জীবন ধারণের জন্য প্রতিটি জীবই তাদের নিজ নিজ পরিবেশ থেকেই মূলতঃ খাদ্য গ্রহণ করে। গলদা চিংড়ি একটি জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী। তার জীবনধারণ, শরীর গঠন ও বৃদ্ধির জন্য জলজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অতি সম্প্রতি বিশ্ববাজারে গলদা চিংড়ির উচ্চবাজার মূল্য ও চাহিদার কারণে অধিক উৎপাদনের জন্য উন্নত কলাকৌশল ও প্রযুক্তি প্ররোগ করে অধিক চিংড়ি উৎপাদনের জন্য চিংড়ির জীবনচক্রের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। চিংড়ির খাদ্যের প্রকৃতি ও প্রকার, খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য প্রদানের সময় এবং গৃহীত খাদ্য হজমের প্রক্রিয়া গলদা চিংড়ির উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। শুধুমাত্র সুষম খাদ্য সঠিক নিয়মে সরবরাহ করে খামারে গলদার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
যে সকল দ্রব্য গলধঃকরনের ফলে চিংড়ি দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয় পূরণ, দেহের তাপ ও শক্তি উৎপাদন হয় এবং প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করে বংশবৃদ্ধি ঘটানোর উপযোগী হয় সেগুলোকে চিংড়ির খাদ্য বলা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। খাদ্যদ্রব্য প্রাকৃতিক (Natural) ও সংশ্লেষী (Synthetic) রাসায়নিক উপকরণের সমন্বয়ে গঠিত। জীবনধারণের জন্য অক্সিজেন ও পানির ন্যায় খাদ্যও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খাদ্যের যোগান দিয়ে গলদার অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।
সুষম খাদ্য গ্রহণে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং মাছ যথাসময়ে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। এতে মাছের জনন গ্রন্থি (Gonad) পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাছের জীবন যাত্রার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যথা- রক্ত সংবহন, শ্বাসকার্য পরিচালনা, অভিস্রবনীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রলম্বন (Suspension) ও পানির ভিতরে স্থিতাবস্থায় অবস্থানের জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। চিংড়ি গৃহীত খাদ্য থেকে এ শক্তি পায়। এ কারণে চিংড়িকে নিয়মিত ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। খামারে খাদ্য সরবরাহ হঠাৎ ব্যাহত হলে এবং দীর্ঘ সময় খাদ্য প্রদান বন্ধ থাকলে চিংড়ি বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারে। সুস্থ সবল চিংড়ি পোনা উৎপাদনের জন্য চিংড়িকে সঠিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান অত্যন্ত জরুরী। এই জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক ঘনত্বে চিংড়ির পোনা মজুদ ও উৎপাদনের মাধ্যমে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য গলদা চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে পরিমিত পরিমাণে সুষম সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ একান্ত আবশ্যক।
গলদা চিংড়ি সর্বভুক প্রাণী। খাদ্য হিসেবে গলদা চিংড়ি প্রধানত জলজ পোকা-মাকড় ও তাদের ডিম, শুককীট বা লার্ভা, অ্যালজি, শামুক, ক্রাস্টেশিয়ান, মাছ ও অন্যান্য প্রাণী প্রভৃতি গ্রহণ করে থাকে। প্রায় সকল ধরনের ক্রাস্টেশিয়ান, জুপ্লাংকটন ও শামুক গলদা চিংড়ির অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। এসব খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ থাকে যা চিংড়ির শারীরিক বৃদ্ধি ও খোলস তৈরির জন্য একান্ত প্রয়োজন। গলদা চিংড়ি সাধারণত রাতে খাদ্যের সন্ধানে পুকুর পাড়ের দিকে অল্প পানিতে বিচরণ করে এবং দিনের বেলায় গভীরে চলে যায়। এরা চিলেট যুক্ত পা দিয়ে বড় ধরনের দানাদার খাদ্য ধরে গলধঃকরণ করে থাকে। ক্ষুধার্ত চিংড়ি খাদ্যের অভাবে যা পায় তাই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। পুকুরে খাদ্যের স্বল্পতা দেখা গেলে সবল চিংড়ি দুর্বল চিংড়িকে আক্রমণ করে খেয়ে ফেলে।
গলদা চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধি এবং অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি বাইরে থেকে যে বাড়তি খাবার দেয়া হয় তাকে সম্পূরক খাবার বলে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় গলদা চিংড়ির খাদ্যেও নির্দিষ্ট মাত্রায় সকল পুষ্টি উপাদান যেমন- আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকা প্রয়োজন। খাদ্যে এসব পুষ্টি উপাদানের কোন একটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় না থাকলে গলদা চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক ঘনত্বে চাষ করলে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্যে গলদা চিংড়ির সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না। গলদা চিংড়ির এ সকল চাহিদা পূরণের জন্য বাহির হতে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের খাবার পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়। যেমন- ফিসমিল, চিংড়ির মাথার গুঁড়া, ইত্যাদি।
দৈহিক বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য গলদা চিংড়ি পুকুরের পরিবেশ থেকে প্রাণিকণা, উদ্ভিদকণা, তলদেশের পোকামাকড়, শুককীট, ছোট ছোট কীটের লার্ভা, তলার কেঁচো, মৃত জৈব পদার্থ ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক ঘনত্বে চাষ করলে এসব প্রাকৃতিক খাদ্য গলদা চিংড়ির প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদার যোগান দিতে পারে না। ফলে পলদা চিংড়ি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে, বৃদ্ধির হার কমে যায় এবং খোলস বদলাতে সমস্যা হয়। যা সার্বিক উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গলদা চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততা সৃষ্টির পাশাপাশি পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকুরে চিংড়ির স্বজাতিভোজিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্পূরক খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম। পুকুরের পরিবেশে যখন খাদ্যের অভাব দেখা দেয় তখন এদের স্বজাতিভোজিতা বৃদ্ধি পায় এবং সবল চিংড়ি দুর্বল গুলোকে ধরে খেয়ে ফেলে। পরিমিত পরিমাণে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে গলদা চিংড়ির এ ক্ষতিকর স্বভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশের পুকুর-দীঘি ও উপকূলীয় চিংড়ি ঘেরগুলোতে শতাংশ প্রতি মাছ ও চিংড়ির বার্ষিক গড় উৎপাদন যথাক্রমে ৬ কেজি ও ২-২.৫ কেজি। চিংড়ি চাষে সম্পূরক খাবারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো :
প্রকৃতিতে গলদা চিংড়ির বহু ধরনের খাদ্য বিদ্যমান। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জলজ ক্ষুদে উদ্ভিদ ও প্রাণী, তেমনি রয়েছে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদানসহ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণির পোষক। স্থল ভাগেও অসংখ্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ দ্রব্য রয়েছে, যেগুলো গলদা চিংড়ির সুষম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গলদা চিংড়ি দেহের ক্ষয় পুরণ ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ উভয় ধরনের খাদ্যই গ্রহণ করে থাকে। মাছের এসব খাদ্য মূলত দুটি পরিবেশ বা উৎস যথা- চিংড়ি যে পরিবেশে বা মাধ্যমে বাস করে, অর্থাৎ জলজ পরিবেশ থেকে এবং জলজ পরিবেশের বাইরে অর্থাৎ স্থলভাগ থেকে আসে। খাদ্যদ্রব্যের উৎসের এ ভিন্নতা অনুসারে মাছের খাদ্যকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
পানিতে স্বাভাবিকভাবে যে সব খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হয়, সেগুলোকে গলদা চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্লাংকটন, জলজ কীটপতঙ্গ ও উদ্ভিদ, ক্ষুদে পানা, পুকুরের তলদেশের পচা জৈব পদার্থ ইত্যাদি গলদা চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য।
প্রাকৃতিক খাদ্য ও খাদ্য উপকরণ: পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যের উপর চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। পুকুরে চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্যের স্বপ্নতা ঘটলে চিংড়ির প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। জীবমাত্রই জীবনধারণের প্রয়োজনে নানা জৈবিক কার্য সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। আর শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে সৌর শক্তি। সৌর মন্ডল থেকে তাপ ও প্রয়োজনীয় গ্যাস (কার্বন) পানিতে দ্রবীভূত নানা পদার্থের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে প্রাথমিকভাবে প্রথমে প্রাণের সৃষ্টি হয়। আর এই উদ্ভুত প্রাণিকেই বলা হয় উদ্ভিদকণা বা ফাইটোপ্লাংকটন। এই উদ্ভিদকণার জীবন চক্র সমাপ্তির পরই পানিতে প্রাণী কণার সৃষ্টি হয় এবং এরা খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ কণার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। পুকুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং উচ্চ শ্রেণিযুক্ত প্রাণিকূল পাশাপাশি অবস্থান করে। জীবনধারণের প্রয়োজনে এরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এভাবে জলজ পরিবেশে একটি খাদ্যশৃঙ্খলের (Food chain) সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য দুই ধরনের, যথা-
(১) উদ্ভিদ প্লাংকটন (Phytoplankton), ও
(২) প্রাণী প্লাংকটন (Zooplankton)
১) উদ্ভিদ প্লাংকটন: গলদা চিংড়ি জীবনের বিভিন্ন দশায় নিম্নোক্ত উদ্ভিদ প্লাংকটন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
ক) নীলচে সবুজ শেওলা (Blue green algas): Spirulina sp. Oedogonium sp Anabaena sp. Nostoc sp.
খ) সৰুচ্ছ শেওলা (Green algae): Chlorella sp; Odogonilun sp; Cladophora sp Cosmarium sp; Orgonium sp.
গ) ডায়টমস (Diatoms): Navicula sp; Cyclotella sp; Chaetocerar sp; Gyranigma sp; Skeletonema sp;
ঘ) সুভাকার শেওলা (Filamentous Algae)
চিত্র-৩.১: উদ্ভিদ প্লাংকটন
যদিও এসব উদ্ভিদ কথা পুকুরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয় তথাপি এসৰ প্ৰাকৃতিক উদ্ভিদ প্লাংকটন কৃত্রিস উপায়ে চাষ করে পুকুরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়। গলদা চিংড়ি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জলজ শেওলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। উদ্ভিদ প্লাংকটনের মধ্যে ডায়টস জাতীয় শেওলা চিংড়ির সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য।
২) প্রাণী প্লাংকটন: চিংড়ি নিম্নোক্ত প্রাণী প্লাংকটনসমূহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
চিত্র-৩.২: প্রাণী প্লাংকটন
অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খ দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যদ্রব্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি সরিষার খৈল, ইত্যাদি মাছের সম্পুরক খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চিত্র-৩.৩: বিভিন্ন ধরনের সম্পূরক খাদ্য
আমাদের দেশে মাছ অথবা চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত কিছু প্রচলিত খাদ্য উপকরণ বহুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এই সকল খাদ্য উপকরণই মূলত গলদা চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা, আমিষ, চর্বি ও অনান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এই সকল খাদ্য উপাদানের উপর পবেষণা করে দেখা গেছে এদের মধ্যে উচ্চমানের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। গবেষণায় প্রাপ্ত গলদা চিংড়ির কিছু খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলোঃ
সারণি: গলদা চিংড়ির কিছু খাদ্য উপকরণের নাম ও তার পুষ্টিমান
উপাদানের নাম | পুষ্টিমান (%) | ||
---|---|---|---|
আমিষ | শর্করা | স্নেহ | |
চালের কুঁড়া | ১১.৮৮ | ৪৪.৪২ | ১০.৪৫ |
গমের তুষি | ১৪.৫৭ | ৬৬.৩৬ | ০৪.৪৩ |
সরিষার খৈল | ৩০.৩৩ | ৩৪.৩৮ | ১৩.৪৪ |
ভিলের খৈল | ২৭.২০ | ৩৪.৯৭ | ১৩.১৮ |
ফিসমিল-এ গোড | ৫৬.৬১ | ৩.৯৭ | ১১.১২ |
ফিসমিল বি-গ্রেড | ৪৪.৭৪ | ১৬.৬২ | ৭.৮৭ |
ব্লাডমিল | ৬৩.১৫ | ১.৫৯ | ০.৫৬ |
আটা | ১৭.৭৮ | ৭৫.৬০ | ৩.৯০ |
চিটাগুড় | ৪.৪৫ | ৮৩.৬২ | - |
ক্ষুদিপানা | ১৪.০২ | ৬০.৮৮ | ১.৯২ |
কুটিপানা | ১৯.২৭ | ৫.০.১৯ | ৩.৪৯ |
চিংড়ির খাদ্যের পুষ্টিমান নির্ণয়ে মূলত আমিষের মাত্রা হিসেব করা হয়। সাধারণ ঐকিক নিয়মে একাধিক উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি খাদ্যের পুষ্টিমান সহজেই নিরূপণ করা যায়। নিচে একটি উদাহরণের সাহায্যে খাদ্যে আমিষের মাত্রা নিরূপণ পদ্ধতি দেখানো হলো। ধরা যাক ফিসমিল, সরিষার খৈল, গমের ভুষি এবং বাইন্ডার হিসেবে আটা ব্যবহার করে ১ কেজি খাদ্য তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের অনুপাত হবে ফিসমিল ২৫%, সরিষার খৈল ২৫%, গমের ভুষি ৪০% ও আটা ১০% ।
সারণি: তৈরি খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের নাম ও মোট আমিষের পরিমাণ
উপকরণ | বিদ্যমান আমিষের পরিমান (%) | ব্যবহার মাত্রা | প্রয়োজনীয় পরিমাণ (গ্রাম) | সরবরাহকৃত আমিষ (%) |
---|---|---|---|---|
ফিসমিল | ৫৬.৬১ | ২৫ | ২৫০ | ১৪.১৫ |
সরিষার খৈল | ৩.০.৩৩ | ২৫ | ২৫০ | ৮.৩৩ |
গমের ভুষি | ১৪.১৭ | ৪০ | ৪০০ | ৫.৮২ |
আটা | ১৭.৭৮ | ১০ | ১০০ | ১.৭৮ |
খনিজ লবণ | - | - | ১ চা চামচ | - |
মোট | ১০০ | ১০০০ | ৩০-০৮ |
চিংড়ির খাদ্য তৈরির জন্য কম মূল্যের উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য উপকরণ এমনভাবে বেছে নিতে হবে যাতে এদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, খাদ্যের মান বজায় থাকে এবং খাদ্য প্রয়োগ বাবদ পুঁজি বিনিয়োগ কম হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্য উপকরণ, যেমন- খৈল, কুঁড়া, গমের ভুষি, ফিসমিল, আটা, চিটাগুড় ইত্যাদি ব্যবহার করেই চিংড়ির পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম এমন সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে। নিচে চাষির আর্থিক সামর্থ্য ও পুষ্টি চাহিদা বিবেচনা করে কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকুরে প্রয়োগের জন্য খাদ্য তৈরিতে উপকরণ ব্যবহারের নমুনা নিম্ন সারণীতে উল্লেখ করা হলো-
সারণি: মিশ্রচাষের জন্য তৈরিকৃত সম্পুরক খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের অনুপাত
উপাদানের নাম | নমুনা-১ | নমুনা-২ | ||
---|---|---|---|---|
ব্যবহার মাত্রা (%) | গ্রাম/কেজি খাদ্য | ব্যবহার মাত্রা (%) | গ্রাম/কেজি খাদ্য | |
ফিসমিল | ৩০ | ৩০০ | ৩০ | ৩০০ |
সরিষার খৈল | ৪০ | ৪০০ | ৩০ | ৩০০ |
হাড়/ঝিনুকের গুঁড়া | - | - | ৫০ | ৫০ |
পলিস কুড়া/গমের ভুষি | ২০ | ২০০ | ২০ | ২০০ |
আটা | ৯ | ৯০ | ১০ | ১০০ |
চিটাগুড় | ১ | ১০ | ৫ | ৫০ |
খনিজ লবণ | - | ১ চা চামচ | - | ১ চা চামচ |
ভিটামিন প্রিমিক্স | - | ১ চা চামচ | - | ১ চা চামচ |
মোট | ১০০ | ১০০০ | ১০০ | ১০০০ |
চিংড়ি চাষিরা সাধারণত চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, ফিসমিল, মুরগীর নাড়িভূড়ি, সরিষার বা তিলের খৈল ইত্যাদি খাদ্য উপাদান বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে থাকে। তবে চিংড়ি চাষিরা খামারে যে সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে তা বিজ্ঞানসম্মত হয় না। কারণ চাষিরা খাদ্যের গুণগত মান ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। খামারে দেশিয় খাদ্য উপাদান দিয়ে বিভিন্ন অনুপাতে গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির কয়েকটি নমুনা নিচে দেয়া হলো-
সারণি: বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির কয়েকটি নমুনা
উপাদান | নমুনা-১ | নমুনা-২ | নমুনা-৩ |
---|---|---|---|
সয়াবিন খৈল | ২০% | - | ৫% |
মৎস্য চূর্ণ | ২০% | ৩০% | ১০% |
চিংড়ি চুর্ণ | ২০% | ১৫% | ২৫% |
চালের গুঁড়া | ২০% | - | ২২% |
ময়দা | ১৪% | ১৫% | - |
বার্লি | ৫% | ৫% | ৫% |
ভিটামিন মিশ্রণ | ১% | - | - |
সরিষার খৈল | - | ১০% | ৫% |
চালের কুঁড়া | - | ২৫% | ২৫% |
মাছের তৈল | - | ৩% | |
মোট | ১০০% | ১০০% | ১০০% |
উপরোক্ত যে কোনো একটি নমুনা অনুসারে সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উপরোক্ত নমুনায় নির্দেশিত হারে পরিমাণমত উৎকৃষ্ট খাদ্য উপাদানসমূহ আলাদা আলাদাভাবে মেপে নিতে হবে এবং অল্প অল্প করে একটি বড় পাত্রে শুকনা অবস্থায় উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশাতে হবে। খাদ্য উপাদানগুলো ভালোভাবে মেশানোর পর অল্প অল্প করে পানি দিয়ে সমস্ত মিশ্রণটি একটি আঠালো মন্ড বা পেস্টে পরিণত করতে হবে। তারপর এই মণ্ডকে হাত দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে ভেজা খাদ্য হিসেবে সরাসরি খামারে প্রয়োগ করা যায়। আবার এই খাদ্য মেশিনে পিলেট বানিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে দানাদার খাদ্যও তৈরি করা যায়।
চিংড়ির পুকুরে অতি সতর্কতার সাথে খাদ্য প্রয়াগ করা হয়। খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বেশি হয় অন্যদিকে পানি দূষণেরও সম্ভাবনা থাকে। একটি পুকুরে কী পরিমাণ খাদ্য প্রয়াগ করা হবে তা নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে নির্ধারণ করা যায়।
প্রতিদিন প্রদেয় খাবারের পরিমাণ= (মোট মজুদকৃত চিংড়ি) × { বেঁচে থাকার হার (%) × প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন × খামারে প্রয়োগের মাত্রা (%) } উদাহরণস্বরূপ, একটি পুকুরে
মোট মজুদকৃত চিংড়ির পরিমাণ = ১,০০,০০০টি বেঁচে থাকার হার = ৭০%; প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন = ২০ গ্রাম, খাবার প্রয়োগের মাত্রা = ৬% (মোট চিংড়ির ওজনের)
এক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রদেয় খাবারের পরিমাণ = ১,০০,০০০ × ৭০ গ্রাম × ২ × ৬/১০০ = ৮৪,০০০ গ্রাম = ৮৪ কেজি
গলদা চিংড়ি নিশাচর। এরা অন্ধকারে চলাচল ও খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করে। সেজন্যে কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের পুকরে প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় খাবার দুইভাগে ভাগ করে এক ভাগ সকাল ৬ টার আগে এবং আরেকবার সন্ধ্যা ৬ টার পরে প্রয়াগে করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকবার প্রয়োগের পূর্বে খাবারকে আবার দুইভাগ করে অর্ধেক ফিডিং ট্রে এবং বাকী অর্ধেক পুকুরের কয়েকটি জায়গা পাট কাঠি দ্বারা চিহ্নিত করে সেখানে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, চিংড়ির জন্য খাদ্য দেয়ার সময় পুকুরের তলদেশ থেকে এক ফুট উপরে ফিডিং ট্রে স্থাপন করতে হবে।
ফিডিং ট্রে পর্যবেক্ষণের পর চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ কমাতে হবে এবং কী কারণে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে গেল তা জেনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবস্থার উন্নতি হলে খাবার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন কারণে চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যেতে পারে। কারণগুলো নিম্নরূপঃ
খাদ্য প্রয়োগে সতর্কতা
নমুনা সংগ্রহের সময় ৫ গ্রামের কম ওজনের চিংড়ির নমুনা ফিডিং ট্রে থেকে এবং এর অধিক ওজনের চিংড়ির নমুনা খেপলা জালের মাধ্যমে পুকুর থেকে চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে পুকুরে চিংড়ির মজুদ নির্ণয় করা যায়। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে চিংড়ির স্বাস্থ্য, বাঁচার হার ও পুকুরের তলদেশের অবস্থা জানা যায়। খেপলা জালের মাধ্যমে মোট চিংড়ির সংখ্যা ও দৈহিক বৃদ্ধি জানার জন্য পুকুরের বিভিন্ন স্থানে ১০-১৫ বার জাল টেনে চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে চিংড়ির মজুদ নির্ণয় করা যায়।
মোট চিংড়ির সংখ্যা = গড়ে একবারে ধৃত চিংড়ির সংখ্যা / জালের আয়তন (ব. মিটার) × পুকুরের আয়তন (ব. মিটার)
জালের আয়তন ৩.১৪ × (জালের ব্যাসার্ধ)
দৈহিক বৃদ্ধির হার নির্ণয়ের জন্য পুকুর থেকে ০-৪০ টি চিংড়ির দৈর্ঘ্য ও ওজন মেপে গড় ওজন বের করতে হবে। পুকুরে দৈনিক কি পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ প্রয়াজেন তা নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে বের করা যায়।
দৈনিক মোট খাদ্যের পরিমাণ = বেঁচে থাকা চিংড়ির সংখ্যা × গড় ওজন x খাদ্য সরবরাহের হার (%)
সাধারণত ৭-১০ দিন পর পর চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি ও বাঁচার হার নির্ণয় করা হয়। একবার নমুনা সংগ্রহ করে দৈহিক বৃদ্ধি ও বাঁচার হার নির্ণয় করে উক্ত ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে দৈনিক দৈহিক বৃদ্ধির পরিমাণ হিসেব ধরেই খাদ্য সরবরাহ করা উচিত এবং এতে চিংড়ির উৎপাদনেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
সারণি: চিংড়ির দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে প্রয়োগকৃত খাদ্যের পরিমাণ
গড় ওজন (গ্রাম) | দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ (%) |
---|---|
০.২-০.১ | ১৫-১৩ |
১-২ | ১৩-১১ |
২.৩ | ১১-৯ |
৩.৪ | ৯.৭ |
৫-১৩ | ৭.৫ |
১৩-২০ | ৫.৩ |
২০-৩০ | ৩-২০ |
এফসিআর: খাদ্য সরবরাহের ফলে তা দৈহিক বৃদ্ধিতে কতটুকু সহায়তা হল তা জানার জন্য নিয়মিত প্রয়োজন এফসিআর (Food Conversion Ratio) নির্ধারণ। চিংড়ি চাষের কোনো এক নির্দিষ্ট মুহূর্তে এফসিআর হচ্ছে সে মূহুর্ত পর্যন্ত একটি পুকুরে সরবরাহকৃত সর্বমোট খাদ্য দ্বারা কী পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদিত হলো। কোনো একটি পুকুরে একটি নির্দিষ্ট মুহূর্ত পর্যন্ত ২০০ কেজি খাদ্য সরবরাহ করে ১০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হলে সে মুহূর্তে এফসিআর হচ্ছে ১০০ : ২০০= ১ : ২ অর্থাৎ ২ কেজি খাদ্য প্রয়োগ করে ১ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে।
পুকুরে পোনা মজুদের হার, খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ, খাদ্যের গুণাগুণ এবং আহরণকালে চিংড়ির আকারের উপর সাধারণত এফসিআর বহুলাংশে নির্ভরশীল। সাধারণত চিংড়ি চাষের শেষ পর্যায়ে এফসিআর ২ এর বেশি হওয়া গ্রহণযাগ্যে নয়। চিংড়ি চাষের প্রথম দিকে সাধারণত চিংড়ি দ্রুত বাড়ে ফলে প্রথম দিকে এফসিআর চাষের শেষের দিকের চেয়ে তুলনামুলকভাবে কম হয়।
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যেকোন একটি চিংড়ি / মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানা পরিদর্শন করে নিম্নের ছক পূরণ করো-
পরিদর্শনকৃত মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানার নাম | |
ঠিকানা | |
কি কি ধরনের খাদ্য উৎপাদন করা হয়? | ১. ২. ৩. |
খাদ্য উৎপাদনে কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয়? | ১. ২. ৩. |
কারখানার কর্মী সংখ্যা কত? | |
কর্মীগণ কাজের সময় কি কি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে? | ১. ২. ৩. |
চিংড়ি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানার কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও | |
তোমার নাম | |
শ্রেণি রোল নং প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রেণি শিক্ষকের নাম | |
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ | শ্রেণী শিক্ষকের স্বাক্ষর |
চিংড়ি/মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানায় নিরাপদে কাজ করতে তোমরা কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত তা ছকে লেখ।
ক্রম | কাজের নাম | নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা |
---|---|---|
০১
| পিলেট মেশিনের মাধ্যমে চিংড়ি/মৎস্য খাদ্য তৈরি করা
| হ্যান্ড গ্লাভস, অ্যাপ্রন ইত্যাদি |
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন একটি চিংড়ি ঘের/পুকুর/ খামার পরিদর্শন কর যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে চিংড়ির বল জাতীয় খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। এর কর্ম পরিবেশ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও।
পরিদর্শনকৃত মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানার নাম | |
ঠিকানা | |
গলদা চিংড়ি ছাড়া আর কোন প্রজাতির মাছের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা হয় কি? | |
খাদ্য উৎপাদনে কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয়? | |
খাদ্যে ব্যবহৃত খৈল আগে ভিজিয়ে রাখা হয় কী না? | |
কারখানার কর্মী সংখ্যা কত? | |
কর্মীগণ কাজের সময় কি কি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে? | |
চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন কারখানার কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে মতামত দাও | |
তোমার নাম শ্রেণি রোল নং প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রেণি শিক্ষকের নাম | |
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ | শিক্ষকের স্বাক্ষর |
পারদর্শিতার মানদন্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম
(খ) প্রয়োজনীয় উপকরণ
(গ) কাজের ধারা
১. নিকটস্থ বাজার থেকে ফিসমিল, চালের কুঁড়া, তিলের খৈল, গমের ভূষি, ময়দা, সয়াবিন, খৈল, সরিষার খৈল, চিটাগুড় প্রভৃতি উপাদান আলাদা আলাদা ভাবে ছোট পলিথিন ব্যাগে সংগ্রহ করো।
২. সংগৃহীত খাদ্য উপাদান গুলো পরীক্ষাগারে নিয়ে বিভিন্ন গামলায় ঢালো।
৩. প্রতিটি গামলার খাদ্য উপাদান গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর এবং শনাক্ত করো।
৪. প্রতিটি খাদ্য উপাদানের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য ব্যবহারিক খাতায় লেখা।
৫. এবার খাদ্য উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণের পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যাবহারিক খাতায় লেখ।
৬. পরীক্ষা শেষে খাদ্য উপাদানগুলো পরীক্ষাগারে সংরক্ষণ করো।
সতর্কতা
আত্মপ্রতিফলন
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ পর্যবেক্ষণ করে সনাক্ত করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।
পারদর্শিতার মানদন্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্টস, মেশিন)
(গ) প্রয়োজনীয় মালামাল
(ঘ) কাজের ধারা
১. প্রয়োজনীয় উপকরণসহ সুরক্ষা পোষাক পরিধান করে নির্ধারিত গলদা চিংড়ির পুকুরে গমন করো।
২. পুকুর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মজুদকৃত মোট চিংড়ির ওজন নির্ণয় করো।
৩. অতঃপর মজুদকৃত মোট চিংড়ির ওজনের ৫-১০% হারে মোট খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় করো। প্রতিদিন খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ= মোট মজুদকৃত চিংড়ি x বেঁচে থাকার হার (%) × প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন × খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা (%)।
৪. এবার নির্ধারিত মোট খাদ্যকে দু'টি ভাগে ভাগ করে এক অংশ সকালে ও অবশিষ্ট অংশ সন্ধ্যায় ফিডিং ট্রে'র মাধ্যমে পুকুরে প্রয়োগ করো।
৫. সন্ধ্যায় খাদ্য প্রয়োগের পূর্বে ফিডিং ট্রে ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা কোন খাদ্য অবশিষ্ট আছে কিনা। যদি খাদ্য অবশিষ্ট থাকে তবে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া আর যদি খাদ্য অবশিষ্ট না থাকে তবে খাদ্যের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
৬. পুরো কার্যক্রমটি ধৈর্য্য সহকারে করা এবং গৃহীত কার্যক্রমটি ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করো।
কাজের সতর্কতা
আত্মপ্রতিফলন
ফিডিং ট্রেতে করে গলদা চিংড়ির পুকুরে সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ কৌশলে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।
পারদর্শিতার মানদন্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম
(খ) প্রয়োজনীয় উপকরণ
(গ) কাজের ধারা
১. উপরে বর্ণিত খাদ্য উপাদান গুলো নিকটস্থ বাজার থেকে বাজারদর যাচাই করে সংগ্রহ করো।
২. অতঃপর খাদ্য উপাদান গুলো পরীক্ষাগার কক্ষে নিয়ে এসে শুকনা অবস্থায় ভালোভাবে চাড়িতে মিশিয়ে ফেলো।
৩. উপাদান গুলো উত্তমরুপে মিশানোর পর মগে করে অল্প অল্প পানি দিয়ে সমগ্র মিশ্রণটি ভালোভাবে নেড়ে আঠালো পেন্ট বা মণ্ডে পরিণত করো।
৪. এবার এই মন্ডের কিছু অংশ হাত দিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি কর এবং অবশিষ্ট অংশ সেমাই বা মিনসিং মেশিন দিয়ে পিলেট খাদ্য তৈরি করো।
৫. পিলেট খাদ্য গুলো এবার চাটাইয়ের উপর ছড়িয়ে দিয়ে রৌদ্রে ভালো করে শুকিয়ে নাও এবং বলগুলো ভেজা খাদ্য হিসাবে সরাসরি পুকুরে প্রয়োগ করো।
৬. এবার কাজ গুলো ধারাবাহিক ভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ ।
সতর্কতা
মিশ্রণের কাজটি যেন খুব ভালভাবে হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। পিলেট গুলো সরাসরি রৌদ্রে না শুকিয়ে ছায়াযুক্ত রৌদ্রে শুকানো উত্তম।
আত্মপ্রতিফলন
বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে গলদা চিংড়ির খাদ্য উৎপাদনের দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।
পারদর্শিতার মানদন্ড
ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম
খ) প্রয়োজনীয় উপকরণ
(গ) কাজের ধারা
১. ঝাঁকি জাল দিয়ে পুকুরের বিভিন্ন স্থান থেকে চিংড়ি ধরে গুণে গুণে পরিষ্কার পানিতে বড় হাড়ির মধ্যে রাখো। ৩০০ গ্রামের মোট মজুদের ৮-১০% মাছ সংগ্রহ করো।
২. সংগৃহীত চিংড়ি চট জাল দ্বারা তৈরি ছোট থলেতে করে দ্রুত ব্যালেন্স দ্বারা ওজন করে খাতায় লিখে রাখো।
৩. মাছের মোট ওজনকে চিংড়ির সংখ্যা দিয়ে ভাগ কর। ধর, পুকুরে ৭৫০০টি চিংড়ি পোনা মজুদ করা হয়েছিল। নমুনা হিসাবে ধরা হয়েছে ৭৫০টি চিংড়ি ওজন করে দেখা গেল মোট ১১ কেজি ২৫০ গ্রাম অতএব, ১১.২৫০/৭৫০ = ০.০১৫ কেজি বা ১৫ গ্রাম গড় ওজন।
৪. ৮০% বেঁচে থাকার হার ধরে পুকুরে এ সময়ের অনুমানকৃত চিংড়ির মোট ওজন হবে (৯০০০ × ৮০)/৩০০ = ৬০০০টি চিংড়ি ৬০০০ × ০.১৫ = ৯০ কেজি চিংড়ি আছে।
৫. পুকুরের রেকর্ড বইতে তারিখসহ নমুনা সংগ্রহের তথ্য বিস্তারিত লিখে রাখো।
৬. গৃহীত কার্যক্রমটি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লেখ।
সতর্কতা
আত্মপ্রতিফলন
ঝাঁকি জাল দিয়ে ঘের বা পুকুরের বিভিন্ন স্থান থেকে চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে চিংড়ির বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. চিংড়ির খাদ্য কয় প্রকার?
২. পুকুরে সবল চিংড়ি কখন দুর্বল চিংড়িকে আক্রমণ করে?
৩. ক্ল্যাডোসেরা কোন ধরনের শেওলা ?
৪. কোন ধরনের শেওলা চিংড়ির সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য?
৫. ডাফনিয়া, ময়না প্রভৃতি কোন জাতীয় প্রাণিপ্লাংকটন?
৬. সাইক্লপস, ডায়পটোমাস প্রভৃতি কোন জাতীয় প্রাণিপ্লাংকটন?
৭. চিংড়ি চাষের প্রথম মাসে প্রতিটি ফিডিং ট্রেতে কি পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হয়?
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. প্রাকৃতিক খাদ্য বলতে কী বোঝায়। প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রকারভেদ লেখ।
২. সম্পুরক খাদ্য কী? সম্পুরক খাদ্যে ব্যবহার করা হয় এরূপ কয়েকটি খাদ্য উপাদানের নাম লেখ।
৩. প্রতিদিন পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের সূত্রটি লেখ।
৪. চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণগুলো লেখ।
৫. এফসিআর কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. চিংড়ির খাদ্যচক্রটি লেখ।
২. চিংড়ির খাদ্যের প্রকারভেদ বর্ণনা করো।
৩. সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি লেখ।
৪. সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করো।
৫. সম্পূরক খাদ্যের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
৬. এফসিআর নির্ণয় পদ্ধতি বর্ণনা করো।
৭. কারখানায় তৈরি খাদ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।
আরও দেখুন...