SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

On This Page
নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আকাইদ | NCTB BOOK

নিফাক

নিফাক আরবি শব্দ। এর অর্থ কপটতা, ভণ্ডামি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও দ্বিমুখীভাব পোষণ করা। অর্থাৎ অন্তরে একরকম চিন্তাধারা বা বিশ্বাস গোপন রেখে বাইরে তার বিপরীত আচরণ বা ভাব প্রকাশ করা। শব্দটির মূল অর্থ খরচ করা, গোপন করা, চালু করা, অস্পষ্ট করা ইত্যাদি।

ইসলামি পরিভাষায় নিফাক বলতে অন্তরে কুফর ও ইসলাম বিরোধিতা গোপন রেখে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য মুখে ইমানদারসুলভ কথা বলা এবং লোক দেখানো ইসলামি আচার-অনুষ্ঠান পালন করাকে বোঝায়। নিফাকে লিপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় মুনাফিক। মহান আল্লাহ বলেন-

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ هُ يُخْدِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِيْنَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُوْنَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ * فِي قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ 

অর্থ: আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ইমান এনেছি। কিন্তু তারা মু'মিন নয়। আল্লাহ এবং মু'মিনগণকে তারা প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদের ভিন্ন অন্য কাকেও প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে রোগ আছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের রোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ, তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮-১০)

নিফাক দুই ধরনের। যথা-

১. বিশ্বাসের নিফাক 

২. কর্মের নিফাক।

বিশ্বাসের নিফাক

বিশ্বাসের নিফাক হলো-অন্তরের মধ্যে অবিশ্বাস গোপন রেখে মুখে বিশ্বাসের প্রকাশ করা। কুরআন-হাদিসে এ ধরনের নিফাকের আলোচনা বেশি এসেছে। এরূপ নিফাক কুফরেরই নামান্তর; বরং নিফাক কুফর ও শিরকের চেয়েও নিকৃষ্টতম। এরূপ নিফাকে লিপ্ত ব্যক্তি যদিও পার্থিব স্বার্থ লাভের জন্য নিজেকে ইমানদার বলে দাবি করে; কিন্তু তার অন্তরে অন্যান্য কাফিরের মতোই অবিশ্বাস বিদ্যমান।

কর্মের নিফাক

কর্মের নিফাক বলতে বাহ্যিক কাজ-কর্মের মাধ্যমে নিফাকের প্রকাশকে বোঝায়। এটি যেমন প্রকৃত মুনাফিকদের দ্বারা সংঘটিত হয়, তেমনি কখনো কখনো ইমান ও তাকওয়ার ঘাটতি বা দুর্বলতার কারণে মু'মিনদের কাজ- কর্মের মাঝেও প্রকাশ পায়। যেমন: এ ধরনের নিফাক প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, 'চারটি বিষয় যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে সে নির্ভেজাল মুনাফিক। আর যার মধ্যে এসবের কোনো একটি স্বভাব বিদ্যমান থাকবে, তার মধ্যে নিফাক বা কপটতার একটি দিক বিদ্যমান থাকবে, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে:

১. যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয়, সে তা খিয়ানত করে, 

২. যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, 

৩. যখন সে চুক্তি বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তখন তা ভঙ্গ করে এবং 

৪. যখন সে ঝগড়া করে তখন সে অশ্লীল কথা বলে।'

উল্লেখ্য, ইমানের দুর্বলতাবশত কোনো মু'মিনের কাজের মধ্যে যদি মাঝে মধ্যে উক্ত কর্মের দু' একটি প্রকাশিত হয় তাতে সে প্রকৃত মুনাফিকদের দলভুক্ত হবে না। তবে এটা জঘন্য পাপের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। এটি তার কর্মের নিফাক।

মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে ইসলাম ও ইমানের কথা মুখে বললেও এবং ইমানদারদের মতো ইবাদাত পালন করলেও অন্তরের দিক দিয়ে তারা ইমানদার নয়। তারা ইসলামবিরোধী। তারা মিথ্যাবাদী, ধোঁকাবাজ ও অবাধ্য। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-

إِذَا جَاءَكَ الْمُنْفِقُونَ قَالُوْا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنْفِقِينَ لَكَذِبُونَ 

অর্থ: যখন মুনাফিকরা আপনার নিকট আসে তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি নিশ্চয়ই তাঁর রাসুল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ১)

অন্য আয়াতে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত, তিনি তাদেরকে এর শাস্তি দেন আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে। দোটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে, না ওদের দিকে! এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি তার জন্য কখনো কোনো পথ পাবেন না।' (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২-১৪৩)

মুনাফিকরা অন্তরে বিরোধিতা গোপন রেখে বাইরে আনুগত্য প্রদর্শন করে মাত্র। তাই তারা দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী। পার্থিব জীবনের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা কাফির ও মুসলমান উভয় দলের সঙ্গেই থাকে। সমাজে তারা নিজেদের ইমানদার বলে জাহির করে। কিন্তু গোপনে তারা ইসলামকে অস্বীকার করে এবং ইমানদারদের সঙ্গে চরম শত্রুতা পোষণ করে। এ জন্য তারা চরম ধোঁকাবাজ। তাদের চরিত্রের স্বরূপ উন্মোচন করে মহান আল্লাহ বলেন

وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيْطِيْنِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِءُونَ 

অর্থ: যখন তারা মু'মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, আমরা ইমান এনেছি। আর যখন তারা গোপনে তাদের শয়তানদের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তারা বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪)অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ইমান এনেছি। অথচ, আদৌ তারা ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ ও বিশ্বাসীদেরকে প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে। এরপর আল্লাহ তাদের রোগ বৃদ্ধি করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাচারী। (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৮-১০)

মহানবি (সা.) মুনাফিকদের পরিচয় ও চরিত্র প্রসঙ্গে বলেন- 

آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثَ : إِذَا حَدَّثَ كَذِبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ

অর্থ: মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা খেলাপ করে, যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তা খিয়ানত করে। (বুখারি ও মুসলিম)

মুনাফিকরা ইসলাম ও মুসলমানদের জঘন্য শত্রু। কারণ, তারা মুখে মুসলমান দাবি করলেও আসলে তারা কাফিরদেরই দোসর। এদের প্রতারণা মুসলমানদের বিপদে ফেলে। এরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে মুসলমানদের দুর্বলতা ও গোপন কথা কাফিরদের নিকট প্রকাশ করে দেয়। এরা সর্বদা মুসলমানদের মাঝে মতানৈক্য ও ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় রত থাকে। সমাজে এরা নানা অপকর্মের নেপথ্যে থাকে। এদের অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ 'সূরা মুনাফিকূন' নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুনাফিকরা গোপন ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলমানদের অনেক ক্ষতি সাধন করেছে। মহানবি (সা.) কেও মুনাফিকরা বারবার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।

 

প্যানেল/দলগত আলোচনা '

মুনাফিক আমাদের সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে' 

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তোমরা প্যানেল বা দলে আলোচনা করে উপস্থাপন করো।)

 

নিফাকের কুফল ও পরিণতি

নিফাক জঘন্যতম পাপ। যেহেতু মুনাফিকরা তাদের অন্তরে অবিশ্বাস ও অবাধ্যতা লুকিয়ে রাখে, তাই তারা কাফির। এমনকি তারা কাফির অপেক্ষা মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ, কাফির, মুশরিকরা ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু। অন্যদিকে মুনাফিকরা গোপন শত্রু। গোপন শত্রু প্রকাশ্য শত্রুর চেয়ে সব সময়ই বেশি ক্ষতিকর। কারণ, যে প্রকাশ্য শত্রু তার বিরুদ্ধে সচেতন থাকা যায় এবং আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু যে গোপনে শত্রুতা করে তার থেকে বেঁচে থাকা কষ্টকর ব্যাপার।

পরকালে মুনাফিকদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-

إِنَّ الْمُنْفِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَ لَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا 

অর্থ: মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোনো সাহায্যকারী পাবেন না। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৫)

ইসলামের দৃষ্টিতে নিফাক জঘন্যতম পাপ। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও নিফাকের কুফল অত্যন্ত মারাত্মক। মুনাফেকি স্বভাব মানুষের মনুষ্যত্ব ও চরিত্রকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে মানুষ মিথ্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। মুনাফিক তার স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা অন্যায় ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়। আবার অনেক সময় সমাজের মানুষের মাঝে বিবাদ, বিসম্বাদ, অনৈক্য ও অশান্তির জন্যও মুনাফিকের মুনাফেকি দায়ী।

নিফাক থেকে বেঁচে থাকতে আমরা সদা সত্য কথা বলব এবং মিথ্যা পরিহার করে চলব; ওয়াদা পালন করব, আমানত রক্ষা করব, কারো সঙ্গে ঝগড়া করব না এবং অশ্লীল ভাষায় কথা বলব না।

 

আকাইদের শিক্ষা বাস্তবায়ন: আত্ম-মূল্যায়ন চেকলিস্ট

 

 

তুমি তোমার প্রতিফলন ডায়েরিতে নিম্নোক্ত নমুনা অনুসারে এক মাসের একটি আত্ম-মূল্যায়ন চেকলিস্ট তৈরি করবে এবং এ চেকলিস্টের বাম পাশের কলামে বর্ণিত মূল্যবোধগুলো চর্চার প্রযোজ্য তারিখে টিক চিহ্ন দিবে। যে তারিখে কোনও একটি মূল্যবোধ চর্চা করা হবে না বা যে মূল্যবোধ গুলো নিয়মিত চর্চা প্রযোজ্য হবে না, সে ঘরটি/গুলো খালি থাকবে। প্রযোজ্য তারিখে নিম্নোক্ত নিয়মে টিক চিহ্ন দিবে। চেকলিস্টের তথ্যের আলোকে মাস শেষে শিক্ষার্থী আত্ম- সমালোচনা ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে।

 

 

Content added By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.