নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - জাতীয় চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় | NCTB BOOK

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট, ১৯৪৭) এবং ভারত (১৫ আগস্ট, ১৯৪৭) নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তৎকালীন পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পরবর্তীকালে এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার আগে আমরা ছিলাম পাকিস্তানের নাগরিক। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৬ শতাংশ) হওয়া সত্ত্বেও সে সময়ে পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষ নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে এখন বাঙালিরা স্বাধীনভাবে তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারছে।

পাকিস্তানি শাসনের (১৯৪৭-১৯৭১) আগে বাংলাদেশের এই অঞ্চল তুর্কি, আফগান, মুঘল এবং পরিশেষে ব্রিটিশ শাসনের (১৭৫৭-১৯৪৭) অধীন ছিল । ঔপনিবেশিক শাসন আমলে আমাদের এ অঞ্চলে দুটি বড় পরিবর্তন ঘটে। প্রথমতঃ ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এর ফলে আমরা পাশ্চাত্যের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিত হই। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফলে সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগরিত হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ঔপনিবেশিক সরকার আমাদের দেশে অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার (পঞ্চায়েত) পরিবর্তে নতুন ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার (ইউনিয়ন কাউন্সিল বোর্ড) প্রবর্তন ঘটিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টারির ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটিয়েছে। ১৮৬১ সাল থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক সংস্কার ও এর পথ ধরে পর্যায়ক্রমে জনগণ ভোটের অধিকার লাভ করে । এসবই ছিল ঐ সময়ে নাগরিক অধিকার ও সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ।