নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবা | NCTB BOOK

'সর্বজনীন সাক্ষরতা' অর্জনের জন্য ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে থাইল্যান্ডের জমতিয়েন নামক স্থানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক আন্তর্জাতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবা “সবার জন্য শিক্ষা” নামে এক কর্মসূচি গৃহীত হয়। এই কর্মসূচি অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী দেশসমূহে প্ৰাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নীতি ঘোষিত হয়। লক্ষ্য ছিল ২০০৫ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে হবে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ না করলে অধিকাংশ শিশু কীভাবে পড়তে বা লিখতে হয় তা শিখতে পারবে না। ফলে নিরক্ষরতার দুষ্টচক্র থেকে কোনো দেশ বেরিয়ে আসতে পারবে না। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রের অনগ্রসরতা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের এক বিপুল জনগোষ্ঠী দরিদ্র এবং তাদের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলের মাদ্রাসাসমূহ সরকার ঘোষিত ‘সবার জন্য শিক্ষা' কর্মসূচির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হচ্ছে না। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর তারা ঝরে পড়ে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট শ্রেণির শিক্ষা কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারে না। এর অনেকগুলো কারণ আছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্ষুধার্ত থাকে। পেটে ক্ষুধা থাকলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের পড়ায় মন বসে না। এজন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসায় মধ্যাহ্নকালীন খাবার কর্মসূচি চালু করে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী দরিদ্র বিধায় তাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই অল্প খেয়ে অথবা অভুক্ত অবস্থায় মাদ্রাসায় আসে। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, পড়াশুনায় মন বসে না এবং অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এসব অসুবিধা দূর করার জন্য মাদ্রাসায় মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রাম চালু করা হয় ।
মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য :  এই প্রোগ্রামের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো-

১। শ্রেণিকক্ষে অবস্থানকালীন সময়ে ক্ষুধা নিবারণ ।

২। মাদ্রাসায় ভর্তির পর ঝরে পড়া রোধ এবং ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি।

৩। শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাব ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি, সহাবস্থান, সহমর্মিতা বৃদ্ধি

৪। অপুষ্টি রোধ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ।

৫। খেলাধুলা ও স্কাউট কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ।

৬। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের উপর থেকে খাদ্য সংস্থানের চাপ দূরীভূতকরণ এবং তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ।

পুষ্টিকর টিফিন : মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীকে ৭-৮ ঘণ্টা অবস্থান করতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ে তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষুধার্ত হয়। এই সময়ের মাঝে তাদেরকে টিফিন সরবরাহ করলে টিফিন খেয়ে তারা ক্ষুধা নিবৃত্ত করে মাদ্রাসার পরবর্তী পাঠসমূহে মনোনিবেশ করতে পারে। এতে তাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর হয় । তাদের লেখাপড়ার মান উন্নত হয়। দুপুরের এই খাবারের মান যত উন্নত হবে ততই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো বোধ করবে। কাজেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদ্রাসার এই মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের সফল বাস্তবায়ন করে সার্বিকভাবে “সবার জন্য শিক্ষা” কর্মসূচিকে এগিয়ে নেবে, শিক্ষার হার বাড়বে এবং সর্বোপরি একটি সুস্থ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

কাজ-১ : “সবার জন্য শিক্ষা” কর্মসূচির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে তোমার দৃষ্টিতে প্রধান অন্তরায়সমূহ কী কী তা বোর্ডে লেখ। এরপর দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর

 কাজ-২ : মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ যুক্তিসহ লিখে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।


 

Content added || updated By