SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - তথ্য সংগ্রহ (Data Collection) - NCTB BOOK

তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য (Objectives of Data Collection)

নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তথ্য খুঁজে বের করাকে তথ্য সংগ্রহ বলা হয়। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্য সামনে রেখে তথ্য সংগ্ৰহ করা হয়। নিচে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হলো-

→ পূর্বানুমান (Forecasting): ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে বা কী হতে যাচ্ছে তা আগে থেকে ধারণা করাকে পুর্বানুমান বলে। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারকে প্রতিনিয়ত এই কাজটি করতে হয়। আর এটি করা হয় অতীত অভিজ্ঞতা ও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। তাই বলা যায়, পূর্বানুমান করা তথ্য সংগ্রহের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।

→ পরিকল্পনা প্রণয়ন (Planning) : পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ করণীয় পূর্বে নির্ধারণ। অর্থাৎ আগামীতে কী করা হবে, তা ঠিক করে নেওয়া হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সর্বদা পরিকল্পনা করতে হয়। তবে এটি সঠিকভাবে করার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্যের। আর, এজন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

→ সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision making): একাধিক বিকল্প থেকে একটি বিকল্প বাছাইয়ের কাজকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। ব্যবস্থাপকীয় কাজ পরিচালনার জন্য অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই, সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

চিত্র : একাধিক বিকল্প

→ গবেষণা পরিচালনা (Conducting research) : গবেষণা হলো জ্ঞানের অন্বেষণ । এটি বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো কিছু অনুসন্ধানের কলাকৌশল। এটি নতুন আবিষ্কারের অভিযান। বর্তমান জ্ঞানকে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য পদ্ধতিগত তথ্যানুসন্ধান ও বাস্তব ঘটনার আবিষ্কার হলো গবেষণা। এই গবেষণা পরিচালনার সবক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন। এজন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

→ প্রতিবেদন তৈরি (Preparing report ): ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেক সময় নির্ধারিত বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। এই প্রতিবেদন তৈরিতে অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। এজন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

→ তথ্যের যথার্থতা যাচাই (Verifying accuracy of data): অনেক সময় লোকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আবার অনেক সময় এমনিতেই বিভিন্ন ধরনের তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়। এসব তথ্য বা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। এজন্য এসব তথ্য যাচাই করতে হয়। আর এজন্য সঠিক পন্থায় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

→ প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা (Operating administrative functions ) : কর্মী পরিচালনা, তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া, তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করা প্রভৃতি প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ব্যবস্থাপককে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

→ নীতি ও কৌশল নির্ধারণ (Determining policy and strategy): রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত তথ্যের প্রয়োজন। এজন্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে কার্যকর উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

→ বাজারে অবস্থা যাচাই (Verifying the market conditions): কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বাজারে কী অবস্থায় আছে, কী পরিমাণ পণ্য বিক্রি হচ্ছে, কত শতাংশ ভোক্তা এই পণ্য ব্যবহার করছে প্রভৃতি বিষয় জানা ব্যবসায়ীদের জন্য জরুরি। এসব বিষয়ে জানার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। অর্থাৎ, বাজারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অবস্থান জানার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

→ ভোক্তা সন্তুষ্টির স্তর যাচাই (Verifying the consumers satisfaction level): প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা ব্যবহার করে ভোক্তারা কোন মাত্রায় সন্তুষ্ট তা জানার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। অর্থাৎ, ভোক্তাদের অবস্থা জানার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

→ প্রতিযোগীদের অবস্থা জানা (Knowing the position of competitors): প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের গৃহীত পদ্ধতি ও পদক্ষেপের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হয়। এজন্য তাদের অবস্থা জানা জরুরি। তাদের এই অবস্থা জানার জন্য সঠিক পন্থায় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

চিত্র: ভোক্তা সন্তুষ্টির তারতম্য

 

    পরিশেষে বলা যায়, ব্যবস্থাপকীয় কাজ পরিচালনায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হয়। এই তথ্যের সঠিকতার/শুদ্ধতার ওপর ব্যবস্থাপকীয় পদক্ষেপের সফলতা নির্ভর করে। তাই উপরিউক্ত উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

 

তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ (Challenges of Data Collection )

তথ্য সংগ্রহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর সফলতার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। তবে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা খুব সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তথ্য সংগ্রহে যে চ্যালেঞ্জসমূহের সম্মুখীন হতে হয় তা হলো-

→ সংগ্রহকারীর যোগ্যতা (Capacity of collector) : যিনি তথ্য সংগ্রহ করবেন তার যোগ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ তিনি তথ্য সংগ্রহে কতটা অভিজ্ঞ, তিনি ব্যক্তি হিসেবে কতটা নির্ভরযোগ্য তা একটি চিন্তার বিষয়। তার দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতায় ঘাটতি থাকলে তার সংগৃহীত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। এজন্য এটি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

→ সংগ্রহকারীর দৃষ্টিভঙ্গি (Perception of collector) : জগতের সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে চিন্তাভাবনা ও কাজ-কর্মে পার্থক্য দেখা দেয়। তাই তথ্য সংগ্রহকারীর দৃষ্টিভঙ্গি গঠনমূলক না হলে তার সংগৃহীত তথ্য কাজে লাগানো কঠিন হয়ে পড়ে ।

→ অবস্থার পরিবর্তন (Change in situation): জগত সবসময় পরিবর্তনশীল। অনেক সময় কোনো এক অবস্থার প্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ঐ অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এতে পূর্বে সংগৃহীত তথ্য অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ।

→ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন (Change in decision): অনেক সময় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক ধরনের চিন্তা ভাবনার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে উক্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে যত বিশুদ্ধতার সাথে তথ্য সংগ্রহ করা হোক না কেন, তার কোনো কার্যকারিতা থাকে না।

চিত্র: সিদ্ধান্ত পরিবর্তন

→ ব্যাখ্যাগত ভিন্নতা (Explanatory differences): একই চিত্র: সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বিষয় একেক জন একেকভাবে ব্যাখ্যা করেন। এজন্য সংগৃহীত তথ্যের কেউ কেউ বিপরীতভাবে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পারেন। এতে সংগৃহীত তথ্যের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

→ মাধ্যমিক তথ্যের বিশুদ্ধতা (Accuracy of secondary data) : অনেক ক্ষেত্রে মাধ্যমিক তথ্য ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ, অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত বা বিশ্লেষণকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের তথ্যের সত্যতা বা বিশুদ্ধতা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। এটি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

→ সময়সাপেক্ষে (Time consuming) : সঠিক উপায় ও উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করা যেমন কঠিন তেমনি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক সময় চিত্র : তথ্য যাচাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে সময় স্বল্পতার কারণে সঠিক উপায় ও উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

→ ব্যয়বহুল (Costly): তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ প্রদান, সংগ্রহকারীর খরচ, তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সবক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ ব্যাপারে অর্থ ব্যয় করা সহজ নয়। তাই ব্যয়বহুল হওয়ায় তথ্য সংগ্রহে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়।

→ সহযোগিতার অভাব ( Lack of cooperation) : ক্রেতা / ভোক্তা বা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। তথ্য সরবরাহ করতে তাদের অনেকের মধ্যে অনীহা দেখা যায়। এজন্য তাদের কাছ থেকে সবসময় পুরোপুরি সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

পরিশেষে বলা যায়, তথ্য সংগ্রহ একটি জটিল কাজ। এতে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন ধরনের বাধা রয়েছে। এছাড়া এতে উপরিউক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.