Blog

নোবেল পুরস্কার ২০২৪ তালিকা | সকল বিজয়ীদের নাম ছবি সহ

 নোবেল পুরস্কার ২০২৪ বিজয়ীদের তালিকা || Nobel Prize - 2024 (পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা,সাহিত্য,শান্তি,অর্থনীতি)

🩺 চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

👑চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ২ জন।

🏅ভিক্টর অ্যাম্ব্রোস (Victor Ambros)

🏅গ্যারি রুভকুন (Gary Ruvkun)

অবদান:

মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কার এবং এটি পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল (post-transcriptional) জিন নিয়ন্ত্রণে কীভাবে ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করা।
[for the discovery of microRNA and its role in post-transcriptional gene regulation]

🪐 পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

👑 পদার্থ বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ২ জন।

🏅 জন জে. হপফিল্ড [John J. Hopfield]

🏅 জেফরি এইচ. হিন্টন [Geoffrey E. Hinton]

অবদান:

কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং সক্ষম করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের জন্য।

[“for foundational discoveries and inventions that enable machine learning with artificial neural networks.”]

⚗️ রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

👑 রসায়ন বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ৩ জন।

🏅 ডেভিড বেকার [David Baker]

➝ জাতীয়তা - আমেরিকান।

🏅ডেমিস হ্যাসাবিস [Demis Hassabis]

➝ জাতীয়তা - ব্রিটিশ।

🏅জন এম. জাম্পার [John M. Jumper]

➝ জাতীয়তা - আমেরিকান।

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

❐ অবদান:

✅ ডেভিড বেকার: প্রোটিন ডিজাইনের কম্পিউটেশনাল পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য।

[for computational protein design]

✅ ডেমিস হ্যাসাবিস এবং জন এম. জাম্পার: প্রোটিনের কাঠামো অনুমানের যুগান্তকারী পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য সম্মিলিতভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

[For protein structure prediction]

📖 সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

👑 সাহিত্যে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ১ জন।

🏅 হ্যান কাং [Han Kang]

জাতীয়তা - সাউথ কোরিয়ান।

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

❐ অবদান: 

তিনি নোবেল পেয়েছেন তার রচিত কাব্যিক আবেদনময়ী ফিকশন রচনার জন্য যেগুলো তীক্ষ্ম ঐতিহাসিক মনোবেদনা তুলে ধরে এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে। [for her intense poetic prose that confronts historical traumas and exposes the fragility of human life]

👑 শান্তিতে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

👑শান্তিতে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে - ১টি সংস্থা।

🏅 নিহন হিদানকিও [Nihon Hidankyo]

জাপানিজ সংস্থা।

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

❐ অবদান: 

একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করার জন্য যে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। [for its efforts to achieve a world free of nuclear weapons and for demonstrating through witness testimony that nuclear weapons must never be used again]

💵 অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

👑 অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ৩ জন।

🏅 ড্যারন অ্যাসেমোগলু [Daron Acemoglu]

- টার্কিশ-আমেরিকান নাগরিক।

🏅 সাইমন জনসন [Simon Johnson]

- ব্রিটিশ-আমেরিকান নাগরিক।

🏅জেমস এ. রবিনসন [James A. Robinson]

- ব্রিটিশ নাগরিক।

⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯

💼 অবদান:

গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে তা নিয়ে কার্যকরী গবেষণা করার জন্য।

[for studies of how institutions are formed and affect prosperity]


চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন। তাঁরা মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন। মাইক্রোআরএনএ হলো ছোট জেনেটিক উপাদান, যা কোষের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের একটি নতুন ধারা উন্মোচন করেছে এবং এটি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় নতুন দিক উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

তাঁদের গবেষণা মূলত কেঁচো প্রজাতি Caenorhabditis elegans এর ওপর চালানো হয়েছিল, যেখানে তাঁরা দেখান যে মাইক্রোআরএনএ বিভিন্ন জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পরে তাঁরা এই প্রমাণও পান যে মানবদেহ এবং অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে একই ধরনের মাইক্রোআরএনএ পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রায় ৮০০টিরও বেশি মাইক্রোআরএনএ মানব জিনোমে বিদ্যমান বলে জানা গেছে, এবং এগুলো বিভিন্ন ধরনের জিন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই আবিষ্কারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার নতুন পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, বিশেষ করে ক্যান্সার, সংক্রমণ, এবং স্নায়বিক রোগের ক্ষেত্রে মাইক্রোআরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে। যদিও এখনও কোনো ওষুধ বাজারে আসেনি, তবে এই গবেষণাটি ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিবেচিত হচ্ছে

এটি জিন প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ মাইক্রোআরএনএর কার্যকারিতা অনেক রোগের কারণ বোঝার পাশাপাশি নতুন ধরনের চিকিৎসার পথ খুলে দিয়েছে​ (NobelPrize.org)

২০২৪ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে।

 

২০২৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া দুইজন ভিক্টর অ্যাম্ব্রোস (Victor Ambros) ও গ্যারি রুভকুন (Gary Ruvkun)

২০২৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া দুইজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

২০২৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন উভয়েই জৈবিক গবেষণায় বিশিষ্ট অবদান রেখেছেন, বিশেষ করে মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। তাদের গবেষণা কোষের জিন নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে।

ভিক্টর অ্যামব্রোস (Victor Ambros):

ভিক্টর অ্যামব্রোস একজন মার্কিন জীববিজ্ঞানী, যিনি ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কার করেন, যা ছোট আকারের আরএনএ অণু এবং কোষের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৯৩ সালে তার গবেষণায় তিনি প্রথমবারের মতো lin-4 নামের একটি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন, যা জিন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং কোষের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামব্রোস তার গবেষণায় দেখান, এই ছোট মাইক্রোআরএনএ কিভাবে বড় প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম না হলেও জিনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি কোষের বিকাশ এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে​।

গ্যারি রুভকুন (Gary Ruvkun):

গ্যারি রুভকুন একজন মার্কিন জীববিজ্ঞানী, যিনি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল জিন নিয়ন্ত্রণ। রুভকুন ১৯৯৪ সালে lin-14 নামক আরেকটি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন, যা কোষের বিকাশের সাথে জড়িত। তিনি প্রমাণ করেন যে এই জিনগুলো কিভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং কোষের বৃদ্ধির সময় কোন জিনগুলি সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় থাকে।

রুভকুন এবং অ্যামব্রোস একত্রিতভাবে কাজ করে দেখান যে মাইক্রোআরএনএ বিভিন্ন জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরবর্তী প্রমাণে তারা দেখান যে এই প্রক্রিয়াটি মানবদেহের জিনোমেও বিদ্যমান।

তাদের গবেষণার প্রভাব:

অ্যামব্রোস এবং রুভকুনের আবিষ্কৃত মাইক্রোআরএনএ জিন নিয়ন্ত্রণের একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাইক্রোআরএনএ কোষের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই আবিষ্কার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, বিশেষত ক্যান্সার ও স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায়।

তাদের কাজের জন্য ২০২৪ সালে তাদের নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা তাদের কৃতিত্ব এবং বায়োমেডিক্যাল গবেষণায় তাদের অবদানের স্বীকৃতি ।


 

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন জন হপফিল্ড (Princeton University) এবং জিওফ্রে হিন্টন (University of Toronto)। ২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে। তাদের কাজ মূলত কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্কের (artificial neural networks) উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে। এই পুরস্কারটি তাদেরকে মেশিন লার্নিংয়ে (machine learning) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রদান করা হয়েছে, যা বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অন্যতম ভিত্তি।

হপফিল্ড একটি এসোসিয়েটিভ মেমোরি তৈরি করেন যা চিত্র এবং ডেটা পুনর্গঠন করতে সক্ষম, এবং হিন্টন বোল্টজম্যান মেশিন তৈরি করেন যা তথ্য বিশ্লেষণের জন্য স্বায়ত্তশাসিতভাবে প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পারে। এই আবিষ্কারগুলো আজকের শক্তিশালী মেশিন লার্নিং সিস্টেমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে​(NobelPrize.org)​।

২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টন উভয়েই কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্ক এবং মেশিন লার্নিং ক্ষেত্রে প্রভাবশালী গবেষক হিসেবে খ্যাত।

২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া দুইজন জন জে. হপফিল্ড [John J. Hopfield] ও জেফরি এইচ. হিন্টন [Geoffrey E. Hinton]

২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া দুইজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

জন জে. হপফিল্ড (John J. Hopfield):

জন হপফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ১৯৩৩ সালে শিকাগোতে জন্ম নেওয়া হপফিল্ড পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি মূলত কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্কের বিকাশে অবদান রাখার জন্য খ্যাত। তার উদ্ভাবিত হপফিল্ড নেটওয়ার্ক চিত্র বা প্যাটার্ন সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করতে সক্ষম একটি ধরনের মডেল। এটি নিউরাল নেটওয়ার্কের বিকাশে একটি মৌলিক ধারণা হয়ে ওঠে, যেখানে নোডগুলোর ভ্যালু সমন্বয় করা হয় যাতে তারা পুনর্গঠিত চিত্রটি সঠিকভাবে পুনর্নির্মাণ করতে পারে।

হপফিল্ডের কাজ পদার্থবিজ্ঞানের "স্পিন সিস্টেম" ধারণার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে প্রতিটি অণুর স্পিন এটমের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। তার নেটওয়ার্কে, প্রতিটি নোডকে একটি পিক্সেল হিসাবে কল্পনা করা যেতে পারে এবং তাদের ভ্যালু পরিবর্তন করে নেটওয়ার্ক শক্তির কমানোর মাধ্যমে প্যাটার্ন শনাক্ত করা হয়​(NobelPrize.org)​।

জিওফ্রে ই. হিন্টন (Geoffrey E. Hinton):

জিওফ্রে হিন্টন যুক্তরাজ্যে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর অধ্যাপক। হিন্টন কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্কের একটি নতুন ধরনের নেটওয়ার্ক, বোল্টজম্যান মেশিন, উদ্ভাবন করেন। এটি প্যাটার্ন এবং ডেটা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে পারে। বোল্টজম্যান মেশিন পরবর্তী সময়ে মেশিন লার্নিংয়ের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হিন্টন মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। তিনি মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করেছেন, যা আজকের উন্নত প্রযুক্তি এবং গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে​(NobelPrize.org)।

তাদের অবদান:

হপফিল্ড এবং হিন্টনের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। তারা নিউরাল নেটওয়ার্কের কাঠামো এবং কাজের মূল তাত্ত্বিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা আজকের সময়ে বিভিন্ন কাজে, যেমন নতুন পদার্থ তৈরি, ইমেজ রিকগনিশন, এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।


রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন এম. জাম্পার। এ পুরস্কার তাঁদের প্রোটিন ডিজাইন ও কাঠামো পূর্বাভাসে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয়েছে।

ডেভিড বেকারকে পুরস্কৃত করা হয়েছে প্রোটিন ডিজাইনের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী কাজের জন্য। তিনি কম্পিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ধরনের প্রোটিন ডিজাইন করেছেন, যা প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান নয় এবং এটি চিকিৎসা ও বায়োটেকনোলজিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

অন্যদিকে, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম. জাম্পারকে আলফাফোল্ড প্রকল্পের মাধ্যমে প্রোটিনের ত্রি-মাত্রিক গঠন পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাঁদের কাজ প্রোটিন ফোল্ডিং সমস্যার সমাধান করেছে, যা রোগ গবেষণা ও ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে । 

২০২৪ সালে রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

২০২৪ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জয়ী তিনজন হলেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন এম. জাম্পার। তাঁরা প্রোটিন কাঠামো পূর্বাভাস ও ডিজাইন নিয়ে তাঁদের অসামান্য অবদানের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। চলুন, তাঁদের কাজ এবং অবদান নিয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নিই।

ডেভিড বেকার:

ডেভিড বেকার একজন মার্কিন বিজ্ঞানী এবং সিয়াটল ভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে অধ্যাপক। তিনি কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণা নতুন প্রোটিন তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে, যা প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান নয়। বেকারের তৈরি প্রোটিন ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম গবেষকদের বিশেষ প্রোটিন তৈরি করতে দেয়, যা রোগ নিরাময় এবং বায়োটেকনোলজির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাঁর কাজ নতুন প্রোটিন ডিজাইনকে উন্নত করে তুলেছে, যা মানবদেহের বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হতে পারে​।  

ডেমিস হাসাবিস:

ডেমিস হাসাবিস একজন ব্রিটিশ কগনিটিভ বিজ্ঞানী এবং DeepMind প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে কাজ করেন। হাসাবিসের নেতৃত্বে DeepMind আলফাফোল্ড প্রকল্প চালু করেছে, যা প্রোটিন কাঠামোর পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। তাঁর তৈরি এআই মডেলটি বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ, প্রোটিন ফোল্ডিং সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমে নতুন ওষুধ আবিষ্কার এবং রোগ নির্ণয়ে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে​।

জন এম. জাম্পার:

জন এম. জাম্পার DeepMind-এর একজন প্রধান গবেষক এবং ডেমিস হাসাবিসের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি আলফাফোল্ড প্রকল্পের মূল প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর কাজ প্রোটিন ফোল্ডিং প্রক্রিয়ার গভীর বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এই প্রযুক্তি ক্যান্সার, নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, এবং আরও অনেক রোগের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে​।

এই তিনজনের গবেষণা বায়োমেডিকেল এবং বায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী গবেষকদের জন্য একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।

২০২৪ সালে রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষনা করার সময়ঃ

২০২৪ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে ঘোষণা করা হয়।


সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং। তাকে এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয়েছে তার "তীব্র কবিত্বময় গদ্যের জন্য, যা ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি ও মানব জীবনের ভঙ্গুরতা নিয়ে সাহসিকতার সাথে মুখোমুখি হয়েছে।" তার সাহিত্যকর্মগুলোতে মানবজীবনের জটিলতা, ব্যথা ও ট্রমার মতো বিষয়গুলো গভীরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। হান কাং কোরিয়ান ভাষায় লেখেন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তার বইগুলো, বিশেষ করে The Vegetarian উপন্যাসটি, ব্যাপকভাবে পরিচিত।

এই সম্মানজনক পুরস্কারটি তাকে প্রদান করা হয় ১০ অক্টোবর ২০২৪ সালে। ৬ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার ঘোষণা চলতে থাকে, এবং সাহিত্যের জন্য এই পুরস্কার তাকে তার সাহিত্যের অসাধারণ অবদানের জন্য প্রদান করা হয়​(NobelPrize.org)​

 ২০২৪ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া লেখিকা হান কাং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই

হান কাং একজন প্রখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ান লেখিকা, যিনি ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্মে মানবজীবনের গভীরতম অভিজ্ঞতা, বেদনা, ট্রমা এবং মানবিক ভঙ্গুরতা নিয়ে বিশ্লেষণ রয়েছে। তার লেখার স্টাইল অত্যন্ত কবিত্বময় এবং নান্দনিকতায় পূর্ণ।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন:

হান কাং জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গ্যাংওন প্রদেশের গওচে শহরে। তিনি একটি সাহিত্যিক পরিবারে বড় হয়েছেন; তার পিতা হান সিওং-উন একজন সুপরিচিত ঔপন্যাসিক। কৈশোরে তার পরিবার সিউলে চলে আসে, যেখানে তিনি সাহিত্যিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন এবং তরুণ বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন।

সাহিত্যকর্ম:

হান কাং মূলত কোরিয়ান ভাষায় লেখেন, তবে তার রচনা আন্তর্জাতিক স্তরে অনূদিত হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তার বিখ্যাত উপন্যাস "The Vegetarian" ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি কোরিয়ান এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার পর ২০১৬ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করে। এই উপন্যাসটি একজন নারীর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার জীবনে ঘটে যাওয়া মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলোর কাহিনী তুলে ধরে, যা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে ওঠে।

হান কাংয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে "Human Acts", যা ১৯৮০ সালের গওয়াংজু গণহত্যার উপর ভিত্তি করে রচিত। এ উপন্যাসটিতে কোরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস এবং মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো অত্যন্ত গভীরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তার আরও একটি জনপ্রিয় রচনা হল "The White Book", যেখানে শোক ও জীবনের সংবেদনশীলতাকে কেন্দ্র করে দার্শনিক অন্বেষণ রয়েছে।

সাহিত্যিক প্রভাব ও থিম:

হান কাংয়ের লেখায় মানবিক দুর্বলতা, স্মৃতি, ট্রমা, এবং মানবিক অনুভূতির গূঢ় বিষয়গুলি ফুটে ওঠে। তার কবিত্বময় গদ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের গভীরতা রয়েছে, বিশেষ করে কোরিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তার রচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। হান কাং তার লেখা দিয়ে পাঠকদেরকে কেবলমাত্র গল্প বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না; বরং তিনি লেখার মাধ্যমে একধরনের নীরব প্রতিবাদ ও মানবতাবোধের প্রকাশ ঘটান।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:

হান কাংয়ের সাহিত্যকর্ম তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে পরিচিত করেছে। ২০১৬ সালে তিনি ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে তার খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী হিসেবে এই সম্মান লাভ করলেন।

হান কাং সম্পর্কে আরও জানতে, আপনি তার বইগুলো পড়তে পারেন যা কোরিয়ান ও ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষনা করার সময়ঃ

২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ১০ অক্টোবর ২০২৪ সালে ঘোষণা করা হয়।


শান্তিতে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে নিহন হিদানকিও, যা হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলার বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে। তাদের সাক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে, যা "পারমাণবিক নিষিদ্ধতা" নামে পরিচিত। 

নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ওয়েবসাইটে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকিওকে ২০২৪ সালের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হিবাকুশা নামেও পরিচিত হিদানকিও জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের এ তৃণমূল আন্দোলনকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা বং পারমাণবিক অস্ত্র  যে আর কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়- প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে তা  প্রদর্শনের জন্য  নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো।

নওেয়েজিয়ান নোবেল কমিটি আজ ১১ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে এ পুরস্কারের জন্য সংস্থার নাম ঘোষণা করে।

নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট এই বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬ জন প্রার্থীর নাম নিবন্ধন করে, যার মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি এবং ৮৯টি সংস্থা ছিল।

১৯০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১১৪ বার নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১১১ ব্যক্তি ও ৩১ সংস্থা মিলে পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১৪২। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি ১৯১৭, ১৯৪৪ ১৯৬৩  সালে তিনবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে।  জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তর ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে দুইবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া ২৭ স্বতন্ত্র সংস্থা নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।


অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার - ২০২৪

২০২৪ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ — দারন আসিমোগ্লু, সাইমন জনসন এবং জেমস রবিনসন। তাদের গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতির আর্থিক সমৃদ্ধিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ব্যাখ্যা করে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য কেন ঘটে, তা বিশ্লেষণ করে।

অবদান

দারন আসেমোগলু, সাইমন জনসন এবং জেমস রবিনসনদের গবেষণা মূলত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের ভূমিকা এবং সেগুলো কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে, তার ওপর ভিত্তি করে। তারা দেখিয়েছেন, যে সমাজগুলোর শাসনব্যবস্থা দুর্বল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণকে শোষণ করে, সেসব সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। তাদের গবেষণা বৈশ্বিক বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে, যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যকার সম্পর্ক বোঝা, যা তারা "Why Nations Fail" (২০১২) বইতে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। তারা দেখিয়েছেন, রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি জাতির উন্নতি বা পতনের কারণ হতে পারে। তাদের গবেষণা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শাসনব্যবস্থার জটিলতা বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে

২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

দারন আসেমোগলু, সাইমন জনসন এবং জেমস রবিনসন, ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজন অর্থনীতিবিদ, যারা অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও শাসনের ভূমিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন।

দারন আসেমোগলু: দারন আসেমোগলু একজন তুর্কি-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ এবং MIT-তে অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি মূলত রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো "Why Nations Fail," যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে উন্নত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।

সাইমন জনসন: সাইমন জনসন MIT-এর অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তিনি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর গভীর গবেষণা করেছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। আসেমোগলু এবং রবিনসনের সাথে যৌথভাবে গবেষণা করে তিনি দেখিয়েছেন, দুর্বল শাসন ও খারাপ প্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি জাতির অর্থনৈতিক পতনের কারণ হয়।

জেমস রবিনসন: জেমস রবিনসন একজন রাজনৈতিক বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ, যিনি বর্তমানে University of Chicago-তে অধ্যাপনা করেন। তার গবেষণা মূলত রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে। তিনি আসেমোগলু এবং জনসনের সঙ্গে মিলে দেখিয়েছেন যে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি।

এই তিনজন গবেষক তাদের কাজে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে একটি জাতির উন্নয়ন বা পতনকে নির্ধারণ করে, তা বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের কাজ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কৌশল তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষনা করার সময়ঃ

২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কারটি "Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel" নামে পরিচিত এবং প্রতি বছর অর্থনীতিতে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রদান করা হয়


২০২৪ নোবেল পুরস্কার (Nobel prize) কোন দিন কোন ক্ষেত্রে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা?

২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময়সূচি অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হবে ৭ থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে। নীচে ক্ষেত্রভিত্তিক তারিখগুলো দেওয়া হল:

  • ফিজিওলজি বা মেডিসিন: ৭ অক্টোবর স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৩০ মিনিট। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট।
  • পদার্থবিজ্ঞান: ৮ অক্টোবর স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট।
  • রসায়ন: ৯ অক্টোবর রসায়ন ক্যাটাগরির বিজয়ীর নাম জানা যাবে। পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিেট। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে।
  • সাহিত্য: ১০ অক্টোবর এদিন ঘোষণা করা হবে সাহিত্য ক্যাটাগরির পুরস্কার। স্থানীয় সময় বেলা ১টা। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা।
  • শান্তি পুরস্কার: ১১ অক্টোবর নোবেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম জানা যাবে। বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা।
  • অর্থনীতি: ১৪ অক্টোবর ছয় নম্বর এবং সর্বশেষ অর্থনীতি ক্যাটাগরির পুরস্কার ঘোষণা করা হবে এদিন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছর শেষ হবে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিট।

সব পুরস্কারই ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে।​


নোবেল পুরস্কার কি?

নোবেল পুরস্কার হলো বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত পুরস্কারগুলোর একটি, যা সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের উইলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এই পুরস্কারটি ১৯০১ সাল থেকে প্রতি বছর সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয় যারা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য, শান্তি, এবং অর্থনীতিতে অসাধারণ অবদান রাখেন।

নোবেল পুরস্কার

নোবেল পুরস্কারের বিভিন্ন বিভাগ:

  1. পদার্থবিজ্ঞান (Physics)
  2. রসায়ন (Chemistry)
  3. চিকিৎসাবিজ্ঞান (Physiology or Medicine)
  4. সাহিত্য (Literature)
  5. শান্তি (Peace)
  6. অর্থনীতি (Economic Sciences) - এটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রত্যেক পুরস্কারের সাথে নগদ অর্থ, একটি সনদপত্র এবং একটি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত হয়।

এই পুরস্কারগুলোর মধ্যে "নোবেল শান্তি পুরস্কার" সবচেয়ে বিখ্যাত, যা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় অসামান্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।


কেন দেওয়া হয় নোবেল পুরষ্কার?

নোবেল পুরস্কার এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় যারা মানবজাতির কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখেন। প্রতিটি বিভাগে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অসামান্য আবিষ্কার বা অবদানের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কারের যোগ্যতার মাপকাঠি আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানামায় বর্ণিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই পুরস্কার সেইসব মানুষকে দেওয়া হবে যারা:

  1. পদার্থবিজ্ঞানরসায়নে অসামান্য আবিষ্কার বা তত্ত্ব প্রণয়ন করেছেন।
  2. চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
  3. সাহিত্যে অসামান্য সৃষ্টি করেছেন যা মানবিক মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।
  4. শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যেমন: যুদ্ধ বা সংঘাত নিরসনে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন।
  5. অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতি বা উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে (১৯৬৮ সাল থেকে এটি চালু করা হয়েছে)।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মনোনীত করার প্রক্রিয়া কঠোর এবং গোপনীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটি এই মনোনয়ন এবং পুরস্কার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকে। নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রতি বছর ৩০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর যাচাই বাছাই শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

15.7k

Author

583 Followers

অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে

All Comments

Promotion