একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র | NCTB BOOK

সংগঠন হলো ইঞ্জিন সদৃশ । ইঞ্জিন অচল হলে ড্রাইভার, বডি বা বগির যেমন কার্যকারিতা থাকে না তেমনি একটা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন বা সংগঠিতকরণের কাজ সুষ্ঠুভাবে না হলে তা চলতে পারে না। মনে করি একটা উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বিভাগ খোলা হয়েছে কিন্তু বিক্রয় বিভাগ খোলা হয়নি বা বিক্রয় বিভাগ খোলা হয়েছে কিন্তু তার অধীনে জেলা বা আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি । তাহলে প্রধান অফিসের পক্ষে ৬৪টি জেলার বিক্রয় কাজ সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান ও বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না । প্রত্যেক ব্যক্তি ও বিভাগের কাজ, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া যেমনি জরুরি তেমনি একের সাথে অন্যের সম্পর্ক নির্দিষ্ট করে দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে। এতে কে কার নিকট জবাবদিহি করবে, আদেশ লাভ করবে-এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এতে সংগঠনে কর্তৃত্ব রেখা ও যোগাযোগ প্রবাহ সম্পর্কে প্রত্যেকে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে । অতঃপর কোনো নির্দেশ দিলে তা যথানিয়মে সংশ্লিষ্টদের নিকট পৌঁছে ও তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় । এভাবে নির্দেশ দান ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে একটা প্রতিষ্ঠান সচল থাকে ও গতিশীলতা লাভ করে। তাই একটি প্রতিষ্ঠানে যদি উদ্দেশ্য অর্জনের উপযোগী করে একটা সংগঠন কাঠামো তৈরি এবং সে অনুযায়ী কাজ ও উপায়-উপকরণ সংহত করা সম্ভব না হয় তবে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য সকল কাজ কখনই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না । নিম্নে বিভিন্ন দিক হতে সংগঠনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

১. উদ্দেশ্যার্জনে সহযোগিতা (Aid to accomplishment of objective ) : ব্যবস্থাপনা সংগঠনে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি এর প্রকৃতি বা অন্য কোনো সুবিধাজনকভাবে ভাগ করে এর প্রত্যক ভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ওপর অর্পণ করা হয় । কার্যকর শ্রমবিভাগ প্রতিষ্ঠার ফলে নির্বাহীগণ স্ব-স্ব কার্যক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারে । প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট থাকায় প্রত্যেকেই স্বাচ্ছন্দ্য সহকারে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনে উদ্বুব্ধ হয় । ফলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যার্জন সহজতর হয়ে থাকে ।

২. উপকরণের যথাযথ ব্যবহার (Effective utilization of resources) : একটি কার্যকর সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় । এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজকে সঠিকভাবে ভাগ করে প্রত্যেকটি কাজ বা বিভাগের জন্য কোন্ মানের জনশক্তি ও উপায়-উপাদানের প্রয়োজন হবে তা নির্ণীত হয়। এ ছাড়া প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সীমা নির্ধারণপূর্বক কে কার নিকট জবাবদিহি করবে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়। এর ফলে জনশক্তিসহ সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

৩. বিশেষীকরণে সহায়তা (Aid to specialization) : প্রতিষ্ঠানে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংগঠন বিশেষায়ণ ও শ্রম বিভাগের নীতির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। একজন কর্মীর জন্য একই ধরনের কাজ নির্দিষ্ট করার প্রয়াস চালানো হয় । এতে কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । ফলে মিতব্যয়িতা ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ সম্পাদন সম্ভব হয় । এভাবে কার্য সম্পাদনের ফলে প্রত্যেক বিভাগ ও উপবিভাগের কার্যদক্ষতা বাড়ে, নির্বাহীর পক্ষে তত্ত্বাবধান সহজ হয় এবং কাজের মানও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।

৪. সহজ সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ (Smooth co-ordination and control) : সংগঠন কাঠামো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের উপর হতে নিচ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিভাগ ও উপবিভাগের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্দিষ্টের পাশাপাশি এদের মধ্যকার সম্পর্কও নির্ণীত হয়। এ ছাড়া কার্যকর সংগঠন প্রতিষ্ঠায় 'জোড়া-মই-শিকলের' নীতি অনুসৃত হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি ও উপায়-উপাদানকে একে অন্যের সহযোগী করে তোলার চেষ্টাও করা হয়ে থাকে । ফলে প্রত্যেক বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্য স্বতঃস্ফূর্ত সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং সর্বস্তরে সমন্বিত কার্যব্যবস্থা পরিচালিত হয় ।

৫. সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of creativity) : উত্তম ও শক্তিশালী সংগঠন কাঠামো বিভিন্ন স্তরে নিযুক্ত নির্বাহী ও কর্মীদের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে । যথোপযুক্ত কর্তৃত্ব লাভে যেমনি কর্মী বা নির্বাহী সন্তুষ্ট হয় তেমনি পূর্বে বর্ণিত দায়িত্ব তাকে নিজ যোগ্যতা অর্জনে উৎসাহিত করে । প্রত্যেকের কর্তৃত্ব সীমা নির্দিষ্ট থাকায় নিজ কর্তৃত্ব সীমার মধ্যে কিভাবে সুন্দররূপে দায়িত্ব পালন করা যায় নির্বাহী বা কর্মী তা চিন্তা করে । এ ছাড়া সংগঠন কাঠামোতে পদোন্নতির গতিপথ পূর্বনির্দিষ্ট থাকায় কর্মীও সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে । এতে তার সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে ।

৬. কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা (Establishing effective leadership) : কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থাপনা সংগঠনের ভূমিকা অনস্বীকার্য । এরূপ নেতৃত্ব সৃষ্টি নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলির কার্যকর বিভাজন, দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট বর্ণনা, কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিধান, আনুগত্যের ভাবধারা প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার মতো পরিবেশ সৃষ্টির ওপর। এ ছাড়া কাজের চাপকে একটা কাম্য মাত্রায় ধরে রাখার বিষয়টিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ । উত্তম সংগঠনই মাত্র এ সকল সুযোগ নিশ্চিত করে কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে ।

৭. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা (Establishing discipline) : সাংগঠনিক শৃঙ্খলা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য । এরূপ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংগঠনের বিশেষ গুরুত্ব লক্ষণীয় । কার্য বিভাজন, দায়িত্ব-কর্তৃত্ব নিরূপণ, কে কার অধীন, কে কার ঊর্ধ্বতন, কে কার কাছ থেকে নির্দেশ পাবে এবং কার কাছে কাজের জন্য জবাবদিহি করবে ইত্যাদি বিষয় যদি সঠিকভাবে পূর্বেই নির্ধারণ করা না হয়, বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে যদি সমস্যা থাকে তবে কার্যক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । কার্যকর সংগঠনের মাধ্যমেই এরূপ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায় ।

Content added By