Summary
বাংলাদেশের সংবিধান:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তাদের প্রথম সভা ১৭ই এপ্রিল ১৯৭২ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯শে অক্টোবর ১৯৭২ খসড়াটি গণপরিষদে উত্থাপিত হয়। ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২ সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য:
- লিখিত দলিল: ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ১১টি ভাগে বিভক্ত।
- দুষ্পরিবর্তনীয়: সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন।
- রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
- মৌলিক অধিকার: নাগরিকদের বিভিন্ন মৌলিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখিত, যেমন আশা, চলাফেরা, বাকস্বাধীনতা।
- সর্বজনীন ভোটাধিকার: ১৮ বা তদুর্ধ বয়সের সকল নাগরিক ভোটাধিকার পেয়েছে।
- প্রজাতান্ত্রিক: জনগণের মালিকানায় রাষ্ট্র পরিচালনা।
- সংসদীয় সরকার: প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র: রাষ্ট্র শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পরিচালিত।
- আইনসভা: এক কক্ষ বিশিষ্ট, জাতীয় সংসদ ৩৫০ সদস্য নিয়ে গঠিত।
- সর্বোচ্চ আইন: সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, অন্যান্য আইন এর সাথে সংঘাতে আসলে বাতিল হবে।
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশের সংবিধান:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৭ই এপ্রিল। এ কমিটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া তৈরি করে এবং তা ১৯শে অক্টোবর ১৯৭২ গণপরিষদে উত্থাপিত হয়। এরপর সংবিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে গণপরিষদে আলোচনার পর ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২ সালে সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য:
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১. লিখিত দলিল : বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এর ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এটি ১১টি ভাগে বিভক্ত । এর একটি প্রস্তাবনাসহ সাতটি তফসিল রয়েছে।
২. দুষ্পরিবর্তনীয় : বাংলাদেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। কারণ, এর কোনো বিধান সংযোজন, পরিবর্তন বা সংশোধন করতে জাতীয় সংসদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন হয় ।
৩. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে । রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব মূলনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে ।
8. মৌলিক অধিকার : সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কী কী অধিকার ভোগ করতে পারব তা সংবিধানে উল্লেখ থাকায় এগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে । যেমন- জীবনধারণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মচর্চার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি ।
৫. সর্বজনীন ভোটাধিকার: বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে । অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা ইত্যাদি নির্বিশেষে ১৮ বা তদুর্ধ বছর বয়সের এ দেশের সকল নাগরিক ভোটাধিকার লাভ করেছে ।
৬. প্রজাতান্ত্রিক : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এখানে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ । জনগণের পক্ষে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন ।
৭. সংসদীয় সরকার : বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় । প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার হাতে শাসনকার্য পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয়। এ সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ তার কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে ।
৮. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র : বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র । এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মতো কোনো অঙ্গরাজ্য বা প্রাদেশিক সরকার নেই । জাতীয় পর্যায়ে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা সমগ্র দেশ পরিচালিত হয় ।
৯. আইনসভা : বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট। এর নাম 'জাতীয় সংসদ'। প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যাস্ত। বর্তমানে জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর।
১০. সর্বোচ্চ আইন : বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে দেশের প্রচলিত কোনো আইনের সংঘাত সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান প্রাধান্য পাবে । অর্থাৎ যদি কোনো আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যহীন হয়, তাহলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততোখানি বাতিল হয়ে যাবে ।
১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বাংলাদেশের সংবিধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের বিধান রয়েছে।
Read more
