প্রিয় শিক্ষার্থী,
অঞ্জলি ৩-এ তোমরা কয়েকটি নতুন অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছ। তোমাদের কাছে প্রতিটি উপহার কিছু মজার অভিজ্ঞতা দেবে যার মাধ্যমে তোমরা ত্যাগ ও সেবার মাধ্যমে সমাজকে উন্নয়ন করার একটি পূর্ণ ধারণা পাবে। এই অঞ্জলিতে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির (ফাদার চার্লস জে ইয়াং, মিস এলেন আর্নল্ড ও গ্রেটা থুনবার্গ) জীবনী এবং সেবামূলক কাজে তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে। তোমরাও কিছু বাস্তব অভিযানের মুখোমুখি হবে যাতে তোমরাও ভবিষ্যতে সমাজের কল্যাণে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা কাজ করতে পারো। সেইসঙ্গে খ্রীষ্ট ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে সহমর্মিতায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষ, প্রকৃতি ও সমাজের কল্যাণে নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখতে পারো।
|
প্রিয় শিক্ষার্থী, এই সেশনে তোমাদের শিক্ষক স্কুলের আশপাশের এলাকায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে নিয়ে যাবেন। আশা করি তুমি খুব আনন্দিত হয়েছ যে একটি নতুন অভিযানে যুক্ত হচ্ছো এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছ।
তোমার শিক্ষক যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবে তোমরা প্রস্তুত হয়ে আসবে। শিক্ষক যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানে তোমরা সুশৃঙ্খলভাবে থাকবে। তুমি যে বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে যাচ্ছ, তাঁর ত্যাগ ও সেবার কাজগুলো তুমি ভালোভাবে দেখবে। সুযোগ পেলে তার সাক্ষাৎকার নিবে। তিনি কীভাবে সমাজের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং তাঁর জীবনে এই সেবা কাজের জন্য কী কী ত্যাগ করতে হয়েছে জেনে নিবে। সাক্ষাৎকারের সুযোগ না পেলে তার প্রতিষ্ঠান বা বাড়ির সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিবে। তার জীবনী নিয়ে যদি কোনো বই বা প্রকাশনা থাকে সেখান থেকেও তথ্য সংগ্রহ করবে। তোমাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাতা ও কলম নিবে যেন তোমরা তথ্যগুলো লিখতে পারো। পরিদর্শন শেষে বিশিষ্ট ব্যক্তি বা তার পরিবারকে ধন্যবাদ জানাও। এরপর শিক্ষকের নির্দেশমতে সুশৃঙ্খলভাবে ফিরে আসবে।
পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক তোমাদের কোনো একজনকে সেশনের শুরুতে প্রার্থনা করতে বলতে পারেন, তাই প্রস্তুত থেকো।
এই সেশনে শিক্ষক তোমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে তোমাকে জোড়ায় কাজ দিবেন। বিগত পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জোড়ায় আলোচনা করে পোস্টার পেপারে লিখবে এবং উপস্থাপন করবে। শিক্ষক তোমাকে পোস্টার পেপার ও লেখার প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করবেন।
পোস্টার তৈরি
শিক্ষার্থী, আশাকরি তুমি তোমার একজন সহপাঠীকে পোস্টার তৈরির কাজে তোমার সঙ্গে পেয়েছ। তোমরা বিগত সেশনে যে বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছ সে বিষয়ে দুজন মিলে আলোচনা করো। আলোচনার পর তিনি জীবনে ত্যাগস্বীকার করে যে সেবার কাজগুলো করেছেন, সে বিষয়ে কমপক্ষে ছয়টি বিষয়ের তালিকা তৈরি করো।
ছয়টি বিষয়ের তালিকা
১. বিশিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় (মুক্তিযোদ্ধা/ মিশনারি/লেখক/ কবি/ ডাক্তার, ইত্যাদি)
২. সেবা কাজের উদ্দেশ্য
৩. সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা
৪. সেবামূলক কাজ করার উৎসাহের কারণ
৫. সেবা কাজের বিবরণ
৬. সেবা কাজের জন্য ত্যাগস্বীকারসমূহ
তোমাদের লেখার জন্য ইতোমধ্যে পোস্টার পেপার ও মার্কার পেন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এবার ব্যবহার করো। ছয়টি বিষয় ছাড়াও যদি অতিরিক্ত কোনো বিষয় তোমরা খুঁজে পাও সেগুলোও লিখে রাখো। লেখা শেষ হয়ে গেলে তোমাদের তৈরি পোস্টার পেপারগুলো শিক্ষকের কাছে জমা দাও। শিক্ষক তোমাদের সেবা কাজের এই তালিকাগুলো উপস্থাপন করতে বলবেন। উপস্থাপনার জন্য তুমি প্রস্তুত থেকো।
পোস্টার পেপার উপস্থাপন
তোমাদের শিক্ষক সামনে ডাকলে তার কাছ থেকে পোস্টার পেপারটি নিয়ে নির্ধারণ করে বা দেওয়ালে মাস্কিং টেপ দিয়ে ঝুলিয়ে দাও। তোমাদের প্রতিটি দলকে শিক্ষক সময় দেবেন। ঐ সময়ের মধ্যে তোমাদের উপস্থাপন করতে হবে। এরপর প্রতিটি সেবাকাজের বিবরণ বর্ণনা করো এবং তোমার কী ধারণা হয়েছে প্রকাশ করো। ছয়টি বিষয় ছাড়াও যদি অতিরিক্ত কোনো বিষয় তোমাদের চোখে পড়ে তোমরা সেগুলোও লিপিবদ্ধ করবে।
উপস্থাপনা শেষ হলে তোমাদের পোস্টার পেপারগুলো সংগ্রহ করে শিক্ষককে জমা দাও।
মনে রেখো, যে বিষয়গুলো তুমি পোস্টার পেপারে লিখেছ তা অতি মূল্যবান। তাই জমা দেওয়ার পূর্বে পোস্টার পেপারে লিখিত বিষয়গুলো তোমার নোটবুকে রেকর্ড করে রেখো।
সেশন শেষে তোমার শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দাও।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানাও। শিক্ষক একটি গান এবং প্রার্থনা দিয়ে শুরু করবেন।
বরষ আশিষ বারি (আজি)
অবিরত ধারে যীশু সবার উপরি।
১. কি উপহার দিব আজি, গুণধাম,
এই এনেছি ভগ্ন চিত্ত হল পাপহারি।
২. জ্বাল প্রেম-অগ্নি সকল হৃদয়ে,
সবে পরসেবা তরে যেন প্রাণ দিতে পারি
৩. তব বলে কর সবে বলবান,
মোরা জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি।
৪. পূর্ণ কর সবে পবিত্র আত্মায়,
যেন জগতেরে তব প্রেমে মাতাইতে পারি।
খ্রীষ্ট সংগীত ১৫৪
এ সেশন দুটিতে শিক্ষক তোমাদের এবার আরও গভীরভাবে সমাজের কল্যাণে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা করার মনোভাবের উপর পবিত্র বাইবেল থেকে এবং একজন ঐতিহাসিক মহান ত্যাগী মিশনারির বিষয়ে আলোচনা করবেন। তার জীবনের গল্পের মাধ্যমে তোমরা খুঁজে পাবে কীভাবে নিজের জীবনের সুখ ও বিলাসিতাকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বসবাস করে সেবাদান করেছেন।
পবিত্র বাইবেল পাঠ
শিক্ষক তোমাদের মধ্যে একজনকে পবিত্র বাইবেল থেকে ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পড়তে বলবেন।
আমি আবার বলি, কেউ যেন আমাকে বোকা মনে না করে। অবশ্য যদি তোমরা তা-ই মনে করে থাক তবে বোকা হিসাবেই আমাকে গ্রহণ কর, যেন আমি একটুখানি গর্ব করতে পারি। আমি এখন যা বলছি তা প্রভুর আদেশ মত বলছি না, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে গর্ব করতে গিয়ে বোকার মতই বলছি। মানুষ যা নিয়ে গর্ব করে, অনেকেই যখন তা নিয়ে গর্ব করছে তখন আমিও করব না কেন? তোমরা জ্ঞানী বলে খুশী হয়ে বোকাদের সহ্য কর। শুধু তা-ই নয়, যদি কেউ তোমাদের দাস বানায়, তোমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, তোমাদের ফাঁদে ফেলে, তোমাদের মনিব হয়ে দাঁড়ায় কিম্বা তোমাদের গালে চড় মারে, তোমরা সেই সবও সহ্য কর। আমি লজ্জার সংগে স্বীকার করছি যে, এই সব ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি দুর্বল ছিলাম।
যা নিয়ে অন্যেরা গর্ব করতে সাহস করে আমিও তা নিয়ে গর্ব করতে সাহস করি; এই কথা আমি বোকার মতই বলছি। যারা গর্ব করে তারা কি ইব্রীয়? আমিও তা-ই। তারা কি ইস্রায়েলীয়? আমিও তা-ই। তারা কি অব্রাহামের বংশধর? আমিও তা-ই। তারা কি খ্রীষ্টের সেবাকারী? আমি আরও বেশি করে তা-ই। মনে রেখো, আমি মাথা- খারাপ লোকের মত কথা বলছি। খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি তাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি, আরও অনেক বার জেল খেটেছি, আরও অনেক বার মার খেয়েছি, অনেক বার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। যিহুদীদের হাতে পাঁচ বার আমি উনচল্লিশ ঘা চাবুক খেয়েছি, বেত দিয়ে তিন বার আমাকে মারা হয়েছে। এক বার আমাকে পাথর মারা হয়েছিল। তিন বার আমার জাহাজ-ডুবি হয়েছিল। একদিন ও একরাত আমি সমুদ্রের জলের মধ্যে ছিলাম। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। বন্যা, ডাকাত, নিজের জাতির লোক এবং অযিহুদীদের দরুণ আমি বিপদে পড়েছি। তা ছাড়া শহরে, মরু-এলাকায়, সমুদ্রে এবং ভণ্ড ভাইদের মধ্যেও আমি বিপদে পড়েছি।
খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি কষ্টের মধ্যেও কঠিন পরিশ্রম করেছি। আমি অনেক রাত জেগেছি, খিদে ও পিপাসায় কষ্ট পেয়েছি, না খেয়ে থেকেছি, ঠান্ডায় ও কাপড়-চোপড়ের অভাবে কষ্ট পেয়েছি। বাইরের এই সব ব্যাপার ছাড়াও সব মণ্ডলীগুলোর জন্য রোজই আমার উপর চিন্তার চাপ পড়ছে। কেউ দুর্বল হলে আমি কি তার দুর্বলতার ভাগী হই না? কারও দরুন কেউ পাপে পড়লে আমি কি অন্তরে জ্বালা বোধ করি না?
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
প্রেরিত পৌল একজন সাহসী প্রচারক, যিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুও গ্রহণ করতে সব সময় প্রস্তুত থাকতেন। তিনি যদিও এক সময় শিক্ষিত ফরিসী ছিলেন এবং তার বাবা একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন তারপরও যীশুখ্রীষ্টের জন্য তিনি তার ধনসম্পদ ছেড়ে সুসমাচার প্রচার করার জন্য সমস্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। আমরা ২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ পেড়েছি, যেখানে পৌল তার কষ্টভোগের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এই দুঃখভোগ সহ্য করেছেন শুধু মানুষকে মুক্তির পথ দেখাবার জন্য। প্রেরিত পৌল তার জীবনের সমস্ত আনন্দ ও সুখভোগ ত্যাগ করে শুধু যীশুখ্রীষ্টের কথা প্রচার করার জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কষ্টভোগ করেছেন। তিনি চার্চগুলোর জন্য চিন্তা করতেন এবং যখন কেউ কষ্টে জীবন যাপন করতো তিনিও তখন কষ্ট পেতেন। আমাদের জীবনে যখন আমরা অন্যের কষ্ট দেখি তখন তাদের জন্য আমাদেরও দুঃখভোগ করা উচিত। তাদের কষ্টের সঙ্গে এক হয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার। এই সময় একজন মহীয়সী নারীর জীবনী আলোচনা করব যিনি নিজের আরাম- আয়েশ ত্যাগ করে মানুষের সেবা করে গেছেন।
জন্ম ও আহ্বান
মিস এলেন আর্নল্ড ৫ জুলাই ১৮৫৮ সালে এস্টন, ওয়ারউইকশ্যায়ার, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলফ্রেড আর্নল্ড একজন জুয়েলারী ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা জেইন সপরিবারে ১৮৭৯ সালে অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হন। মিস আর্নল্ড, ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট ব্যাপ্টিস্ট চার্চে ১১ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন। সেই চার্চের পালক রেভা, সাইলাস মিড-এর অনুপ্রেরণায় তিনি প্রথম মানবসেবা কাজের জন্য উৎসাহিত হন। তিনি মেডিকেল ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং অ্যাডিলেড হাসপাতালের দুইজন নার্সকে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, কলেরা এবং গুটিবসন্ত রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেন। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে তার বান্ধবী ম্যারি গিলবার্টসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন। কলকাতা ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির ভাষা স্কুলে বাংলা ভাষা শিখেন। এরপর মিস আর্নল্ড ও মিস গিলবার্ট প্রথম ফরিদপুরে আসেন, কিন্তু তার পূর্ববঙ্গের আবহাওয়া সহ্য হচ্ছিল না বিধায় তিনি ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যান। ১৮৮৫ সালে তার সঙ্গে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে তিনি পুনরায় পূর্ববাংলায় ফিরে আসেন।
ত্যাগ ও সেবার মহিমা
মিস এলেন আর্ণল্ড ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে আরও নারী মিশনারি সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রথম সেবা কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির পক্ষে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ত্রিপুরার মহারাজার কাছ থেকে একটি জমি কিনে সেখানে একটি ইটের দালানের মিশন হাউস তৈরি করেন। একজন নারী বিদেশিনী হয়ে বার্জে করে, কয়লা আনিয়ে সেই জ্বালানি দিয়ে ইটের ভাটায় ইট পুড়িয়ে দালান তৈরি করেন। তিনি ১৮৯১-৯২ খ্রীষ্টাব্দে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিতে ছিলেন তখন দালানের কাজ শেষ হয় কিন্তু সেই বাড়িতে তিনি ফিরে আসতে পারেননি। ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সরাসরি পাবনাতে আসেন এবং নারীদের মধ্যে শিক্ষা চিকিৎসা ও প্রচার কাজ শুরু করেন। পাবনায় মিশনারিদের কোনো থাকার ঘর ছিল না। মিস আর্ণল্ড একটি ভাড়া বাসায় থেকে স্বাস্থ্য সেবা দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি তার বন্ধুদের কাছে অর্থের জন্য চিঠি লিখতে থাকলেন যাতে পাবনাতে একটি মিশন হাউস তৈরি করতে পারেন। তার প্রার্থনা ও অক্লান্ত চেষ্টায় তিনি মিশন হাউস তৈরির টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন এবং ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে একটি মিশন বাড়ি তৈরি করেন যেটি জেনানা হাউস নামে পরিচিত (প্রকৃত নাম John Price House)। ঐ বাড়িটিতে তিনি দুঃস্থ মহিলাদের জন্য আশ্রম তৈরি করেছিলেন। মিস আর্ণল্ডের সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবায় যোগ দিয়েছিল ডা. চার্লস হোপ এবং তার স্ত্রী ডা. লারা হোপ। ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে তিনি পাবনার দাশুরিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণ এবং কুচলিয়া বিলের কৃষকদের বীজ দিয়ে সাহায্য করেছেন। কুচলিয়াতে একটি মিশন স্টেশন করে সেখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি বালক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
এই পরিশ্রমী আর্তমানবতার সেবায় রত কুমারী বিদেশিনী ভীষণভাবে চেয়েছিলেন পাবনার জেনানা হউস থেকে স্বাস্থ্যসেবা করে যাবেন। পরবর্তীকালে তাকে নিজের প্রচেষ্টায় অর্থ সংগ্রহ করে বাড়ি করা জেনানা হাউসে থাকতে দেওয়া হয়নি। তার একটি বড় কারণ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি তাকে পেনশন গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল এবং মিশন হাউস ছেড়ে অন্য স্থানে যেতে আদেশ করেছিল। সেই দিন তিনি একা মিশন হাউস থেকে চোখের জলে বের হয়ে যান এবং একটি খোলা গরুর গাড়িতে চড়ে ১২ মাইল পথ অতিক্রম করে আভাইকোলা মিশন স্টেশনে চলে আসেন। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে মিস আর্নল্ড আতাইকুলা এবং বেড়া এই দুই স্থানে সেবাকাজ শুরু করেছিলেন। এই দুই অঞ্চল জলাশয় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও শুকনো মৌসুমে কলেরার প্রাদুর্ভাব প্রচণ্ড ছিল। তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। পরবর্তীকালে আতাইকুলাতে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই কেন্দ্র থেকে তিনি প্রতিদিন বিনামূল্যে রোগী দেখতেন এবং নামমাত্র মূল্যে ঔষধ দিতেন। মিস আর্ণল্ড কয়েক রকম ওষুধের মিক্সার গরম পানিতে ফুটিয়ে কাচের শিশিতে ভরে রাখতেন। অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর ছিলো বলে ওষুধের নাম পড়তে পারতো না। তাই তিনি কয়েকটি ওষুধের সংমিশ্রণে তরল ওষুধ শিশিতে করে রোগীদের দিতেন যাতে তারা সঠিক চিকিৎসা পায়।
মিস আর্ণল্ড নামে তার অমতে একটি ইনসিওরেন্স করা হয়। তিনি ১৯২৮ সালে তার চিঠিতে লিখেছিলেন, "আমি কখনো আমার জীবনের বীমা করিনি এবং কখনো আমার বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয় করিনি, তাই আমার স্বর্গের পিতা ছাড়া আর কোনো কিছু চাওয়ার নাই।" তিনি ইনসিওরেন্স গ্রহণ করেননি। তার চিকিৎসা সেবার কথা শুনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর কৌতূহলী হয়ে আতাইকুলা পরিদর্শনে আসেন। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদক 'কাইজার-ই-হিন্দ' পদকে ভূষিত হন। কিন্তু তিনি নম্রতায় ঐ পদক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি যীশুখ্রীষ্টের বাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, "আমি সেবা পেতে আসি নাই কিন্তু সেবা দিতে এসেছি।"
মৃত্যু
১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে শেষবারের মতো মিস আর্নল্ড ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়াতে যান। অথচ তার মন পড়ে ছিলো বাংলার হতদরিদ্র মানুষের জন্য, বারবার তাদের ম্লান, ক্ষুধার্ত, অসুস্থ চেহারা মনে পড়ত। তিনি দুঃস্থ মানুষদের কষ্টে ব্যথিত হয়ে আবার ফিরে যেতে চাইলেন আতাইকুলাতে, কিন্তু মিশন বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা দেখে কোনোভাবে পাঠাতে রাজি হয়নি। অবশেষে সবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে পাবনার আতাইকুলাতে ফিরে আসেন। বার্ধক্য ও অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। তিনি আতাইকুলাতে আর দালান করেননি, একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন। এক মরণ রোগ তাকে পেয়ে বসেছিল। মিশন বোর্ড তার চিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, "মিশন হাউস যেন আমাকে না নেয়, আমি এই গ্রামেই থাকতে চাই যতদিন না আমার প্রভু আমাকে তাঁর কাছে তুলে নেন।" ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের ৯ই জুলাই এই মহীয়সী নারী আতাইকুলাতে তাঁর কুঁড়েঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইছামতি নদীর তীরে ঢাকা পাবনা হাইওয়ের পাশে তিনি খ্রীষ্টানদের জন্য একটি কবরস্থান তৈরি করেছিলেন। সেখানে তাকে সমাধি দেওয়া হয় যা এখনও তার সাক্ষ্য বহন করে।
এই পরিশ্রমী মহীয়সী নারী সমস্ত সুখ ত্যাগ করে নিজের দেশ ছেড়ে একটি কুটিরে এসে বসবাস করেছেন। নিজের জন্য সমস্ত সম্মান, সুবিধা ও উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঝড়, বৃষ্টি, রোদের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে, গরুর গাড়িতে করে এবং নৌকায় করে চিকিৎসা সেবা দিতেন। অনেকবার তিনি বর্ষাকালে বিলের মধ্যে ঝড়- বৃষ্টিতে পড়েছিলেন। প্রেরিত পৌল যেমন তার সাক্ষ্যে খ্রীষ্টের জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করে নিপীড়ন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যে ভুগেছেন, অসুস্থতা, ঝড়, নৌকাডুবিতে পড়েছেন (২ করিন্থীয় ১১:১৬-২৯ পদ), মিস আর্নল্ড তেমনি প্রেরিত পৌলের মতো কষ্টের জীবন যাপন করে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: ড. ডেনিশ দিলিপ দত্ত, আশীর্বাদের ঝর্ণাধারায়, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ, ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ৩৯-৪৫, ৪৭
এসো একক কাজ করি
তোমরা একটা সাদা কাগজে নিচে ছাপানো বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে অঙ্কন করবে। এরপর ঐ মানচিত্রে মিস এলেন আর্নল্ড যে এলাকা (উপজেলা) ও জেলা থেকে তার সেবাকাজ শুরু করেছে, সেই স্থানগুলো সনাক্ত করতে হবে এবং তার মিশনারি যাত্রার রোডম্যাপ অঙ্কন করতে হবে। রোডম্যাপ তৈরি করার পর যে সমস্ত এলাকায় তিনি তার ত্যাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার কাজ করেছেন সেই স্থানসমূহ তীর চিহ্ন দিয়ে সনাক্ত করো এবং কাগজের ডান পাশে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
নিচের মানচিত্রের ছবি দেখে অঙ্কন করো।
পরবর্তী সেশনে তোমরা বাইবেল থেকে আরও একটি ত্যাগের মাধ্যমে সেবার ব্যাখ্যা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী সম্পর্কে জানবে।
শিক্ষক হয়তো শেষে তোমাকে প্রার্থনা করতে বলতে পারেন বা নিজে করবেন। সেশন শেষে শিক্ষককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় জানাও।
সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, বিগত দুটি সেশনে তোমরা পবিত্র বাইবেল থেকে এবং একজন উনিশ শতকের মিশনারির সেবা করার জন্য কষ্টভোগ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সেবা করার বেশ ভালো ধারণা পেয়েছ। এই দুটি সেশনেও তোমরা বাইবেল ও একজন মিশনারির জীবনী থেকে সমবায় উন্নয়নে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা দান করে সমাজের কল্যাণ কীভাবে সাধন করা যায় তার উজ্জ্বল ধারণা পাবে। শিক্ষক তোমাকে নির্দিষ্ট পাঠ থেকে পবিত্র বাইবেল পড়তে বলবেন। তাই আগে থেকে নিচের দেওয়া বাইবেল পাঠের অংশটুকু পড়ে প্রস্তুত থেকো।
শিক্ষক তোমাদের মধ্যে একজনকে পবিত্র বাইবেল থেকে প্রেরিত/শিষ্যচরিত ৪:৩২-৩৭ পদ এবং মথি ৭:১২ পদ পড়তে বলবেন। প্রস্তুত থেকো বা তুমি বাইবেল পাঠ করতে চাইলে শিক্ষককে অনুরোধ করতে পারো।
"খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা সবাই মনেপ্রাণে এক ছিল। কোন কিছুই তারা নিজের বলে দাবি করত না বরং সব কিছুই যার যার দরকার মত ব্যবহার করত। প্রেরিতেরা মহাশক্তিতে সাক্ষ্য দিতে থাকলেন যে, প্রভু যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আর তাদের সকলের উপর ঈশ্বরের অশেষ দয়া ছিল। তাদের মধ্যে কোন অভাবী লোক ছিল না, কারণ যাদের জমি কিম্বা বাড়ী ছিল তারা সেগুলো বিক্রি করে টাকা-পয়সা এনে প্রেরিতদের পায়ের কাছে রাখত। পরে যার যেমন দরকার সেইভাবে তাকে দেওয়া হত। যোষেফ নামে লেবির বংশের একজন লোক ছিলেন। সাইপ্রাস দ্বীপে তাঁর বাড়ী ছিল। তাঁকে প্রেরিতেরা বার্ণবা, অর্থাৎ উৎসাহদাতা বলে ডাকতেন। তাঁর এক খণ্ড জমি ছিল; তিনি সেটা বিক্রি করে টাকা এনে প্রেরিতদের পায়ের কাছে রাখলেন।"
"তোমরা অন্য লোকদের কাছ থেকে যেরকম ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে সেইরকম ব্যবহার কোরো। এটাই হল মোশির আইন-কানুন ও নবীদের শিক্ষার মূল কথা।"
তোমাকে একটু সহজভাবে বলি
যীশুকে যারা বিশ্বাস এবং গ্রহণ করেছিল তারা প্রত্যেকে ধনী বা স্বচ্ছল ছিল না, অনেকেই ছিল দীনহীন। খ্রীষ্টের শিক্ষা এবং যীশুখ্রীষ্টকে অনুসরণ করতে হলে দুনিয়ার ধনসম্পদ ত্যাগ করে অনুসরণ করতে হবে। এই শিক্ষা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিল। যারা ধনী ছিল প্রত্যেকে তাদের ধনসম্পদ এনে এক জায়গায় রাখত। দীনহীন বা ধনী সকলে যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সেখান থেকে নিত। এ যেন কিছুটা সমবায় সমিতির মতো, সকলে সমানভাবে জীবন যাপন করত। যীশুখ্রীষ্ট যেভাবে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে সমর্পণ করেছেন, তেমনি তাঁর অনুসারীরা তাদের নিজেদের সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে তাদের খ্রীষ্টিয়ান ভাইবোনদের জন্য দিয়েছিল। এ কারণে প্রত্যেকে তাদের জীবন মান উন্নত করে দারিদ্রদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছিল। আমরাও এভাবে আমাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে যারা অভাবে আছে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেমন নিজেদের জন্য অন্যের কাছ থেকে আশা করি ঠিক একই রকমভাবে অন্যরাও আশা করে। অতএব, শুধু নিজের জন্য চিন্তা না করে অন্যের দুঃখ-দুর্দশার দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। ঈশ্বর আমাদের কাছে থেকে এমন সেবাই আশা করেন।
আজ আমরা এমন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে জানব যিনি নিজের জন্য চিন্তা না করে অন্যের দুঃখ-দুর্দশার দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং, সিএসসি।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা মেরী ও বাবা ডানিয়েল ইয়াং মিলে একটি সুখী পরিবার। পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে চার্লস ছিলেন তৃতীয়। চতুর্থ সন্তান জন্ম দেয়ার সময় চার্লসের মা মারা যান। দানিয়েল ইয়াং সন্তানদের দেখাশোনা ও চাকুরি একসঙ্গে সামলাতে না পেরে চার্লসকে একটি অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেন। সেখান থেকে চার্লস একটি সেমিনারিতে দারোয়ানের চাকরি করা শুরু করেন। প্রাথমিক স্কুল পার হয়ে তিনি নিউইয়কের দ্যা মোস্ট হলি রোজারিও হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই ঐ ধর্মপল্লীর যাজক পূর্ব বাংলায় বা বর্তমানে বাংলাদেশে মিশনারি হিসেবে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে ১৯ বছর বয়সে চার্লস নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পবিত্র ক্রুশ সেমিনারিতে যোগ দেন। পড়াশোনা শেষ করে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নভিশিয়েটে যোগ দেন।
আহ্বান
ফাদার চার্লস ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ২রা জুলাই প্রথম ব্রত গ্রহণ করেন। তিনি চারটি ব্রত গ্রহণ করেছিলেন: দরিদ্রতা, কৌমার্য, বাধ্যতা এবং বিদেশে বাণী প্রচার। তার সব সময় স্বপ্ন ছিল, তিনি একজন বিদেশি মিশনারি হবেন। ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে জুন তিনি যাজক পদ লাভ করেন এবং ঐ বছরের অক্টোবর মাসে ফাদার চার্লস পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) উদ্দেশে রওনা দেন। ২৫শে নভেম্বর ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকায় এসে পৌঁছেন।
সমবায় ঋণদান সমিতির বিষয়ে প্রাথমিক চিন্তা
ফাদার চার্লস, ময়মনসিংহ এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মানুষের প্রচন্ড দারিদ্র্য কাছে থেকে দেখেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন যে অর্থ দান করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা অসম্ভব। তিনি এই দারিদ্রদ্র্য থেকে মুক্ত করার নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন যে, সমবায় ঋণদান সমিতি দ্বারাই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। এ বিষয়ে তিনি তখন তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনারের সঙ্গে দেখা করেন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের এই ধারণা বুঝিয়ে বলেন। আর্চবিশপ মহোদয় ফাদার চার্লসের মাঝে বিপুল উৎসাহ দেখে কানাডায় অবস্থিত নোভা স্কটিয়ারি অ্যান্টিহোনিশ-এর কোডি ইনস্টিটিউটে সমবায় ঋণদান সমিতির উপর পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দে পরবর্তী দুই বছর পড়াশোনা করে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন।
ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্ম
১৯৫৪ সালে ঢাকায় এসে তিনি এক মিশন থেকে অন্য মিশনের যাজকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩রা জুলাই পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার চার্চে প্রথম সমবায় ঋণদান সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই সভা হলো বাংলাদেশের প্রথম সমবায় ঋণদান সমিতির সভা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৩ই মার্চ ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে, ১৯৪০-এর বেঙ্গল সোসাইটি অ্যাক্টের অধীনে 'দি খ্রিষ্টান কো- অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড' নামে নিবন্ধন করা হয়।
দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান
মানুষের দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ মরিয়মনগর, বিড়ইডাকুনী, বারমারী, রাণীখং অঞ্চলে তিনি দীর্ঘদিন মানুষকে সমবায় ঋণদান সমিতির বিষয়ে সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন। ঐ সমস্ত অঞ্চলে দরিদ্রদের জন্য "ধান ব্যাংক" পরিচালনা করেছিলেন। ঠিক যেমন যীশুর শিষ্যরা ও বিশ্বাসীরা সমস্ত সম্পত্তি এক জায়গায় জমা করতো এবং যার যতটুকু দরকার হতো ততটুকু নিতো; কেউ দীনহীন ছিলো না (প্রেরিত/শিষ্যচরিত ৪:৩২-৩৭ পদ)।
ফাদার চার্লসও সেইভাবে ধান ব্যাংকের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের অভাব ঘুচাতেন। তিনি ফসলের বীজ, গৃহপালিত পশুপাখি ও অর্থ দিয়ে অভাবী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও বিদেশি সাহায্যের উপর ভরসা না করে, স্থানীয় জনগণকে অর্থ সাহায্য দেওয়ায় অনুপ্রাণিত করতেন। সেই অর্থ দিয়ে দেশের দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ সহায়তা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি অন্যান্য যাজকদের সমন্বয়ে 'কোর' নামক একটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা স্থাপন করেন। ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষের পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই 'কোর' পরবর্তীকালে 'কারিতাস বাংলাদেশ' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, যে সংস্থা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে।
মৃত্যু
ফাদার চার্লস জে. ইয়াং, সিএসসি, ১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর পরলোকে গমন করেন। বর্তমান খ্রীষ্টান সমাজের উন্নয়নে তাঁর যে অবদান তা কেউ ভুলে যায়নি। কারণ 'দি খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড' এবং 'কারিতাস বাংলাদেশে'র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তিনি অমর হয়ে আছেন।
তথ্যসূত্র: স্মিতা ইমেন্ডা রোজারিও, ব্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের পথিকৃৎ ফাদার চার্লস জে ইয়ং, সিএসসি (সমবার্তা, প্রকাশনার ৩৬ বছর, বর্ষ: ৩৬ সংখ্যা ২, ২০২২ খ্রীষ্টাব্দ)। ২৬-২৮
প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করি
তোমার প্রিয় শিক্ষক তোমাদের এখন একটা সাদা কাগজে প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে বলবেন। তোমরা প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়ায় যে সমস্ত বিষয় নিয়ে লিখবে তা হলো:
১. পবিত্র বাইবেলের ব্যাখ্যা থেকে এবং দুইজন মহান ব্যক্তির ত্যাগ ও সেবাদান থেকে কী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ?
২. সমাজের কল্যাণে কীভাবে এই ধরনের সেবাকাজ তোমরা করতে পারো?
লেখা শেষ হয়ে গেলে কাগজগুলো শিক্ষকের নিকট জমা দাও।।
শিক্ষক তোমাদের শ্রেণিকক্ষে তোমাদের সংখ্যা অনুসারে ২/৩ দলে ভাগ করে দিবেন। এরপর প্রতিটি দল একটি সেবামূলক সংগঠন তৈরি করবে। তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সংগঠনের নাম দিতে পারো (যেমন- সবুজ সেবা সংঘ, আনন্দ মুখ, পাশে থাকি সংঘ, এলাকার নামে সেবা সংঘ ইত্যাদি)। তোমাদেরকে সংগঠিত হয়ে সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে কোনো সেবামূলক কাজ করতে হবে। এর জন্য শিক্ষক তোমাদের এক সপ্তাহ সময় বা আরও বেশি সময় দিতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে তোমরা নিজেদের এলাকায় দলগতভাবে সেবামূলক কাজ করবে এবং এই সেবাকাজ করতে গিয়ে যা তোমাদের ত্যাগ করতে হয়েছে (যেমন- সময়, অর্থ, খাবার, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) সেই সকল বিষয় লিখে রাখবে। সংগঠনের যে কোনো একজন প্রতিদিন জার্নাল/দিনলিপি লিখবে। সেবামূলক কাজগুলোর চিত্র ধারণ করবে। যদি সম্ভব হয় সেবা গ্রহণকারীর মন্তব্য সংগ্রহ করবে। এরপর তোমরা সাংগঠনিকভাবে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সেশনে তোমার সংগঠনের ত্যাগের মাধ্যমে যে সেবামূলক কাজ করেছ তার সবকিছু যুক্ত করে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করে নিয়ে আসবে।
একটি ফাইলের মধ্যে সংগঠনের প্রতিদিনের সেবা কাজের জার্নাল/দিনলিপি, ছবি, সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন ও সেবা গ্রহণকারীর মন্তব্য ইত্যাদি তারিখ অনুসারে সংরক্ষণ করা।
সেশন শেষে তোমার শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
প্রিয় শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষের সহপাঠীদের ও শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানাও।
বিগত সেশনগুলোতে তোমরা নিজ এলাকার পরিদর্শন করে, বাইবেলের ব্যাখ্যা শোনার মাধ্যমে এবং দুইজন মহান ব্যক্তির জীবনী পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে ত্যাগের মাধ্যমে সেবা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছ। তার উপর ভিত্তি করে আজ সাংগঠনিকভাবে তোমাদের নিজ এলাকায় যে সেবা কাজগুলো করেছ তার পোর্টফোলিও উপস্থাপন করতে যাচ্ছ। প্রতিটি দলকে শিক্ষক ১০ মিনিট করে সময় দেবে যাতে তোমাদের সেবামূলক কাজগুলো ছবিসহ উপস্থাপন করতে পারো। উপস্থাপনের পরে তোমার দলকে অন্য দলের সদস্যরা আরও সহজভাবে বোঝার জন্য প্রশ্ন করতে পারে এবং তুমিও অন্য দলকে প্রশ্ন করতে পারবে। তোমরা নিজেদের পোর্টফোলিওতে যে ছবি প্রিন্ট করে এনেছ, উপস্থাপনের সময় ছবি প্রদর্শনের জন্য বোর্ডে লাগিয়ে নাও যাতে তুমি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারো।
পোর্টফোলিও উপস্থাপনের আগে তোমাদের সেবা কাজের ছবিগুলো এক এক করে বোর্ডে টানাবে যাতে পরিষ্কারভাবে সবাই দেখতে পারে। এরপর তোমাদের সংগঠনের সেবাকাজের ছবি দেখিয়ে ব্যাখ্যা করো এবং সংক্ষিপ্তভাবে প্রতিবেদন পাঠ করো। তোমাদের উপস্থাপনের জন্য শিক্ষক তোমাদের নির্দিষ্ট সময় দিবেন। সেই সময়ের মধ্যে তোমাদের উপস্থাপনা শেষ করবে।
উপস্থাপনার পরে তোমাদের দলের সব কাগজ গুছিয়ে পোর্টফোলিও শিক্ষকের কাছে জমা দাও।
অন্য দল/সংগঠনের সুন্দর সেবামূলক কাজের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দাও। এরপর শিক্ষককে বিদায় সম্ভাষণ জানাও।
এই সেশনের শুরুতে শিক্ষক তোমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি স্থিরচিত্র প্রদর্শন করবেন। তারপর তিনি তোমাদের একটি ভিডিও প্রদর্শন করবেন।
সম্ভাব্য ভিডিওর লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো।
https://youtu.be/ay416AyoqRU?t=218 অথবা
https://youtu.be/OFZXxb3FNkw?t=512
ভিডিও দেখানোর জন্য শিক্ষক মাল্টিমিডিয়া ও স্ক্রিন ব্যবহার করবেন। শিক্ষক স্থিরচিত্রগুলো একটি রশি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তুমি এমনভাবে আসন গ্রহণ করো যেন ছবি ও ভিডিও সুন্দরভাবে দেখতে পারো।