SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা জানতে পারব- 

১. কঠিন চীবর দান কী; 

২. কঠিন চীবর দান প্রবর্তনের পটভূমি; 

৩. কঠিন চীবর দানের নিয়মাবলি: 

৪. কঠিন চীবর দানের সুফল; 

৫. কঠিন চীবর দানের সামাজিক গুরুত্ব ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

Content added || updated By

আমরা সবাই মিলে একটি ফিল্ড ট্রিপে যাব। ফিল্ডট্রিপে যাওয়ার জন্য যা যা প্রস্তুতি নিতে হয় অথবা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, তা শিক্ষক থেকে জেনে নিয়ে নোট করে রাখো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

ফিল্ড ট্রিপে যাওয়া সম্ভব না হলে আমরা অন্য কোনো বিকল্প অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি।

Content added || updated By

তোমার ফিল্ডট্রিপের/বিকল্প অভিজ্ঞতাটি লেখো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

কঠিন চীবর দান কী

 

কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বৌদ্ধ বিশ্বে শ্রীলংকা, বার্মা, থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশসহ থেরোবাদী বৌদ্ধদেশসমুহে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে এই উৎসব প্রতিবছর উদ্যাপন করা হয়। কঠিন চীবর দান উপলক্ষ্য করে প্রতিটি গ্রামের বৌদ্ধ বিহারে আনন্দের সাড়া পড়ে যায়।

'কঠিন চীবর' শব্দটি 'কঠিন' ও 'চীবর' দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। এখানে চীবর হলো ভিক্ষুদের পরার কাপড় যার কয়েকটি অংশ রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে চীবরকে পরিশুদ্ধ করতে হয় বলে একে কঠিন চীবর নাম দেওয়া হয়েছে। তাই উপাসক-উপাসিকাবৃন্দ চীবর দান করলেও তা কঠিন হয় না। ভিক্ষুসংঘ 'কর্মবাচা' নামের একটি সূত্র পাঠের মাধ্যমে ধর্মীয় রীতিতে চীবরকে কঠিন চীবরে পরিণত করেন। কর্মবাচা পাঠ শেষে কঠিন চীবর বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষুকে দেওয়া হয়। কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষু ফাল্গুনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই চীবর নিজের সঙ্গে রাখেন।

প্রতিবছর ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে অর্থাৎ আশ্বিনী পূর্ণিমার পরের দিন থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে কঠিন চীবর দান উদ্যাপন করতে হয়। অন্য সময়ে এ উৎসব উদ্যাপনের বিধান নেই। প্রত্যেক বৌদ্ধ বিহারে বছরে একবারই কঠিন চীবর দান করা যায়। তবে যে বিহারে কোনো ভিক্ষু বর্ষাব্রত যাপন করেন না, সেই বিহারে কঠিন চীবর দান করা যায় না। কোনো ভিক্ষু বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান করতে না পারলে তিনি কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন না। কেবল বর্ষাব্রত যাপনকারী ভিক্ষুই কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রধানত তিন অংশযুক্ত চীবর ব্যবহার করেন। সেগুলো হল ১. উত্তরাসঙ্ঘ বা একাজিক বহির্বাস, ২. সংঘাটি বা দোয়াজিক; ও ৩. অন্তর্বাস বা পরিধেয় বস্তু। এ তিনটি চীবরের মধ্য হতে যে কোনো একটি দিয়ে বর্ষাবাস পালনকারী ভিক্ষুর উদ্দেশে সংঘকে চীবর দান করা যায়।

 

কঠিন চীবর দান প্রবর্তনের পটভূমি

 

তখন ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথপিন্ডিক বিহারে বসবাস করছিলেন। ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পাঠেয়বাসী (পশ্চিম দেশীয়) ত্রিশ জন ভিক্ষু শ্রাবস্তীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন অরণ্যবাসী। ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করে তাঁরা জীবনধারণ করেন। তাঁরা পাংশুকুলিক চীবর ও ত্রিচীবরধারী। যাওয়ার পথে ছয় যোজন দূরে থাকতে বর্ষা শুরু হয়ে গেল। তখন অন্য কোনো উপায় না থাকায় পথিমধ্যে সাকেত নগরীতে তাঁদের বর্ষাবাস শুরু করতে হয়েছিল।

 

বর্ষাব্রত শেষ হওয়ার পরপরই সেই পাঠেয়বাসী ত্রিশজন ভিক্ষু ভগবান বুদ্ধের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য শ্রাবস্তীতে রওনা হলেন। জেতবন বিহারে উপস্থিত হয়ে তাঁরা ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।

 

তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা সম্পন্ন করে দীর্ঘ পথ হেঁটে কাদা পেরিয়ে ভেজা ও জীর্ণশীর্ণ চীবরে ভিক্ষুরা বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভিক্ষুদের জীর্ণশীর্ণ চীবর দেখে ভগবান বুদ্ধ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের অনুজ্ঞা (নির্দেশ) দিয়েছিলেন। বুদ্ধের এই অনুজ্ঞার পর থেকে প্রতিবছর বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণার পর থেকে এক - মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রচলন শুরু হয়। উল্লেখ্য, বুদ্ধের আমলে ভিক্ষুরা বিভিন্ন জায়গা যেমন - শ্মশান ও আবর্জনা স্তূপ থেকে ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে সেগুলো সেলাই করে চীবর বানাতেন। সেই আমলে তাঁরা সাধারণ গৃহীদের কাছ থেকে চীবর গ্রহণ করতেন না। ভিক্ষুদের ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে চীবর সেলাই - করা খুবই কঠিন ছিল। বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে চীবর দানের অনুমতি দিয়েছিলেন।

Content added || updated By

কঠিন চীবর দান সম্পর্কিত অনেক গান রয়েছে। তোমরা তোমাদের পছন্দমতো একটি গাইতে পারো। নিচে একটি গানের লিংক এবং কিউ আর কোড দেওয়া আছে।

চলো সবাই মিলে একটি গান গাই।

https://www.youtube.com/watch?v=RXJTj3t-WRg

 

Content added || updated By

কঠিন চীবর দান সম্পর্কিত যে গানটি শুনেছ, তার বাণী লিখে ফেলো।

 

 

গানের নাম:

শিল্পীর নাম:

গীতিকারের নাম:

সুরকারের নাম:

গানের বাণী/কথা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

 

 

 

কঠিন চীবর দানের নিয়মাবলি

 

বিনয় অনুসারে কঠিন চীবর দান চারটি পদ্ধতিতে করা যায়।

প্রথম: যেদিন কঠিন চীবর দান করা হবে, সেই দিনের সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে সুতা কাটা থেকে শুরু করে কাপড় বোনা, সেলাই করা এবং রং করে চীবর তৈরির যাবতীয় কাজ শেষ করে তা দান করতে হয়।

দ্বিতীয়: ভালো মানের সাদা কাপড় দিয়ে চীবর সেলাই ও রং করে দান দেওয়া যায়। 

তৃতীয়: আগে তৈরি করা চীবর দিয়েও কঠিন চীবর দান দেওয়া যায়। 

চতুর্থ: সেলাই না করেও শুধু সাদা কাপড় কঠিন চীবরের মতো দান করা যায়। তবে সেই সাদা বস্তুটি চীবরে পরিণত করতে হলে পরের দিনের সূর্যোদয়ের আগেই সেলাই ও রং করে কঠিন চীবরে পরিণত করতে হবে।

ভিক্ষু, শ্রামণ, দায়ক-দায়িকা ও উপাসক-উপাসিকাদের মধ্যে যে কেউ কঠিন চীবর দান করতে পারেন। কঠিন চীবর দানের দিনে প্রতিটি বিহারে প্রচুর ধর্মপ্রাণ উপাসক-উপাসিকা উপস্থিত হন। তাঁরা ত্রিশরণসহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে ত্রিরত্ন বন্দনা ও বুদ্ধপূজা ইত্যাদি সম্পন্ন করে উপস্থিত পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে উদ্দেশ্য করে কঠিন চীবর দান দিয়ে থাকেন। কঠিন চীবর দানের সময় তাঁরা এই উৎসর্গ মন্ত্রটি উচ্চারণ করেন:

'ইমং কঠিন চীবরং ভিষ্ণু সংঘম্স দেম কঠিনং অত্থরিতুং।' (৩ বার)

এই কথার অর্থ হলো- এই কঠিন চীবর ভিক্ষুসংঘকে কঠিনে আস্তীর্ণ করার জন্য দান করছি।

চীবরকে কঠিনে পরিণত করতে হলে কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষুসহ কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর প্রয়োজন হয়। চীবর গ্রহণের পর তা ভিক্ষু সীমায় (বিহারের পাশে স্থাপিত বিশেষ স্থান) নিয়ে গিয়ে যে ভিক্ষু চীবর গ্রহণ করবেন, সে ভিক্ষুর নাম উল্লেখ করে ভিক্ষুরা কর্মবাচা পাঠ করে তাঁকে চীবর প্রদান করেন। যে বিহারে ভিক্ষু সীমা নেই, সে ক্ষেত্রে বিহারের উদকসীমা বা বুদ্ধাসনের সামনে বসে ভিক্ষুরা বিনয় অনুসারে দানপ্রক্রিয়া সম্পাদন করেন। যেদিন যে বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন অনেক ভিক্ষুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সেই বিহারে যতজন ভিক্ষু উপস্থিত থাকেন, প্রত্যেকে চীবরদানের পুণ্য লাভ করেন।

কঠিন চীবর দানের দিনে শুধু চীবর নয়, সদ্ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকারা ভিক্ষুসংঘের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বস্তুও দান করে থাকেন। এসব দানীয় বস্তুও কঠিন চীবর দানের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়। এতেও কঠিন চীবর দানের মতো পুণ্য হয়। সে কারণে শ্রদ্ধাচিত্তে কঠিন চীবর দান দেওয়া উত্তম কাজ।

 

 

 

কঠিন চীবর দানের সুফল

 

কঠিন চীবর দানের সুফল অনেক বেশি। ভগবান বুদ্ধ ছয় অভিজ্ঞাসম্পন্ন পাঁচ শ ভিক্ষুকে নিয়ে হিমালয়ের অনোমতপ্ত হ্রদে গিয়ে কঠিন চীবরদানের সুফল বর্ণনা করেছিলেন। বুদ্ধ প্রথমে নাগিত স্থবিরকে কঠিন চীবর দানের সুফল বর্ণনা করতে বলেছিলেন। নাগিত স্থবির বলেছিলেন:

 

'কঠিন দানং দাতুন সংঘে গুণ বরুত্তমে

ইতো তিংসে মহাকল্পে নাভি জানামিদুগ্নাতিং।'

অনুবাদ: আজ থেকে ত্রিশকল্প পূর্বে অর্থাৎ শিখি বুদ্ধের সময়ে গুণোত্তম সংঘকে কঠিন চীবর দান করে কোনোদিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করিনি।

নাগিত স্থবিরের বর্ণনা মতে, কঠিন চীবর দানের ফলে তিনি আঠার কল্প দেবলোকে দিব্যসুখ উপভোগ করেন; চৌত্রিশবার স্বর্গের ইন্দ্ররূপে জন্মলাভ করে দেবলোক শাসন করেন; মাঝেমধ্যে রাজ চক্রবর্তীর সুখ লাভ করেন। তিনি যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন, সব সময় সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর কখনো ভোগ সম্পদের অভাব হয়নি। হাজারবার ঐশ্বর্যশালী ব্রহ্মা হয়েছিলেন। মনুষ্যকুলে জন্মগ্রহণ করলে বরাবরই মহাবিত্তশালী ধনীর গৃহে জন্মলাভ করেছিলেন।

নাগিত স্থবিরের পর বুদ্ধ নিজেই কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, অন্যান্য দানীয়বস্তু এক শ বছর দান করলেও একটা কঠিন চীবর দানজনিত পুণ্যের ষোলো ভাগের এক ভাগও হয় না। সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান স্বর্গের মতো রত্নখচিত চুরাশি হাজার সুরম্য বিহার নির্মাণ করে দান করলেও কঠিন চীবর দানের ষোলো ভাগের এক ভাগ হয় না। সম্যক সম্বুদ্ধ, পচ্চেক বুদ্ধ এবং বুদ্ধের মহাশ্রাবকগণ সবাই কঠিন চীবর দানের ফল লাভ করে নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

এ ছাড়া ত্রিপিটকে বলা আছে কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষুগণ ও দায়ক-দায়িকারাও কঠিন চীবর দানের সুফল ভোগ করতে পারেন।

কঠিন চীবরদানকারী দাতারা যে পাঁচটি ফল লাভ করতে পারেন সেগুলো হলো- 

১. সকম্মাবচরে যাবতীয় ভোগ সম্পদের অধিকারী হতে পারা: 

২. ভারনিক্সেপে চলাচলে বিপদমুক্ত থাকতে পারা: 

৩. বহুবখিকো বহু বস্তু (রেশমি, পশমি) লাভ করা; 

৪. নেকা ভোজনলাভী অর্জিত ভোগসম্পদ নির্বিঘ্নে ভোগ করতে পারা এবং 

৫. না দিন্নোদান লন্দ সম্পত্তি পরিপূর্ণ থাকে।

 

কঠিন চীবর দান বিনয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দান যখন তখন করা যায় না। বছরের নির্ধারিত সময়েই করতে হয়। এদিকে সংঘদান, পুগুলিক দান, অষ্টপরিষ্কার দান বিনয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বলে যে কোনো সময় তা সম্পাদন করা যায়। এই কারণে কঠিন চীবর দান অন্য দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কঠিন চীবর দানের ফলে ভিক্ষুসংঘ ও দায়ক-দায়িকা সবারই প্রভৃত পুণ্য হয়। এই পুণ্য লাভের বিবেচনায় কেউ কেউ কঠিন চীবর দানকে 'দানোত্তম' বলে অভিহিত করে থাকেন।

 

কঠিন চীবর দানের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

 

দানোত্তম কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের অন্যতম জাতীয় উৎসব। এই উৎসবের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব অনেক। প্রতি বছর প্রবারণা শেষে এক মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব চলতে থাকে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে নানা আয়োজন চলে। প্রতিটি বিহারকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। প্রত্যেক বৌদ্ধ গ্রামে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আগমন ঘটে। বিভিন্ন গ্রাম, নগর ও জনপদ হতে পুণ্যার্থীরা কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তখন ঘরে ঘরে যেন আত্মীয়স্বজনের মিলন মেলা বসে।

 

কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের আয়োজন এককভাবে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। পাড়া-প্রতিবেশী, দায়ক-দায়িকা, বিহার পরিচালনা কমিটি ও ভিক্ষুসংঘ মিলে একত্রে এই দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। এই আয়োজন করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় প্রত্যেকে যার যার মতামত দিতে পারেন। বিভিন্ন জনের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সবার গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা চর্চার সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া দায়ক-দায়িকা ও ভিক্ষুসংঘ যখন একত্রে মিলিত হয়, তখন ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও গ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজ উন্নয়নের নানা বিষয়েও আলোচনা হয়। এতে করে সমাজ উন্নয়নে নানা উপায় বের হয়ে আসে। ভিক্ষুসংঘ ও দায়ক-দায়িকাদের মধ্যে কাজের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের দিনে বিভিন্ন বিহার থেকে অভিজ্ঞ পন্ডিত ভিক্ষুমণ্ডলীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিন মাস বর্ষাব্রতের সময় তাঁরা ধর্ম অধ্যয়ন ও ধ্যান সাধনায় রত থাকেন। কঠিন চীবন দানের দিনে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশে বর্ষাবাস, প্রবারণা, কঠিন চীবর দান ও বৌদ্ধধর্মের দান, শীল ও ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতিতে কঠিন চীবর দানসভা দেবসভায় পরিণত হয়। ধর্মদেশনা ও ধর্মসভার মাধ্যমে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘ যেমন গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা প্রচারের সুযোগ পান, তেমনি ধর্ম সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দায়ক-দায়িকাদেরও ধর্মীয় চেতনা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরাও এ অনুষ্ঠানে তাঁদের কাছ থেকে ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হন। কঠিন চীবরদানকে কেন্দ্র করে অনেক বিহারে সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কঠিন চীবর দান উপলক্ষ্যে স্মারকগ্রন্থ ও বিভিন্ন সাময়িকী প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো বিহারে বিহার পরিচালনা কমিটি বা বৌদ্ধ সংগঠনের উদ্যোগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রি লাভ এবং সমাজসেবা ও রাষ্ট্রীয় কোনো কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন ও সম্মাননা জানানো হয়। এ রকম উদ্যোগের মাধ্যমে নবীন প্রজন্ম উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ এবং সমাজকর্মীরা সমাজসেবা ও মানব সেবার কাজে অংশ নিতে উৎসাহ বোধ করেন।

কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতেও সহায়তা করে। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলায় জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে থাকে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার কঠিন চীবর দান এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়। আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও পূজা-পার্বণে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। এতে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা, বোঝাপড়া ও হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

অনেক বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরাও ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরেন। কাজেই কঠিন চীবর দান আন্তঃসম্প্রদায়গত সম্প্রীতি বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে।

Content added || updated By

কঠিন চীবর দান কীভাবে চর্চা/পালন করা হয় তা সহপাঠীদের সঙ্গে দলীয়ভাবে শ্রেণিকক্ষে একটি সিমুলেশনে অংশগ্রহণ করি।

Content added || updated By

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না এর ঘরে (✔) চিহ্ন দাও।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ নং

সম্পূর্ণ করেছি

হ্যাঁ

না

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.