একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র | NCTB BOOK

নীতি হলো কোনো কাজ সম্পাদনের সাধারণ নির্দেশিকা (Guidance for action)। দীর্ঘ দিনের কার্য প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সকল ক্ষেত্রেই এমন কিছু নিয়ম-নীতি গড়ে ওঠে বা গৃহীত হয় যা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে ঐ কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন করা যায়। এ ধরনের নিয়ম বা দিক-নির্দেশনাকেই নীতি বলা হয়ে থাকে। কার্যকর সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এমন কিছু নিয়ম-রীতি বা নীতিমালা লক্ষণীয় । নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

১. লক্ষ্যের নীতি (Principle of goals) : প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সামনে রেখে সংগঠন গড়ে তোলার নীতিকেই লক্ষ্যের নীতি বলে । কার্যকর সংগঠন প্রতিষ্ঠায় একজন সংগঠককে প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বিবেচনা করতে হয়। লক্ষ্য যেমন হবে সংগঠনকেও সেভাবেই গড়ে তোলা আবশ্যক । এলাকার উন্নয়নে একটা ক্লাব গড়তে যেয়ে সংগঠনকে যেভাবে তৈরি করার প্রয়োজন হয় একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংগঠনকে সেভাবে গঠন করলে চলে না। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও এ কারণেই সংগঠন কাঠামোতে ভিন্নতা লক্ষ করা যায় ।

২. দক্ষতার নীতি (Principle of efficiency) : কমশক্তি ও উপায়-উপকরণ ব্যয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের নীতিই হলো দক্ষতার নীতি। ব্যবস্থাপনা সংগঠন প্রতিষ্ঠায় দক্ষতার বিষয়টি সবসময়ই সামনে রাখতে হয়। সংগঠনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্য প্রবাহের গতিপথ রচিত হয়ে থাকে । যেখানে যে বিভাগ খোলা প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব প্রত্যেকের জন্য যেভাবে নির্ধারণ করা উচিত, সম্পর্ককে যেভাবে ঠিক করে দেওয়া আবশ্যক তা যদি করা না যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে যতো নিষ্ঠা সহকারে কাজ করা হোক না কেন দক্ষতাসহকারে তা সম্পাদন ও কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ সম্ভব হয় না ।

৩. কাম্য পরিসর নির্ণয়ের নীতি (Principle of determining optimum span of supervision) : একজন নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাম্য সংখ্যক অধস্তন ন্যস্ত করার নীতিকেই কাম্য পরিসর নির্ণয়ের নীতি বলে । প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে নিযুক্ত প্রত্যেক নির্বাহী বা ব্যবস্থাপকগণ প্রত্যক্ষভাবে কতজন অধস্তনের কাজ তত্ত্বাবধান করবেন তা সংগঠন কাঠামোতে নির্দিষ্ট করা হয় । এক্ষেত্রে একজন নির্বাহীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এমন পরিমাণ নির্বাহীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করা উচিত যাতে তার পক্ষে অধস্তনদের কাজ সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা যায় । এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের উপরিস্তরে তত্ত্বাবধান পরিসর ছোট এবং নিচের দিকে তত্ত্বাবধান পরিসর কিছুটা বড় রাখতে হয় ।

৪. জোড়া-মই-শিকলের নীতি (Principle of scalar-chain) : প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সকল ব্যক্তি ও বিভাগকে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত করার নীতিকেই জোড়া-মাই-শিকলের নীতি বলে । একটি মজবুত ব্যবস্থাপনা সংগঠনে জোড়া মই-শিকলের নীতি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত প্রত্যেক বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তির কাজকে এমনভাবে একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে কেউই এর বাইরে না থাকে । এরূপ শিকল প্রতিষ্ঠার ফলে কর্তৃত্ব প্রবাহ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । এতে আদেশ দান ও এর বাস্তবায়ন সহজ হয় এবং দলীয় প্রচেষ্টা জোরদার হয় । 

৫. দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণের নীতি (Principle of defining specific responsibility) : দায়িত্ব হলো কর্ম সম্পাদন বা কর্তব্য পালনের দায়। ব্যক্তি ও বিভাগের কর্ম বা কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে দায় পালনযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক করার নীতিকেই দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণের নীতি বলে। ব্যবস্থাপনা সংগঠনে কর্মরত প্রত্যেক বিভাগ, উপবিভাগ ও কর্মীর দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকা আবশ্যক । প্রত্যেকেই যেনো জানতে পারে তার দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সীমা কতদূর । প্রতিষ্ঠানের উপরিস্তরের নির্বাহীদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বেশি হয় এবং ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে তা কম হতে থাকে । এতে ঊর্ধ্বতন অধিক কর্তৃত্বশালী হয়। ফলে সে যেমনি অধস্তনদেরকে জবাবদিহি করাতে পারে তেমনি নিজেও জবাবদিহির সম্মুখীন হবে বাধ্য থাকে । এছাড়া কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মধ্যে সবসময়ই সমতা বিধান অপরিহার্য ।

৬. আদেশের ঐক্য নীতি (Principle of unity of command) : একজন কর্মীর আদেশদাতা হবে একজন মাত্র ব্যক্তি - এটা নিশ্চিত করার নীতিকেই আদেশের ঐক্য নীতি বলে । সংগঠন প্রতিষ্ঠাকালে এমনভাবে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বণ্টন করা উচিত যেনো কোনো ক্ষেত্রেই দ্বৈত অধীনতার সৃষ্টি না হয় । অর্থাৎ একজন অধস্তনের যাতে প্রত্যক্ষভাবে একজন মাত্র আদেশকর্তা (Boss) থাকে এবং কোনো কর্মীকেই যেনো তার কাজের রিপোর্ট একাধিক ঊর্ধ্বতনের নিকট পেশ বা জবাবদিহি করতে না হয়। একাধিক আদেশদাতা থাকলে দ্বৈত অধীনতার সৃষ্টি হয় এবং সে অবস্থায় অধস্তনের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না ।
৭. সারল্য ও সুস্পষ্টতার নীতি (Principle of simplicity and clarity) : সংগঠন কাঠামোচিত্র দেখেই যেন এর বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ, কর্তৃত্ব প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে সহজে বোঝা যায় এবং দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব যেনো সবাই সহজে বুঝে নিতে পারে- এটা নিশ্চিত করার নীতিকেই সারল্য ও সুস্পষ্টতার নীতি বলে । ব্যবস্থাপনা সংগঠন এমন হওয়া আবশ্যক যাতে তা সহজ ও সরল হয় । এরূপ সংগঠন কাঠামো দেখে সংগঠনের ভিতরে ও বাইরের যে কেউ যেন এর স্তর বিন্যাস, কর্তৃত্বরেখা এবং জনশক্তি ও বিভাগ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। প্রত্যেকেই যেন তার ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সম্পর্কে এবং নিজস্ব দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে সমর্থ হয় । 

৮. বিশেষায়ণের নীতি (Principle of specialization) : বিশেষ কাজে কর্মীর বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্ম বিভাজন ও দায়িত্ব অর্পণের নীতিকেই বিশেষায়ণের নীতি বলে । বিশেষায়ণ বলতে কাজকে সুষ্ঠুভাবে বিভাজন করে একজন কর্মীর জন্য একটি কাজ নির্দিষ্ট করাকে বুঝায় যাতে সে একই ধরনের কাজ করতে গিয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায় । এতে কর্মীর কার্যদক্ষতা বাড়ে এবং প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে কাজের গতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হয় । কার্য বিভাজনকালে এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা উচিত ।

 

Content added By