড়ে  
১১. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে
 
৬. আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে      












 

Content added By