উদ্ভিদ প্রজননের প্রধান উদ্দেশ্য কোনটি?

Created: 1 year ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago

কৃত্রিম প্রজননের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ

পৃথিবীর জনসংখ্যা যেভাবে দ্রুত হারে বাড়ছে সে তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে না। আমাদের মতো অনুন্নত দেশগুলোর খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। উন্নত প্রকরণের উদ্ভিদ লাগিয়ে কম খরচে অধিক ফসল ফলানোই হলো বর্তমান সময়ের কৃত্রিম প্রজননের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

নিম্নে কৃত্রিম প্রজননের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো । 

১. অধিক ফলন : শস্যদানা, তত্ত্ব, গবাদি পশুর খাদা, ফল প্রভৃতি উদ্ভিদজাত উৎপন্ন দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা কৃত্রিম প্রজনন এর প্রধান উদ্দেশ্য । নিচে শস্যদানার ক্ষেত্রে কয়েকটি সাফল্য উল্লেখ করা হলো।

ক, ভুট্টা : আমেরিকার বিজ্ঞানী G. H. Shull ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ভুট্টার সংকর উদ্ভিদ সৃষ্টির মাধ্যমে ভুট্টার দানা উৎপাদনে দারুণভাবে সফল হন। এর পর ভুট্টার দ্বিসংকর পদ্ধতিতে এর উৎপাদন আরও বাড়ানো হয়েছে।

খ. ধান : ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সাফল্য এসেছে। ১৯৬০-এর দশকে ফিলিপিনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের (IRRI, International Rice Research Institute) বিজ্ঞানীগণ ইরি (IRRI) ধান উদ্ভাবন করেন। এখন এশিয়া মহাদেশে ধান উৎপাদন গত ৪০ বছরে প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। IRRI এর উচ্চ ফলনশীল ধানের সংকর জাত যা তাইওয়ানের প্রাকৃতিক খাটো জাত / Dee gee-woo-gon' এবং ইন্দোনেশিয়ার লম্বা প্রকৃতির 'Peta' জাতের মধ্যে কৃত্রিম সংকরায়ন ঘটিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে IR8 জাতের ধান বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশেও ধান গবেষণা কেন্দ্র BRRI (Bangladesh Rice Research Institute) থেকে একই প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবন করেছে BRRI (ব্রি) নামক বেশ কয়েক জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান যা বাংলাদেশের খাদ্য সংকট থেকে অনেকাংশে রক্ষা করেছে। এর মধ্যে ব্রি-৮, ব্রি-১১, ব্রি-১৫ ও ব্রি-২৯ উল্লেখযোগ্য।

গ. গম : ঠিক একই উপায়ে গমের ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে বিশ্বের যে উন্নত জাতের গমের চাষ হচ্ছে তার প্রায় সব গমই সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে। স্বনামধন্য আমেরিকান বিজ্ঞানী Norman Earnest Borlaug)যে উচ্চ ফলনশীল (মেক্সিকান গম উদ্ভাবন করেছেন তাতে পৃথিবীতে গম উৎপাদনের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে ও অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

২. উন্নত গুণগতমান গুণগত মানের ওপর ঐ ফসলের ব্যবহার নির্ভর করে। ফসলভেদে গুণগতমানের পার্থক্য হয়ে থাকে। যেমন খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে দানার আকার, বর্ণ, গন্ধ, রন্ধন গুণাগুণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি ফলের আকার, বর্ণ,গন্ধ ইত্যাদি সবজির সংরক্ষপমান (ইক্ষুর শর্করার পরিমাণ ইত্যাদি।

৩. রোগপ্রতিরোধী জাত সৃষ্টি : যেকোন শস্যের সর্বোচ্চ ফলনের প্রধান সমস্যা হলো রোগ ও কীট পতঙ্গের আক্রমণ। BRRI উদ্ভাবিত মুক্তা (BR 10)) গাজী (BR 14), মোহিনী (BR 15) (শাহীবালাম (BR 16) এগুলো রোগ প্রতিরোধী জাত।

৪. প্রতিকূল সহিষ্ণুতা : ফসল ও স্থানভেদে কোন কোন ফসলের অতিবৃষ্টি, খরা, শীত ইত্যাদি এক বা একাধিক প্রতিকূলতা প্রতিরোধী জাতে সৃষ্টির আবশ্যকতা দেখা দেয়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এটি সম্ভব । ৫. অধিক অভিযোজন ক্ষমতা : কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সৃষ্টি উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি থাকায় এরা বিচিত্র আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জন্মাতে পারে।

৬. একই সময়ে পরিপক্কতা : একই শস্য ক্ষেত থেকে একাধিকবার ফসল সংগ্রহের জন্য বেশি পরিশ্রম ও অর্থের প্রয়োজন হয়। একই সময়ে পরিপক্ক হয় সেরূপ শস্য উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। এটি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে করা যায়। 

৭. বীজ ঝরে পড়া স্বভাবের পরিবর্তন : ফসল সংগ্রহের আগে মাঠে কোন শস্যের ফল থেকে বীজ ঝরে যেতে থাকে তবে তা ফলনকে বেশি ক্ষতি করে। এটা মুগডালে দেখা যায়। এ বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন ।

৮. উদ্ভিদ বিবর্তনে : কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায় । বিবর্তনের আধুনিক ধারণা মতে জিন মিউটেশন, ক্রোমোসোমীয় মিউটেশন জেনেটিক রিকম্বিনেশন নির্বাচন হলো প্রজাতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ।

Content added By
Promotion