অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টান ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

ষষ্ঠ অধ্যায়

যীশুর আহ্বানে পিতরের সাড়াদান

সাধু পিতর

যীশু তাঁর বাণী প্রচারের কাজে বারো জন অনুসারীকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁদেরকে তিনি আহ্বান করেছেন এবং তাঁরাও সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যীশুর শিষ্য হয়ে উঠেছেন। তাঁদের তিনি নাম দিয়েছেন প্রেরিতশিষ্য বা প্রেরিতদূত। কারণ তাঁরা জগতের সর্বত্র প্রেরিত হয়েছিলেন। সাধু পিতর ছিলেন প্রেরিতদের মধ্যে প্রধান। এই অধ্যায়ে সাধু পিতরের আহ্বান ও তাঁর সাড়াদান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার মাধ্যমে আমরা সাধু পিতরের আদর্শে যীশুর প্রিয় শিষ্য হয়ে উঠার চেষ্টা করব।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

• যীশু কর্তৃক পিতরের আহ্বান ও যীশুর আহ্বানে পিতরের সাড়াদান ব্যাখ্যা করতে পারব,

• পিতরের উপর যীশুর অর্পিত দায়িত্বসমূহ বর্ণনা করতে পারব

• খ্রিষ্টমণ্ডলীর ভিত্তি হিসেবে পিতরের বিষয় বর্ণনা করতে পারব

• পিতরের পুনরুত্থানের সাক্ষী হওয়ার কথা বর্ণনা করতে পারব;

• মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পিতরকে যে অধিকার ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা বর্ণনা করতে পারব,

পিতরের মসীহ বলে স্বীকারোক্তি সম্পর্কে বর্ণনা দিতে পারব;

• যীশুর যোগ্য শিষ্য হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হব।

 

ইশ্বরের আহ্বানে পিতরের সাড়াদান

পাঠ ১ : পিতরের আহ্বান ও সাড়াদান

পিতা ঈশ্বরের মুক্তি-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যীশু এ জগতে এসেছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তির বাণী সবাইকে শুনিয়েছেন এবং আহ্বান করেছেন যেন সবাই তাঁর দেখানো ধর্মপথে চলে। তিনি স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। ধর্মের এই বাণী প্রচার করা সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য তাঁকে জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনিই পথ, সত্য ও জীবন তাঁর মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।

যীশু তার জীবনকালে তাঁর অনুসারীদের মধ্য থেকে কয়েক জন মনোনীত করেছিলেন বাণী প্রচারের কাজ করার জন্য। প্রচার কাজে প্রেরণ করার আগে তিনি তাদেরকে গঠন দিয়েছিলেন। স্বর্গরাজ্যের গোপন রহস্য তিনি শিশুর মতো সরল হৃদয় এই শিষ্যদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।

যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরে শিষ্যেরা যাতে জগতের সকল প্রান্তে গিয়ে তাঁর পরিত্রাণের বাণী প্রচার করতে পারেন, এই জন্যে তাদের উপর তাঁর পবিত্র আত্মাকে দান করেছিলেন। এই পবিত্র আত্মার শক্তিতে শক্তিমান হয়েই প্রেরিত দূতেরা সকল কষ্ট নির্যাতন ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দিকবিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সাক্ষ্য বহন করেছিলেন। আজও আমরা সেই একই পবিত্র আত্মাকে পেয়ে যীশুর সাক্ষ্য বহন করার জন্য আহূত এবং প্রেরিত ।

এই বারোজন প্রেরিতদূত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে যীশুর সংস্পর্শে এসেছেন। একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে হয়তো তাঁরা ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের পরিচিত ছিলেন। আবার মন্দিরে যীশুর হারিয়ে যাওয়া, পণ্ডিতদের সাথে তত্ত্বালোচনা, কানা নগরের বিয়ে বাড়িতে আশ্চর্যকাজ এসব কারণেও যীশু তাঁর নিজ এলাকায় সকলের কাছে পরিচিত হয়ে থাকতে পারেন। এসব ঘটনার শ্রোতা হিসেবে শিষ্যেরা হয়তো আগে থেকেই যীশুর পরিচয় জানতে পেরেছিলেন। কেউ কেউ হয়তো দীক্ষাগুরু যোহনের কাছ থেকে যীশুর পরিচয় শুনে থাকতে পারেন। ফলে যীশুকে দেখার কিংবা তাঁর সংস্পর্শে যাওয়ার ইচ্ছা হয়তো তাঁদের অন্তরে আগে থেকেই ছিল।

তখনকার বাস্তবতায় সাগরতীরে ছোট ছোট নগর বা বসতি গড়ে উঠেছিল। আর যীশু সাগর তীরের এসব নগর-বন্দর ঘুরে ঘুরে বাণী প্রচার করেছিলেন। নৌকা, মাঝি ও জেলে ছিল যীশুর প্রচার কাজের মাধ্যম। শিষ্যদের যীশুকে দেখার সুপ্ত বাসনাটি পূর্ণ হয়, যখন যীশু শিষ্যদের নিজ নিজ এলাকায় প্রচার করতে যান। ফলে যীশুর সঙ্গে তাঁদের সরাসরি দেখা হয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে পিতরও ছিলেন সেখানেই যীশুর শিষ্য হওয়ার জন্য তাদের প্রতি চূড়ান্ত আহ্বান আসে। সাধু লুক খুব চমৎকারভাবে তাঁর লেখা মঙ্গলসমাচারে এই ঘটনাটি প্রকাশ করেছেন।

জেলেরা সারা রাত জাল ফেলে কোনো মাছ ধরতে পারেননি (লুক ৫:১-১২)। তাঁদের জন্য সেই রাতটি খুব হতাশার ও ক্লান্তিকর ছিল। সকালে যীশুকে তীরে দেখতে পেয়ে পিতর লাফ দিয়ে যীশুর ৫৬

খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

কাছে আসেন। তাঁদের ব্যর্থ অভিযানের কথা যীশুর সাথে সহভাগিতা করেন। এই পরিস্থিতিতে যীশু পিতরকে বললেন, “নৌকাটা এবার গভীর জলে নিয়ে যাও আর মাছ ধরার জন্য জাল ফেল।" সারা রাতের ব্যর্থতা ও ক্লান্তির জন্য যীশুর এই আদেশ পিতরের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাঁর মধ্যে কিছুটা ইতস্তত ভাব থাকলেও যীশুর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার ফলেই তিনি যীশুর কথার বাধ্য হলেন। তাঁরা সাগরে জাল ফেললেন। আর কী আশ্চর্য! আশ্চর্য!

এত মাছ ধরা পড়ল যে জালটা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো! ফলে অন্য জেলেদের সহযোগিতা নিতে হলো আর প্রচুর মাছ ধরা পড়ল। যীশুর সম্বন্ধে শিষ্যেরা যা শুনেছিলেন, আজ নিজেদের চোখেই তাঁরা তা দেখলেন। তা সত্যিই আশ্চর্য কাজ। তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই যে, যখন তাঁরা যীশুর আহ্বান পেলেন, "এখন থেকে মানুষই ধরবে তোমরা ।" ফলে জেলেদের জীবনে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল। শুধু যে প্রচুর মাছই ধরা পড়ল, তা নয় । এবার তাদের জীবনটাই যীশুর কাছে ধরা পড়ে গেল। তাঁরা আর মাছ ধরার জেলে রইলেন না, বরং মানুষ ধরার জেলে হয়ে গেলেন। অর্থাৎ এবার তাঁরা যীশুর প্রচার জীবনের সঙ্গী হয়ে গেলেন। আশ্চর্য ঘটনা এই যে, তাঁরা তাঁদের জাল, নৌকা, মাছ, বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন সব ফেলে রেখে যীশুর সঙ্গ নিলেন। তাঁদের মধ্যে পিতরও ছিলেন।

যীশুর কী আশ্চর্য ক্ষমতা! কত সহজেই না তিনি পিতরকে তাঁর দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্ত করে ঈশ্বরের সেবা কাজে নিয়োজিত করলেন। যীশুর মুখের কথা, চোখের দৃষ্টি পিতরের মন আকর্ষণ করেছিল। সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ এক চমৎকার আহ্বান- একটি আধ্যাত্মিক আহ্বান। ঈশ্বরের সেবা করার আহ্বান। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পিতর সবকিছু ফেলে রেখে যীশুর সঙ্গ নিলেন।

কাজ : যীশুর আহ্বানে পিতরের সাড়াদানের ঘটনাটি দলীয়ভাবে অভিনয় করে দেখাও।

পাঠ ২ : দায়িত্ব অর্পণ ও মণ্ডলীর ভিত্তি

সাধু পিতর গালিলেয়া প্রদেশের বেথসাইদা গ্রামের লোক ছিলেন তাঁর অন্য আরেকটি নাম হলো শিমন শিমনকে যীশুই পিতর নাম দিয়েছিলেন, যার অর্থ হলো পাথর। শিমন পিতরের পিতার নাম ছিল যোনা । তাঁর অন্য ভাইয়ের নাম ছিল আন্দ্রিয়, তিনিও যীশুর শিষ্য ছিলেন। তাঁরা পেশায় ছিলেন জেলে। জেবেদের ছেলে যাকোব ও যোহনের সাথে পিতর ও আন্দ্রিয় সমুদ্রে মাছ ধরার কাজ করতেন। যীশু পিতরের শাশুড়িকে সুস্থ করেছিলেন, এ থেকে বোঝা যায় যে, পিতর বিবাহিত ছিলেন। তবে কোথাও উল্লেখ

নেই যীশুর শিষ্য হওয়ার আহ্বানের সময় তাঁর স্ত্রী জীবিত কিংবা মৃত ছিলেন । যীশু প্রথম যাদেরকে আহ্বান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে শিমন পিতর ছিলেন অন্যতম। সমুদ্রে মাছ ধরার সময় যীশু পিতরকে আকস্মিকভাবে আহ্বান করেন । যীশুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পিতর হয়ে উঠেন শিষ্যদলের প্রধান ঈশ্বরের আহ্বানে পিতরের সাড়াদান

শিষ্যদের যাচাই করার জন্য একবার যীশু জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কে এই বিষয়ে, তাঁর সম্বন্ধে লোকেরা কী বলে। সেই উত্তর শোনার পর তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কে এই বিষয়ে শিষ্যেরা নিজেরা কী বলেন। শিষ্যদের মধ্যে পিতর বলেছিলেন, “আপনি মুক্তিদাতা, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র" (মথি ১৬:১৩-২০)। শিষ্যদের মধ্যে পিতরই প্রথম যিনি যীশুকে মুক্তিদাতা মশীহ বলে চিনতে পেরেছিলেন এবং স্বীকার করেছিলেন। এটি কোনো সাধারণ বিষয় নয়। একটি গভীর বিশ্বাসের তত্ত্ব সাধু পিতর এখানে প্রকাশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে পিতর পিতা ঈশ্বরের যুক্তি পরিকল্পনাকেই প্রকাশ করেছেন; যীশুর প্রতি তাঁর গভীর বিশ্বাসকেই স্বীকার করেছেন। এর মধ্য দিয়েই যীশুর সত্য পরিচয়কেই তিনি প্রকাশ করেছেন।

পিতরের উত্তরে যীশু খুশি হয়েছিলেন। তিনি পিতরকে ধন্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আশীর্বাদিত করেছেন। তিনি পিতরকে পাথর বলে সম্বোধন করে তাঁর নামের যথার্থতা প্রকাশ করেছেন পিতরকেই তিনি প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং বলেছেন, “তুমি পাথর, আর এই পাথরের উপরই আমি আমার মণ্ডলী স্থাপন করব। আমি তোমাকে স্বর্গরাজ্যের চাবি দিব, পৃথিবীতে যা তুমি বেঁধে রাখবে, স্বর্গেও তা বেঁধে রাখা হবে আর পৃথিবীতে যা তুমি ছেড়ে দিবে, স্বর্গেও তা ছেড়ে দেওয়াই হবে" (মথি ১৬:১৭-২০)।

পিতরের উপর দায়িত্ব অর্পণ

ফর্মা, খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা-অষ্টম শ্রেণি

 

খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

পিলাত ভবনে যীশুর বিচারের সময় একজন দাসীর প্রশ্নের জবাবে পিতর তিনবার যীশুকে অস্বীকার করেছিলেন। এতে পিতরের বিশ্বাস যে তখনও দুর্বল ছিল তাই প্রকাশ পেয়েছিল । পিতরের বিশ্বাসকে আরও খাঁটি করার জন্য যীশু একবার প্রশ্ন করেছিলেন, “পিতর, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?” যীশু পিতরকে তিনবার একই প্রশ্ন করেছিলেন। আর তিনবারই এই প্রশ্নের উত্তরে পিতর বলেছিলেন, “হ্যাঁ প্রভু, আমি আপনাকে ভালোবাসি।" প্রত্যুত্তরে যীশু পিতরকে বলেছিলেন, “তুমি আমার মেষদের দেখাশুনা কর" (যোহন ২১:১৫-১৭)।

এই কথোপকথনের মধ্য দিয়ে যীশু পিতরকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছেন যেন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। পিতরের উপর এক বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও বিশ্বাস স্বীকারের জন্যই যীশু পিতরকে এই মহান দায়িত্ব দিয়েছেন। “আমার মেষদের দেখাশুনা কর”-এটা একটা বড় দায়িত্ব যা পিতরের উপর অর্পিত হয়েছিল।

পিতর হয়ে উঠেছেন শিষ্যদলের প্রধান এবং মণ্ডলীর নেতা। পিতর ছিলেন মণ্ডলীর প্রথম পোপ। রূপক অর্থে স্বর্গরাজ্যের চাবিকাঠি তাঁরই হাতে দেওয়া হয়েছে। পিতর যীশুর অনেক ঘটনার সাক্ষী। যেখানে সকল শিষ্য যেতে পারেন নি সেখানে পিতর ও মাত্র অন্য দুই জন শিষ্য যীশুর সাথে ছিলেন। যেমন পর্বতের উপর যীশুর দিব্য রূপান্তর এবং গেরাসনীয় অঞ্চলে সমাজ গৃহে অধ্যক্ষ সাইরাসের মৃত কন্যাকে বাঁচিয়ে তোলার সময় তিনজন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে ছিলেন আর গেসিমানি বাগানে যীশুর মর্মবেদনার সময় পিতর, যাকোব ও যোহনকে যীশু সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

পিতর ছিলেন একজন সুবক্তা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পিতরই এগিয়ে গিয়েছেন ও শিষ্যদের একজন হয়ে কথা বলেছেন। অনেক সময় যীশুর বিভিন্ন প্রশ্নে পিতরই জবাব দিয়েছেন। কয়েক ক্ষেত্রে পিতর সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। ফলে তাঁর বিশ্বাসের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। জলের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তিনি ডুবে যাচ্ছিলেন। যীশু শিষ্যদের পা ধুয়ে দেওয়ার সময় পিতর বাধা দিয়েছিলেন। গেৎসিমানি বাগানে যীশুকে গ্রেফতার করার সময় পিতর তরবারি দিয়ে একজন সৈন্যের কান কেটে ফেলেছিলেন। মৃত্যুভয়ে সামান্য এক দাসীর কাছে পিতর যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি পিতরের বিশ্বাস দুর্বল ছিল। একবার যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। পিতর বললেন, আমাকেও অনুমতি দিন জলের উপর দিয়ে হেঁটে আপনার কাছে আসতে। যীশু তাঁকে আসতে বললেন। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে পিতর ডুবে যেতে লাগলেন যীশু তখন তাঁকে বললেন, “এত অল্প তোমার বিশ্বাস? কেনই বা সন্দেহ করলে তুমি?” (মথি ১৪:৩১)। বিশ্বাসের দুর্বলতায় যীশু তাঁকে গঠন দিয়েছেন। শক্তি ও সাহস দিয়েছেন যার ফলে পঞ্চাশত্তমী দিনে এই পিতরই সাহসের সাথে পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন এবং ফরিসিদের অভিযুক্ত করেছেন। পিতরের বক্তব্য শুনে সেদিন তিন হাজার মানুষ দীক্ষা নিয়ে খ্রিষ্ট বিশ্বাসী হয়েছিলেন। পিতর ঈশ্বরের আহ্বানে পিতরের সাড়াদান

মণ্ডলীর প্রধান হিসেবে বিশ্বাসকে ধরে রেখেছেন এবং আমৃত্যু যীশুর কথা প্রচার করেছেন। তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করে মণ্ডলীর ভিত্তি হয়ে উঠেছেন ।

কাজ : সাধু পিতর কোথায় কোথায় বাণী প্রচার করেছেন বাইবেল থেকে তার একটি তালিকা প্রস্তুত

কর।

পাঠ ৩ পুনরুত্থানের সাক্ষী সাধু পিতর

সাধু পিতর যে শুধু মণ্ডলীর ভিত্তি হয়ে উঠেছিলেন তা নয়, তিনি পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের প্রথম সাক্ষীও। সাধু যোহন তাঁর লিখিত মঙ্গলসমাচারে বর্ণনা করেছেন, সাধু পিতর যীশুর শূন্য কবরে প্রথম প্রবেশ করেছেন (যোহন ২০:১-৯)। যদিও যীশুর প্রিয় শিষ্য যোহন শূন্য কবর পিতরের আগেই দেখেছেন তথাপি তিনি ভিতরে প্রবেশ করেননি। মণ্ডলীর প্রধান হিসাবে অগ্রগণ্য পিতরের জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং পিতরকে আগে ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছেন।

যীশুর পুনরুত্থানের পর বেশ কয়েকবার যীশু শিষ্যদের দেখা দিয়েছেন এবং যীশুর সব দর্শনেই পিতর উপস্থিত ছিলেন যীশু যে তাঁর পুনরুত্থানের কথা মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন পিতর বুঝতে পেরেছেন, তা সত্যি হয়েছে। পিতর বিশ্বাস করেছিলেন যে যীশু সত্যিই পুনরুত্থান করেছেন।

সাধু পল তাঁর বিভিন্ন পত্রে যীশুর পুনরুত্থানের কথা প্রচার করেছেন। সবখানেই তিনি প্রকাশ করেছেন যে যীশু সর্বপ্রথমে পিতরকে দেখা দিয়েছেন এবং পরে অন্যান্য শিষ্য ও আরও অনেক মানুষকে দেখা দিয়েছেন। সাধু যোহন তাঁর লিখিত মঙ্গলসমাচারের শেষ অধ্যায়ে পিতরের সাথে পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের সুন্দর একটি সংলাপ তুলে ধরেন।

পিতর যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন। তিনবার অস্বীকারের বিপরীতে পিতর তিনবার যীশুকে 'ভালোবাসি' বলে স্বীকার করেছেন। আর যীশু পিতরকে তিনবার স্মরণ করিয়ে দেন, “আমার মেষদের দেখাশুনা কর।” মণ্ডলীর প্রধান হিসেবে পিতরের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো যীশু পুনরায় পিতরকে স্মরণ করিয়ে দেন।

পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের আদেশ পিতর জীবন দিয়ে পালন করেছেন। তিনি মণ্ডলীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি যুদা ইঙ্কারিয়তের স্থানে মাথিয়াসকে বেছে নেওয়ার নির্বাচন পরিচালনা করেন। আদি খ্রিষ্টমণ্ডলীতে খ্রিষ্টভক্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়াতে শিষ্যগণ খাবার বিতরণে অনেক সময় দিচ্ছিলেন। এদিকে তাঁদের বাণী প্রচারে বিঘ্ন ঘটছিল। তাই পিতরের নেতৃত্বে শিষ্যগণ সামাজিক কাজের জন্য সাতজন ডিকনকে বেছে নেন। বিভিন্ন ঘটনায় পিতর শিষ্যদের মুখপাত্র হয়ে বক্তব্য রাখেন। যেমন, পবিত্র আত্মার অবতরণের দিন পিতরই ইহুদি জনতার কাছে প্রথম বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। তখন তাঁর কোনো ভয়ভীতি ছিল না। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে শিষ্যদের মাঝে দ্বন্দ্ব হলে পিতর তা মীমাংসা করেছেন। পুনরুত্থানের কথা প্রচার করতে গিয়ে পিতর কারাবরণ করেছেন। তবে তাঁর বিশ্বাসের ফলে তিনি আশ্চর্যভাবে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের নামে সাধু পিতর অনেক আশ্চর্য কাজও করেছেন। একবার মন্দিরে প্রবেশের আগে মন্দির-দ্বারে এক খোঁড়া ভিক্ষুক পিতরের কাছে ভিক্ষা চাইল। পিতর বললেন, সোনা বা রুপা কিছুই নেই আমার, তবে আমার যা আছে, তোমাকে তা-ই দিচ্ছি। আমি নাজারেথের যীশুখ্রিষ্টের নামে বলছি, হেঁটে বেড়াও। আর তখনই খোঁড়াটি সুস্থ হয়ে গেল ।

যে পিতর বিশ্বাসে দুর্বল ছিলেন, পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি সবল হয়ে উঠেছিলেন, পঞ্চাশত্তমী পর্বদিনে তিনি সাহসের সাথে বক্তব্য দিয়েছেন এবং পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের কথা প্রচার করেছেন। তাঁর প্রচারের ফলে বিশ্বাসী হয়ে তিন হাজার মানুষ সেদিন দীক্ষা নিয়েছেন। তিনি গোটা মণ্ডলীর প্রধান হিসেবে বিশ্বাস শিক্ষা দিয়েছেন। এমনকি সুদূর রোম পর্যন্ত তিনি প্রচার করেছেন। শেষে সাধু পিতর ক্রুশের উপর নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। গুরুর পথ অনুসরণ করে সাধু পিতর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুকে বেছে নেন এবং বিশ্বাস রক্ষা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন

Content added || updated By