পুকুরের সকল স্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাছের পোনা ও জুভেনাইল মজুদের উপর মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভর করে। অতি ঘনত্বে মাছের পোনা ও চিংড়ির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করলে এদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন ও বাসস্থানের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে ও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। যার কারণে আশানুরূপ উৎপাদন এবং লাভ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক পোনা ও জুভেনাইল মজুদ করলেও মোট উৎপাদন কমে যায়। সে কারণে পুকুরের সার্বিক অবস্থায় ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পোনার মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করতে হয়। লাভজনকভাবে মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্যে সঠিক মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণের বিবেচ্য বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হলো।
মাটি ও পানির গুনাগুণ ভেদে কোনো একটি জলাশয়ে মাছের পোনা ও চিংড়ির জুভেনাইলের মজুদ ঘনত্ব কম বেশি হতে পারে। যেমন- বেলে ও এঁটেল মাটির উৎপাদনশীলতা দো-আঁশ মাটির চেয়ে কম। ফলে দো-আঁশ মাটির পুকুরে তাদের মজুদ ঘনত্ব অন্যান্য মাটির পুকুরের তুলনায় কিছুটা বেশি হবে।
যদি নির্দিষ্ট সময়ে বড় আকারের মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন করতে (৫-৬ মাসে মাছ ৫০০ গ্রাম - ১ কেজি এবং চিংড়ি ৮০ গ্রাম) হয় তবে কম ঘনত্বে পোনা ও জুভেনাইল মজুদ করা উচিত। মজুদ ঘনত্ব বেশি হলে একই সময়ে মাছ ও চিংড়ির গড় ওজন কম হবে।
পুকুরে বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইল (মাছ ১০-১৫ সেমি এবং চিংড়ি ৫-৭ সেমি) মজুদ করা হলে কম সময়ে বেশি উৎপাদন পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মজুদের সময় বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইল পাওয়া যায় না; ফলে ছোট আকারের পোনা ও জুভেনাইল কিছুটা বেশি ছাড়া যায়। বড় আকারের পোনা ও জুভেনাইলের ক্ষেত্রে মজুদ ঘনত্ব ২৫% কম হতে পারে ।
পুকুরের ধরনের উপরও মাছ ও চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে। সে কারণে মৌসুমী ও বাৎসরিক পুকুরের মজুদ ঘনত্ব ভিন্ন হয়ে থাকে।
পুকুরে শুধুমাত্র সার ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু কম এবং সার ও খাদ্য দুই-ই ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব বেশি হতে পারে। আবার জলাশয়ে আংশিক পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলে আরও অধিক ঘনত্বে মজুদ করা যেতে পারে। কোনো পুকুরে পোনা মজুদ ঘনত্ব মজুদ হার প্রকৃতই উহার ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি, চাষ ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলির আলোকে পুকুর এবং ঘেরে চাষের জন্য নিচে একক ও মিশ্রচাষের কিছু নমুনা উল্লেখ করা হলো-
ক. মৌসুমী পুকুর
একক চাষঃ গলদা চিংড়ি-৫৫ টি পোনা / শতাংশ। তবে খাদ্য ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে এই মজুদ ঘনত্ব দেড় থেকে দুই গুণ বাড়ানো যায়।
মিশ্র চাষঃ ঘনত্ব/শতাংশ
প্রজাতি | নমুনা-১ | নমুনা-২ |
---|---|---|
গলদা | ৩০ টি | ৩০ টি |
সিলভার কার্প | ২০ টি | ২০ টি |
সরপুঁটি | ৫ টি | ৫ টি |
মোট | ৫৫ টি | ৫৫ টি |
খ) বাৎসরিক পুকুর
একক চাষঃ গলদা চিংড়ি ৫০-৭০টি/শতাংশ। প্রতিপালনের সময় ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে এই মজুদ ঘনত্ব আরও দেড় থেকে দুইগুণ বৃদ্ধি করা যায়। গলদা-কার্প মিশ্রচাষে গ্রাস কার্প মজুদ না করাই ভালো। যদি মজুদ করতে হয় তবে প্রতিদিন গ্রাসকর্পের ওজনের নির্দিষ্ট মাত্রায় সবুজপাতা জাতীয় খাদ্য অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।
কার্প-চিংড়ি মিশ্র চাষ- মজুদ ঘনত্ব/শতাংশ
প্রজাতি | আকার (সেমি) | নমুনা-১ | নমুনা-২ | নমুনা-৩ | নমুনা-৪ |
---|---|---|---|---|---|
গলদা চিংড়ি | ৩-৫ | ৩৫-৫৫ | ৩৩-৩৬ | ৩৩-৩৪ | ৩৪-৩৫ |
কাতলা | ৭-১০ | ২-৩ | ১০-১১ | - | ৪-৫ |
সিলভার কার্প | ৭-১০ | ৯-১০ | - | ৯-১০ | ৫-৬ |
বিগ্রেড | ৭-১০ | - | - | ২-৩ | - |
রুই | ৭-১০ | ৪-৫ | ৫-৬ | ৫-৬ | ৫-৬ |
গ্রাসকার্প | ১০-১৫ | - | ১-২ | ১-২ | ২-৩ |
সরপুঁটি | ৩-৫ | ২ | - | - | - |
মোট | ৫০-৫০ | ৫০-৫০ | ৫০-৫০ | ৫০-৫০ |
মন্তব্য- চিংড়ির আকার ৬-৮ সেমি হওয়ার পর ১০-১৪ সেমি আকারের কার্প পোনা মজুদ করতে হবে।
গ) ঘের
ঘেরে বিভিন্ন কৌশলে পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করে চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে সে কারণে মজুদ ঘনত্বের তারতম্য দেখা যায়। নিয়ে বিভিন্ন কৌশলের উপর ভিত্তি করে মজুদ ঘনত্বের নমুনা উল্লেখ করা হলো-
(ক) ঘেরটি যখন পুরোপুরি বড় চিংড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়
(খ) ঘেরটি প্রথমে নার্সারি ও পরে মজুদ কাজে ব্যবহৃত হলে ৮০-১০০টি পিএল/শতাংশ
(গ) ঘেরটি পুরোপুরি নার্সারি হিসেবে ব্যবহৃত হলে ১,০০০-২,০০০টি পিএল/ শতাংশ
প্রজাতি | আকার (সেমি) | পরিমাণ (প্রতি শতাংশে) |
---|---|---|
গলদা | ৩-৫ | ৫০-৬০ |
কাতলা | ৭-১০ | ৬-৮ |
সিলভার কার্প | ৭-১০ | ৬-৮ |
রুই | ৭-১০ | ৪-৬ |
গ্লাস কার্প | ৭-১০ | ০-১ |
মোট | ৬৫-৮০ |