পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা একটি শৃঙ্খলা যার মধ্যে অনেক বিশেষ ক্ষেত্র জড়িত। মেশিন বা অন্যান্য যে কোনো কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করলে দুর্ঘটনার যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। দুর্ঘটনার কারণে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। দুর্ঘটনা কবলিত একজন দক্ষ কৰ্মী আহত বা নিহত হলে তার পরিবার তথা দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজ করার সময় সকল দুর্ঘটনা হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রত্যেক কর্মীর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। ওয়ার্কশপে দক্ষ কর্মী ও যন্ত্রপাতি উভয়ই মূল্যবান সম্পদ। সতর্কতার অভাবে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কর্মীদের দৈহিক ক্ষয়ক্ষতি ও যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি সহ জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সময় সকলকে পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিৎ।
ওয়ার্কশপে বিভিন্ন প্রকার ভারী যন্ত্রপাতি এবং মেশিন নিয়ে কাজ করতে হয়। এখানে কোনো মেশিন, যন্ত্রপাতি, টুলস, ছোট ছোট যন্ত্রাংশ ইত্যাদি এলোমেলো অবস্থায় রাখলে যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া কাজ করার পর বিভিন্ন প্রকার ধাতব টুকরা, চিপস, তৈল, মবিল, গ্রিজ ইত্যাদি পড়ে থাকলে- সেগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করলে এবং যন্ত্রপাতিগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে না রাখলে ওয়ার্কশপের কর্মীগণ যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে এমন একটি পরিবেশ থাকা দরকার যেখানে প্রতিটি কর্মী কাজ করার সময় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পেতে পারেন, প্রয়োজনে সহজেই একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারেন এবং একজন কর্মী সুস্থতার সাথে মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারেন। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা হলো কাজে বা চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ বিষয়ক নিয়ম শৃঙ্খলা বা নিয়ম-নীতি। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যা কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করে।
পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার উদ্দেশ্য হলো-
ক) সকল পেশার কর্মীরা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে কল্যাণ সাধন করে পদোন্নতি লাভ করবেন।
খ) কাজের পরিবেশের কারণে কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করা।
গ) বিপজ্জনক কাজ বা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে কর্মীদের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখবে। ঘ) কর্মীদের শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ্য অনুসারে পেশাগত পরিবেশ তৈরি এবং ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।
স্বাস্থ্যই সকল স্যুখের মূল। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে তারা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে না। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং কাজে অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়। ফলে কর্মী এবং মালিক উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কর্মী, প্রশাসন এবং মালিকপক্ষের সকলকেই স্বাস্থ্য সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক।
স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা আমাদেরকে অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তার প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ সুস্থ জীবনই হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি যেমনভাবে আমাদের নিরাপদ রাষ্ট্রে তেমনভাবে অন্যদেরকেও অসুস্থ হওয়া থেকে নিরাপদ রাখে।
কর্মস্থলের পরিবেশ এবং কাজের ধরনের কারণে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে সকল রোগ বা ব্যধিতে আক্রান্ত হয় বা হতে পারে তাদেরকে পেশাগত রোগ বলা হয়। নিম্নে কতিপয় পেশাগত রোগের নাম উল্লেখ করা হলো-
১. চর্মরোগ- Dermatitis
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ - Respiratory illnesses
৩. পেশী ও হাড়ের ব্যাধিসমূহ - Musculoskeletal disorders (MSD9)
৪. শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস Hearing loss
৫. ক্যানসার- Cancer
৬. সে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসমূহ - Streas and mental health disorders
৭. সংক্রামক রোগসমূহ - Infectious diseases
কর্মরত অবস্থায় একজন শ্রমিক বা কর্মচারি সাধারণত ৩টি কারণে অসুস্থতায় ভুগতে পারে-
১. কর্মস্থলের পরিবেশ সংক্রান্ত: বিশৃঙ্খলা, উচ্চ শব্দ, উচ্চ তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাব, পর্যাপ্ত আলোর অভাব এবং ধূলাবালির কারণে একজন কর্মী নানারকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, প্রবণশক্তি কমে যাওয়া, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ, যক্ষা, শ্বাসনালীর প্রদাহ ইত্যাদি।
২. কর্মীসংক্রান্ত: প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, নির্দেশিকা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব, বয়স ও দৈহিক সামর্থের অভাবেও নানা রকম অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
৩. মানসিক অস্যুস্থতা: কর্মক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সহকর্মীদের আচার-আচরণ, বৈষম্য, চাকুরির অনিশ্চয়তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অকারণে হয়রানি, নির্যাতন ইত্যাদি একজন কর্মীর উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে যা তার কর্মক্ষেত্রের উৎসাহ ও উদ্দীপনা কমিয়ে দেয় এবং কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে একসময় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
১.২.২ স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শ্রম বিধিসমূহ
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কোনো নর্দমা, পয়ঃবর্জ্য বা অন্য কোনো জঞ্জাল হতে সৃষ্ট দুষিত বাষ্প হতে মুক্ত রাখতে হবে এবং বিশেষ করে-
(ক) প্রতিষ্ঠানের মেঝে, কর্মকক্ষ, সিঁড়ি, যাতায়াতের পথ হতে প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ও আবর্জনা ঢাকনা দেওয়া বাক্সে অপসারণ করতে হবে, যাতে উক্ত আবর্জনা দুর্গন্ধ বা জীবাণু বিস্তার করতে না পারে। ধাতব পদার্থ, উৎকট গন্ধময় আবর্জনা, রাসায়নিক আবর্জনা ও মেডিকেল আবর্জনা ভিন্ন ভিন্ন বক্সে প্রতিদিন নিয়মিত অপসারণ করতে হবে।
(খ) প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রের মেঝে সপ্তাহে অন্তত একদিন অবস্থাভেদে এবং কাজের প্রকৃতি ভেদে পানি দ্বারা ধুতে হবে এবং প্রয়োজনে ধোয়ার কাজে জীবানু নাশক ব্যবহার করতে হবে। অবস্থাভেদে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ভিজা কাপড় দ্বারা মেঝে ধুয়ে দিতে হবে।
(গ) যেক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে কোনো মেঝে এমনভাবে ভিজে যায় যে, এর জন্য পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
• উক্ত মেঝে অবশ্যই অভেদ্য পদার্থ (Impervious Material) দ্বারা নির্মিত হতে হবে।
• উক্ত মেঝের নির্মাণকৌশল ঢালুবিশিষ্ট এবং উপযুক্ত নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে কারখানার মূল নর্দমা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে, যাতে নিষ্কাশিত পানি অথবা কোনো তরল পদার্থ মেঝেতে জমে থাকতে না পারে।
(ঘ) প্রতিষ্ঠানের সকল অভ্যন্তরীণ দেওয়াল, পার্টিশন, ছাদ, সিঁড়ি, যাতায়াতপথ-
• রং অথবা বার্নিশ করা থাকলে, প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার
• পুনরায় রং বা বার্নিশ করতে হবে। রং অথবা বার্নিশ করা এবং
• বহির্ভাগ মসৃণ হলে, প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার পানি, ব্রাশ ও ডিটারজেন্ট দ্বারা ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার চুনকাম বা রং করতে হবে।
(ঙ) উক্ত কার্যক্রমের যাবতীয় রেকর্ডসমূহ নির্ধারিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
উক্তরূপ প্রত্যেক কক্ষে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিপরীতমুখী জানালার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেখানে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয় সেখানে নিষ্কাশন পাখা (Exhaust Fan) স্থাপন করা যাবে, যাতে সেখানে কর্মীগণ মোটামুটি আরামে কাজ করতে পারেন, যাতে কর্মীগণের স্বাস্থ্যহানি রোধ হয়। আরও শর্ত থাকে যে, কর্মক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে বায়ুচলা চলের উক্ত ব্যবস্থার প্রয়োজন হবেনা। প্রত্যেক কর্মকক্ষে অন্তত একটি তাপ পরিমাপকযন্ত্র (থার্মোমিটার) সচল অবস্থায় রাখতে হবে এবং ইহা যথাযথ মান সম্পন্ন হতে হবে এবং কর্মকক্ষের দেয়ালের দৃশ্যমান স্থানে ইহা স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে কক্ষের দেওয়াল এবং ছাদ এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে উক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায় এবং যতদূর সম্ভব কম থাকে।
• প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্যহানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত কর্মী এক সাথে করা যাবে না।
• প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্তত ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে (কোনো ঘরের উচ্চতা মেঝে হতে ৪.২৫ মিটারের অধিক হলে এটি বিবেচনায় আনা হবেনা)।
• যদি প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো মালিককে অনুরোধ করে তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মকক্ষে সর্বোচ্চ কতজন লোক কাজ করতে পারবেন, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা একটি নোটিশ বোর্ডে দিতে হবে।
প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষকে অনুমতি দিতে পারবেন, যদি তিনি এইমর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তাতে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে এই বিধান মানার প্রয়োজন নেই।
• কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করে বা যাতায়াত করেন, যথেষ্ট, স্বাভাবিক,
• কৃত্রিম বা উভয়বিধ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
• প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষ আলোকিত করার জন্য ব্যবহৃত সকল কাঁচের জানালা এবং ছাদে বসানো
• জানালা সমূহের উভয়পার্শ্ব পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে- কোনো স্বচ্ছ পদার্থ বা বাতি হতে বিচ্ছুরিত বা প্রতিফলিত আলোকচ্ছটা অথবা
• কোনো শ্রমিকের চোখের উপর চাপ পড়তে পারে বা তার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে, এরূপ কোনো ছায়াসৃষ্টি, প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল শ্রমিকের পান করার জন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
• প্রত্যেক পানি সরবরাহের স্থানকে বাংলায় 'পান করার পানি' কথাগুলি স্পষ্টভাবে লিখে চিহ্নিত করতে হবে।
• যেসমস্ত প্রতিষ্ঠানে সাধারণত দুইশত পঞ্চাশ জন বা ততোধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন, সে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালে পান করার পানি ঠান্ডা করে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
• মাত্রাতিরিক্ত তাপ উদ্রেককারী যন্ত্রের সন্নিকটে কাজ করার কারণে শ্রমিকের শরীরে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হলে, ঐ সকল শ্রমিকের জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকগণ কাজের সময়ে যাহাতে সহজে ব্যবহার করতে পারেন এরূপ সুবিধাজনক স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• উক্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ পুরুষ এবং মহিলা কর্মীগণের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।
শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ পুরুষ এবং মহিলা কর্মীগণের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।
উক্ত শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষ কারখানা মালিকের নিজ খরচে জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারক ব্যবহারের
মাধ্যমে সবসময় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে।
১.২.৮ আবর্জনা বক্স
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের জন্য :
একটি করে পৃথক আবর্জনা ও পিকদানি বক্স রাখতে হবে;
পিকদানি বালুভর্তি থাকতে হবে এবং এর উপরে ব্লিচিং পাউডার থাকতে হবে;
আবর্জনা বক্স প্লাস্টিকের তৈরি ও ঢাকনাসহ থাকতে হবে, এতে প্রতিদিন জমাকৃত আবর্জনা অপসারণ করতে হবে এবং উভয়ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে;
উক্ত পিকদানি ও আবর্জনা বক্স কর্মকক্ষের দরজার সন্নিকটে স্থাপন করতে হবে এবং এটি এমনভাবে
স্থাপন করতে হবে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় ও ময়লা আবর্জনা চোখে না পড়ে;
কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে পিকদানি ও আবর্জনা বক্স ব্যতীত অন্য কোথাও থুথু বা আবর্জনা ফেলবেনা এবং এই বিধান সম্পর্কে নোটিস কারখানার ভিতরে উপযুক্ত স্থানে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমনভাবে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।
যে কোনো প্রকার প্রতিকুল অবস্থাকে প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাপদের সাথে কাজ করাকে অকুপেশনাল সেফটি বা পেশাগত নিরাপত্তা বলে।
পেশাগত নিরাপত্তা তিন প্রকার, যথা-
১. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা;
২. যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা;
৩. কারখানার নিরাপত্তা।
দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল সাবধানতা মেনে চলা হয়, তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শিল্প-কারখানায় কর্মীগণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।
যন্ত্রপাতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন না করে কার্য সম্পন্ন করার পর বন্ধ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়। অতঃপর সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, এই কর্মকুশলতাই যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।
যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা পদ্ধতি:
• সঠিক নিয়মে মেশিন চালু করা; কাজ শেষে মেশিন অবশ্যই বন্ধ করা;
• কাজের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;
• কোনো প্রকার গোলযোগ দেখা দিলে সাথে সাথে মেশিন বন্ধ করা এবং দ্রুত মেরামত করা;
• বৈদ্যুতিক সংযোগসমূহ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা ইত্যাদি।
সকল প্রকার দুর্ঘটনার হাত হতে ওয়ার্কশপকে রক্ষা করাকে ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা বলে। যেমন-
• প্রয়োজনীয় প্রোটেকটিভ ডিভাইস সমেত সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ ইনস্যুলেটেড রাখা;
• দাহ্য পদার্থের পাশে ওয়েল্ডিং ও গ্রাইন্ডিং না করা;
• আগুন নিভানোর উপকরণ, পানি, বালু ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা;
• দৈবক্রমে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার স্টেশনে খবর দেওয়া; কারখানার অভ্যন্তর ও বাহির সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সমূহ (Personal Protective Equipment - PPE): কর্মস্থলে কার্যাবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি হতে কর্মীকে বাঁচানোর জন্য যে সমস্ত সাজ সরঞ্জাম ও পোষাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা পিপিই বলা হয়। একজন ব্যক্তির কোন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে সম্ভাব্য ক্ষতি বা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়-
অতিরিক্ত তাপমাত্রা, খারাপ আবহাওয়া, ছিটকে আসা কোনো রাসায়নিক পদাৰ্থ ৰা খাতৰ খণ্ড, ভয়ানক গতিতে ৰায়ু প্রবাহ, সুচালো কোনো বস্তু শরীরে ঢুকে পড়া এবং ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে কারখানার কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অ্যাপ্রন ব্যবহার করা হয়। অ্যাপ্রন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যথা- বয়লার স্যুট, রাসায়নিক স্যুট, ডেন্ট, অ্যাগ্র পুরো শরীর ঢাকা স্যুট, জ্যাকেট ইত্যাদি। ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় নিয়ম মেনে সঠিক অ্যাপ্রন পরিধান করলে ধূলা, বালি, বিভিন্ন প্রকার লুব্রিক্যান্ট, ধাতব চিপস, আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও ভাগ হতে জামা কাপড় ও শরীর সুরক্ষা পায়।
অধিক তাপমাত্রা, সুঁচালো কোনো বন্ধু ভারী কোনো বস্তু, বৈদ্যুতিক শক, রাসায়নিক পদার্থ, চর্ম ক্ষয়কারক ইত্যাদি থেকে হাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা হয়।
ওয়ার্কশপে বা কর্মস্থলে পিচ্ছিল মেঝে, ভিজা মেঝে, ধারালো বস্তু, পড়ে থাকা বস্তু, রাসায়নিক স্পেস এবং অন্যান্য তরল পদার্থ ইত্যাদি থেকে পাও পায়ের পাতাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সুরক্ষা জুতা, সুরক্ষা বুট, লেগিনস্ (মোটা কাপড়ের তৈরি পায়ের আচ্ছাদন), প্যাট (পাতলা আচ্ছাদন) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সেফটি স্যুজ বা নিরাপদ জুতা ওয়েঙ্কার/কর্মাকে ভারী ধাত্তৰ উত্তপ্ত গলিত ধাতু, ধাঁরানো পড়ন্ত বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা করে। এমনকি, বৈদ্যুতিক শক্ থেকেও ওয়েদার বা কর্মীকে রক্ষা করে।
ওয়ার্কশপে অনেক সময় ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস, দুর্গন্ত ইত্যাদির সৃষ্টি হলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় ওয়ার্কশপে কাজ করতে হলে শ্বাস প্রশ্বাসের নিরাপত্তার জন্য গ্যাস মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। কখনো ৰাভাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অক্সিজেন মাস্ক ও ব্যবহার করা হয়। রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীগণ তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন-১৫ মাস্ক পরিধান করে থাকেন।
কর্মক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবল এর অধিক হলে শব্দ দূষণের ফলে কানের ক্ষতি হতে পারে। ওয়ার্কশপে যেকোনো ধরনের উচ্চ মাত্রার শব্দ প্রতিরোধের জন্য ইয়ার নাফ, ইয়ার ডিফেন্ডার, ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করলে শ্রবণযন্ত্র তথা কানের সুরক্ষা হয়।
ওয়ার্কশপে মেশিন চলাকালীন ছিটকে আসা রাসায়নিক পদার্থ বা ধাতব বস্তু, ধুলোবালি, ক্যাটালিস্ট পাউডার, গ্যাস, বাষ্প এবং রেডিয়েশন, ওয়েল্ডিং এর সময় নির্গত ক্ষতিকর আলোকরশ্মি ইত্যাদি চোখে সরাসরি প্রবেশ করলে চোখের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চোখের জন্য পিপিই যেমন- নিরাপদ চশমা, পালস, ফেস শি (মুখের ঢাকনা), ওয়েন্ডিং হেলমেট ইত্যাদি পরিধান করে ওয়ার্কশপের কর্মীদের কাজ করতে হবে। ওয়ার্কশপে গ্রাইন্ডিং, ড্রিলিং, টার্নিং, বোরিং, ওয়েন্ডিং ইত্যাদি কাজ করার সময় সেফটি গগলস অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
সকল ধরনের হেলমেট আরামদায়ক ও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মাথা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়। উপর থেকে কোনো বস্তু পড়লে, শক্ত বর আঘাত, ঘূর্ণায়মান বস্তুতে চুল পেঁচিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অবশ্যই নিরাপদ পোশাক ও নিরাপদ সরঞ্জামাদি পরিধান করা দরকার। যেমন-
• গ্রাইন্ডিং, মেশিনিং এবং চিপিং করতে নিরাপদ চশমা পরিধান করলে ছিটকে যাওয়া চিপস এর আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করা যায়;
• অ্যাপ্রন পরিধান না করলে অসতর্কতাবশত টিলেঢালা পোশাক কোথাও জড়িয়ে বা পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে;
• লম্বা চুল বেঁধে হেলমেট না পড়লে ঘূর্ণায়মান কোনো যন্ত্রাংশে জড়িয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে;
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদানগুলো (পিপিই) এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যা প্রতিটি স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পিপিই যেমনটি হওয়া উচিত-
• কাজের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত হতে হবে এবং বিপদের ঝুঁকির উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে
• ব্যবহারকারীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করবে; স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি সৃষ্টি করে না;
• ব্যবহৃত অন্যান্য পিপিই এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সহজে ব্যবহার যোগ্য ও আরামদায়ক; ব্যবহারকারীর যেকোনো ধরনের মেডিকেল শর্তের বাঁধা বা বিপত্তি ঘটাবে না;
• বাংলাদেশের আদর্শমান অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক হবে ।
• পিপিই নির্বাচনের সময় কর্মীদের ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক নিয়মনীতি, ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং স্টাইলকে বিবেচনা করতে হবে।
পিপিই ব্যবহারের পূর্বে নিন্মলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে- উৎপাদনকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদানগুলো (পিপিই) ব্যবহৃত হয়
• পিপিই সঠিকভাবে ফিট হয় ;
• কীভাবে এটি ব্যবহৃত হয় তার নির্দেশনার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়;
• যেখানে পিপিই পরিধান করতে হবে সেখানে অবশ্যই একটি চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে, যেন কর্মীরা খুব সহজেই মনে করে ব্যবহার করতে পারে ;
স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার সম্ভাব্য ক্ষতির বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পিপিই ব্যবহার করতে হবে। দূষণ কমানোর জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদান ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ কোনো সতর্কতা বার্তা ছাড়াই এগুলো মাঝে মধ্যে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ঝুঁকির উপযুক্ত নিরাপত্তা প্রদানে
• পিপিই এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে-
• ব্যবহারে আরামদায়ক নাও হতে পারে
• কাজের বাঁধা বা বিপত্তি ঘটাতে পারে
• স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার অন্যান্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে থাকে
• দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার ব্যয় বহুল হয়
যেসব উৎস বা উপাদানসমুহের প্রভাবে দুর্ঘটনা সংঘটিত হতে পারে, সেইসব উৎস বা উপাদানসমূহকে হ্যাজার্ড বা বিপত্তি বলা হয়। বিপত্তি হলো যেকোনো বাস্তব অবস্থা বা ঘটনা, যার কারণে কোনো ব্যক্তির, সম্পদের পরিবেশের ক্ষতি, উৎপাদন ব্যবস্থা বিপত্তি, হতাহত অথবা দীর্ঘস্থায়ী রোগ-ব্যাধি হতে পারে; কিন্তু তা এখনো ঘটেনি। বিপদের সর্বশেষ ফল হলো দুর্ঘটনা। সম্ভাৰ্য বিপদসমূহ পর্যবেক্ষণ, শনাক্ত এবং দূরীকরণ ও কমানোর ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দুর্ঘটনার কারণে ধারাবাহিক ক্ষতি যেমন- স্বাস্থ্য, জীবন, পরিবেশ ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
কর্মক্ষেত্রে বিপদ বা ঝুঁকিকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়-
• শারীরিক বিপত্তি
• রাসায়নিক বিপত্তি :
• জৈবিক বিপত্তি;
• মনোসামাজিক বিপত্তি :
• মানসিক (মানবিক ফ্যাক্টর ফেল করা) বিপত্তি ;
কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের পদার্থের কারণে যে বিপদের সৃষ্টি হয় তাই শারীরিক বিপত্তি। বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন- যন্ত্রপাতি, মেশিন, বিদ্যুৎ, অত্যধিক ভাল বা ঠাণ্ডা, আর্দ্রতা, অভি শব্দ, কম্পন, চলন্ত ৰত্ন, কাজের অবস্থা এবং স্থান ইত্যাদি।
ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত কাঁচামালসমূহ, উৎপাদিত পণ্য, বিক্রিয়াকারী পদার্থ ইত্যাদি কখনো কখনো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন- বিস্ফোরণ, বিকিরণ, বিষক্রিয়া, ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া, বিষবাষ্প, মরিচা পড়া, জ্বালাপোড়া, ক্যান্সার ইত্যাদি। রাসায়নিক বিপদের জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের পদার্থগুলো হলো- এসিড, ক্ষার, ডাইস, পেইন্ট, কুয়াশা, দ্রাবক, কটন ডাস্ট, গ্যাস বা ওয়েন্ডিং ধোঁয়া, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, ক্রোমিয়াম, লেড বা সীসা ইত্যাদি।
ক্ষুদ্র- অনুজীব এবং তাদের বিপাকীয় পদার্থের কারণে জৈবিক বিপদ হয়। যেমন- নর্দমার পানিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের অনুজীব থাকে। সালফারযুক্ত দ্রব্য (যেমন-প্রিজ, তেল ইত্যাদি) আহার করলে তাদের শরীরে বিপাকীয় উৎপাদক হিসেবে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস নিঃসরণ করে। কিছু মাত্রার হাইড্রোজেন সালফাইড খুবই বিষাক্ত। এসবের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবি কীট যেগুলো খুলা বালিতে ভেসে বেড়ায়, তাদের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হয়। এটি এক ধরনের জৈবিক বিপन।
কর্মক্ষেত্রে কাজ সম্পর্কিত অথবা কাজের অবস্থানগত বিষয় যা কর্মীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। ফলে মনোসামাজিক বিপদ সৃষ্টি হয়। যেমন- মানসিক বিষাদ, কাজের প্রতি একঘেয়েমী ভাব, অস্বস্তি এবং জ্বালাপোড়া ইত্যাদি।
এমন শারীরিক পরিস্থিতি যা শরীরের পেশীসমূহ বা পিঠের নীচের লিগামেন্টগুলি, হাত বা কজির স্নায়ুগুলি বা হাঁটুর চারপাশের হাড় গুলির সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যার ফলে একটি পেশীজনিত ব্যাধি হয়ে থাকে। কর্ম- গুষ্পিসাজনিত বিপত্তিসমূহের কারণগুলো হলো- পুনরাবৃত্তিমূলক একই গুষ্পিরায় কাজকরা, স্থির ও অনিরাপদ অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি।
শিল্পকারখানায় বিপদ বা বিপত্তি নিয়ন্ত্রণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শিল্পকারখানার ডিজাইন করা থেকে শুরু করে উৎপাদনের সময় এবং কারখানা বন্ধ করা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। এখানে আমরা বিপদ নিয়ন্ত্রণের মূল ও প্রাথমিক ধারণাগুলো বর্ণনা করছি। বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত ধারণা তৈরি করা হয়েছে। নিম্নে এ সকল ধারণাগুলো বিবেচনা করে বিপদ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির বর্ণনা দেয়া হলো-
• বিপদ শনাক্তকরণ;
• বিপদের তালিকা তৈরি;
• বিপদ র্যাংকিং করা বা শ্রেণি নির্ধারণ করা;
• বিপদের সম্ভাবনা অ্যাসেস করা;
• বিপদ র্যাংকিং করা;
• বিপদ দূরীকরণ বা কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা।
কর্মক্ষেত্রে সৃষ্ট বিপদসমূহকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত এবং তালিকা করতে হবে। এর পরবর্তী ধাপ হলো, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা অনুসারে বিপদকে র্যাংকিং করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে বিপদ সমূহকে ঝুঁকির স্তর অনুসারে নিম্নে ক্রমানুসারে র্যাংকিং করতে হবে। পরবর্তীতে বিপদের ঝুঁকি দূর করার জন্য ভিন্ন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। যেটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিপদকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিপদে রূপান্তর করবে অথবা বিপদকে দূর করবে। এটি সত্য যে, সকল বিপদ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রস্তুতি এমনভাবে থাকা উচিত যেন সহজেই বিপদ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যেখানে কোনো বিপদ নেই সেখানে আঘাত পাওয়া বা অসুস্থ হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-
• এলোমেলো জঞ্জাল দূর করে হোঁচট খেয়ে পড়ার মতো বিপদ দূর করতে হবে।
• অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ বর্জন করতে হবে।
• ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি পরিহার করতে হবে।
• ক্ষতিগ্রস্থ যন্ত্রপাতি অতি দ্রুত মেরামত করতে হবে। ব্যবহারকারীর কর্মযোগ্যতার সাথে নতুন যন্ত্রপাতির সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
বিপদ দূর করা সম্ভব না হলে কম ঝুঁকি সম্পন্ন বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। এটি এমনভাবে করতে হবে যেন সন্তোষজনকভাবে একই ধরনের কাজ সম্পাদন করা যায়। যেমন-
• বিপদ সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিবর্তে কম ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে;
• যেখানে সবসময় টেলিফোন ব্যবহৃত হয় সেখানে হ্যান্ডসেটের পরিবর্তে হেডসেট ব্যবহার করতে হবে;
• বাষ্পীয় বিপদ নিয়ন্ত্রণের জন্য কম ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে।
ঝুঁকি, দুর্ঘটনা, ভয় ইত্যাদি বোঝাতে সাধারণত বিপদ বা ঝুঁকি (Risk) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। শিল্পকারখানায়, বিপদ হলো যেকোনো অস্বভাবিক ব্যবস্থা যা অসুবিধা সৃষ্টি করে। ফলে অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ, বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ ইত্যাদি ঘটনা ঘটতে পারে। ভয়াবহ বিপদ কর্মস্থলে মৃত্যু, সম্পদের ক্ষতিসাধন, পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব অথবা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ৰাধা সৃষ্টি করে।
(১) বৈদ্যুতিক ঝুঁকি
* পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া বৈদ্যুতিক শকে আহত কাউকে স্পর্শ করা;
* দুর্বল তাপ নিরোধক ও ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা; খালি পায়ে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করা ইত্যাদি।
(২) যান্ত্রিক ঝুঁকি সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতির
তিনটি স্থানে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, যথা-
• পরিচালনার ক্ষেত্রে;
• যান্ত্রিক শক্তি ট্রান্সমিশন কেন্দ্রে ; যন্ত্রপাতির ঘূর্ণন এলাকায় ইত্যাদি।
(৩) অগ্নি ঝুঁকি নিম্নলিখিত কারণে অগ্নি ঝুঁকি হতে পারে-
- কাঠ, কাগজ, কাপড় ও অন্যান্য সাধারণ উপকরণ নির্দিষ্ট স্থানে না রাখলে;
- পেট্রোল, তৈল, গ্রিজ ও দাহ্য পদার্থের সংরক্ষণ সঠিকভাবে না
- রাখলে; বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে;
- ধুমপানের কারণে ও অগ্নি ঝুঁকি হতে পারে ইত্যাদি।
কর্মক্ষেত্র থেকে ঝুঁকির কারণ সম্পূর্ণ রূপে দূর করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। উদাহরণস্বরূপ:
- একটি শান্ত পরিবেশ থেকে একটি শব্দ সৃষ্টিকারী মেশিন সরিয়ে নিতে হবে। অ্যাজমা
- বিপদ সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিবর্তে কম ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- বৃদ্ধিকারক পদার্থ থাকবেনা এমন পেইন্ট ব্যবহার করতে হবে।
- কর্মক্ষেত্র থেকে বিপত্তি সরিয়ে ফেলা যেমন- ভৌতিক (শারীরিক) বিপদকে কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা যেস্থানে মেশিনটি ব্যবহৃত হচ্ছে ঐস্থানকে ঢেকে রাখতে হবে।
- উৎস থেকে বিপত্তি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। বিপদের উৎস বন্ধ করার জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ডিজাইন পুনরায় করতে হবে। গার্ড অথবা বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার জন্য পুনরায় ডিজাইন করতে হবে।
- প্রশাসনিকভাবে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ- এটি প্রশাসনিক কৌশল, যা কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। প্রশাসনিকভাবে বিপত্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুষিত জায়গায় শ্রমিকদের অল্প সময়ব্যাপী কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি শ্রমিকদের সময় ভাগ করে দিয়ে অথবা অন্য কোনো নিয়ম প্রয়োগ করে করতে হবে।
যেখানে কোনো বিপত্তি নেই সেখানে আঘাত পাওয়া বা অসুস্থ হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-
,• এলোমেলো জঞ্জাল দূর করে পায়ে হোঁচট লাগারমতো বিপত্তি দূর করতে হবে;
• অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ বর্জন করতে হবে;
• ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি পরিহার করতে হবে; ক্ষতিগ্রস্থ যন্ত্রপাতি অতি দ্রুত মেরামত করতে হবে।
বিপদ দূর করা সম্ভব না হলে কম ঝুঁকিসম্পন্ন বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। এটি এমনভাবে করতে হবে যেন সন্তোষজনকভাবে একই ধরনের কাজ সম্পাদন করা যায়। যেমন-
• বিপদ সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিবর্তে কম ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে;
• যেখানে সবসময় টেলিফোন ব্যবহৃত হয় সেখানে হ্যান্ডসেটের পরিবর্তে হেডসেট ব্যবহার
• বাষ্পীয় বিপত্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য কম ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি।
দুর্ঘটনাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যে, দুর্ঘটনা হলো একটি অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা যা কোনো বস্তু স্থির বা চলমান, কোনো কাঠামো, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), পদার্থ (কাঁচামাল, উৎপাদন, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি) বা তেজস্ক্রিয় বস্তুর সাথে ক্রিয়া অথবা বিক্রিয়ার ফলে ব্যক্তিগত আঘাত বা ধনসম্পদ বা পরিবেশগত ক্ষতির সম্ভাবনা হতে পারে।
ওয়ার্কশপে নিম্নলিখিত চারটি কারণে সাধারণত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে-
• কর্মীদের অসাবধানতা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকান্ড;
• ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি/ মেশিন ব্যবহার; ত্রুটিপূর্ণ উপায়ে মালামাল বহন;
• ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে কাজ করা।
দুর্ঘটনার ফলাফল: জীবন হারানো বা কর্মীর ক্ষতি অথবা সম্পদ বা পরিবেশ ধ্বংস।
হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় আহত বা অসুস্থ্য লোককে নিকটস্থ ডাক্তারখানা বা হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘটনা স্থলে তাৎক্ষণিকভাবে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাই প্রাথমিক চিকিৎসা বা ফাস্ট এইড। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসার সাহায্যে একজন রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। তাছাড়া রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রোগীর অবস্থার অবনতি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে জীবিত বা সুস্থ্য রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলা হয়।
• জীবন রক্ষা করা;
• গুরুতর আঘাতের পর অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়া থেকে বিরত রাখা;
• অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করা ইত্যাদি।
• জীবাণুনাশক তরল
• জীবাণুনাশক ক্রীম
• থার্মোমিটার জীবাণুমুক্ত গজ
• ব্যাণ্ডেজ
• জীবন রক্ষাকারী জরুরি ঔষধ
• খাবার স্যালাইন
• জীবাণুমুক্ত তুলা
• অ্যাডহ্যাসিড ড্রেসিং
• স্যালাইন ইত্যাদি
অক্সিজেন, কুয়েল ও তাপ এই তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে আগুন ধরে। এই তিনটি উপাদানের যেকোনো একটি ছাড়া আগুন লাগতে পারেনা।
আগুনের শ্রেণিভেদে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র/উপকরণসমূহ
যখন কর্মক্ষেত্রে কোনো কারণে আগুন লেগে যায় তখন অগ্নি প্রতিরোধ করার জন্য কি করা উচিত তা প্রত্যেকেরই জানা থাকা দরকার। আগুন ধরে গেলে দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু থাকেনা। কর্মক্ষেত্রের অগ্নিকান্ড প্রতি বছর শতশত জীবন কেড়ে নেয় ও অগণিত মানুষ আহত হয়ে থাকে। অগ্নিকান্ড ঘটতে দেওয়া কারও কাম্য হতে পারে না।
• নিয়মিত হাউজকিপিং প্রয়োগ করার মাধ্যমে সহজেই অগ্নিকাণ্ড এড়ানো যায় - স্টোরেজ এবং কর্মস্থল আবর্জনামুক্ত রাখা; -
• তৈলাক্ত কাপড়ের টুকরা বা আবর্জনা ধাতব কন্টেইনারে ফেলা এবং আগুন সৃষ্টিকারী উৎস থেকে দূরে রাখা;
• আবর্জনার পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করে খালি করা;
• স্টোরে দাহ্য পদার্থ গুলি ভালোভাবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা, চুইয়ে পড়বেনা এমন কন্টেইনারে রাখা এবং কন্টেইনার পুলি আগুনের উৎস থেকে দূরে রাখা।
যদি অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়ে যায় তবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে তা মেনে চলতে হবে। একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে তুমি একটি ছোট অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ার আগে তা নিভিয়ে ফেলতে পার। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র তোমার আয়ত্বের মধ্যে থাকলেই তুমি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করবে। তুমি নিজে নিরাপদ থেকে আগুনের সাথে লড়তে না পারলে অভির সেই স্থান ত্যাগ করবে। মনে রাখা উচিত যে-
• নির্গমন পথে কোনো বিপত্তি আছে কিনা;
• অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের রাসায়নিক পদার্থগুলি শেষ হয়ে গেছে কিনা;
• অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিকল হয়ে গেছে কিনা;
• তুমি নিরাপদে থেকে আগুনের সাথে লড়তে পারবে কিনা;
• অগ্নিকাণ্ডের স্থান তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি।
আমাদের প্রত্যেকেরই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র চালনা করার সক্ষতা অর্জন করতে হবে; কারণ স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রেলওয়ে স্টেশন এমনকি বাসাবাড়িতেও আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে অতি সহজেই আগুন নেভানো যায় বা আগুন নিয়ন্ত্রণে জানা যায়। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহারের খাপগুলি মনে রাখার জন্য তোমরা (PASS) পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
চিত্রে নির্দেশিত উপায়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ছোট পিনটি যা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটির সেফটি পিন হিসাবে ব্যবহৃত হয়, প্রথমে এটিকে টেনে বের করে পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
চিত্রের নির্দেশিত উপায়ে ডান হাতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ট্রিগারের উপরের অংশ ধরে আগুনের উৎসের দিকে আউটলেট নলটির স্ফীত অংশের গোড়ায় বাম হাতে ধরতে হবে এবং নিশানা বা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ট্রিপারটিকে ডান হাতে চিত্রের নির্দেশিত উপায়ে ধীরে ধীরে এবং সমানভাবে চেপে ধরতে হবে যাতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের রাসায়নিক পদার্থসমূহ কার্যকরীভাবে নির্গত হতে থাকে ।
আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন সমস্ত এলাকায় কভার করতে চিত্রের নির্দেশিত উপায়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে সাবধানতার সাথে নাড়াতে হবে।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র চালানোর আগে, কিছু নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে আগুনের ব্যাপকতা, ভয়াবহতার মাত্রা বিশ্লেষণ করতে হবে; যদি আগুনের ব্যাপকতা খুব বেশি বা অনিয়ন্ত্রিত হয় তবে এটি নিভানোর চেষ্টা করে নিরাপত্তার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, আগুন লাগার স্থান জরুরি ভিত্তিতে খালি করতে হবে। যদি আগুনের মাত্রা অপেক্ষাকৃত এবং সহজেই নিভানো যায় তাহলে PASS ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে হবে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে নির্দেশিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অগ্রভাগকে ধরে রাখতে ভুলবে না এবং তোমাদের পিঠকে একটি খোলা প্রস্থানের দিকে রাখতে হবে যাতে আগুন খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠলে তোমরা নিরাপদে প্রস্থান করতে পার।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রসমূহ বাড়িতে, ওয়ার্কশপের প্রতিটি স্তরে এবং গ্যারেজের মতো জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। এগুলি সহজে চোখে পড়ে এবং ব্যবহার করা যায় এমন জায়গায় দেওয়ালে স্থাপন করতে হবে যাতে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে সহজে ব্যবহার করা যায়।
• অ্যাপ্রন, হ্যান্ড গ্লাভস ও নিরাপদ চশমা পরিধান করে ওয়ার্কশপে কাজ করা;
• টুলস ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল আয়ত্ত করা, যেমন- সঠিক নিয়মে ফাইল চালানো;
• শক্ত তলাযুক্ত নিরাপদ জুতা ব্যবহার করা ;
• মেশিন চালু অবস্থায় অন্যমনস্ক না হওয়া বা মোবাইলে কথা না বলা;
• ওয়ার্কশপের মেঝে তেল, গ্রিজ বা পিচ্ছিল পদার্থ যুক্ত রাখা ইত্যাদি।
• যন্ত্রপাতির ভাঙ্গা অংশ ব্যবহার করা;
• সেফটি গার্ডবিহীন মেশিন ব্যবহার;
• জবের ধারালো প্রান্ত ফাইলিং না করে খালি হাতে ধরা;
• অ্যাপ্রন, হ্যান্ড গ্লাভস ও নিরাপদ চশমা পরিধান না করা :
• ওয়ার্কশপের মেঝে ভেল, গ্রিজ বা পিচ্ছিল পদার্থ সময়মত পরিষ্কার না করা ইত্যদি।
°• ওয়ার্কশপে কর্মরত কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য;
• কর্মীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যম্পের নিরাপত্তার জন্য;
• ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত টুলস্ ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তার জন্য;
• ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত কাঁচামান ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ব্যবহারে অপচয় কমিয়ে আনা;
• সময়ের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করা;
• উত্তম কর্ম পরিবেশ বজায় রেখে সুষ্ঠভাবে কাজ পরিচালনা করা ইত্যাদি।
স্পেসিফিকেশন
১. চিত্রে প্রদর্শিত নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলির সম্পর্কে ধারণা লাভ করো;
২. বর্ণিত নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহের তালিকা চিহ্নিত সংখ্যার ক্রমানুসারে প্রস্তুত করো;
৩. প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুসারে স্টোর থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহ সংগ্রহ করো;
৪. নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলির ধরন অনুসারে ব্যবহার উল্লেখ করো;
৫. OSH অনুসরণ করে PPE পরিধান করো;
৬. পর্যায়ক্রসে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী গুলি পর্যবেক্ষণ করো;
৭. নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলির প্রয়োগের স্থান পরিদর্শন করো;
৮. ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষককে বলো;
৯. কোনো সমস্যা হলে প্রশিক্ষককে অবহিত করো;
১০. কাজের শেষে সকল PPE কর্মক্ষেত্রের পদ্ধতি অনুসারে যথাস্থানে রাখো।
• সঠিক নিয়মে সকল প্রয়োজনীয় সুরক্ষা জাম পরিধান করা।
অর্জিত দক্ষতা /ফলাফল
ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী শনাক্তকরণ ও ব্যবহার করার মাধ্যমে ওয়ার্কশপে শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী শনাক্ত ও ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে। জৰ-২ অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নিভানো এবং ধোঁয়া হতে ওয়ার্কশপের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ।
১. প্রথমে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসমূহ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল স্টোর হতে সংগ্রহ করো।
২. তালিকা অনুসারে সুরক্ষা সরঞ্জামাদি যথানিয়মে পরিখান করো।
৩. শিট মেটালের তৈরি ধাতব ট্রে-এর মধ্যে মোটা বালি ছড়িয়ে দাও।
৪. জ্বালানী কাঠগুলিকে ঐ বালিভর্তি ট্রে-এর মধ্যে সাজিয়ে নাও।
৫. জ্বালানী কাঠের মধ্যে কেরোসিন মিশিয়ে কিছুক্ষণ পর দেয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দাও।
৬. আপুন পূর্ণমাত্রায় জ্বলে উঠার সাথে সাথে অগ্নিনির্বাপক এর পিনটি চিত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী PASS পদ্ধতি ব্যবহার করে টেনে ধর (Pull) |
৭. ভাৎক্ষণিকভাবে ডান হাতে লিভার ও ৰামহাতে আউটলেট পাইপটি ধরে আগুনের দিকে একাগ্রতার সাথে নিশানা (AIM) ঠিক করো।
৮. ডানহাতে লিভার চেপে ধরো (SQUEEZE) এবং বামহাতে অগ্নিশিখার মধ্যে নির্গত গ্যাস ডানে বামে ঘুরিয়ে ছড়িয়ে দাও (SWEEP) যাতে আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়।
৯. শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দ্রুত ওয়ার্কশপে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দ্রুত ওয়ার্কশপে চিহ্নিত (Fire Exit) নির্দেশনার দিক দিয়ে বের হয়ে আসবে।
আরও দেখুন...