আবৃতবীজী উদ্ভিদে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় ডিম্বকে, ডিম্বক সৃষ্টি ফুলের স্ত্রীকেশরের গর্ভাশয়ে। শুক্রাণু সৃষ্টি হয় পরাগরেণুতে, পরাগরেণু সৃষ্টি হয় ফুলের পুংকেশরের পরাগধানীতে। কাজেই ফুলই আবৃতবীজী উদ্ভিদে জননাঙ্গ ধারণ করে। ফুল হলো উদ্ভিদের বংশবিস্তারের (প্রজননের জন্য বিশেষভাবে রূপান্তরিত বিটপ (shoot)।
যৌন প্রজনন (Sexual reproduction) : দু'টি ভিন্ন প্রকৃতির গ্যামিটের (পুং এবং স্ত্রী গ্যামিট) মিলনের মাধ্যমে যে প্রজনন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় তাই যৌন প্রজনন। যৌন প্রজননের মাধ্যমে সবীজী উদ্ভিদে বীজের সৃষ্টি হয়, তাই বীজ দ্বারা বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়াই যৌন প্রজনন । আবৃতবীজী উদ্ভিদের যৌন প্রজনন উগ্যামাস ধরনের।
রেণুস্থলী বা পরাগরেণুর পরিস্ফুটন (Development of Microsporangia) : ফুলের তৃতীয় স্তবক হলো পুংজনন স্তবক। এক বা একাধিক পুংকেশর নিয়ে এ স্তবক গঠিত। প্রতিটি পুংকেশর নিচে দণ্ডাকার পুংদণ্ড (filament) এবং মাথায়।স্ফীত পরাগধানী (anther) নিয়ে গঠিত। পরাগধানীর দুটি খণ্ডের মাঝখানে একটি যোজনী (connective) থাকে। পরাগধানী (anther) অনেকটা চারকোণবিশিষ্ট হয়। প্রতি কোলে ভেতরের দিকে কিছু কোষ আশপাশের কোষ বড় হয়। এদের ঘন সাইটোপ্লাজম এবং বড় নিউক্লিয়াস থাকে । এসব কোষকে আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ (cell) বলা হয়। এ কোষ প্রজাতিভেদে সংখ্যায় এক থেকে একাধিক থাকতে পারে। আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ বিভাজিত হয়ে পরিধির দিকে দেয়ালকোষ এবং কেন্দ্রের দিকে প্রাথমিক জননকোষে (primary sporogenous cell)পরিনত হয়।দেয়ালকোষ হতে পরে ৩-৫ স্তরবিশিষ্ট প্রাচীর গঠিত হয়। পরাগধানীর প্রাচীর ঘেরা এ অংশকে পরাগথলি বা pollen sac বলে। প্রাচীরের সবচেয়ে ভেতরের স্তর হলো ট্যাপেটাম।
প্রাথমিক জনন কোষ পরাগমাতৃকোষ হিসেবে কাজ করতে পারে অথবা বিভাজিত হয়ে অনেকগুলো পরাগমাতৃকোষে পরিনত হতে পারে। পরাগমাতৃকোষে তখন মায়োসিস (meiosis) বিভাজন হয়, ফলে প্রতিটি ডিপ্লয়েড (2n) পরাগ মাতৃকোষ হতে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) পরাগরেণুর সৃষ্টি হয়। পরাগরেণু বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত হলুদ বর্ণের হয়। ট্যাপেটাম (tapeturn) বিগলিত হয়ে পরিস্ফুটিত পরাগরেণুর পুষ্টি সাধন করে। পরাগমাতৃকোষ হতে সৃষ্ট চারটি পরাগরেণু বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্নভাবে সাজানো থাকে, চারটি পরাগরেণু একসাথে হালকাভাবে লাগানো অবস্থায় থাকেযাকে পরাগ চতুষ্টয় বা পোলেন টেট্রাড (Pollen tetrad) বলে। তবে পরিণত অবস্থায় পরাগরেণুগুলো পরস্পর আলাদা হয়ে যায়। Orchidaceae, Asclepiadaceae এসব গোত্রের উদ্ভিদের পরাগরেণু পৃথক না হয়ে একসাথে থাকে। একসাথে থাকা পরাগরেণুগুলোর এ বিশেষ গঠনকে পলিনিয়াম (pollinium) বলে।
পরাগরেণুর গঠন :
পরাগরেণু সাধারণত গোলাকার, ডিম্বাকার ও ত্রিভুজাকার হয় এবং এদের ব্যাস ১০ থেকে ২০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি পরাগরেণু এককোষী, এক নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট এবং হ্যাপ্লয়েড ।প্রতিটি পরাগরেণুর দুটি ত্বক থাকে। বাইরের ত্বকটি কিউটিনযুক্ত, পুরু ও শক্ত। এটি বহিঃত্বক বা এক্সাইন (axine) নামে পরিচিত। এক্সাইন বিভিন্নভাবে অর্নামেন্টেড থাকে। এক্সাইন-এ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে, প্রধান উপাদান হলো স্পোরোপোলেনিন। ভেতরের ত্বকটিপাতলা এবং সেলুলোজ নির্মিত। এর নাম অন্তঃত্বক বা ইনটাইন (intine)। এক্সাইন (বহিঃত্বক) স্থানে স্থানে অত্যন্ত পাতলা ছিদ্রের ন্যায় অংশকে জনন ছিদ্র, রেণুর বা জার্মপোর (germpore) বলে। একটি পরাগরেণুতে জার্মপোর (২০টি পর্যন্ত) থাকে। পরাগরেণুর সাইটোপ্লাজম ঘন থাকে এবং প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসটি কালে নিউক্লিয়াসটি
পুংগ্যামেটোফাইটের বিকাশ বা পরিস্ফুটন ও গঠন :
পরাগরেণু(n) হলো পুংগ্যামেটোফাইটের প্রথম কোষ । পরাগরেণুর নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি অসম নিউক্লিয়াস গঠন করে। বড়টিকে বলাহয় নালিকা নিউক্লিয়াস (tube nucleus) এবং ছোটটিকে বলা হয় জনন নিউক্লিয়াস (generative nucleus)। পরাগধানীর প্রাচীর ফেটে গেলে সাধারণত এই দ্বি-নিউক্লিয়াস অবস্থায় পরাগরেণু বের হয়ে আসে এবং পরাগায়ন (Pollination) সংঘটিত হয়।
উদ্ভিদে পরাগায়নের কারণে কোনো তরল পদার্থ (পানি) ছাড়াই নিষিক্তকরণ (fertilization) সম্ভব হয়।পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগরেণু স্ত্রীকেশরের গর্ভমুণ্ডে পতিত হয় এবং অঙ্কুরিত হয় অর্থাৎ ইনটাইন বৃদ্ধি পেয়ে জার্মপপার (জননছিদ্র) দিয়ে নালিকার আকারে বাড়তে থাকে। এ নালিকাকে পোলেন টিউব (pollen tube) বা পরাগ নালিকা বলে।
পাগনালিকার ভেতরে নালিকা নিউক্লিয়াস এবং পরে জনন নিউক্লিয়াস প্রবেশ করে। নালিকাটি গর্ভদণ্ডের ভেতর ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং গর্ভাশয়ের ভেতরে ডিম্বর পর্যন্ত পৌঁছায়। ইতোমধ্যে জনন নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিসপ্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি পুংগ্যামিট (male gamete) বা শুক্রাণু সৃষ্টি করে।
পরাগরেণু, নালিকা নিউক্লিয়াস, জনন নিউক্লিয়াস, পরাগ নালিকা, পুংগ্যামিট- এগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হলো পুংগ্যামিটোফাইট, যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং স্পোরোফাইটের উপর নির্ভরশীল।
ডিম্বকের পরিস্ফুটন :
ডিম্বক হলো ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরস্থ একটি অংশ যা মাতৃ জননকোষ সৃষ্টি করে এবং নিষেকের পর বীজে পরিণত হয়। ডিম্বক (ovule) সৃষ্টি হয় গর্ভাশয়ের ভেতরে অমরা (placenta) হতে। প্রথমে অমরাতে একটি ছোট স্ফীত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্ফীত অঞ্চলটি ক্রমে ডিম্বকে পরিণত হয়।প্রথম পর্যায়ে ডিম্বকের টিস্যুকে মূলত দুটি ভাগে চিহ্নিত করা যায়- চারপাশের আবরণ টিস্যু এবং মাঝের নিউসেলাস (nucellus) টিস্যু। পরবর্তী পর্যায়ে বাইরের আবরণটির নিচে আর একটি আবরণ তৈরি হয়। বাইরের আবরণটি বহিঃত্বক এবং ভেতরেরটি অন্তঃত্বক হিসেবে পরিচিত। ডিম্বকের অগ্রভাগে নিউসেলাসের একটু অংশ অনাবৃত থাকে, কারণ ত্বক এ অংশকে আবৃত করে না।
এটি একটি ছিদ্র পথ বিশেষ, যাকে মাইক্রোপাইল (micropile) বা ডিম্বকরন্ধ্র বলা হয়। ডিম্বকরন্ধের কাছাকাছি নিউসেলাস টিস্যুতে একটি কোষ আকারে বড় হয়। এর নিউক্লিয়াসটিও আকারে অপেক্ষাকৃত বড় থাকে এবং কোষটি ঘন সাইটোপ্লাজমে পূর্ণ থাকে এ কোষকে প্রাইমারি আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ (primary archesporial cell) বলে।
আর্কিম্পোরিয়্যাল কোষটি বিভক্ত হয়ে একটি দেয়ালকোষ এবং একটি প্রাথমিক জননকোষ (primary sporogenous cell) সৃষ্টি করতেপারে অথবা সরাসরি স্ত্রীরেণু মাতৃকোষ (megaspore mother cell) হিসেবে কাজ করে।
ডিপ্লয়েড স্ত্রীরেণু মাতৃকোষটি মায়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড স্ত্রীরেণু (megaspore) তৈরি করে। চারটি স্ত্রীরেণুর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনটি নষ্ট হয়ে যায় এবং একটি (নিচেরটি) কার্যকর হয়।
ডিম্বকের গঠনঃ
একটি ডিম্বক (megaspo-rangium=ovule) নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:
১। ডিম্বকনাড়ী (Funiculus) : ডিম্বকের বোঁটার অংশকে ডিম্বকনাড়ী বলা হয়। এ বোঁটার সাহায্যে ডিম্বক অমরার সাথে সংযুক্ত থাকে। কোনো কোনো প্রজাতিতে ডিম্বকনাড়ী ডিম্বকত্বকের সাথে আংশিকভাবে যুক্ত থেকে শিরার মতো গঠন করে। এই যুক্ত অংশকে
২। ডিম্বকনাভী (Hilum) : ডিম্বকের যে অংশের সাথে ডিম্বকনাড়ী সংযুক্ত থাকে তাকে ডিম্বকনাভী বলে।
৩। নিউসেলাস (Nucellus) বা ভ্রূণপোষক টিস্যু: তুক দিয়ে ঘেরা প্রধান টিস্যুই হলো নিউসেলাস।
৪। ডিম্বকত্বক (Integument) : নিউসেলাসের বাইরের আবরণীকেই ডিম্বকত্বক বলা হয়। সাধারণত এটি দুস্তর বিশিষ্ট।
৫। ডিম্বকরন্ধ্র (Micropyle) : ডিম্বকের অগ্রপ্রান্তে ত্বকের ছিদ্র অংশই ডিম্বকরন্ধ্র বা মাইক্রোপাইল।
৬। ডিম্বকমূল (Chalaza) : ডিম্বকের গোড়ার অংশ, যেখান থেকে ত্বকের সূচনা হয়, তাকেডিম্বকমূল বলে।
৭। ভ্রূণথলি (Embryo sac) : নিউসেলাসের মধ্যে অবস্থিত থলির ন্যায় অংশকে ভ্রূণথলি বলে।
ভ্রূণথলিঃ নিম্নবর্ণিত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।
(ক) গভর্যন্ত্র (Egg-apparatus) : ডিম্বকরন্ধ্রের সন্নিকটে তিনটি কোষ দিয়ে গঠিত ভ্রূণথলির অংশকে গর্ভযন্ত্র বলে।গভর্যন্ত্রের তিনটি কোষের মধ্যে ভেতরের দিকের সবচেয়ে বড় কোষটিকে ডিম্বাণু এবং বাইরের দিকের ছোট কোষ দুটিকে সহকারি কোষ (Synergid) বলে।
(খ) প্রতিপাদ কোষ (Antipodal cell) : এরা ডিম্বক মূলের দিকে অবস্থিত ভ্রূণথলির তিনটি বিশেষ কোষ।
(গ) সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস (Secondary nucleus) ; দুমেরু থেকে আগত এবং দ্রুণথলির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দুটি নিউক্লিয়াসকে মেরু নিউক্লিয়াস (Polar nucleus) বলে । নিউক্লিয়াস দুটি মিলিত হয়ে যে একটি ডিপ্লয়েড (2n) নিউক্লিয়াস গঠন করে তার নাম সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস।
বিভিন্ন প্রকার ডিম্বক :
১. উধ্বমুখী (Orthotropous বা Atropous ) : ঊর্ধ্বমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ উপরে থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকনাড়ী, ডিম্বকমূল ও ডিম্বকরন্ধ্র একই সরল রেখায় খাড়াভাবে অবস্থিত থাকে। ডিম্বকরন্ধ্র শীর্ষে এবং ডিম্বকমূল গোড়ায় অবস্থান করে। উদাহরণ: বিষকাটালী (পানি মরিচ), গোলমরিচ, পান ইত্যাদি।
২. অধোমুখী বা নিম্নমুখী (Anatropous ) অধোমুখী ডিম্বকের মুখ নিচে থাকে। এই প্রব ডিম্বকে ডিম্বকরন্ধ্র নিচের দিকে ডিম্বকনাড়ীর কাছাকাছি থাকে আর ডিম্বকমূল উপরে থাকে। উদাহরণ : শিম, রেড়ি, ছোলা ইত্যাদি। ঊর্ধ্বমুখী ও অধোমুখী একটি অপরটির উল্টো।
৩. পার্শ্বমুখী (Amphitropous) : পার্শ্বমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ উপরে বা নিচে নয়, এক পাশে থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকরন্ধ্র ও ডিম্বকমূল বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই পাশে থাকে এবং ডিম্বনাড়ীর সাথে সমকোণে অবস্থান করে। উদাহরণ-ক্ষুদিপানা, পপি (আফিম) ইত্যাদি।
৪. বক্রমুখী (Campylotropous) ; বক্রমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ পাশ্বমুখীর চেয়ে কিছুটা বেঁকে নিচের দিকে মুখ করানো অবস্থায় থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকমূল ডিম্বকনাড়ীর সাথে সমকোণে অবস্থিত কিন্তু ডিম্বকরঞ্জ অঞ্চলটি একটু বাঁকা হয়ে ডিম্বকনাড়ীর কাছাকাছি চলে আসে। উদাহরণ- সরিষা, কালকাসুন্দা।
স্ত্রীগ্যামিটোফাইটের বিকাশ বা পরিস্ফুটন (Development of female gametophyte) ও গঠন :
স্ত্রীরেণু (megaspore) হলো স্ত্রীগ্যামিটোফাইট-এ ট-এর প্রথম কোষ। কার্যকরী স্ত্রীরেণুটি বিভাজিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট গঠন করে। স্ত্রীগ্যামিটোফাইট এমব্রিয়ো স্যাক (embryo sac) বা ভ্রূণথলি নামেও পরিচিত। ভ্রূণথলিরস্ত্রীরেণুটি বিভাজিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট গঠন করে।
ভ্রূণথলির গঠনঃ প্রধানত তিন প্রকার, যথা-
(i) মনোস্পোরিক (monosporic)-এক্ষেত্রে একটি স্ত্রীরেণু ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে;
(ii) বাইস্পোরিক(bisporic)-এক্ষেত্রে দুটি স্ত্রীরেণু ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে এবং
(iii) টেট্রাস্পোরিক (tetrasporic)-এক্ষেত্রে চারটি স্ত্রীরেণুই ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে। শতকরা প্রায় ৭৫% উদ্ভিদেই মনোস্পোরিক প্রক্রিয়ায় ভ্রূণথলি গঠিত হয়। তাই
এখানে ভ্রূণথলি গঠনের মনোস্পোরিক প্রক্রিয়াই বর্ণনা করা হলো। এটি Polygonun ধরন হিসেবেও পরিচিত। সর্বপ্রথম স্ট্রাসবার্গার ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে Polygonum divaricatum নামক উদ্ভিদে মনোস্পোরিক প্রক্রিয়ায় ভ্রূণথলি গঠনের বর্ণনা দেন।
স্ত্রীগ্যামিটোফাইট সৃষ্টি :
এক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড স্ত্রীরেণু মাতৃকোষ হতে মায়োসিস প্রক্রিয়ায় চারটি হ্যাপ্লয়েড স্ত্রীরেণু গঠিত হয় যার মধ্যে উপরের তিনটি নষ্ট হয়ে যায় এবং নিচেরটি কার্যকরী থাকে।
কার্যকরী স্ত্রীরেণু নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দুটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিউক্লিয়াস দুটি স্ত্রীরেণু কোষের দুই মেরুতে অবস্থান করে। প্রতিটি মেরুর নিউক্লিয়াস পরপর দুবার বিভাজিত হয়ে চারটি করে নিউক্লিয়াস গঠন করে। প্রতিটি নিউক্লিয়াস অল্প সাইটোপ্লাজম এবং হালকা প্রাচীর দিয়ে আবৃত থাকে।
ইতোমধ্যে স্ত্রীরেণুকোষটি একটি দুইমেরু যুক্ত থলির ন্যায় অঙ্গে পরিণত হয় এবং এর প্রতি মেরুতে ৪টি করে মোট ৮টি নিউক্লিয়াস থাকে। এ অবস্থায় প্রতি মেরু হতে একটি করেইতোমধ্যে স্ত্রীরেণুকোষটি একটি দুইমেরু যুক্ত থলির ন্যায় অঙ্গে পরিণত হয় এবং এর প্রতি মেরুতে ৪টি করে মোট ৮টি নিউক্লিয়াস থাকে ।
এ অবস্থায় প্রতি মেরু হতে একটি করে নিউক্লিয়াস থলির মাঝখানে চলে আসে এবং পরস্পর মিলিত হয়, যাকে ফিউশন নিউক্লিয়াস বা সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস (fusion nucleus or secondary nucleus) বলা হয়।
ভ্রূণথলির যে মেরু ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে থাকে সে মেরুর তিনটি নিউক্লিয়াসকে একত্রে egg apparatus বা ডিম্বাণু যন্ত্র বা গর্ভযন্ত্র বলে। ডিম্বাণু যন্ত্রের মাঝখানের নিউক্লিয়াসটি বড় থাকে, একে এগ, ওভাম বা উস্ফিয়ার (egg, ovum or oosphere) বলা হয়। বাংলায় একে আমরা ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামিট বলি ।
ডিম্বাণুর দু'পাশের দুটি নিউক্লিয়াসকে সিনারজিড (synergid) বা সাহায্যকারী নিউক্লিয়াস বা সাহায্যকারী কোষ বলা হয়। ভ্রূণথলির যে মেরু ডিম্বকমূলের দিকে থাকে সে মেরুর নিউক্লিয়াস তিনটিকে প্রতিপাদ নিউক্লিয়াস বা প্রতিপাদ কোষ বলে।
ভ্রূণথলি এবং এতে অবস্থিত ডিম্বাণু, সাহায্যকারী নিউক্লিয়াস, প্রতিপাদ নিউক্লিয়াস এবং সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসকে মিলিতভাবে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট বলা হয়। ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রীগ্যামিটোফাইটের উৎপত্তি ঘটে। স্ত্রীগ্যামিটোফাইট স্পোরোফাইটের উপর নির্ভরশীল।