পোশাক মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক। আদিম যুগে মানুষ খুব অসহায় ছিল। তারা খাদ্য সংগ্রহ করা এবং হিংস্র জীব জন্তুর হাত থেকে আত্মরক্ষার কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকত। তাদের কোন পোশাক ছিল না। প্রচণ্ড শীত, প্রখর রোদ ও গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের একটি আচ্ছাদনের প্রয়োজন হত। তাই তখন তারা গাছের শুকনো ছাল, লতা/পাতা ও পশুর চামড়া প্রভৃতি সংগ্রহ করে পোশাকের অনুরূপ তৈরি করে শীত ও গরম থেকে রক্ষা পেত । পশুর চামড়া, গাছের ছাল, বিভিন্ন পাতা ইত্যাদি বাধার জন্য সুতা বা দড়ির প্রয়োজন হত বিধায় পশুর চামড়া/রগ, ছন, লম্বা পাতার আঁশ ইত্যাদি দ্বারা বাঁধার কাজ সম্পন্ন করত মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, সুতা কাটার যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক পূর্ব থেকেই মানুষ বুনন ও বয়ন অর্থাৎ স্পিনিং উইভিং পদ্ধতি জানত। প্রাচীন যুগে খড়কুটো থেকে পাখির বাসা তৈরি করতে দেখে মানুষ বিভিন্ন প্রকার আঁশের সমন্বয়ে পাখির অণুকরণে নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করতে উৎসাহিত হয় ও পর্যায়ক্রমে পোশাক তৈরি করে। বিভিন্ন প্রকার গাছের লতা, পাতা, ঘাস ও গাছের বাকল ইত্যাদি দ্বারা ঝুড়ি, মাছ ধরার জাল, পাতার বেড়া ইত্যাদি বুনতে শুরু করে ও বয়ন অর্থাৎ উইভিং এর সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে ।
কাপড় তৈরি বা প্রস্তুতের মূল তত্ত্বটি এভাবে বলা যায়। যেমন-
টানা ও পড়েন দুই সিরিজ সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে অথবা নিডেলের সাহায্যে লুপ তৈরি করে অথবা ফাইবারের শিটকে জমাট বাঁধিয়ে বা আঠালো পদার্থ দ্বারা সন্নিবেশ করে যে পাতলা শিট প্রস্তুত করা হয় তাকে কাপড় বলে ।
কাপড় তৈরি সাধারণত উইভিং, নিটিং অথবা ফেন্টিং পদ্ধতিতে ব্যবহার উপযোগী পাতলা
শিট প্রস্তুত করা হয়। কাপড় তৈরির সাধারণ ৩টি সংজ্ঞা নিম্নরূপ ভাবে করা যায়-
১। উইভিং এর সংজ্ঞা (Definition of Weaving)-
আঁশ হতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সুতা প্রস্তুতের পর ঐ সুতা দ্বারা টানা ও পড়েন সুতার পরস্পর বন্ধনী দিয়ে মানুষের পরিধেয় ও ব্যবহারের জন্য যে সকল দ্রব্য প্রস্তুত করা হয় তাই কাপড় এবং যে প্রক্রিয়ায় টানা ও পড়েন সুতার পরষ্পর বন্ধনী সৃস্টি করে কাপড় তৈরি করা হয় তাকে উইভিং (Weaving) প্রক্রিয়া বলে ।
২। নিটিং (Knitting)-
যে প্রক্রিয়ায় নিটিং মেশিনের নিডলের সাহায্যে এক বা একাধিক সুতার মাধ্যমে লুপ তৈরি করে এবং উৎপাদিত লুপগুলোকে পরষ্পর লম্বালম্বি বা সমান্তরালভাবে সংযোজনের মাধ্যমে কাপড় তৈরি করে এ প্রক্রিয়াকে নিটিং (Knitting) বলে।
৩। ফেলটিং (Felting) -
টেক্সটাইল ফাইবার দ্বারা শিট প্রস্তুত করে উক্ত শিটকে জমাট বাঁধিয়ে বা আঠালো পদার্থ দ্বারা সন্নিবেশিত করে এবং স্টিচিং করে পরস্পর আটকিয়ে যে কাপড় তৈরি করা হয় তাকে ফেলটিং (Felting) বলে।
কাপড় ফেলটেড নিম্নলিখিতভাবে করা হয়ে থাকে যথা-
ক) আঠালো পদার্থের সাহায্যে
খ) তাপের সাহায্যে ।
গ) স্টিচিং এর সাহায্যে ।
ওভেন বা বুনন কাপড়ের বৈশিষ্ট্য (Characterisics of woven fabric)
• বস্ত্রের অভ্যন্তরে দুই সিরিজ সুতা থাকতে হবে। এক সিরিজ টানা ও অপর সিরিজ পড়েন ।
• প্রতিটি ওভেন কাপড়ে একটি নির্দিষ্ট ডিজাইন থাকতে হবে ।
• সাধারণত ওভেন কাপড়ে ভাজ পড়ে।
• ওভেনের পূর্বে টানা সুতায় মাড় দিতে হয়।
• দুই সারি সুতা সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে ওভেন কাপড় তৈরি হয়।
• কাপড়ের টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট, শক্তি, প্রতি ইঞ্চিতে পাক ইত্যাদি গুণাবলি একই অথবা ভিন্ন হতে পারে। ওভেন কাপড়ের সদর এবং পেছনের অংশ একই অথবা ভিন্ন হতে পারে ।
• এ কাপড়ের প্রান্ত গুটিয়ে যায় না।
• তাঁতের সাহায্যে বুননের সময় বিভিন্ন প্রকার রঙিন সুতার সাহায্যে স্ট্রাইপ, চেক, ক্রসওভার এবং বিভিন্ন প্রকার ইফেক্ট তৈরি করা যায় ।
• ওভেন কাপড়ের একদিকে বা উভয় দিকে কাট অথবা আনকাট পাইল থাকতে পারে ।
• ওভেন কাপড়ের একদিকে বা উভয় দিকে ল্যামিনেটেড করা থাকতে পারে।
• ওভেন কাপড় সিঙ্গেল, ডাবল, বা ট্রিপল ইত্যাদি পাই বিশিষ্ট হতে পারে ।
• ওভেন কাপড়ের একদিকে বা উভয়দিকে আঁশ রেইজিং করা থাকতে পারে । যেমন-ফ্লানেল কাপড় ।
উইন্ডিং বা বুননের কতিপয় প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা
কাপড় (Fabric)
টানা ও পড়েন ২ সিরিজ সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে অথবা নিডেলের সাহায্যে লুপ তৈরি করে অথবা ফাইবারের শিটকে জমাট বাঁধিয়ে বা আঠালো পদার্থ দ্বারা সন্নিবেশিত করে যে পাতলা শিট প্রস্তুত করা হয় তাকে কাপড় বলে।
তাঁত (Loom)
টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে কাপড় তৈরি করার জন্য যে মেশিন বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে তাঁত বলে।
পাওয়ার লুম (Power loom)
যে সমস্ত তাঁত কোন যান্ত্রিক অথবা বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালিত হয় তাকে শক্তিচালিত তাঁত বা পাওয়ার লুম বলে ।
হ্যান্ড লুম (Hand loom )
মানব শক্তি দ্বারা অর্থাৎ হাত দ্বারা যে তাঁত চালানো হয় তাকে হস্তচালিত তাঁত বা হ্যান্ড লুম বলে।
কনভেনশনাল লুম (Conventional loom)
যে সমস্ত কাপড় প্রস্তুতিতে পড়েন প্রবেশের জন্য মাকু (Shuttle) ব্যবহার করা হয় সে সমস্ত তাঁতকে কনভেনশনাল লুম বলা হয় ।
আধুনিক লুম (Modern loom )
যে সমস্ত তাঁত কাপড় প্রস্তুতিতে পড়েন প্রবেশের জন্য মাকু ব্যবহার না করে অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করা হয় সে সমস্ত তাঁতকে আধুনিক তাঁত বলে।
অরডিনারি লুম (Ordinary loom)
যে সমস্ত কনভেনশনাল লুমের গতি কম, মাকু বা পার্ন পরিবর্তনের কোন ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ খুবই সাধারণ মানের তাঁত সে সমস্ত লুমকে অরডিনারি লুম বলে ।
অটোমেটিক লুম (Atuomatic loom )
যে সমস্ত তাঁতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়েন পরিবর্তনের ব্যবস্থা আছে, সে সমস্ত তাঁতকে অটোমেটিক লুম বলে। শাটল পরিবর্তনের মাধ্যমে ও পার্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে পড়েন পরিবর্তন করা সম্ভব।
তাঁতের গতি (Motion of loom )
তাঁতকে সচল রাখা ও পর্যায়ক্রমিকভাবে কাপড় তৈরির জন্য আলাদা আলাদাভাবে ও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অংশ নাড়াচাড়া করানো হয় । এই অংশসমূহকে একত্রে তাঁতের গতি বলা হয় ।
অক্সিলারি মোশন (Auxiliary moion) পাওয়ার লুমকে ত্রুটিমুক্ত কাপড় তৈরির উপযোগী করার জন্য কিছু কিছু আলাদা মোশন ব্যবহার করা হয়, যা তাঁতকে স্বয়ংক্রিয় করে এবং তাঁতও কাপড়কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
উপরোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য যে অতিরিক্ত মোশনসমূহ ব্যবহার করা হয়, তাকে টারসিয়ারি মোশন বলে ।
ডাবলিং ও টুইস্টিং (Doubling and Twisting)
সুতা তৈরির সময় পাক (Twist) দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একমাত্র ছোট ছোট আঁশগুলোকে একত্রে ধরে রাখার জন্য টুইস্ট দেওয়া হয়। যখন মোটা অধিক শক্তিশালী সুতার প্রয়োজন হয় তখন একাধিক সুতাকে একত্রে টুইস্ট করে নেওয়া হয় ।
ওয়াইন্ডিং (Winding )
কাপড় বয়নের সুবিধার্থে বাজারে প্রাপ্ত হ্যাংক আকারের সুতাকে পড়েন সুতার জন্য নলি, বা কপ এবং টানা সুতার জন্য স্পুল, কোন, চিজ, ববিন ইত্যাদি প্যাকেজে জড়ানো হয়। বিভিন্ন প্যাকেজে সুতা জড়ানোর পদ্ধতিতে ওয়াইন্ডিং বলে ।
ক্রিলিং (Creeling)
টানা বিম তৈরি করার জন্য ওয়াইন্ডিং প্যাকেজগুলো যে প্রক্রিয়ায় ক্রিলের হোল্ডারের মধ্যে রাখা হয় তাকে ক্রিলিং বলে।
ওয়ার্সিং (Warping)
যে কাপড় তৈরি করতে হবে তার বহরে যতগুলি টানা সুতার প্রয়োজন হয় ততগুলো সুতা কাপড়ের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মেপে লম্বালম্বি সাজিয়ে নিয়ে বিয়ে জড়ানোর প্রক্রিয়াই ওয়ার্সিং ।
বিমিং (Beaming)
স্পিনিং ফ্রেমে সুতা তৈরি হওয়ার পর টানা সুতাগুলোকে স্কুল বা কোন ওয়াইন্ডিং মেশিনের সাহায্যে স্কুল বা কোনের আকারে জড়ানো হয়। এ ওয়ার্স সুতার প্যাকেজ হতে কাপড় তৈরি করার উদ্দেশ্যে উইভার্স বিম তৈরি করা হয় । ওয়ার্গের সুতাকে এভাবে বিমে জড়ানোর প্রক্রিয়াকে বিমিং বলে ।
সাইজিং (Sizing)
যান্ত্রিক বা কায়িক উপায়ে টানা সুতাকে বিভিন্ন প্রকারের মাড়ের উপকরণ যুক্ত করে সুতার উপর বিদ্যমান বাড়তি আঁশগুলোকে সুতার পৃষ্ঠে মিশিয়ে দিয়ে সুতাকে চকচকে ওজন বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াকে সাইজিং বা মাড় প্রকরণ বলে।
ড্রইং-ইন (Drawing - in )
ওয়ার্পের সুতাগুলোকে উইভার্স বিয়ে জড়ানোর পর অপর প্রান্ত ডিজাইন অনুসারে পর পর কতগুলো ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়াকে ড্রইং-ইন বা ড্রাফটিং বলে।
ডেন্টিং (Denting)
যে পদ্ধতিতে রিডের প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে ডিজাইন অনুযায়ী ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয়। এ পদ্ধতিকেই ডেন্টিং বলা হয়। সাধারণত প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে দুই বা ততোধিক সুতা প্রবেশ করানো হয়।
লুমিং (Looming)
উইভিং এর প্রস্তুতির জন্য সর্বশেষ প্রক্রিয়াই হলো লুমিং। ড্রইং ইন এবং ডেন্টিং এর পর ওয়ার্স বিমকে লুমের নির্দিষ্ট স্থানে অর্থাৎ পেছনের ব্রাকেটে বসানো হয়। তারপর ঝাঁপ ও শানা বসানো হয়। অতপর শানার সামনের আলগা সুতাগুলো ক্লথ বিমের সাথে বাঁধা হয়। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিমকে আনুসঙ্গিক উপকরণসহ লুমে স্থাপন করা হয় তাকে লুমিং বলে।
উইভিং (Weaving)
কাপড় বয়নের সময় কতগুলো টানা সুতাকে ঝাঁপের সাহায্যে উপরে উঠানো হয় এবং কতকগুলো নিচে নামানো হয় । এর ফলে যে কোণাকৃতি ফাঁকের সৃষ্টি হয় তাকে সেড বলে। এ সেডের মধ্য দিয়ে মাকু হতে একটি পড়েন সুতাকে ফেলে রাখার পর শানা অর্থাৎ দক্তি দ্বারা ঠেলে দেওয়া হয়। এরূপ একটি পর একটি সুতা পাশাপাশি প্রবেশ করিয়ে কাপড় প্রস্তুত করা হয়। বর্ণিত এ প্রক্রিয়াকেই উইভিং বলে।
কাপড় বা ফেব্রিক চেকিং ( Inspecion of fabric)
কাপড় তৈরির পর কাপড়ে কমবেশি দোষত্রুটি থাকে। টেবিলের উপর কাপড় রেখে হাত দ্বারা বা মেশিনের সাহায্যে একপ্রান্ত হতে টেনে কাপড়ের দোষত্রুটি যাচাই বাছাই করে মানসম্পন্ন কাপড় পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করার নামই ফেব্রিক চেকিং ।
ক্যালেন্ডারিং এন্ড ফোল্ডিং (Calendering and folding )
কাপড়ের চাকচিক্য বৃদ্ধি ও কাপড়েকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য চাপে ও তাপে মসৃণ করা হয় ও পরবর্তীতে মেশিনের মাধ্যমে ভাঁজ করাকে ক্যালেন্ডারিং অ্যান্ড ফোল্ডিং বলে।
বেইলিং (Bailing)
এটি সর্বশেষ প্রক্রিয়া। ফোল্ডিং করার পর কাপড়কে স্তরে স্তরে সাজিয়ে প্রেসের সাহায্যে চাপ দিয়ে আয়তন কমিয়ে বেল তৈরি করার প্রক্রিয়াকে বেইলিং বলে । কাপড় বাজারজাত ও গুদামজাত করার সুবিধার্থে বেল তৈরি করা হয়।
তাঁতের বিভিন্ন অংশ এবং তাঁতে ব্যবহার কাঁচামাল ও ফিনিসড উৎপাদন দ্রব্য-
১. ওয়ার্স বিম
২. ওয়ার্প সুতা
৩. হিল্ড শ্যাফট
৪. টপ রোলার
৫. ঝাঁপ
৬. রিড
৭. সাটেল
৮. ওয়েট সুতা
৯. কাপড়
১০. ক্লথ বিম
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. উইভিং এর সংজ্ঞা দাও?
২. নিটিং এর সংজ্ঞা দাও?
৩. ফেলটিং কাকে বলে?
৪. কাপড় বলতে কি বুঝায়?
৫. কোন লুমে সাটেল ব্যবহার করা হয় না?
৬. অক্সিলারি (সাহায্যকারী) মোশন বলতে কি বুঝায়?
৭. ইন্সপেকশন কি?
৮. কাপড় ক্যালেন্ডারিং কেন করা হয়?
৯. সাধারণত প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে কতটি সুতা প্রবেশ করানো হয়?
১০. ঝাপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টানা সুতা টানাকে কি বলা হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ওভেন কাপড়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।?
২. উইভিং এর ফ্লো চার্ট বা বুননের বিভিন্ন ধাপ দেখাও?
৩. ফেলটিং কি ? এটি কি কি ভাবে করা হয়?
৪. তাঁতের ৪টি অংশের নাম লেখ?
৫. কাপড় বেল কেন করা হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বুননের বিভিন্ন ধাপের বর্ণনা দাও?
তাঁতের সংজ্ঞা (Definition of Loom)
টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে কাপড় তৈরি করার জন্য যে মেশিন বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সে মেশিন বা যন্ত্রকে তাঁত বলে ।
তাঁতের ইতিহাস (History of Loom)
প্রথমে কখন বয়ন শুরু হয়েছিল তার সঠিক দিন তারিখ জানা নেই। ধারণা করা হয় মিশরীয় সভ্যতা বিকাশের মাধ্যমে বয়নের সূত্রপাত হয়েছিল। মিশরে প্রথম নেট আবিষ্কার খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে সিক্ষের প্রচলন ছিল । আদিকালে এদেশে এমনকি উইরোপেও তাঁতিরা দক্তিবিহীন তাঁতে মাকু হাতে ছুড়ে এক অদ্ভুত উপায়ে কাপড় বুনত। সেই সময় ফ্রাই সাটল বা অন্য প্রকারের উন্নত প্রযুক্তির তাঁত এদেশে ছিল না। ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে 'জনকি' নামক একজন ইউরোপীয়, দক্তি ও তার দুই পার্শ্বে দুইটি বাক্স প্রস্তুত করেন। তিনি এতে মেড়া বসিয়ে একটি হাতল ও দক্তির সাহায্যে এক বাক্স হতে অন্য বাক্সে খুব দ্রুতবেগে মাকু চলাচলের কৌশল আবিষ্কার করেন । ফলে তাঁতিগণ প্রাচীন তাঁত অপেক্ষা যথেষ্ট দ্রুতগতিতে বুনতে শিখল। ফলে হাতে ঠেলার পরিবর্তে পিকারের ব্যবহার শুরু হলো ।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদারও পরিবর্তন হয়। মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল । তাঁতের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য টানা সুতাকে দুই ভাগে ভাগ করে সেড তৈরি করে কাঠির মাধ্যমে পড়েন সুতাকে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে নিক্ষেপ করে কাপড় তৈরি করত। এই পদ্ধতিকে থ্রো সাটেল বলে । তাঁতি গর্তে বসে এই পদ্ধতিতে কাপড় বুনতো বলে এটাকে গর্ত তাঁত বলে । এটাতে তাঁতি মাকুকে হাতের সাহায্যে নিক্ষেপ করত। অতি মিহি কাপড় যেমন মসলিন, জামদানি, বেনারসি ইত্যাদি কাপড় গর্ত তাঁতে তৈরি হতো । বর্তমানেও আমাদের দেশে এবং ভারতে এই তাতে কাপড় বোনা হয়। জনৈক ডেনিশ ভারতের শ্রীরামপুরে এই উন্নত পদ্ধতির একখানা তাঁত নিয়ে আসেন এবং একমাত্র সেই তাঁত অনুকরণ করে শ্রীরামপুরে তন্তুবায়দের মধ্যে সর্ব প্রথম এ তাঁতের প্রচলন হয়। অতপর শ্রীরামপুর হতে ধীরে ধীরে এ তাঁত বাংলার সর্বোত্র বিস্তৃতি লাভ করে যাকে শ্রীরামপুরী ফ্লাই সাটেল তাঁত বা ঠকঠকি তাঁত বলা হয় ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. তাঁত দ্বারা কী করা হয়?
২. থ্রো সাটেল তাঁত কী?
৩. রেপিয়ার লুম কোন ধরনের লুম?
৪. ফ্লাই সাটেল তাঁতের অন্য নাম কী?
৫. তাঁতের উৎপাদিত দ্রব্যের নাম কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. হস্তচালিত তাঁতের শ্রেণি বিভাগ ছক আকারে দেখাও?
২. আধুনিক তাঁতের শ্রেণি বিভাগ কর?
৩. শক্তিচালিত তাঁত ও হস্তচালিত তাঁতের মধ্যে ৬টি পার্থক্য লেখ?
৪. কাপড় তৈরির ৩টি পদ্ধতির নাম লেখ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। তাঁতের ইতিহাস বর্ণনা কর?
২। কাপড় তৈরির শ্রেণি বিভাগ বিস্তারিত লেখ?
৩ । কনভেনশনাল ও মডার্ণ তাঁতের মধ্যে তুলনা মুলক আলোচনা কর?
৪। অটোমেটিক ও মডার্ণ তাঁতের মধ্যে সুবিধা অসুবিধাগুলো লেখ?
হস্তচালিত তাঁতের সংজ্ঞা (Definition of Hand loom )
মানবশক্তি দ্বারা অর্থাৎ হাত দ্বারা যে তাঁত চালনা করা হয় এবং কাপড় উৎপাদন করা হয় তাকে হস্তচালিত তাঁত বলে।
হস্তচালিত তাঁতের শ্রেণি বিন্যাস (Classificaion of Hand loom)
আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের হস্তচালিত তাঁত ব্যবহার হয়ে থাকে।
১. ফ্লাই শাটল লুম ( Fly shuttle loom)
২. প্রিমিটিভ লুম (Primitive loom)
৩. সেমি অটোমেটিক লুম (Semi automatic loom)
ফ্লাই শাটল লুম আবার দুই প্রকার
ক) ফ্লাই শাটল পিট লুম (Fly shuttle pit loom )
খ) ফ্লাই শাটল ফ্রেম লুম (Fly shuttle frame loom )
সেমি অটোমেটিক লুম বিভিন্ন ধরনের আছে । কিন্তু আমাদের দেশে নিম্নলিখিত হস্তচালিত তাঁত ব্যবহার হয়।
ক) চিত্তরঞ্জন তাঁত (Chittaranjan loom)
খ) স্যালভেশন আর্মি লুম (Salvaion army loom )
গ) হ্যাটার্সলি লুম (Hatersly loom )
১. ফ্লাই শাটল লুম (Fly shuttle loom)
ক) ফ্লাই শাটল পিট লুম (Fly shuttle pit loom )
সমতল ভূমিতে চারকোণায় চারটি বাঁশ বা কাঠের খুটি বসিয়ে পুরানো আমলের তাঁতের মতো মাটিতে গর্ত করে বসানো হয় । কাঠের ফ্রেমে ঝুলানো দক্তি (Sley) এবং তার দুই পার্শ্বের দুইটি শার্টল বক্স রেখে পিকার, হ্যান্ডেল ও পিকিং ব্যান্ডের সাহায্যে এক বাক্স হতে অন্য বাক্সে দ্রুত বেগে মাকু (Shuttle) চলাচল করে। যেহেতু তাঁতটি গর্ত করে বসানো হয় সেহেতু এই তাঁতকে গর্ত তাঁত বলে।
সমতল ভূমিতে চারপাশে চারটি বাঁশের বা কাঠের খুটি পুঁতে মান্ধাতার আমলের তাঁতের মতো মাটিতে গর্ত করে বসানো হয় । উক্ত ফ্রেমের উপর স্লে বাধা অবস্থায় ঝুলতে থাকে। সার্টেল বক্সে পিকার হ্যান্ডেল ও পিকিং ব্যান্ড থাকে যার সাহায্যে সার্টেল বক্স হতে অন্য বক্সে চলাচল করতে পারে ট্রেডেল গর্তের মধ্যে থাকে। তাঁতি গর্তে পা দিয়ে ট্রেডেল টিপে ঝাঁপ উঠানামা করায়। গর্ত করে তাঁত বসানোর ফলে টানা সুতা মাটির ঠাণ্ডা মেঝে থেকে আর্দ্রতা গ্রহণ করতে পারে ফলে সুতা ছেড়ার হার কমে যায় ও টানা সুতা সর্বদা নরম থাকে বলে উৎপাদিত কাপড়ের মান ভালো হয়।
খ) ফ্লাই শাটল ফ্রেম লুম (Fly shuttle frame loom )
চারটি পায়া বিশিষ্ট ভারী কাঠের ফ্রেমের উপর বসানো হয়। এই ভাঁতকে ফ্রেম তাঁত বলে। ফ্রেম তাঁতে দক্তি (Sley), দুই পার্শ্বের দুইটি শাটল বক্স আছে। পিকার, হ্যান্ডেল ও পিকিং ব্যান্ডের সাহায্যে পিকিং করা হয় ।
এইটি পিট লুমের মতো একই প্রকার তাঁত, তবে এই প্রকার তাঁত শুধু ফ্রেমের উপর বসানো হয় বলে এই তাঁতকে ফ্রেম তাঁত বলা হয়।
চারটি ভারি কাঠের খুটির সাহায্যে ফ্রেম করে ফ্লাই সাটেল লুম তৈরি করা হয়। ফ্রেমের উপর শক্ত করে শে (Sley) ঝুলানো থাকে । যাতে এটা সহজেই সামনে পেছনে চলাচল করতে পারে। স্লে এর দুইপ্রান্তে দুইটি সাটল বক্স থাকে। যার মাধ্যমে সাটেল এক বক্স হতে অন্য বক্সে চলাচল করে। ফ্রেমের পেছনে টানা বিম ও সামনে ক্রস বিম ফ্রেমের পৃষ্ঠে চিত্রানুযায়ী বসানো থাকে। প্লে এর পেছনে ঝাপ ঝুলানো থাকে, যার নিচের দিক ট্রেডেলের সাথে যুক্ত। প্লে এর উপর তাঁতির হাত থাকে, যার সাহায্যে প্রতি পিক অন্তর তাঁতি স্নেকে সামনে পেছনে করতে পারে এবং ডান হাতে পিকিং হ্যান্ডেল থাকে যার মাধ্যমে সাটেল ডান বক্স থেকে বাম বক্সে এবং বাম বক্স থেকে ডান বক্সে চলাচল করানো হয়।
২. প্রিমিটিভ লুম (Primitive loom)
প্রাচীন তাঁতিগণ এক প্রকার দক্তিবিহীন তাঁতে একটি ঝুলানো ফ্রেমে শানা (Reed) আটকিয়ে মাকু হাতে ছুড়ে এক অদ্ভুত উপায়ে কাপড় বুনত । এই তাঁতকে প্রিমিটিভ লুম বা থ্রো শাটল লুম বলে ।
থ্রো সাটেল
থ্রো সাটেল সাধারণত কাঠের অথবা ধাতুর (Metal) তৈরি যা খুবই মসৃণ ও ভারী ফলে এটা খুব সহজেই কাপড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করতে পারে। সাটেলটির মাঝখানে একটি ধাতুর তার ব্যবহার করা হয়। যা সাটেলের গর্ত বা ফাঁকে পার্ন সহজেই ধরে রাখতে পারে।
সাটেলটি এমন ডিজাইনের তৈরি যাতে টানা সুতাকে কোনরূপ ক্ষতি না করে খুব মসৃণভাবে কাপড়ের একপ্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করতে পারে।
তাঁতির দক্ষতা ও সাটেলের মসৃণতার কারণে এ ধরনের সাটেল খুব সূক্ষ্ম কাপড় যেমন- সিল্ক, মসলিন, ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
সাটেলের গ্রহণযোগ্যতার কারণে খুব সাধারণ তাঁতেও খুব উন্নতমানের কাপড় তৈরি করা সম্ভব।
ইন্ডিয়ান হস্তচালিত তাঁত
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর পূর্ব থেকে পাক ভারত উপমহাদেশে এই হস্তচালিত তাঁত ব্যবহার হয়ে আসছে। মাটিতে গর্ত করে ৪টি খুটি, ঝাঁপ, শানা, মতিকাঠি, লিজরড ইত্যাদির সাহায্যে কাপড় বোনা হতো। চারটি খুবি তাঁতের চারপাশে রেখে ফ্রেম তৈরি করে তাঁতের রূপ দেওয়া হতো। এ তাঁতটি ইন্ডিয়ান হস্তচালিত তাঁত বলে পরিচিত। একে পিট লুম বা থ্রো সাটেল পিট লুমও বলা হয়।
এ পদ্ধতিতে হাত দ্বারা ছুড়ে সাটেল এক প্রান্তের সেলভেজ হতে অন্য প্রান্তের সেলভেজ পর্যন্ত নেওয়া হয় এবং গর্তের মধ্যে পা দিয়ে টিপে বা চেপে দুইসারি টানা সুতার মাঝে সেড গঠন করে। এ ধরনের তাঁত মসলিন ও সিল্ক কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় । চিত্রে একটি ইন্ডিয়ান হুম দেখানো হলো ।
A. টানা সুতা, B ও B দু'টি ঝাঁপ, C সাপোর্টিং বার এর মাধ্যমে ঝুলানো থাকে। ঝাঁপ দুইটি D ও D দুইটি হিল্ড হর্স এর সাথে যুক্ত থাকে। E ও F যথাক্রমে কাপড় ও টানা সুতা জড়ানোর জন্য লুম ফ্রেমে যুক্ত থাকে। দুইটি বাশের তৈরি ট্রেডল G ও G/ গর্তের মধ্যে অবস্থিত যার সাথে কার্ড বা দড়ি দ্বারা ঝাঁপের সাথে সংযুক্ত পা দ্বারা ট্রেডল চেপে সেড গঠন করা হয়। সমস্ত অংশটি একটি বাঁশের তৈরি (বর্তমানে কাঠের) ফ্রেমে ঝুলনো থাকে।
৩. সেমি অটোমেটিক লুম (Semi automatic loom)
A ও B = ঝাঁপ C ও D = ট্রেডেল EF = হিল্ড হর্স G = শানা H = দক্তির পাখা P = ফ্রেমের সম্মুখ অংশ N = ব্যাক রেস্ট M = টানা বিম S = ক্লথ বিম
ক) চিত্তরঞ্জন তাঁত (Chittaranjan loom)
দক্তি ঠেলার সংগে সংগে একসেট পিনিয়ন ও হুইন দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক আপ হতে থাকে। পাশা পাশি লেট অফ ও টেনশনের কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় । বাকি কাজে সেডিং দ্বারা পিকিং হ্যান্ডেল দ্বারা ও বিটিং আপ দক্ষি টেনে অর্থাৎ হাত দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই জন্য এই তাঁতকে সেমি অটোমেটিক তাঁত বলে। এটি লৌহ ও কাষ্ঠ নির্মিত । অন্যান্য হস্তচালিত তাঁত অপেক্ষা এর উৎপাদন অনেক বেশি।
খ) স্যালভেশন আর্মি হুম (Salvation army loom)
প্যাডেল টিপে দক্তি (Sley) সামনের দিকে টানলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেডিং, পিকিং, লেট অফ ও টেক আপ হতে থাকে। এজন্য এ প্রকারের তাঁতকে সেমিঅটোমেটিক হস্তচালিত তাঁত বলা হয়ে থাকে। এ প্রকার তাতে ছবি ও জ্যাকার্ড সংযোগ দিয়ে কাপড়ে অলংকৃত ডিজাইন প্রস্তুত করা সম্ভব ।
গ) হ্যাটার্সলি লুম (Hatersly loom)
এই তাঁতে লেট অফ, পিক আপ ও পিকিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় বলে এই লুমকে সেমি অটোমেটিক লুম বলা হয় । এটি লৌহ নির্মিত সাধারণ হস্তচালিত তাঁত অপেক্ষা তিন চার গুণ বেশি উৎপাদন দিতে পারে। এটি অনেকটা শক্তিচালিত তাঁতের অনুরূপ ।
তাঁত হতে কাপড় প্রস্তুতি
উইভার বীম (1) হতে টানা সুতাগুলো ব্যাক রেস্ট (2,3) এর উপর দিয়ে প্রবেশ করে। লিজ রড ( 4,5) টানা সুতাগুলোকে সোজা ও সমান্তরাল রাখে। অতপর টানা সুতাগুলোকে কাপড়ের ডিজাইন অনুযায়ী হিল্ড শ্যাফট (6,7) এর চক্ষুর ভিতর দিয়ে নেয়া হয়। টেপেট/ডবি/জ্যাকার্ড মেকানিজমের মাধ্যমে ডিজাইন অনুযায়ী হিল্ড শ্যাফ্টগুলো উঠানামা করে। হিল্ড শ্যাফটে অবস্থিত টানা সুতাগুলোকে রিড (8) এর ডেন্টের ফাকের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। তাঁত চালু করার সাথে সাথে মাকু (Shuttle) শ্যাড (Shed) এর ভিতর আসা যাওয়া করে অর্থাৎ পিকিং সম্পন্ন হয়। পিকিং এর ফলে কাপড় উৎপন্ন হয়। বিটিং মেকানিজমের মাধ্যমে উৎপন্ন কাপড়কে ফেল অব দি ক্লথ (Fell of the Cloth) এর সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়। উৎপন্ন কাপড় ফ্রন্ট রেস্ট (11) এর উপর দিয়ে ইমারী রোলার (12) হয়ে ক্লথ রোলারে (14) জড়ায়। এভাবে তাঁতের সাহায্যে কাপড় উৎপন্ন হয়।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মানব শক্তি দ্বারা কোন যন্ত্রের সাহায্যে কাপড় উৎপাদন করা হয় ?
২. ফ্লাই সাটেল লুম কত প্রকার ও কি কি ?
৩. প্রিমিটিভ লুমের সংজ্ঞা দাও ।
৪. ফ্রেম তাঁতকে কেন ফ্রেম তাঁত বলা হয় ?
৫. কাপড় বুননের সময় টানা সুতা মাটির ঠাণ্ডা মেঝ থেকে আর্দ্রতা গ্রহণ করলে কী সুবিধা হয় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কয়েকটি সেমি অটোমেটিক লুমের নাম লেখ ।
২. থ্রো সাটেল লুমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইন্ডিয়ান হস্তচালিত তাঁতের বর্ণনা দাও।
২। চিত্র সহ ফ্লাই সাটেল লুমের বর্ণনা দাও।
সাধারণত কায়িক পরিশ্রম অর্থাৎ মানব শক্তি দ্বারা যে সকল তাঁত পরিচালনা করা হয় কাকে হস্তচালিত তাঁত বলে । হস্তচালিত তাঁত বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তার মধ্যে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতই সবচেয়ে সহজ ও উন্নত প্রণালির । এই তাঁতের কাপড় জড়ানো এবং টানা সুতা লেট অফ করার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। পরিমাণমতো কাপড় বিমে জড়ানোর টানে ওয়ার্প বিম থেকে ঠিক সমপরিমাণ সুতা খুলে আসতে থাকে। এ তাঁতের গতি অন্য হস্তচালিত তাঁতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ তুলনামূলক দ্রুত গতি সম্পন্ন। হস্তচালিত তাঁতের ফ্লাই সাটেল পিট লুম ও ফ্লাই শাটেল ফ্রেম লুম বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং একজন তাঁতি সমস্ত কাজই তার নিজ হাতে করে নিতে হয় । কিন্তু আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত মজবুত কাঠ ও লোহার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় ।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতের সংজ্ঞা
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে দক্তির পিছনে একটি লোহার রড এর দুই প্রান্তে দুইটি হুইল থাকে যাকে ফ্লাই হুইল বলে । ফ্লাই হুইল দুইটি তাঁতের দুই প্রান্তে যুক্ত থাকার কারণে তাঁতের গতি খুব সহজ হয়ে যায় অর্থাৎ তাঁতির তাঁত চালনায় খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না ।
তাঁতি কাপড় বুননের জন্য ঝাঁপ উঠান, মাকু চালনা ও দক্তি টেনে শানা দ্বারা পিকিং আপ করে সুতা ফেল অব দ্যা ক্লথের পৃষ্ঠে বসানোর সময় পরিমাণমতো উৎপাদিত কাপড় জড়ানো ও টানা বিমের সুতা জড়ানো স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে বলে এই তাঁতকে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত বলে।
চিত্তরঞ্জন তাঁত একটি আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত। আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতকে জাপানি তাঁতও বলা হয়।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত-এর বৈশিষ্ট্য
০ আধা স্বয়ংক্রিয় তাতে হস্তচালিত তাঁতের চেয়ে উৎপাদন তুলনামূলক অনেক বেশি অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ।
০ এই তাঁতে টানা ছাড়া (Let off) এবং কাপড় জড়ানো (Take up ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে ।
০ যে কোন ধরনের মোটা ও মিহি কাপড় বোনার জন্য আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত উপযুক্ত।
০ এই তাঁতে কাপড় বুনতে তাঁতির পরিশ্রম তুলনামূলক অনেক কম হয় ।
০ এই তাঁতের তৈরি কাপড় তুলনামূলক অনেক সুষম ।
০ ফ্রেম তাঁতের চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক কম।
০ আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত প্রস্তুত খরচ ফ্লাই সাটেল পিট লুম ও ফ্লাই শাটেল ফ্রেম লুমের চেয়ে বেশি।
০ ফ্রেম তাঁতের তুলনায় এ তাঁত বেশ মজবুত ও শক্ত ।
০ হস্তচালিত তাঁতসমূহের মধ্যে তুলনামূলক ব্যবহার বেশি।
০ ত্রুটিমুক্ত কাপড় তৈরি করা সম্ভব হয় ।
০ মানবীয় শক্তি (ক্যালরি) খরচ কম হয় ।
চিত্তরঞ্জন তাঁত
এই তাঁত লৌহ ও কাষ্ঠ নির্মিত। সাধারণ তাঁত অপেক্ষা এই তাঁতে ডবল কাজ হয়ে থাকে। এই তাঁতকে সেমি অটোমেটিক তাঁত বলা হয়। কারণ এতে টানা ছাড়া (Let off) এবং কাপড় জড়ানো (Take up) এই দুইটি কাজ সয়ংক্রিয়ভাবে এক সংগে হতে থাকে। অন্যান্য প্রক্রিয়া সাধারণ তাঁতের ন্যায়। সাধারণ তাঁতে কাপড়ের জমিন সর্বত্র সমান হয় না, কিন্তু এই ভাঁতে সর্বত্র সমান হয়ে থাকে। যে কোন রকমের মোটা ও মিহি কাপড় বুনতে এটা খুবই উপযুক্ত। বর্তমানে প্রায় সর্বত্রই এই তাঁতের খুব বেশি প্রচলন। এই তাঁতই জাপানি তাঁত বলে পরিচিত।
চিত্তরঞ্জন তাঁতে বুননকালীন দক্তি ঠেলার সংগে সংগে একসেট পিনিয়ন হুইল ইমারি রোলারের সাহায্যে কাপড় ক্লথ বিমে জড়ানো হয় এবং Warp beam হতে টানা প্রয়োজন মতো খুলে আসে।
হ্যাটার্সলি তাঁত
এটা লৌহ নির্মিত, সাধারণ তাঁত অপেক্ষা তিন চারগুণ অধিক দ্রুত গতিতে চলে। এগুলো প্রকৃত অটোমেটিক তাঁত । কারণ এই তাতে টানা ছাড়া (Let off) কাপড় জড়ানো (Take up) এবং Picking এই তিনটি কাজই আপনা হতে একসংগে হয়ে থাকে। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে এই তাঁত আবিষ্কৃত হয় এবং আবিষ্কারকের নাম অনুসারেই এই তাঁতের নাম হয় হ্যাটার্সলি লুম ।
অনেকটা পাওয়ার লুমের মতোই। পাওয়ার লুম ভারী, এটা অনেকটা হালকা। হাতে চালাতে হয় বলে ৫০ ইঞ্চি শানার বহর অপেক্ষা বড় তাঁত হাতে চালানো সম্ভব নয়। এই তাঁতে একজন তাঁতি বেশিক্ষণ কাপড় বুনতে পারে না ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সেমি অটেমেটিক লুম বলতে কি বুঝায়?
২. কোন ধরনের তাঁতকে জাপানি তাঁত বলে?
৩. সেমি অটোমেটিক লুম ও ফ্লাই সাটেল লুমের মধ্যে কোন তাঁতের প্রাথমিক খরচ বেশি?
৪. চিত্তরঞ্জন তাঁতকে কেন সেমি অটোমেটিক তাঁত বলা হয়?
৫. ৫০ ইঞ্চি শানার বহর অপেক্ষা বড় তাঁত হাতে চালানো সম্ভব নয়, সত্য না মিথ্যা?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. আধা স্বয়ংক্রিয় ভাতের বৈশিষ্ট্য লেখ?
২. গর্ত তাঁত ও ফ্রেম তাঁতের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
৩.ফ্রেম তাঁত ও সেমি অটোমেটিক লুমের মধ্যে পার্থক্য লেখ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. চিত্রসহ সেমি অটোমেটিক তাঁতের বর্ণনা কর?
শানা একটি চিরুনি আকৃতির বস্তু যা রিড ক্যাপসহ দক্তির উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা থাকে। শানার দুইটি তারের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে ডেন্ট বলে । শানার প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে এক বা একাধিক টানা সুতাকে প্রবেশ করানো হয় । শানাসহ দক্তি বিট আপ এর সময় পড়েন সুতাকে ফেল অব দ্যা ক্লথের পৃষ্ঠে লাগিয়ে কাপড় বুননে সহায়তা করে।
দক্তি (Sley) এর উপর রিড ক্যাপ দ্বারা আটকানো চিরুনির আকৃতির বস্তু যার মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে প্রবেশ করানো হয় তাকে শানা বলে। শানার এক একটি তারকে ডেন্ট বা স্পিলিট বলে। শানা তাঁতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। শানা ছাড়া বিট আপ করা সম্ভব হয় না।
শানার প্রকারভেদ (Classification of reed)
শানা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । নিম্নে বিভিন্ন প্রকার শানার নাম দেওয়া হলো
০ এক্সপ্যান্ডিং রিড (Expanding Reed)
০ ফ্লাক্সিবল রিড (Flexible Reed)
০ গজ রিড (Gauze Reed)
০ লিজিং রিড (Leasing Reed )
০ অর্ডিনারি রিড (Ordinary Reed)
o ভি রিড (V-Reed)
০ জিগজ্যাগ রিড (Zigzag Reed)
০ ওয়ার্প ওয়ান ডিউল রিড (Warp one dule Reed)
০ ওয়েফট ওয়ান ডিউল রিড (Weft one dule Reed)
শানা গাঁথা (Denting)
শানা গাঁথা দ্বারা টানা সুতাকে ডেন্টের মধ্যে সাজানো হয়। সাধারণত প্রতি ডেন্টে কাপড়ের জমিনের জন্য দুইটি ও কাপড়ের পাড়ের ক্ষেত্রে চারটি টানা সুতা ডেন্টিং করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতি ডেন্টে ৩/৪ টি টানা সুতা প্রবেশ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে কাপড়ের ডেনসিটি অর্থাৎ ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা বেশি থাকে। প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে টানা সুতা ব্যবহারের সংখ্যা নির্ভর করে শানার তার এর পুরুত্ব ও ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যার উপর । মাঝে মাঝে কাপড়ের জমিনে আলাদা ইফেক্ট আনার জন্য অসম শানা গাঁথা অর্থাৎ ডেন্টিং করা হয় ।
ডেন্টিং এর সংজ্ঞা (Definition of Denting)
যে পদ্ধতিতে শানার প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ী টানা সুতাকে ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয় তাকে ডেন্টিং বলে। রিডই কাপড়ের মধ্যে বা টানা সুতার মধ্যে ফাঁক কতটুকু থাকবে তা নিশ্চিত করে। কাপড়ের গঠন অনুযায়ী টানা সুতার ঘনত্ব নিরূপণ ও নিশ্চিত করাই শানার মূল কাজ । তাছাড়া শানা পড়েন সুতাকে ফেল অব দ্যা ক্লথ পৃষ্ঠে লাগিয়ে দেয় । সাধারণত মারিচাবিহীন স্টিলের তার দ্বারা শানা তৈরি করা হয়। কখনও কখনও ব্রাসের তৈরি ওয়ার দ্বারা শানা তৈরি করা হয়। কাপড়ের গঠন সঠিক রাখার লক্ষ্যে সুতাকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য ডেন্টিং ভূমিকা পালন করে থাকে ।
শানার কাউন্ট বা রিড কাউন্ট (Reed count )
রিড কাউন্ট নির্ণয়ের বহু পদ্ধতি রয়েছে। নিম্নে দুই প্রকারের উল্লেখ করা হলো।
১. স্টকপোর্ট সিস্টেম (Sockport sysem )
স্টকপোর্ট সিস্টেমটি অন্যান্য সকল সিস্টেম এর চেয়ে খুব বেশি জনপ্রিয় ও বেশি ব্যবহার হয় । প্লেইন ডিজাইনের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতি দুইটি ডেন্টের একটি ফাঁকা দিয়ে দুইটি সুতা টানা হয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে প্রতি ইঞ্চিতে যতটি ডেন্ট থাকবে কাউন্ট তত হবে। কিন্তু কাউন্টের সংজ্ঞা এভাবে লেখতে হবে- “ প্রতি দুই ইঞ্চিতে যতগুলো ডেন্ট থাকবে স্টকপোর্ট সিস্টেমে কাউন্ট তত হবে ।
২. ব্রাডফোর্ড সিস্টেম (Bradford sysem)
একটি রিডের ৩৬ ইঞ্চিতে ২০টি ডেন্টের যতটা সেট পাওয়া যায় তাই ব্রাডফোর্ড সিস্টেমে রিড কাউন্ট। শানার ডেন্টিং করার ক্ষেত্রে সতর্কতা শানার ডেন্টিং করার ক্ষেত্রে নিম্নের সতর্কতাসমূহ অবলম্বন করতে হবে ।
০ যেহেতু প্রতি ডেন্টের ফাঁক দিয়ে দুইটি সুতা টানা হয় সেহেতু কোন ক্ষেত্রে সুতা কম বা বেশি হলে উৎপাদিত কাপড় অসম হবে।
০ ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা ঠিক রেখে রিড ব্যবহার করতে হবে। নতুবা উৎপাদিত কাপড় ত্রুটিযুক্ত হবে।
০ ব্যবহারের সময় ডেন্ট বা স্পিলিটগুলি বাঁকা বা ভাঙ্গা না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. শানা কি?
২. ডেন্ট বা স্পিলিট কি?
৩. ডেন্টিং বলতে কি বুঝায় ?
৪. রিড কাউন্টের সংজ্ঞা দাও ।
৫. ব্রাডফোর্ড সিস্টেমে রিড কাউন্ট কাকে বলে।
৬. শানার মূল কাজ কী ?
৭. পড়েন সুতা কাপড়ের পৃষ্ঠে কে লাগিয়ে দেয় ।
৮. শানার দুইটি তারের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে কি বলে ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. শানার প্রকার ভেদ লেখ।
২. যে কোন এক প্রকার রিড কাউন্টের ব্যাখ্যা দাও।
৩. শানার ডেন্টিং করার ক্ষেত্রে সতর্কতাসমূহ লেখ ।
৪. শানার প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে টানা সুতা ব্যবহারের সংখ্যা কীসের উপর নির্ভর করে?
৫. অসম শানা গাথা কেন প্রয়োজন বর্ণনা কর ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। তাঁতে ব্যবহার শানার চিত্রসহ বর্ণনা কর ।
পরস্পর সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি দুই সেট সরলরেখা সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে কতগুলো ছোট ছোট চৌকো ঘর সৃস্টি করে, যে কাগজের উপর উপরোক্ত বর্গাকৃতি ঘরগুলো অংকিত হয় তাকে বলে ছক কাগজ বা গ্রাফ পেপার (Graph paper)। বিভিন্ন ডিজাইন কাপড়ে তোলার পূর্বে ডিজাইনটিকে সরল ও সহজ করে বুঝানোর উদ্দেশ্যে এক প্রকার বর্গাকার ঘর বিশিষ্ট কাগজে রং এর সংমিশ্রণে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমই হলো ছক কাগজ বা গ্রাফ পেপার ।
গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে। যেমন-
• ডিজাইন পেপার (Design paper )
• পয়েন্ট পেপার (Point paper )
• স্কয়ার পেপার (Square paper )
বাজারে যে সমস্ত গ্রাফ পেপার পাওয়া যায় তা সাধারণত আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি উভয় দিকেই ইঞ্চি প্রতি ৮, ১০, অথবা ১৬ ঘর অর্থাৎ ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ এর বার লাইন অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে, যাতে ব্যবহারের পূর্বেই ঘরগুলো সহজেই সনাক্ত করা যায় ।
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো-
০ কাগজে অংকিত কতগুলো সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা ।
০ প্রতিটি সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা পরস্পর সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে চৌকো ঘরের সৃষ্টি করে ।
০ প্রতিটি চৌকো ছোট ছোট ঘর বর্গাকার।
০ সনাক্তকরণের সুবিধার্থে চৌকো ঘরগুলো ৮, ১০ অথবা ১৬ ঘর এর পর বার অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে ।
০ গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে। যথা-ডিজাইন পেপার, পয়েন্ট পেপার, স্কয়ার পেপার।
হক কাগজের ব্যবহার
ডিজাইন করার সময় পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি (Vertical) এর দিকে এবং টানা সুতা লম্বালম্বি (Horizontal) এর দিকে ধরা হয়। টানা ও পড়েনের সংখ্যা হিসেব করার সুবিধার্থে প্রতি ইঞ্চিতে ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ যে কোন সংখ্যক চৌকো ঘরকে মোটা অথবা রঙিন লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়। এজন্য সহজেই ঘরগুলো সনাক্ত করা যায় । ডিজাইনারের মতানুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে। টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিম্নের চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো ।
পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি ও টানা সুতাকে লম্বালম্বি এর দিকে ধরা হয়। ডিজাইনারের মতানুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে। টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিম্নের চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো ।
টেক্সটাইল ডিজাইন ( Textile design)
ডিজাইন এর সংজ্ঞা (Definition of design)
মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী, সুন্দর জিনিসের প্রতি সকলেই আকৃষ্ট হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল, ফল, জীব বস্তু ইত্যাদি সুন্দর বস্তু দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে একজন ডিজাইনার তার কল্পনার রং দিয়ে তা নিজস্ব ভাবধারাকে কাগজে বা অন্য কোন মাধ্যমে (বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে) ফুটিয়ে তোলে যা আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয়ে একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। একজন ডিজাইনার প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস হতে যেমন- মানবদেহ, ফুল, ফল, পাতা ও অ্যাবস্ট্রাক্ট (Abstrac) আর্ট কাগজ অথবা কাপড়ে বিভিন্ন রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে যা আলোয় প্রতিফলিত হয়ে মানুষের চোখে ধরা পড়ে। ব্যবহার উপযোগী করার জন্য নকশাবিদগণ একে আরও অলংকৃত করে থাকেন- এটিই ডিজাইন ।
টেক্সটাইল ডিজাইন এর সংজ্ঞা (Definition of Texile design)
টেক্সটাইল সংক্রান্ত বুনন যা কাগজে অথবা কাপড়ে প্রতিফলিতকরণকেই টেক্সটাইল ডিজাইন বলা হয়। এই ডিজাইন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্নভাবে অলঙ্কার করা হয়। এই ডিজাইন মানুষের ব্যবহার উপযোগী কাপড় প্রস্তুতের জন্য তৈরি করা হয়। তবে বয়ন প্রক্রিয়ার জন্য তাঁতের মাধ্যমে ওভেন কাপড় তৈরি করা হয়। তাঁতে কাপড় বয়নের জন্য টানা ও পড়েন দুই সেট সুতার প্রয়োজন হয়। কাজেই ওভেন কাপড়ের টেক্সটাইল ডিজাইন এর সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া যায় বয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত কাপড়ের টানা ও পড়েন সুতার বন্ধন সৃষ্টির জন্য রীতি বা নিয়ম অনুসরণ করে যে কাপড় তৈরি হয় তাই টেক্সটাইল ডিজাইন ।
আর্টিস্টিক ডিজাইন (Artistic design)
একজন ডিজাইনার বা নকশাবিদ রং তুলির সাহায্যে কাগজ / ক্যানভাসে তার নিজস্ব চিন্তা ধারা বা ভাবধারার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে যে ডিজাইন ফুটিয়ে তোলে তাই আর্টিস্টিক ডিজাইন। এই ডিজাইন শুধু অলংকৃত করার জন্য ব্যবহার হয় ।
টেক্সটাইল ডিজাইনের গুরুত্ব ( Importance of Texile design)
বয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টানা ও পড়েন সুতার পরস্পর ইন্টারলেসমেন্টকে কাগজে প্রতিফলিত করে ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়। একজন তাঁতির কাপড় প্রস্তুতের পূর্বে অবশ্যই টেক্সটাইল সম্বন্ধে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। তাঁতে বিম উঠানোর পূর্বে তাঁতির জানতে হবে উৎপাদিত কাপড়ে কোন ধরনের ডিজাইন হবে । তাছাড়া টানা ও পড়েন সুতার পরিমাণ এবং কাউন্ট জানতে হবে। ডিজাইনে ড্রাফটিং ও লিফটিং জানতে হবে। কাপড় নরম হবে না শক্ত হবে বুননের পূর্বে তাও জানতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বস্ত্রকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য টানা বা পড়েনে রঙিন সুতা ব্যবহার করা হয়, এটিও একজন তাঁতিকে জানতে হবে। বয়নের পূর্বে কাপড় ডিজাইন সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানা থাকলে তাঁতির জন্য কাপড় বুনন অনেক সহজ হয়ে যায়।
টেক্সটাইল ডিজাইনের গুরুত্ব নিম্নে দেওয়া হলো
১. একজন ডিজাইনারের চিন্তাধারা ছক কাগজে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ।
২. টেক্সটাইল সংক্রান্ত বস্ত্রে সহজেই বিভিন্ন রঙিন সুতা দ্বারা কাপড়ের ডিজাইনটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ।
৩. টানা ও পড়েন সুতার ইন্টারলেসমেন্ট ছক কাগজে বিভিন্ন মার্কিং এর মাধ্যমে একজন টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞের কাছে সহজেই উপস্থাপন করা সম্ভব।
৪. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারসহ কাপড় বুননে জড়িত তাঁতিগণ ডিজাইন দেখে কাপড় প্রস্তুত করতে সক্ষম ।
৫. একজন বিশেষজ্ঞ নকশা অর্থাৎ টেক্সটাইল ডিজাইন দেখে সহজেই কাপড় সম্বন্ধে ধারণা গ্রহণ করতে সক্ষম ।
৬. টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে সহজেই পড়েন ও টানা সুতার অবস্থান জানা সম্ভব ।
৭. টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে ড্রাফটিং জানা সম্ভব অর্থাৎ একজন তাঁতি সহজেই বুঝতে পারেন যে, ডিজাইনের জন্য কয়টি ঝাঁপ (Heald shaft) ব্যবহার হবে এবং ঝাঁপের কোন 'ব' চক্ষু (Mail eye) দ্বারা কোন সুতাটি খাবে ।
৮. ডিজাইনের মাধ্যমে লিফটিং জানা সম্ভব অর্থাৎ ঝাঁপের কোনটি উপরে উঠবে এবং কোনটি নিচে নামবে তা একজন তাঁতি সহজেই জানতে পারেন ।
৯. ডিজাইনের মাধ্যমে কাপড় ভারী না হালকা তা সহজেই জানা সম্ভব ।
১০. সুতার ধরন, কাউন্ট জানা থাকলে ডিজাইন দেখে সহজেই কাপড় নরম হবে না শক্ত হবে তা বুননের পূর্বে জানা সম্ভব
১১. ডিজাইন রঙিন করে তাঁতীকে রঙিন সুতার অবস্থান সমন্ধে ধারণা দেওয়া সম্ভব।
১২. সর্বোপরি টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে কাপড়ের উইভ প্লান, ড্রাফটিং প্লান, লিফটিং প্লান, কাপড়ের ক্রস সেকশন ভিউ (Cross section view) কাপড়ের লংগিউডিনাল সেকশনাল ভিউ (Longiudinal section view) ইত্যাদি সহজেই জানা সম্ভব ।
টেক্সটাইল ডিজাইনের উদ্দেশ্য (Objectives of Textile design)
১. টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে ডিজাইনের ধরন সম্বন্ধে জানা যায় ।
২. টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা জানা সম্ভব।
৩. কাপড়ের টেক্সচার (Texture) সম্বন্ধে জানা সম্ভব ।
৪. কাপড় তৈরির পূর্বে ড্রাফটিং ও লিফটিং সম্বন্ধে জানা যায় ।
৫. ডিজাইনে ড্রাফটিং ও লিফটিং দ্বারা ঝাঁপের সংখ্যা উঠানামা সহজেই জানা যায়।
৬. কাপড়ের ডিজাইনের রিপিট জানা যায়।
টেক্সটাইল ডিজাইনের শ্রেণি বিভাগ (Classificaion of Texile design)
টেক্সটাইল ডিজাইন দুই প্রকার। যথা
১। স্ট্রাকচারাল ডিজাইন (Structural design)
২। ডেকোরেটিভ ডিজাইন (Decorative design)
১। স্ট্রাকচারাল ডিজাইন (Srtuctural design)
এটি একটি গঠনমূলক ডিজাইন অর্থাৎ যে নিয়মে টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর ইন্টারলেড হয়ে নির্ধারিত ডিজাইনটি কাপড়ে প্রতিফলিত হয় তাকে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন (Strucutral design) বলে । স্ট্রাকচারাল ডিজাইন দুই প্রকার। যথা-
ক. সাধারণ স্ট্রাকচার (Simple Structure)
খ. মিশ্র স্ট্রাকচার (Compound Structure)
ক. সাধারণ স্ট্রাকচার (Simple Structure)
সাধারণ স্ট্রাকচার বলতে ডিজাইনে সাধারণত এক সারি টানা ও এক সারি পড়েন সুতার ইন্টারলেসমেন্টকে বুঝায় । এই টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনী সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি টানা সুতা একে অপরের মধ্যে সমান্তরালভাবে গাঁথা থাকে এবং অনুরূপ পড়েন সুতা প্রতিটি টানা সুতার সাথে সমকোণ করে বন্ধনী সৃষ্টি করে। ফলে পড়েন সুভা পরস্পর সমান থাকে । এই বন্ধনী সৃষ্টির জন্য সাধারণ স্ট্রাকচারের তৈরি কাপড় দৃঢ় ও মজবুত হয়।
খ. মিশ্র স্ট্রাকচার (Compound Structure)
স্ট্রাকচারের টানা ও পড়েন সুতা দুই বা ততোধিক সারির থাকে, এক সারি সুভা দ্বারা মূল কাপড় ও অন্য সারি সুতা দ্বারা অলংকৃত কাপড় তৈরি করা হয়, অলংকৃত কাপড় মূল টানা ও পড়েন সুতার সাথে সমকোণে গাঁথা থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। তবে, নতুন স্পটের সৃষ্টি করে কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তোলে অর্থাৎ কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ঘটায় ।
২। ডেকোরেটিভ ডিজাইন (Decorative design)
এটি সজ্জিতমূলক Ornamented ডিজাইন। যে ডিজাইন দ্বারা কাপড় অলংকৃত করা হয় তাকে ডেকোরেটিভ ডিজাইন (Decorative design) বলে ।
ফেব্রিক স্ট্রাকচার ও টেক্সার (Fabric structure and texture)
ফেব্রিক স্ট্রাকচার (Fabric structure)
বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ গঠন বস্ত্রের ডিজাইনের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন ডিজাইনে কাপড় গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- প্লেইন কাপড়ের বস্ত্র গঠন এক ধরনের, আবার টুইল কাপড়ের বস্ত্র গঠন অন্য ধরনের। প্লেইন কাপড় সাধারণত একটি সুতা উপরে এবং অন্য সুতাটি নিচে এইভাবে পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে গঠিত হয় ।
বিভিন্ন ডিজাইনের সাহায্যে টানা ও পড়েন সুতা যে নিয়মে বা Order এ ইন্টারলেসমেন্ট (Interlacement) হয় তাকে ফেব্রিক স্ট্রাকচার (Fabric structure) বলে।
ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন (Fabric construction)
যে সমস্ত নিয়মে সুতা হতে কাপড় তৈরি করা হয় তাকে ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন (Fabric construction) বলে । ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন তিনভাবে হয়ে থাকে।
১. বয়নের মাধ্যমে (By weaving)
২. নিটিং এর মাধ্যমে ( By knitting)
৩. জমাট বাঁধিয়ে (By felting)
বরনের মাধ্যমে (By weaving)
দুই সেট টানা ও পড়েন তাঁত সুতা নামক যন্ত্র বা মেশিনের সাহায্যে পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াই বয়ন ।
নিটিং এর মাধ্যমে (By knitting)
যে প্রক্রিয়ায় নিটিং মেশিন বা নিপেলের সাহায্যে এক বা একাধিক সুতা দিয়ে লুপ তৈরির মাধ্যমে এবং উৎপাদিত লুপগুলোকে পরস্পর লম্বালম্বি বা সমান্তরালভাবে সংযোজিত করে কাপড় তৈরি করা হয় তাই নিটিং ।
জমাট বাঁধিয়ে (By felting)
টেক্সটাইল ফাইবার দ্বারা শিট প্রস্তুত করে উক্ত শিটকে থিকেনার বা গাম জাতীয় আঠালো পদার্থের সাহায্যে সন্নিবেশিত করে এবং কখনও কখনও স্টিচিং করে পরস্পর আটকিয়ে কাপড় তৈরি করার প্রক্রিয়াকে ফেন্টিং বলে।
টেক্সচার (texture )
ফেব্রিক স্ট্রাকচার বলতে কাপড়ের কতগুলো গুণকে বুঝায় যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
০ আঁশের ধরন
০ কাপড়ের ঘনত্ব
০ কাপড়ের স্থূলতা
০ সুতার টুইস্ট
০ সুতার কাউন্ট
০ কাপড়ের ওজন
০ অনুভূতি
০ ওভেন কাপড়ের বন্ধনী ইত্যাদির উপর
বুনন ঘন কি পাতলা তা বেশিরভাগ নির্ভর করে টানা ও পড়েন সুতার বন্ধনীর উপর, একই কাউন্ট ও একই কোয়ালিটির সুতা দ্বারা টানা ও পড়েনে ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতা সমান রেখে একটি প্লেইন উইভ একটি অন্য উইভের কাপড় প্রস্তুত করার পর দেখা যাচ্ছে যে, অন্য যে কোন উইভ এর চেয়ে প্লেইন উইভের কাপড় বেশি শক্ত ও মজবুত। কারণ প্লেইন কাপড়ে টানা ও পড়েনে একটি সুতার সাথে অপর সুতার একটার পর একটা বন্ধনী রয়েছে। উত্তম টেক্সচার পেতে হলে টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট, ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা এবং বুনন ঠিকমতো হওয়া উচিত ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গ্রাফ পেপার কি?
২. গ্রাফ পেপারের অন্য নাম কি?
৩. ডিজাইন শুরুর জন্য কি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়?
৪. X চিহ্ন দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে?
৫. # চিহ্ন দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ছক কাগজের ব্যবহার লেখ?
২. ডিজাইন করার জন্য গ্রাফ পেপারে কি কি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। চিহ্ন ও ডিজাইনসহ যে কোন একটি গ্রাফ পেপারের ব্যবহার দেখাও?
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ডিজাইন বলতে কি বুঝায়?
২. টেক্সটাইল ডিজাইনের সংজ্ঞা দাও?
৩. আর্টিস্টিক ডিজাইন কি?
৪. ডিজাইনের শ্রেণি বিভাগ কর?
৫. ডেকোরেটিভ ডিজাইন কি?
৬. স্ট্রাকচারের সংজ্ঞা দাও?
৭. কাপড় কি?
৮. ফেন্টিং কাকে বলে?
৯. বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ গঠন কিসের উপর নির্ভর করে?
১০. কোন কাপড়ের গঠনে একটি সুতা উপরে এবং অন্য সুতা নিচে পরস্পর সমকোণে বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়?
১১. রং বা তুলি ব্যবহার করে কোন ধরনের ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়?
১২. কোন উইডের কাপড় বেশি শক্ত ও মজবুত?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. টেক্সটাইল ডিজাইনের গুরুত্ব লেখ?
২. ডিজাইনের উৎস কি কি?
৩. একজন ডিজাইনার কিভাবে ডিজাইন তৈরি করে?
৪. টেক্সটাইল ডিজাইনের উদ্দেশ্য লেখ?
৫. আর্টিস্টিক ডিজাইন ও টেক্সটাইল ডিজাইনের পার্থক্য লেখ?
৬. কাপড়ের কি কি গুণকে টেক্সচার বলে?
৭. উত্তম টেক্সচার পেতে কাপড় বুননে কি কি নিয়ম মানা উচিত?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। টেক্সটাইল ডিজাইনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর?
২। কি প্রকারে ফেব্রিক কন্সট্রাকশন করতে পারে তা উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা দাও?
৩। টেক্সটাইল ও আর্টিস্টিক ডিজাইনের খরচের তুলনামুলক পার্থক্য দেখাও?
সাধারণত বয়ন পদ্ধতি টানা ও পড়েনের বন্ধনী বা ইন্টারলেসমেন্টের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। ওভেন পদ্ধতিতে দুই সারি সুতা থাকে, এক সারি টানা সুতা এবং অপর সারি পড়েন সুতা। পড়েন সুতা সাটেল (Shuttle) এর মাধ্যমে পার্ণ এর সাথে থাকে। কাপড় বুননের জন্য শুধু পড়েন সুতা সেডের মধ্যে চলাচল করে। কিন্তু টানা সুতাগুলো সারিবদ্ধভাবে একের পর এক সাজানো থাকে সেড গঠনের জন্য সম্পূর্ণ টানা সুতাগুলোকে কমপক্ষে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, এক ভাগ বা অংশ যখন উপরে ওঠে তখন অন্য ভাগ বা অংশ নিচে নেমে সেড গঠন করে। টানা সুতাগুলো উপরে উঠানো বা নিচে নামানোর জন্য ঝাপ বা হিল্ড শ্যাফট (Heald shaft) এর সাহায্য নেওয়া হয় । ঝাঁপে অনেক ‘ব’ চক্ষু (Mail eye) থাকে যার মধ্যে দিয়ে টানা সুতা প্রবেশ করিয়ে বাঁধা হয়। নিম্নের চিত্রে ঝাঁপ ও 'ব' চক্ষু দেখানো হলো।
ড্রাফটিং প্লানের সংজ্ঞা
ঝাঁপে অনেক 'ব' (Heald wire) থাকে এবং প্রতিটি হিল্ড ওয়ারের মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে যাকে 'ব' চক্ষু বা Mail eye বলে । প্রত্যেকটি 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট টানা সুতা প্রবেশ করানো হয় । বিয়ে অবস্থিত টানা সুতাগুলো ডিজাইন অনুযায়ী ড্রইং হুকের মধ্য দিয়ে টানা হয় । যে পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নিয়মে টানা সুতা (Warp thread) ঝাঁপের 'ব' চক্ষুতে গাঁথা হয় তাকে ড্রাফটিং বলে ।
তাঁতে কি ধরনের ডিজাইন উৎপন্ন হবে তা মূলত নির্ভর করে ড্রাফটিং এর উপর । তাঁতে বিম মাউন্টিং করার পূর্বে একটি স্ট্যান্ডে উইভারস্ বিমকে স্থাপন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঝাঁপ ও রীড (Reed) স্ট্যান্ডে রাখা হয় । ডিজাইন অনুসারে স্ট্যান্ডের দুই পার্শ্বে দুইজন অভিজ্ঞ শ্রমিক থাকে যারা ড্রাফটিং ও ডেন্টিং এর কাজ সম্পন্ন করে । দুজনের মধ্যে যিনি সঠিক সুতা নির্বাচন করতে পারেন তাকে রিচার (Reacher) বলে এবং যিনি হুকের সাহায্যে সুতাকে 'ব' চক্ষু ও রিডের ডেন্টের এর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করান তাকে ড্রয়ার (Drawer) বলে । তাঁতে কাপড় বুননের পূর্বে ড্রাফটিং ও ডেন্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য কাজ ।
সাধারণত একজন অভিজ্ঞ শ্রমিক ডিজাইনের কাগজ দেখেই বলে দিতে পারেন তাতে উঠানোর পূর্বে ড্রাফটিং এর জন্য কতগুলো ঝাঁপের প্রয়োজন হবে। প্রতিটি উইভ এ মূল ডিজাইন, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং প্লান ইত্যাদির ডিজাইন করা থাকে।
ডিজাইনে রিপিট অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কতগুলো ঝাঁপ এর প্রয়োজন হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়। উইভ অনুসারে টানা সুতাগুলোকে কয়টি ঝাঁপে এবং কোন ঝাঁপের কোন 'ব' চক্ষুর মধ্যে দিয়ে টানা সুতাগুলোকে প্রবেশ করাতে হবে তা ছক কাগজের যে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকাশ করা হয় তাকে ড্রাফটিং প্লান (Drafting plan) বলা হয়। নিচের চিত্রে কয়েকটি ড্রাফটিং প্লান দেখানো হলো
ড্রাফটিং প্লান প্রকাশ করার পদ্ধতি (Method of indicating drafting plan )
ড্রাফটিং প্লানকে ৩ টি পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়।
১। সরল রেখার সাহায্যে (By line )
২। ছক কাগজের সাহায্যে (By graph paper )
৩। সংখ্যার সাহায্যে ( By number )
১। সরল রেখার সাহায্যে (By line )
এ পদ্ধতিতে আনুভূমিক রেখাকে ঝাঁপ এবং উলম্ব রেখাকে টানা সুতা নির্দেশ করে। ঝাঁপের রেখা ও টানা সুভার রেখার ছেদ বিন্দুই নির্দেশ করে কোন সুতা কোন ঝাঁপে যাবে।
২। ছক কাগজের সাহায্যে (By graph paper )
ছক কাগজে আনুভূমিক খালি ঘরগুলোকে ঝাঁপ ও উলম্ব রেখার মধ্যবর্তী খালি ঘরগুলোকে টানা সুতা নির্দেশ করে । কাজেই ঝাঁপের ঘরগুলোকে ক্রস চিহ্ন দ্বারা বা ভরাট করে এটাই নির্দেশ করে যে, উক্ত টানা সুতাসমূহ ঝাঁপে গাঁথা হবে। ডিজাইন পেপারে এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।
৩। সংখ্যার সাহায্যে (By number)
সাধারণত উইভ প্লানের নিচে ড্রাফটিং সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। সংখ্যাগুলো ঝাঁপের সংখ্যা নির্দেশ করে। যে টানা সুতার নিচে যে সংখ্যা থাকবে সেই টানা সুতা সেই ঝাঁপে গাঁথা হবে।
ড্রাফটিং প্লানের শ্রেণি বিভাগ (Classificaion of drafting plan )
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ড্রাফটিং প্লানের নাম উল্লেখ করা হলো :
১. স্ট্রেইট ড্রাফটিং (Straight drafting)
২. পয়েন্টেড ড্রাফটিং (Pointed drafing)
৩. ফ্লাট পয়েন্টেড ড্রাফটিং (Flat pointed drafting)
৪. ব্রোকেন ড্রাফটিং (Broken drafting)
৫. স্পেশাল ড্রাফটিং (Special drafing)
৬. স্কিপ ড্রাফটিং (Skip drafting)
৭. মিক্সড ড্রাফটিং (Mixed drafting)
৮. সাটিন ড্রাফটিং (Stain drafting)
৯. স্টেপ ড্রাফটিং (Step drafting)
১০. গ্রুপ ড্রাফটিং (Group drafting)
১১. ডিভাইডেড ড্রাফটিং (Divided drafting)
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ড্রাফটিং প্লানের বর্ণনা করা হলো:
স্ট্রেইট ড্রাফটিং (Sraight drafting)
স্ট্রেইট ড্রাফট সবচেয়ে সহজ ধরনের ড্রাফট। ড্রাফটিং সিস্টেম এর মধ্যে সহজ ও সরলতম পদ্ধতি হলো স্ট্রেইট ড্রাফটিং। ডিজাইনের প্রথম টানা সুতাটি যেমন প্রথম ঝাঁপের মধ্য দিয়ে টানা হয় তেমনি পর্যায়ক্রমিকভাবে ২য় সুতাটি ২য় ঝাঁপে, ৩য় সুতাটি ৩য় ঝাঁপে এভাবে শেষ সুতাটি পর্যন্ত টানা হয়। ফলে রিপিটের টানা সুতার সংখ্যার সমান ঝাঁপের সংখ্যা হয় অর্থাৎ ডিজাইনের রিপিটে টানা সুতার সংখ্যা ১০ টি থাকলে ঝাঁপ ১০ টি ব্যবহার করা হয় । তাছাড়া স্ট্রেইট ড্রাফটের ক্ষেত্রে অন্য একটি সুবিধা হলো লিফটিং প্লান স্ট্রেইট ড্রাফটের ক্ষেত্রে ডিজাইনের অনুরূপ হয়। অর্থাৎ ডিজাইন অংকন করার ক্ষেত্রে কোন চিন্তা বা ক্যালকুলেশনের প্রয়োজন হয় না। হুবহু ডিজাইন তুলে দিলেই লিফটিং প্লান হয়ে যায় । চিত্রে স্ট্রেইট ড্রাফট দেখানো হলো।
পয়েন্টেড ড্রাফটিং(Pointed drafting)
যে সমস্ত কাপড় বা ডিজাইন সিমেট্রিক্যাল থাকে, ঐ সমস্ত কাপড় বা ডিজাইন তৈরি করতে পয়েন্টেড ড্রাফটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বড় ধরনের টানা রিপিটের জন্য এই ড্রাফটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্ট্রেইট ড্রাকটে ঝাঁপের সংখ্যা বেশি প্রয়োজন। কিন্তু পয়েন্টেড ড্রাফট দুইটি স্ট্রেইট ড্রাফটের মিশ্রণের ফলাফল । এই পদ্ধতিতে ঝাঁপের সংখ্যা রিপিটের টানা সুতার সংখ্যার তুলনায় প্রায় অর্ধেক যার ফলে লিফটিং প্লান ও মূল ডিজাইনে অর্ধেকের সমান অংকন করা যায়। এই ধরনের ড্রাফটিং প্লান, জিগজ্যাগ টুইল, ডায়মন্ড টুইল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। চিত্রে ড্রাফটিং প্লান দেখানো হলো।
ফ্লাট পয়েন্টেড ড্রাফটিং (Flat poitned drafting)
এই ধরনের ড্রাফটিং পদ্ধতিও কিছুটা পয়েন্টেড ড্রাফটিং এর মতো। তবে পার্থক্য এই যে, ড্রাফটিং পদ্ধতির সোজা অংশটির শেষ প্রান্তে যে ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় উক্ত ঝাঁপে পাশাপাশি কম পক্ষে দুইটি সুতা টানা হয় এবং পুনরায় প্রথম ঝাঁপের দিকে টানা সুতাগুলো লাগানো হয়। এই ধরনের ড্রাফটিং পদ্ধতিও বড় ধরনের ডিজাইনের জন্য ব্যবহার হয় এবং স্ট্রেইট ড্রাফটিং এর চেয়ে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ঝাঁপের প্রয়োজন হয়। লিফটিং প্লান মূল ডিজাইনের অর্ধেকের মতো হয় ।
ব্রোকেন ড্রাফটিং (Broken drafting)
পয়েন্টেড ড্রাফটের পরিবর্তিত রূপ হিসেবে ব্রোকেন ড্রাফটকে বিবেচনা করা হয়। একে একের অধিক স্ট্রেইট ড্রাফটের দিক পরিবর্তন পয়েন্টেড ড্রাফটের মতো ১ম অথবা শেষ ঝাঁপের মধ্যে না হয়ে পরবর্তী গ্রুপের প্রথম টানা সুতা প্রথম ঝাঁপ থেকে অথবা পূর্ববর্তী ঝাঁপের শেষ অথবা শেষ ঝাঁপের নিচ থেকে শুরু হয়। ড্রাফটিং প্লানের সামান্য পরিবর্তন মূল ডিজাইনের আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। কাজেই ব্রোকেন ড্রাফট দ্বারা তৈরি ডিজাইন সমূহকে সিমেট্রিক্যাল ডিজাইন হিসেবে ধরা হয় না ।
স্পেশাল ড্রাফটিং (Special drafting)
স্পেশাল কিছুটা পয়েন্টেড বা ফ্লাট পয়েন্টেড ড্রাফটিং এর মতো। স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্টে যে সমস্ত ড্রাফটিং করা হয় তাকে স্পেশাল ড্রাফটিং বলা হয়। নির্দিষ্ট সংখ্যক ঝাঁপে প্রথমে সুতাগুলোকে স্ট্রেইট আকারে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে কিছুটা বিশেষ নিয়মে পরবর্তী সুতা প্রথম ঝাঁপে অথবা শেষ ঝাঁপে দিয়ে পয়েন্টেড আকারে প্রথম ঝাঁপের দিকে টানা সুতাগুলো চলে আসে। আবার কখনও কখনও পরবর্তী সুতাটি প্রথম ঝাঁপে টেনে তারপর থেকে পয়েন্টেড আকারে শেষ ঝাঁপ থেকে ২য় ঝাঁপ পর্যন্ত টানা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতেও ডিজাইন কখনও সিমেট্রিক্যাল থাকে না।
স্কিপ ড্রাফটিং (Skip drafting)
যে সমস্ত ডিজাইনে রিপিট খুব বড় থাকে, অর্থাৎ টানা সুতার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে, সে সমস্ত ডিজাইনের জন্য স্কিপ ড্রাফটিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে ওয়ার্স রিপিটের চেয়ে দুই বা ততোধিক গুণিতক সংখ্যক ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঐ পদ্ধতিতে টানা সুতাগুলো পাশাপাশি অন্য সুতার সাথে ঘর্ষণের সম্ভাবনা কমে যায়। আবার খোদ ডিজাইনেরও স্কিপ ড্রাফট বসিয়ে ঝাঁপ সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। এতে টানা সুতার ঘর্ষণ কমে যায়। যদি প্লেইন (১/২) ডিজাইনের জন্য স্কিপ ড্রফট করার প্রয়োজন হয় তখন ৪ ঝাঁপের জন্য ১ম গ্রুপে ১, ৩ ও ২য় গ্রুপে ২, ৪ আবার ৬ ঝাঁপের জন্য ১ম গ্রুপে ১, ৩, ৫ ও ২য় গ্রুপে ২, ৪, ৬ নং ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়। বেশি ট্যাপেট ও বেশি ঝাঁগ ব্যবহারের জন্য প্রাথমিক খরচ বেড়ে গেলেও কাপড় বয়নের ক্ষেত্রে তাঁতেও টানা সুতার চাপ কম পড়ে ও টানা সুতা ছেড়ার হারও কমে যায়।
মিক্সড ড্রাফটিং (Mixed drafting)
মিক্সড ড্রাফটিংকে কম্পাউন্ড অথবা কম্বাইন্ড ড্রাফটিংও বলা হয়ে থাকে। দুই বা ততোধিক ড্রাফটকে একটি ড্রাফটিং পদ্ধতির মধ্যে মিশ্রিত করার পর নতুন যে ড্রাফটিং পদ্ধতি পাওয়া যায় তাকে মিক্সড ড্রাফটিং পদ্ধতি বলে । এটি খুব জটিল ধরনের ড্রাফটিং পদ্ধতি। এই ড্রাফটিং পদ্ধতির জন্য অভিজ্ঞ ডিজাইনারের প্রয়োজন হয়।
সাটিন ড্রাফটিং(Satin drafting)
ঝাঁপ এবং মেইল আই তথা টানা সুতা একটির সাথে অন্যটিকে ঘর্ষণ থেকে মুক্ত রাখতে সাধারণত সাটিন ড্রাফট। ব্যবহার হয়। রিপিটে প্রতিটি টানা সুতার জন্য আলাদা আলাদা ঝাঁপের প্রয়োজন। যেমন- ৫x৫ ঘরের সাটিনের জন্য ৫ টি ঝাঁপের প্রয়োজন। ঘর্ষণ ও টানা সুতা ছেড়ার হার এই ধরনের ড্রাফটিং এ কম হয়।
স্টেপ ড্রাফটিং (Step drafting)
এ ধরনের ড্রাফট স্ট্রেইট ড্রাফটিং এ মতোই । একটা অথবা একের অধিক ঝাঁপ দিয়ে এ ধরনের ড্রাফটিং করা হয় । ডিজাইন বড় করার জন্য সাধারণত এই ধরনের ড্রাফটিং ব্যবহার করা হয় । যদি প্রথম ঝাঁপে প্রথম সুতা দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তী ঝাঁপ বাদ দিয়ে ২য় সুতাটি ৩য় ঝাঁপে দেওয়া হয়। এভাবে ড্রাফটিং স্টেপ আকারে সাজানো হয়।
গ্রুপ ড্রাফটিং (Group drafting)
বিভিন্ন ধরনের চেক ও স্ট্রাইপ কাপড় তৈরির জন্য গ্রুপ ড্রাফটিং ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রাইপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রাফটিং করে একই সংগে গাঁথা হয়। অর্থৎ ২ সেট ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়। স্টাইপের সংখ্যা ও স্ট্রাইপের মধ্যে সুতার সংখ্যা দ্বারা ড্রাফটের রিপিট নির্ণয় করা হয়।
ডিভাইডেড ড্রাফটিং (Divided drafting)
যখন কাপড় বুননের জন্য ২টি বিম ব্যবহার করা হয় তখন ডিভাইডেড ড্রাফটিং ব্যবহার হয় । ডাবল রুথ, টু-পাই উইভস্, পাইল ফেব্রিক্স ইত্যাদি কাপড়ের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক টানা সুতার প্রয়োজন হয় । এখানে ডিভাইডেড ড্রাফটিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়। ফেইজ ওয়ার্প সুতাগুলো সামনের ঝাঁপে এবং পাইল ওয়ার্স সুতাগুলো পিছনের ঝাঁপে এভাবে ড্রাফটিং করা হয়।
লিফটিং এবং লোয়ারিং (Lifting and lowering)
তাঁতে কাপড় বুননের জন্য ডিজাইন অনুযায়ী ঝাপগুলো উপরে নিচে ওঠা নামা করাতে হয়। ঝাঁপ ওঠা নামা করার কারণেই কাগজে অঙ্কিত ডিজাইনটি কাপড়ে ফুটে ওঠে। সাধারণ অর্থে ঝাঁপ উপরে উঠানোকে লিফটিং (Lifting) এবং নিচে নামানোকে লোয়ারিং (Lowering) বলে। কিন্তু ডিজাইন অনুযায়ী ট্যাপেট অথবা ডবির মাধ্যমে কিছু সংখ্যক টানা সুতাকে উপরে উঠানো ও কিছু সংখ্যক টানা সুতাকে নিচে নামানোর মাধ্যমে টানা সুতায় সেড গঠন করা হয়। যে পদ্ধতিতে ঝাঁপসমূহকে উপরে উঠানো ও নিচে নামানো হয় তাকে লিফটিং (Lifting) বলে এবং ছক কাগজে অঙ্কিত যে প্লানের মাধ্যমে এই ঝাঁপগুলো উঠানো ও নামানো নির্দেশ করা হয় তাকে লিফটিং প্লান (Lifting plan) বলে । টানা সুতা দ্বারা সেড গঠনের পর পড়েন সুতা সেডের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় । প্রতিটি পড়েন সুতা প্রবেশের পূর্বে কোন ঝাঁপটি উপরে উঠবে এবং কোন ঝাঁপটি নিচে নামবে তা লিফটিং প্লানের মাধ্যমে নির্দেশ করা থাকে । কাজেই তাঁতে কোন ডিজাইনের বা কোন ধরনের কাপড় উৎপন্ন হবে তা নির্ভর করে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানের উপর ।
লিফটিং প্লানের সংজ্ঞা (Definition of lifting plan )
ড্রাফটিং সমাপ্ত হলে ডিজাইন অনুসারে নির্ধারিত ঝাঁপ (Heald) উপরে উঠানো ও নিচে নামানোর মাধ্যমে পড়েন সুতাসহ মাকু (Shule) যাতায়াতের জন্য সেড তৈরির প্রক্রিয়াকে লিফটিং বলে।
লিফটিং প্লান (Lifting plan )
ঝাঁপ উপরে উঠানো ও নিচে নামানোর ফলে মাকু চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে ডিজাইনের সাথে ছক কাগজের ঝাঁপ উঠানো নামানোর দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় তাকে লিফটিং প্লান বলে ।
লিফটিং প্লানের উদ্দেশ্য (Objects Lifting plan )
১. কাপড় তৈরির উদ্দেশ্যে ডিজাইন অনুসারে ঝাঁপ উপরে নিচে উঠা নামা ।
২. ডিজাইন অনুসারে নির্দিষ্ট ঝাপ নির্দিষ্ট ট্রেডেল লিভার এ বাঁধা ।
৩. ঝাঁপসমূহ টপ রোলারের সাথে লিফটিং প্লানের নির্দেশ অনুসারে বাঁধা।
সাধারণত ডিজাইনের রিপিট বলতে টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা বুঝানো হয় যা দ্বারা কাপড় বা ডিজাইনের পুরো সজ্জিতকরণের প্রতিনিধিত্বকরণকে বুঝায়। প্রতিটি পড়েনের প্রবেশের সময় লিফটিং প্লানে উল্লেখিত টানা সুতাগুলো ঝাঁপের মাধ্যমে উপরে উঠবে এবং নির্দেশিত টানা সুতাগুলো নিচে নামবে। কাজেই তাঁতে কোন ধরনের কাপড় বা ডিজাইনের কাপড় বয়ন হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানের উপর।
ড্রইং-ইন টানা সুতাকে বিমে জড়ানোর পর ডিজাইন অনুযায়ী ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের মাধ্যমে টেনে নেওয়াকে ড্রইং-ইন বলে । এ প্রক্রিয়াকে ড্রাফটিংও বলা হয়।
ডেন্টিং (Denting)
যে পদ্ধতিতে রিডের প্রতিটি ডেন্টের মধ্যে দিয়ে টানা সুতাকে ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয় তাকে ডেন্টিং বলে । রিডই কাপড়ের মধ্যে টানা সুতার ফাঁক কতটুকু থাকবে তা নিশ্চিত করে। কাপড়ের গঠন অনুযায়ী টানা সুতার ঘনত্ব নিরূপণ ও নিশ্চিত করাই রিড এর মূল কাজ। তাছাড়া রিড পড়েন সুতাকে ফেল অব দ্যা ক্লথ (Fell of the cloth) এর গায়ে লাগিয়ে দেয়। প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে কতটি টানা সুতা প্রবেশ করবে তা রিড এর কাউন্ট টানা সুতার মোট সংখ্যা হিসাব করে বের করা হয়।
লিফটিং প্লান (Lifting plan ) ডিজাইন পেপারে যে প্লানের সাহায্যে রিড এর প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে কতটি করে টানা সুতা প্রবেশ করানো হবে তা উল্লেখ করাকে ডেন্টিং প্লান বলে। একজন ডিজাইনার যেমন ছক কাগজে তার প্লানটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তেমনি একজন বিশেষজ্ঞ শ্রমিক উক্ত ডেন্টিং প্লান দেখে সহজেই কোন ডেন্টের ফাঁক থেকে কতটি করে সুতা প্রবেশ করবে তা বুঝতে পারে ।
ডেন্টিং প্লানের উদ্দেশ্য (Objects Denting plan )
১. রিডের দুইটি ডেন্টের ফাঁক দিয়ে নির্দিষ্ট টানা সুতা হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়ার পরিকল্পনা করা ।
২. নির্দিষ্ট ডিজাইন নির্দিষ্ট অনুসারে টানা সুতা ডেন্ট এর মধ্যে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা ।
৩. ডেন্টিং প্লানের জন্য কাপড়ে টানা সুতার দূরত্ব সঠিক থাকে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ড্রাফটিং বলতে কী বুঝায়?
২. ড্রয়ার ও রিচার কাদের বলে?
৩. মেইল আই কী?
৪. স্ট্রেইট ড্রাফট কী?
৫. লিফটিং প্লান বলতে কী বুঝায়?
৬. লিফটিং কী?
৭. ওভেন ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে গ্রাফ পেপারে ব্যাখ্যা করার উপকরণ কী কী?
৮. লোয়ারিং কী?
৯. তাঁতে কি ধরনের ডিজাইন উৎপন্ন হবে তা মূলত কিসের উপর নির্ভর করে?
১০. 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে কোন সুতা প্রবেশ করানো হয়?
১১. কাপড় বুননের সময় কোন সুতা সেডের মধ্যে চলাচল করে?
১২. স্ট্রেইট ড্রাফটিংয়ের ডিজাইনে রিপিটে টানা সুতার সংখ্যা ১২টি থাকলে ঝাঁপ কতটি ব্যবহার করা হবে?
১৩. কে পড়েন সুতাকে ফেল অব দ্যা ক্লথের গায়ে লাগিয়ে দেয়?
১৪. ড্রাফটিং প্লান প্রকাশ করার পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ড্রাফটিং প্লানের শ্রেণি বিভাগ কর?
২. স্কিপ ড্রাফটের চিত্র অংকন করে দেখাও?
৩. লিফটিং প্লানের উদ্দেশ্য কী? লেখ।
৪. ডেন্টিং প্লানের উদ্দেশ্য লেখ?
৫. বুনন পদ্ধতিতে কত সারি সুতা থাকে। তাদের নাম লেখ?
৬. টানা সুতায় কিভাবে সেড গঠন করে?
৭. সাধারণত ডিজাইনের রিপিট বলতে কি বুঝানো হয়?
৮. ঘর্ষণ ও টানা সুতা ছেড়ার হার কোন ধরনে ড্রাফটিং এ কম হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। চিত্রসহ দুইটি প্রকার ড্রাফটিং প্লানের বর্ণনা দাও?
২। যে কোন ৫টি ড্রাফটিং পদ্ধতির চিত্রসহ বর্ণনা দাও?
৩। সাটিন ও মিক্সড ড্রাফটিং পদ্ধতি চিত্রসহ বর্ণনা দাও?
৪। স্কিল ও স্পেশাল ড্রাফটিং পদ্ধতি চিত্রসহ বর্ণনা দাও?
পৃথিবীতে যত ধরনের বুনন ওভেন ( Woven) কাপড় তৈরি করা হয় তার মধ্যে প্লেইন উইভ কাপড়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। টানা ও পড়েন সুতার পর্যায়ক্রমিক ইন্টারলেসমেন্টের মাধ্যমে প্লেইন উইভ গঠন করা হয়। এ উইভ অন্যান্য সকল উইভের চেয়ে মজবুত। একে ক্যালিকো (Calico) বা ট্যাবি (Tabby) উইভ বলা হয় । ক্যালিকো নামটি মাদ্রাজ প্রদেশের অন্তর্গত ক্যালিকো নামক শহরের নাম থেকে এসেছে। আর ট্যাবি (Tabby) শব্দের উৎপত্তি বাগদাদের অ্যাটাবি (Atabi) নামক রাস্তার নাম থেকে, যেখানে রেশমবস্ত্র প্রস্তুতকারকরা বাস করত।
আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিধেয় বস্ত্র প্লেইন উইভ বুননের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়ে থাকে। যেহেতু প্রতিটি সুতা তার পাশ্ববর্তী সুতাকে ইন্টারলেসমেন্ট এর মাধ্যমে ধরে রাখে কাজেই এটি অন্য সব বুননের চেয়ে অত্যন্ত মজবুত ও টেকসই । ফলে এটি খুবই জনপ্রিয় উইভ। হস্ত চালিত তাঁতে বয়ন করা অত্যন্ত সহজ বিধায় আমাদের দেশের হস্তচালিত তাঁতিগণ শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, চাদর এই বুননের মাধ্যমে করে থাকে ।
প্লেইন উইভ এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of plain weave)
প্লেইন উইভ এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো
১. প্লেইন উইভ সবচেয়ে সহজ ও সরল ডিজাইন ।
২. টানা ও পড়েন সুতাগুলো একের পর এক বন্ধনীতে অংশগ্রহণ করে
৩. প্লেইন উইভ এর ক্ষুদ্রতম ডিজাইন ২×২ ।
৪. মাত্র দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করে এই বুনন সম্ভব।
৫. কাপড় সর্বাধিক দৃঢ় থাকে ।
৬. কাপড়ের উভয় পাশে একই রকম ডিজাইন পরিলক্ষিত হয় ।
৭. প্রতিটি টানা ও পড়েন সূতা পার্শ্ববর্তী সুতাকে সর্বাধিক বাইন্ডিং এ আবদ্ধ রাখে।
৮. প্লেইন উইভ ভারী ও হালকা সব ধরনের কাপড়ের জন্য ব্যবহার হয় ।
৯. এ ডিজাইনকে ডিজাইনের ভাষায় (one up one down) এই সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
১০. দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার হলে স্ট্রেইট ড্রাফট এবং বেশি ঝাঁপ ব্যবহার হলে স্কিপ ড্রাফট ব্যবহার হয় ।
১১. প্লেইন উইভ দ্বারা তৈরিকৃত কাপড় খুবই মজবুত ও টেকসই বেশি হয়ে থাকে ।
প্লেইন উইভ এর শ্রেণিবিভাগ (Classification of plain weave)
প্লেইন উইভকে সাধারণত নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়
১. স্কয়ার কথ বা ট্রু প্লেইন রুথ (Square cloth or true plain cloth
২. ওয়ার্প ফেইজড ক্লথ (Warp faced cloth )
৩. ওয়েফট ফেইজড ক্লথ (Weft faced cloth )
স্কয়ার ক্লথ বা ট্রু প্লেইন ক্লথ (Square cloth or true plain cloth )
যে সমস্ত কাপড়ের ডিজাইনে টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট একই, ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা একই, উভয় পার্শ্বে টানা ও পড়েন ভাসা সমান এবং টানা ও পড়েন ক্রিম্প (Crimp) ) সমান, সেই সমস্ত কাপড়কে স্কয়ার ক্লথ বা টু প্লেইন ক্লথ বলে।
ব্যবহার : চিজ ক্লথ, বাটার মসলিন, টেবিল লিনেন, সেইল ক্লথ, ওয়াটার কনটেইনার, কনভেয়ার বেল্ট ইত্যাদি ।
ওয়ার্প ফেইজড ক্লথ (Warp faced cloth )
যে কাপড়ের টানায় চিকন সুতা ও পড়েনে মোটা সুতা, ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা পড়েন সুতার সংখ্যার চেয়ে বেশি থাকে এবং টানার কভার ফ্যাক্টর (Cover facor ) পড়েনের কভার ফ্যাক্টর এর চেয়ে বেশি সেই সমস্ত কাপড়কে ওয়ার্স ফেইজড ক্লথ বলে ।
ব্যবহার : টেরিলিন সাটিন, কটন পপলিন, কনভেয়ার বেল্ট ইত্যাদি ।
ওয়েফট ফেইজড ক্লথ (Weft faced cloth )
যে কাপড়ের টানায় মোটা সুতা ও পড়েনে চিকন সুতা, ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা পড়েন সুতার সংখ্যার চেয়ে কম থাকে এবং টানার কভার ফ্যাক্টর (Cover facor) পড়েনের কভার ফ্যাক্টর এর চেয়ে কম সেই সমস্ত কাপড়কে ওয়েফট ফেইজড ক্লথ বলে ।
ব্যবহার : কটন, লিমব্রিক, কটন মোহাইন, লাইনিং, ফেব্রিক ইত্যাদি । এছাড়া নিম্নলিখিত দুই প্রকার প্লেইন কাপড় দেখতে পাওয়া যায়। যথা:-
১. ব্যালেন্সড রুথ (Balanced cloth )
২. আনব্যালেন্সড ক্লথ (Unbalanced cloth )
ব্যালেন্সড ক্লথ (Balanced cloth )
যে সমস্ত কাপড়ের ডিজাইনে টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট একই, ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা একই, টানার ও পড়েনের কভার ফ্যাক্টর একই এবং কাপড়ের উভয় পার্শ্বে একই রকম ডিজাইন বা রিব দৃশ্যমান হয় তখন উক্ত কাপড়কে ব্যালেন্সড ক্লথ বলে।
আনব্যালেন্সড ক্লথ (Unbalanced cloth )
যে সমস্ত কাপড়ের ডিজাইনে টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট সমান নয়, ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা এক নয়, টানার ও পড়েনের কভার ফ্যাক্টরও এক নয় সে কাপড়কে আনব্যালেন্সড ক্লথ বলে ।
প্লেইন উইভকে অলঙ্করণ (Ornamentaion of plain cloth )
প্লেইন উইভ অর্থাৎ ডিজাইনের মূল নীতির কোন পরিবর্তন না করে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উপায়ে প্লেইন কাপড়কে অলঙ্করণ করা যায় ।
১. একই কাপড়ে বিভিন্ন প্রকার টেক্সটাইল উপাদান যেমন- কটন, উল, সিল্ক, পলিয়েস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করে প্লেইন কাপড় অলঙ্করণ করা যায়। উক্ত কাপড়কে মিশ্র কাপড় বলে ।
২. বিভিন্ন প্রকার রঙিন সুতা ব্যবহার করে স্ট্রাইপ ও চেক কাপড় তৈরি করা সম্ভব।
৩. একই কাপড়ে টানা সুতা এক রকম ও পড়েন সুতা অন্য রকম অর্থাৎ টানা ও পড়েনে ভিন্ন ভিন্ন কাউন্টের সুতা ব্যবহার করে।
৪. আবার একই কাপড়ে শুধু টানায় অথবা শুধু পড়েনে ভিন্ন ভিন্ন কাউন্টের সুতা ব্যবহার করে ।
৫. একই কাপড়ে ভিন্ন ভিন্ন টুইস্টের সুতা ব্যবহার করে ।
৬. বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত সুতা ব্যবহার করে। যেমন- স্নাব ইয়ার্ন, ক্রিম্প ইয়ার্ন ইত্যাদি ।
৭. বিভিন্ন প্রকার ডেন্টিং কাপড় অলঙ্করণ করা সম্ভব।
৮. একাধিক টানা বিম ব্যবহার করে একটি টাইট এবং অন্যটি ঢিলা এভাবে কাপড় অলঙ্করণ করা সম্ভব।
প্লেইন উইভ ডেরিভেটিভসমূহ (Derivatives of plain weave)
প্লেইন উইভ ডেরিভেটিভসমূহ নিম্নরূপ:-
১. ওয়ার্প রিব (Warp rib ))
২. ওয়েফট রিব (Weft rib ))
৩. ম্যাট (Mat) ৪. রেপ (Repp))
৫. ইমিটেশন রেপ (Immitation repp)
প্লেইন উইভের ব্যবহার
পৃথিবীতে যত ধরনের ওভেন কাপড় রয়েছে তার শতকরা পঁচাত্তর ভাগই প্লেইন উইভ কাপড় । সূক্ষ্ম কাপড় থেকে শুরু করে মোটা প্রকৃতির কাপড়ও এই উইভ দ্বারা তৈরি করা সম্ভব। যে কোন ধরনের আঁশ এর তৈরি সুতা দ্বারা প্লেইন ডিজাইনের কাপড় তৈরি করা সম্ভব । খুব চিকন অর্থাৎ সূক্ষ্ম সুতা দ্বারা মসলিন কাপড় প্লেইন উইভের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আঁশ হতে প্রস্তুত সুতা যেমন- কটন, সিল্ক, জুট, উল ইত্যাদি দ্বারা তৈরি কাপড় দিয়ে পোশাক, কোট, প্যান্ট, পেটিকোট, সালোয়ার, কামিজ, শাড়ি ইত্যাদি প্লেইন উইভ ডিজাইন দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। ডাক্তারি অ্যাপ্রোন, গজ, ব্যান্ডেজ ইত্যাদিও প্লেইন ডিজাইনের কাপড় দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। উল ও উরস্টেড থেকে ম্যাট, ডিজাইনের প্রস্তুত কাপড় স্যুট, কোট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয়। খেলাধুলার বিভিন্ন পোশাক, সাঁতারের পোশাক প্লেইন ডিজাইনে হয়ে থাকে। মোটা সুতা দ্বারা প্রস্তুত কম্বলও প্লেইন ডিজাইনের মাধ্যমে তৈরি হয়।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সবচেয়ে সহজ ও মজবুত ডিজাইন কোনটি?
২. কেলিকো বা টেবি কোন উইভকে বলা হয়?
৩. প্লেইন উইভের শ্রেণি বিভাগ কর?
৪. স্কয়ার ক্লথ বা টু প্লেইন ক্লথ বলতে কি বুঝায়?
৫. ব্যালেন্স ক্লথ কি?
৬. ওয়ার্স রিব ক্লথ কাকে বলে?
৭. কোন কাপড়ের উভয় পার্শ্বে একই ডিজাইন পরিলক্ষিত হয়?
৮. সর্বনিম্ন কতটি ঝাঁপ ব্যবহার করে প্লেন কাপড় বুনন সম্ভব?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. প্লেইন উইভের ৪টি ডেরিভেটিব-এর নাম লেখ?
২. ব্যালেন্স ক্লথ ও আনব্যালেন্স ক্লথ এর সংজ্ঞা দাও?
৩. প্লেই উইভের ৪টি ব্যবহার লেখ?
৪. প্লেন উইভ এর ক্ষুদ্রতম ডিজাইন কত ঘরে সম্ভব?
৫. প্লেন ডিজাইনকে ডিজাইনের ভাষায় কিভাবে প্রকাশ করা হয় লেখ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। প্লেইন উইভের ডেরিভেটিভসমূহ বিস্তারিত আলোচনা কর?
২। প্লেইন উইভের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ?
৩। প্রেইন উইভের শ্রেণি বিভাগ কর এবং প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা দাও?
৪ । প্লেইন বুননে সবচেয়ে মজবুত ও টেকসই কাপড় প্রস্তুত হয় তার সপক্ষে যুক্তি দাও?
৫ । প্লেইন উইডের ডিজাইনের মূল নীতির কোন পরিবর্তন না করে কিভাবে প্লেইন কাপড়কে অলঙ্করণ করা যায় বিস্তারিত ভাবে লেখ?
টুইল উইভ এর সংজ্ঞা (Definition of twill weave)
যে উইভ কাপড়ের উপরিভাগ টানা বা পড়েন ভাসা (Float) অথবা টানা পড়েন সম বা অসম কতগুলো কোণাকুণি শিররেখা (Diagonal line) দ্বারা দৃষ্ট হয় তা-ই টুইল উইভ (Twill weave)।
টুইল উইভের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কাপড়ের উপর কোণাকুনি রেখার দৃষ্টিগোচর হওয়া । এই কোণাকুনি রেখা ডান থেকে বামে ও বাম থেকে ডানে চলতে থাকে। ডিজাইন অনুযায়ী কাপড়ের উপরের পার্শ্বে অর্থাৎ ফেইস সাইডে ডিজাইনটি ফুটে ওঠে এবং উল্টো পার্শ্বে অর্থাৎ ব্যাক সাইডেও এই কোণাকুনি রেখা দৃশ্যমান। তবে ডিজাইন হুবহু ফুটে উঠে না । এই ডিজাইনের প্রস্তুতকৃত কাপড় খুব ওজন বিশিষ্ট ও বেশ খাপি বা দৃঢ় হয় । অধিকাংশ স্যুটিং ও প্যান্টের কাপড় টুইল উইভ দ্বারা তৈরি হয়। টুইলে বিভিন্ন ডিজাইন অনুযায়ী মাঝে মাঝে টুইল রেখার দিক পরিবর্তন করে ইচ্ছেমতো হেরিংবোন, জিগজ্যাগ ইত্যাদি ডিজাইনে কাপড় প্রস্তুত করা হয়ে থাকে । টুইল উইভ হলো দ্বিতীয় প্রাথমিক বেসিক উইভ।
টুইল উইভ এর বৈশিষ্ট্য (Characteristic of twill weave)
১. এ জাতীয় কাপড়ের উপরিভাগে টানা ও পড়েন ভাসা অথবা টানা পড়েন সম বা অসম ভাসা কতগুলো কোণাকুনি শিররেখা দৃষ্ট হয়, এটিই টুইল কাপড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ।
২. টুইল রেখা ক্রমাগত ডান থেকে বামে ও বাম থেকে ডানে চলতে থাকে
৩. তিন বা ততোধিক ঝাঁপে টুইল প্রস্তুত করা হয় ।
৪. টুইলের ক্ষুদ্রতম ডিজাইন হলো ৩×৩
৫. টুইল উইভের ক্ষেত্রে প্রধানত স্ট্রেইট ড্রাফট ব্যবহার হয়ে থাকে ।
৬. টুইল উইভ তৈরি করতে কমপক্ষে তিনটি টানা পড়েন সুতার প্রয়োজন হয় ।
৭. অলঙ্ককরণ ও বেশি ওজনের বৈশিষ্ট্যের জন্য টুইল উইভ বহুল ব্যবহার হয়।
৮. কোন কোন ক্ষেত্রে টুইল লাইন ডান অথবা বাম থেকে গতি পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট নিয়মে Sinistrally এবং Dextrally উভয় দিকে প্রসারিত হয় ।
৯. টুইল উইভ দ্বারা প্রস্তুতকৃত কাপড়ের ব্যবহার বহুবিধ।
টুইল উইভের শ্রেণি বিভাগ (Classification of Twill weave) -
টুইল উইভকে বিভিন্নভাবে শ্রেণি বিভাগ করা যায়:
১. টুইল দিকের উপর নির্ভর করে টুইল উইভকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
ক. জেড টুইন্স (Z - Twill)
খ. এস টুইল (S - Twill)
২. টুইল রেখার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে টুইল উইভকে চারভাগে ভাগ করা যায়:-
ক. ওয়ার্স টুইল (warp twill)
খ. ওয়েফট টুইল (Weft twill)
গ. এক্সপ্যান্ডেড টুইল (Expanded twill)
ঘ. মালটিপল টুইল (Muliple twill)
এক্সপ্যান্ডেড টুইল (Expanded Twill) এবং মালটিপল টুইল (Muliple Twill)
৩. টুইল ডিজাইনে সুতা ভাসার উপর ভিত্তি করে টুইল উইভকে তিনভাগে ভাগ করা যায়
ক. ওয়ার্প ফেইসড্ টুইল (Warp faced Twill)
খ. ওয়েফট ফেইসড্ টুইল (Weft faced Twill)
গ. ডাবল ফেইসড্ টুইল (Double faced Twill)
টুইল উইডের ডেরিভেটিভসমূহ (Derivatives of Twill weave)
টুইল উইভের মূল নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত ডেরিভেটিভসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো ।
১. জিগজ্যাগ, ওয়েভড়, পয়েন্টেড টুইল (Zigzag, Waved, Pointed, Twill)
২. হেরিংবোন টুইল (Herrinbone Twill)
৩. ডায়মন্ড ডিজাইন (Diamond design)
৪. ডায়পার ডিজাইন (Diaper design)
৫. ব্রোকেন টুইল (Broken Twill)
৬. স্টেপড টুইল (Sepped Twill)
৭. ট্রান্সপোজড বা রি-অ্যারেঞ্জ টুইল (Transposed or Re-arranged Twill)
৮. ইলংগেটেড টুইল (Elongated Twill)
৯. শেডেড টুইল (Shaded Twill)
১০. কার্ভড টুইল (Curved Twill)
১১. কম্বাইন্ড টুইল (Combined Twill)
১২. ডয়াগোনাল টুইল (Diagonal Twill)
টুইল কাপড়ের মান (Quality of Twill Fabric)
১. কাপড়ের মূল্য অনেক বেশি।
২. কাপড়ের শক্তি তুলনামূলক বেশি।
৩. কাপড়টি খাপি অথচ টেকসই হয়।
৪. কাপড় অত্যাধিক ভারী ও শক্ত হয়।
৫. টুইল কাপড় তুলনামূলক মসৃণ ।
৬. ইঞ্চি প্রতি টানা ও পড়েন সুতা বেশি থাকার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।
৭. বর্তমান বিশ্বে চাহিদা অনেক বেশি ।
৮. একদিকে রঙিন ও অন্যদিকে সাদা সুতা দ্বারা টুইল কাপড়ে বৈচিত্র্য আনা যায় ।
৯. টানায় নীল ও পড়েনে সাদা সুতা দ্বারা ডেনিম কাপড় বুনন করা যায় ।
১০. টুইল ডিজাইন দ্বারা বিভিন্ন ধরনের টাওয়েল বা গামছাও তৈরি করা যায় ।
১১. টুইল ডিজাইন দ্বারা গ্যাবার্ডিন ও গ্যাবার্ডিন ফ্লানেলও তৈরি করা হয় ।
১২. উৎপাদিত কাপড়ের কখনও কখনও উভয় পার্শ্ব ব্যবহার করা চলে।
১৩. টুইল কাপড় খুব দৃঢ় হয় ।
১৪. টুইস্ট এর ধরন এবং টুইল লাইনের উপর টুইল কাপড়ের বৈচিত্র্য অনেকাংশে নির্ভরশীল ।
টুইল উইভের ব্যবহার
০ সাটিং, স্যুটিং
০ ফার্নিশিং ক্লথ
০ বিছানার চাঁদর
০ গ্যাবার্ডিন জাতীয় কাপড়
০ বিভিন্ন পোশাকের ইন্টারলাইমিং
০ ডেনিম, ড্রিল ক্লথ, মিলিটারি বা চৌকিদারি পোশাক, ইত্যাদি ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. টুইল উইভ বলতে কী বুঝায়?
২. টুইল উইভের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী লেখ?
৩. টুইল উইভের ক্ষুদ্রতম ডিজাইন কত ঘরে লেখ?
৪. ওয়ার্প টুইল কী?
৫. সর্বনিম্ন কতটি ঝাপে টুইল প্রস্তুত করা হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. টুইল উইভের শ্রেণি বিভাগ কর?
২. টুইল উইভের ডেরিভেটিভসমূহের নাম লেখ?
৩. টুইল উইভের ক্ষেত্রে প্রধানত কি ধরনের ড্রাফ্ট ব্যবহার হয়ে থাকে?
৪. টুইল উইভের ডিজাইনে সুতা ভাসার উপর ভিত্তি করে টুইল উইভকে কত ভাগে ভাগ করা যায় তার নাম লেখ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। টুইল উইভের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর?
২। টুইল উইভের ডেরিভেটিভসমূহের নাম লেখ ও যে কোন এক প্রকার চিত্রসহ বর্ণনা কর?
৩। টুইল কাপড়ের মান ( Quality of Twill fabric) বর্ণনা দাও?
৪.মুডে ১০ x ১০ ঘরে একটি টুইল ডিজাইন আঁক এবং রিপিট চিহ্নিত কর?
৫. মুডে ১২ × ১২ ঘরে একটি টুইল ডিজাইন কর?
স্কাওয়ারিং (Scouring)
কাপড় থেকে অপদ্রব্য যেমন- তেল, চর্বি, মোম ও সাইজিং এর সময় ব্যবহার স্টার্চ বাদে অন্যান্য উপাদান সহ রাসায়নিক দ্রব্য দূর করাই স্কাওয়ারিং এর কাজ। প্রকৃতপক্ষে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে প্রাকৃতিক এবং যোগকৃত অপদ্রব্য দূর করা, কাপড়ের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ ব্লিচিং, ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং প্রসেসের জন্য উপযোগী করে তৈরি করাই স্কাওয়ারিং ওয়েট প্রসেসের উদ্দেশ্য। সর্বোপরি স্কাওয়ারিং-এর পর কাপড় পরিস্কার হয়, পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর উপযোগী হয় ।
স্কাওয়ারিং এর সংজ্ঞা (Scouring)
যে প্রক্রিয়ায় অ্যালকালি অথবা ডিটারজেন্ট যোগে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে তেল, চর্বি, মোম ও অপদ্রব্য দূর করা হয় এবং টেক্সটাইল দ্রব্যাদিকে পরিষ্কার ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় তাকে স্কাওয়ারিং বলে ।
স্কাওয়ারিং এর উদ্দেশ্য (Objectives of Scouring)
• টেক্সটাইল দ্রব্যাদি হতে প্রাকৃতিক ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা ।
০ টেক্সটাইল দ্রব্যের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
০ অ্যালকালি সহযোগে কাপড়কে পরিষ্কার করা।
০ পরবর্তী প্রক্রিয়ার অর্থাৎ ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর জন্য কাপড়কে উপযোগী করে তোলা।
স্কাওয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা
১. টেক্সটাইল দ্রব্য হতে প্রাকৃতিক এবং যোগকৃত তেল, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা ।
২. টেক্সটাইল দ্রব্যের পানি পছন্দ করার বৈশিষ্ট্য দান করা ।
৩. টেক্সটাইল দ্রব্যের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি অপরিবর্তিত রেখে তার শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ।
৪. ব্লিচিং প্রক্রিয়ার সাহায্যে প্রাকৃতিক রং দূর করার ক্ষেত্রে কাপড়কে উপযোগী করে তোলা ।
৫. অ্যালকালি সহযোগে কাপড়কে পরিষ্কার করা।
৬. সেলুলোজের কোন ক্ষতি না করে নন সেলুলোজিক পদার্থ দূর করা ।
৭. কাপড়কে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করা যাতে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে কেমিক্যালের সাশ্রয় হয় ও উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করে।
৮. পরবর্তী ব্লিচিং, ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিসিং এর জন্য কাপড়কে উপযোগী করে তোলা অর্থাৎ স্কাওয়ারিং দ্বারা কাপড়ের ডাইং, প্রিন্টিং এর কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
ক্ষাওয়ারিং এর উপাদান
০ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড
০ ইমালসিফাইং এজেন্ট
০ ডিটারজেন্ট
০ ওয়েটিং এজেন্ট ।
স্কাওয়ারিং পদ্ধতি (Process of Scouring)
সাধারণত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করে স্কাওয়ারিং এর কাজ সম্পন্ন করা হয়।
১. স্যাপনিফিকেশন (Saponificaion)
২. ইমালসিফিকেশন (Emulsificaion)
৩. ডিটারজেন্সি (Detergency )
বর্ণনা
স্যাপনিফিকেশন (Saponification)
উদ্ভিজ তেল, প্রাণীজ এবং খনিজ তেল পানিতে দ্রবণীয় নয়। কেননা তেল ও পানি একে অপরকে পছন্দ করে না। কাপড়ের সাইজিং দ্রব্যাদির মধ্যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে ফলে কাপড় পানি অপছন্দকারী স্বভাবের হয়। অর্থাৎ কাপড়কে পানিতে ভিজালেও তার ফাইবারের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে না। তেল কাপড়কে পানিতে ভিজতে বাঁধা প্রদান করে । যা পরবর্তী প্রসেসে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি করে । এ অবস্থায় কাপড় থেকে তেল জাতীয় পদার্থ দূর করার প্রয়োজন হয় ।
তেলকে পানিতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্বারা তাপ দিলে ফ্যাটি অ্যাসিড অর্থাৎ স্টিয়ারিক অ্যাসিড ও গ্লিসারিন পাওয়া যায়। গ্লিসারিন দ্রবণীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়ায় তার সোডিয়াম লবণ অর্থাৎ সাবান তৈরি করে যা পানিতে দ্রবণীয় এ বিক্রিয়াকে স্যাপনোফিকেশন বলে। ফলে পানিতে অদ্রবণীয় তেল দ্রবণীয় বস্তুতে পরিণত হয়।
ইমালসিফিকেশন (Emulsification )
সাইজিং দ্রব্যের মোম ও খনিজ তেল স্যাপনিফিকেশন দ্বারা দূর করা যায় না। মোম হল উচ্চতর ফ্যাটি অ্যালকোহল এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের এস্টার। এই মোম এবং খনিজ তেল ইমালসিফিকেশনের মাধ্যমে দূর করা হয়। ইমালসিফাইং এজেন্ট এর সাহায্যে পানিতে স্থিরভাবে ছড়ানো-ছিটানো দ্রব্য ( অপদ্রব্য) পৃথক করাকেই ইমালসিফাইং বলে। এ প্রসেস কটন সাওয়ারিং এর সময় ব্যবহার করা হয়। যেখানে নন স্যাপনিফায়াবল তেল এবং মোমকে ইমালসিফাইং এজেন্টের মাধ্যমে দূর করে। সাধারণত সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ওয়েটিং এজেন্টের সাথে সাবানই (ওয়াশিং সাবান) হলো ভালো ইমালসিফাইং ।
ডিটারজেন্সি (Detergency )
স্যাপনিফিকেশনের সাহায্যে উদ্ভিদ তেল এবং ইমালসিফাইং এর মাধ্যমে মোম ও খনিজ তেল দূর করার পরও কাপড়ে সাইজিং দ্রব্য হিসেবে চায়না ক্লে ও অন্যান্য শক্ত অপদ্রব্য যার মধ্যে ডাস্ট ও জট থাকে তা দূর করার প্রয়োজন হয় । তেল, খনিজ তেল এবং মোম দূর হওয়ার পর এ সমস্ত বাইন্ডিং দ্রব্যাদি লুজ হয়ে পড়ে এবং তা উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োগে কাপড় হতে অপসারিত হয় । কাপড় পরিত্যাগ করে তা স্কাওয়ারিং দ্রবণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এবং পুনরায় কাপড়ের অন্য অংশে জমা হয়। এ ধরনের অপদ্রব্য পূনরায় জমা হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য স্কাওয়ারিং দ্রবণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়। যা এ ধরনের শক্ত পার্টিকেলকে কাপড়ের পৃষ্ঠে জমা হতে বাধা দেয়। সাবান হলো একটি উৎকৃষ্ট ডিটারজেন্ট ।
একটি ভালো ডিটারজেন্ট অবশ্যই একটি ভালো ওয়েটিং এজেন্ট । যদি কিয়ার বয়লারে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় তবে অন্য কোন ওয়েটিং এজেন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। সুতারাং কাওয়ারিং এর সময় যথাযথ ডিটারজেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্কাওয়ারিং পদ্ধতির বর্ণনা
বর্তমানে স্কাওয়ারিং করার জন্য বহু উন্নতমানের মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। স্কাওয়ারিং এর মূল উপাদান হলো অ্যালকালি । সুতরাং অ্যালকালি দ্বারা তিনভাবে কাওয়ারিং পদ্ধতি বিবেচনা করা যেতে পারে ।
১। লাইম অ্যাসিড সোডা অ্যাস পদ্ধতি (Lime acid soda ash process)
২। কস্টিক সোডা পদ্ধতি (Causic soda process)
৩। সাবান সোডা অ্যাস ট্রিটমেন্ট ফর কালার শুভস্ (Soap soda ash treatment for colour goods)
১। লাইম অ্যাসিড সোডা অ্যাস পদ্ধতি (Lime acid soda ash process )
এ পদ্ধতিতে কাপড়কে ২-৪% মিল্ক অব লাইম (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) দ্রবণে ডুবানো হয়। তারপর কিয়ারে প্রচুর ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সান্নিধ্যে কাপড়কে ২০ পাউন্ড /বর্গ ইঞ্চি চাপ এবং ১২৫° সে. তাপমাত্রায় কয়েক ঘণ্টা বয়েলিং করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত স্যাপনিফিয়াবল তেল ও মোম অপদ্রবর্ণীয় ক্যালসিয়াম সাবানে পরিবর্তিত না হয়। পেকটোসেস এবং পেকটিন অ্যাসিডে হাইড্রোক্সাইড হয়ে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম পেকটেড আকারে থাকে। প্রোটিন ও অ্যামিনো যৌগ হাইড্রোক্সাইড হয়ে দ্রবীভূত হয়। কাপড়কে ধৌত করে এ সমস্ত দ্রবণীয় অপদ্রব্য দূর করা হয় । তারপর কাপড়কে ২০° w টোয়াডেল হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দ্রবণে পাইল করে রাখা হয় । ক্যালসিয়াম সাবান ও পেকটেড দ্রবণীয় ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড পরিবর্তিত হয় এবং মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ও পেকটিক অ্যাসিড এবং দ্রবণীয় পদার্থগুলো ধৌত করে দূর করা হয়। পরবর্তীতে কাপড়কে রেজিন সাবানের উপস্থিতিতে সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণ দ্বারা উত্তপ্ত করা হয় । এ বয়েন্সিং প্রক্রিয়ার ফ্যাটি অ্যাসিড এ পেকটিক অ্যাসিড উভয় দ্রুত সোডিয়াম কার্বনেট দ্বারা দ্রবীভূত হয় যা সহজে ধৌত করে দূর করা যায় ।
২। কস্টিক সোডা পদ্ধতি (Caustic soda process)
স্কাওয়ারিং সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ডিসকন্টিনিউয়াস প্রসেসে কস্টিক সোডাকে মূল স্কাওয়ারিং কেমিক্যাল হিসেবে ব্যবহার করে কিয়ার বয়লার নামক যন্ত্র দ্বারা কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করা হয় । কিয়ার হলো কাস্ট আয়রন বা স্টেইনলেস স্টিলের একটি বিশেষ ধরনের পাত্র। যার ক্ষমতা ৫০০ পাউন্ড থেকে ৫ টন পর্যন্ত, তবে ৩ টন ক্ষমতা সম্পন্ন কিয়ার বেশি ব্যবহার হয়। এ যন্ত্রে কাপড়ের ওজনের শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবনে কটন কাপড় বরেল করলে কাপড়ের ভিতরের অপদ্রব্য দূর হয়ে যায় ।
এছাড়া কস্টিক সোডা স্কাওয়ারিং কেমিক্যাল হিসেবে ব্যবহার করে কন্টিনিউয়াস পদ্ধতিতে এ কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করা হয়। এর মধ্যে জে-বক্স ও ভ্যাপার লক পদ্ধতি অন্যতম জে বক্স মেশিন দেখতে ইংরেজি 'J' অক্ষরের মতো। এটি স্টেইনলেস স্টীল বা সিরামিকের তৈরি বিশেষ ধরনের পাত্র বিশেষ। যার প্রতি দিনের উৎপাদন প্রায় ৪০ টন। এ জে- বক্সে কাপড়ের ওজনের শতকরা ৫ থেকে ৯ ভাগ কস্টিক সোডা ব্যবহার করে কটন কাপড় স্কাওয়ারিং করে অপদ্রব্য দূর করা হয় । ভ্যাপার লক পদ্ধতি একটি আধুনিক স্কাওয়ারিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অত্যন্ত কম সময়ে কটন কাপড়কে তার ওজনের শতকরা ৫ থেকে ৯ ভাগ কস্টিক সোডা ব্যবহার করে স্কাওয়ারিং করা হয়।
৩। সাবান সোডা অ্যাস ট্রিটমেন্ট ফর কালার গুডস্ (Soap soda ash treatment for colour goods)
কালারড ওভেন কাপড়ের স্কাওয়ারিং এর জন্য আধুনিক পদ্ধতি হলো সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণ দ্বারা স্কাওয়ারিং। এতে সাধারণত কাপড়ের ওজনের শতকরা ২.৫ ভাগ সোডিয়াম কার্বনেট ব্যবহার করা হয় । অথবা সাবান দ্বারা বা সোডিয়াম কার্বনেট ও সাবান মিশ্রিত দ্রবণ দ্বারা ও উইনচ্ মেশিন ওপেন কিয়ারে কম চাপে স্কাওয়ারিং করা হয় ।
কিছু কিছু কাপড়ে সাদা সুতার সাথে টানা ও পড়েন রঙিন সুতা ব্যবহার করা হয়। আর এ জন্য কাপড়ে রঙিন ডিজাইন তৈরি হয় । এ ধরনের বুননকৃত কাপড়ে স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং প্রয়োজন হয়। কেননা বুননের সময় কাপড়ে বা সুতার ময়লা অপদ্রব্য, তেল বা মেশিনের দাগ লাগতে পারে না। এ ধরনের কালারড সুতার রং নির্বাচনে সীমাবন্ধতা রয়েছে।
স্কাওয়ারিং (Scouring)
কাপড়কে অ্যালকালি দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে পানি দ্বারা ওয়াশ করার পরও পুরোপুরি অ্যালকালি মুক্ত হয় না, যা পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর। কাজেই স্কাওয়ারিং পদ্ধতির থেকে যাওয়া অ্যালকালি দূর করার জন্য বা কাপড়কে প্রশমিত (Neutralisation) করার জন্য পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI) বা পাতলা সালফিউরিক এসিড (H2SO4) দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতিকে সাওয়ারিং বলে।
ব্লিচিং (Bleaching)
ডিসাইজিং ও স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে কাপড় হতে স্টার্চ জাতীয় পদার্থ, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা হয় এবং কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু কাপড়ে টেক্সটাইল নিজস্ব রং অর্থাৎ প্রাকৃতিক রং পূর্ববর্তী পদ্ধতিতে দূর হয় না, যা দূর করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে। রিচিং এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে কাপড়ের প্রাকৃতিক রং (Natural colour) দূর করে ধবধবে সাদা করা হয়। যাতে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় । তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন অতিরিক্ত ব্লিচিং না হয়ে যায় । অতিরিক্ত ব্লিচিং কাপড়ের সেলুলোজকে ভেঙ্গে দেয় অর্থাৎ কাপড়কে দুর্বল করে ফেলে। ফলে কাপড় টেকসই হয় না এমনকি নষ্ট (Damage) হয়ে যেতে পারে ।
ব্লিচিং এর সংজ্ঞা (Definition of Bleaching )
যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করে ধবধবে সাদা করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে।
ব্লিচিং এর উদ্দেশ্য (Objectives of Bleaching)
১. কাপড় হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করা।
২. কাপড়কে স্থায়ী ধবধবে সাদা করা।
৩. কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা অধিক বৃদ্ধি করা।
৪. পরবর্তী প্রক্রিয়া যেমন- ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিসিং এর উপযোগী করে তৈরি করা।
ব্লিচিং এর প্রকারভেদ (Classification of Bleaching )
ব্লিচিং সাধারণত দুই প্রকার। যথা-
১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching)
২। মেশিন ব্লিচিং (Machine Bleaching)
ব্লিচিং (Bleaching) এজেন্ট এর উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১। অক্সিডাইজিং এজেন্ট দ্বারা ব্লিচিং (Bleaching by Oxidizing Agent )
২। রিডিউসিং এজেন্ট দ্বারা ব্লিচিং (Bleaching by Reducing Agent)
রাসায়নিক ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়-
১। হাইপোক্লোরাইড ব্লিচিং (OCl Bleaching)
২। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্লিচিং ( H2O2 Bleaching)
৩। সোডিয়াম ক্লোরেট ব্লিচিং (NaClO, Bleaching )
অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট এর তালিকা (List of Oxidizing Bleaching Agent )
০ ক্লোরিন গ্যাস (CH2)
০ ওজন (O3)
o হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H2O2)
০ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড (NaOCl)
০ ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইড [Ca(OCl)2]
০ ব্লিচিং পাউডার [Ca(OCl)Cl ]
০ সোডিয়াম পার অক্সাইড (Na2O2)
০ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4)
০ সোডিয়াম ডাইক্রোমেট (Na2Cr2O7)
০ পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (K2Cr2O7)
০ পটাসিয়াম ক্লোরেট (KCIO3)
রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট (List of Reducing Bleaching Agent)
০ হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S)
০ সালফারডাই অক্সাইড (SO2)
০ সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4)
০ ফেরাস সালফেট (FeSO4)
০ টিটেনাস ক্লোরাইড (iCl2 )
০ স্টেনাস ক্লোরাইড (SnCl2 )
০ হাইড্রোজেন (H2)
০ কার্বন (C)
০ কার্বন মনোক্সাইড (CO)
০ জিঙ্ক ডাস্ট (Zn)
ব্লিচিং এর পদ্ধতি -
ব্রিচিং সাধারণত দুই ধরনের। যথা-
১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching)
২। মেশিন ব্লিচিং (Machine Bleaching)
১। হ্যান্ড ব্লিচিং (Hand Bleaching ) ।
কোন প্রকার মেশিন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছাড়া যদি হাতের সাহায্যে খোলা বা ঢাকনাসহ পাত্রে কাপড় বা সুতাকে ব্লিচিং করা হয় তবে তাকে হ্যান্ড ব্লিচিং বলে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের পূর্বে এ ধরনের হ্যান্ড ব্লিচিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। বর্তমানে হ্যান্ড লুমে বা ক্ষুদ্র আকারের ডাইং, প্রিন্টিং এবং টেক্সটাইল সাদৃশ্য শিল্পে অর্থাৎ যেখানে ছোট আকারের (Small scale) সুতা বা কাপড় ব্লিচিং এর প্রয়োজন হয় সে সব ক্ষেত্রে হ্যান্ড ব্লিচিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে ব্লিচিং প্রক্রিয়া মেশিনের মতো নিখুঁত হয় না। হ্যান্ড ব্লিচিং প্রক্রিয়া বিশেষ করে কটনের ক্ষেত্রে সাধারণত সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড, ব্লিচিং পাউডার এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে দাম বেশি থাকার জন্য সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডে বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিরেকে ব্যবহার হয় না। ব্লিচিং পাউডার এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইড হ্যান্ড ব্লিচিং এ অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়।
প্রথমে অল্প পানিতে ভালোভাবে ব্লিচিং পাউডার মিশানো হয়। এরপর আস্তে আস্তে পানি যোগ করে একে ছেকে পরিস্কার অংশটুকু ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ হিসেবে লওয়া হয়। কটন ব্লিচিং এর জন্য সাধারণত ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ ২ থেকে ৩ ডিগ্রি টোরাডেল নিতে হয়। ব্লিচিং এর দ্রবণ ২০ থেকে ২৫° সে. তাপমাত্রায় করা ভালো। ব্লিচিং করার সময় সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় করা হয়। তবে খারাপ ধরনের কটন ব্লিচিং এর জন্য কখনও কখনও দ্রবণ সামান্য গরম করা হয়ে থাকে। ব্লিচিং পাত্রে কটন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় ডুবিয়ে রাখতে হয় । তবে এ সময় মাঝে মাঝে কটন উল্টিয়ে দিতে হয়। ব্লিচিং এর সময় কটন যাতে সম্পূর্ণরূপে দ্রবণে ডুবে থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় বায়ুর অক্সিজেন কটনকে অত্যধিক নরম করে ফেলবে।
ব্লিচিং ক্রিয়া শেষ হলে কটনে যথেষ্ট পরিমাণ চুন জাতীয় পদার্থ থাকে যা পানিতে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় পাতলা অ্যাসিড দ্রবণে ধৌত করা হলেই চুন জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াকে সাওয়ারিং বলে।
এসিড ক্রিয়ার পর কটনকে ঠান্ডা পানিতে ধৌত করা হয়। ফলে কটন থেকে অ্যাসিড দূরীভূত হয়। এ প্রক্রিয়ায় দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন অন্যথায় কটনে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২। মেশিন ব্লিচিং ( Machine Bleaching)
বর্তমানে ব্লিচিং করার জন্য অনেক উন্নত এবং আধুনিক মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। এসব মেশিন দ্বারা অত্যন্ত কম সময়ে সহজেই ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। তবে এটি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন ব্যবহার করা হয় না। এ আধুনিক ব্লিচিং মেশিন দ্বারা একদিকে যেমন কম সময়ে উৎপাদন দেওয়া যায় অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় নিখুঁত ব্লিচিং করা যায়। তবে এ ধরনের মেশিনে তাপমাত্রা, সময় ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ক্ষতিও হতে পারে।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. স্কাওয়ারিং কী?
২. স্কাওয়ারিং পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কী?
৩. স্কাওয়ারিং এ ব্যবহার মূল কেমিক্যালের নাম কী লেখ?
৪. স্যাপনিফিকেশন বলতে কী বুঝায়?
৫. ব্লিচিং প্রক্রিয়ায় কাপড় থেকে কি দূর করা হয়?
৬. ব্লিচিং এর প্রকারভেদ লেখ?
৭. তিনটি রিডিউসিং এজেন্ট এর নাম লেখ?
৮. সাওয়ারিং এর সংজ্ঞা দাও?
৯. ব্লিচিং এ ব্যবহার মূল কেমিক্যালের নাম লেখ?
১০. সাওয়ারিং এ ব্যবহার কেমিক্যালের নাম লেখ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. স্কাওয়ারিং এর উদ্দেশ্য লেখ?
২. যে কোন ৫টি অক্সিডাইজিং এজেন্টের নাম লেখ?
৩. সাওয়ারিং এর জন্য কেমিক্যালস্ ব্যবহার করা হয় তার নাম লেখ?
৪. ব্লিচিং এর উদ্দেশ্য কি?
৫. গ্রে কাপড় থেকে তেল, চর্বি, মোম ও অপদ্রব্য দূর করার জন্য টেক্সটাইলের কোন প্রসেস ব্যবহার করা হয় এবং তাতে কি উপকার হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। স্কাওয়ারিং এর সংজ্ঞাসহ প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?
২। হ্যান্ড ব্লিচিং ও মেশিন ব্লিচিং এর পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর?
৩। যে কোন এক প্রকার স্কাওয়ারিং পদ্ধতির বর্ণনা দাও?
৪ । কটন কাপড় ব্লিচিং পদ্ধতির আলোচনা কর?
৫। স্কাওয়ারিং এবং ব্লিচিং এর মাধ্যমে কাপড়ের কী কী গুণ বৃদ্ধি পায় তা আলোচনা কর?
ডাইং হচ্ছে টেক্সটাইল সামগ্রীকে পরিকল্পনা অনুযায়ী রং করা এবং সে রং ফুটিয়ে তুলতে এক বা একাধিক বর্ণের সমাহারও হতে পারে । ডাইং বিভিন্ন সেডে হতে পারে এবং ফাইবারের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন কাপড়ে বিভিন্ন ডাইং হয়ে থাকে।
ডাইং এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা টেক্সটাইল সামগ্রীর বাহ্যিক রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন সাধিত হয়। ডাইং পদ্ধতিতে টেক্সটাইল সামগ্রীর গুণাগুণের পরিবর্তনের ফলে বস্তুতে আলো আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর বস্তুটি রঙিন দেখায়।
এখানে টেক্সটাইল সামগ্রী বলতে আঁশ (Fibre), সুতা (Yarn) এবং কাপড় (Fabric) কে বুঝায় । ডাইং, কালার ও ডাই-এর সংজ্ঞা (Definition of Dyeing, Colour & Dye )
ডাইং (Dyeing)
যে প্রক্রিয়া দ্বারা ফাইবার, সুতা অথবা কাপড়ে অর্থাৎ টেক্সটাইল সামগ্রীর উপর রং প্রবেশের (পেনিট্রেশনের) মাধ্যমে বাহ্যিক ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন সাধন করে যা আপতিত আলো প্রতিফলনের ফলে রঙিন দেখায় সে পদ্ধতিকেই ডাইং (Dyeing) বলে।
ডাই (Dye)
যে সকল পদার্থের মধ্যে ক্রোমোফোর (Chromophore) অর্থাৎ রং বহনকারী অংশ ও অক্সোক্রম (Auxochrome) গ্রুপ অর্থাৎ দ্রবণীয় করার অংশ বিদ্যমান তাকে ডাই বলে। এর মধ্যে ক্রোমোফোর হলো কালার বহনকারী গ্রুপ অর্থাৎ এই গ্রুপ কোন পদার্থের অণুতে বিদ্যমান থাকলে সে পদার্থ যে কোনো কালার প্রকাশ করবে আবার অক্সোক্রম হলো উক্ত পদার্থের দ্রবণীয় অংশ অর্থাৎ অক্সোক্রম থাকার কারণে ডাই পানিতে বা অন্য কোন তরল পদার্থে দ্রবীভূত হয় ।
কাজেই ডাই হলো এমন একটি রঙিন পদার্থ যা পানি বা অন্য কোন তরল পদার্থ সহযোগে টেক্সটাইল সামগ্রীতে প্রয়োগ করলে বিভিন্ন ধরনের রঙিন সেডের সৃষ্টি হয় ।
কালার (Colour)
কালার হলো আলোর প্রতিফলিত রূপ বা এক প্রকার অনুভুতি । কোন বস্তুর উপর আলো আপতিত হলে বস্তুটি কিছু কিছু আলো শোষণ করে এবং কোন কোন আলো প্রতিফলিত করে। এ প্রতিফলিত আলো যখন মানব চোখ ৪২০°∈ মাইক্রোওয়েভ লেংথ (Lengh) এর মধ্যে আসে, তখন আমরা ঐ বস্তুকে প্রতিফলিত কালার রূপে দেখে থাকি। যদি বস্তুটি সম্পূর্ণ আলো প্রতিফলিত করে তখন সেটি সাদা দেখায়। অর্থাৎ বস্তুর মধ্যে আপতিত আলোর বিচ্ছুরণ, প্রতিসরণ ও প্রতিফলিত আলো দ্বারা সৃষ্ট এক বিশেষ ধরনের চাক্ষুস অনুভূতিই কালার ।
ডাইং এর উদ্দেশ্য (Objectives of Dyeing)
০ টেক্সটাইল সামগ্রীকে চাহিদা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অংশে সমানভাবে রং করা।
০ কাপড়ের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আকর্ষণীয় করে তোলা ।
০ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রিন্টিং এর পূর্বে সম্পূর্ণ কাপড়কে রং করে প্রিন্টিং এর উপযোগী করে তোলা ।
০ ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা ।
ডাই-এর শ্রেণি বিভাগ (Classification of Dye)
ডাইকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১. ডাইরেক্ট ডাই (Direct Dye)
২. বেসিক ডাই (Basic Dye)
৩. এসিড ডাই (Acid Dye)
৪. রিঅ্যাকটিভ ডাই (Reactive Dye)
৫. ডিসপার্স ডাই (Dispense Dye)
৬. ভ্যাট ডাই (Vat Dye)
৭. সালফার ডাই (Sulpher Dye)
৮. পিগমেন্ট ডাই (Pigment Dye )
৯. মরডান্ট ডাই (Mordant Dye )
১০. অ্যাজোইক ডাই (Azoic Dye )
১১. অ্যানিলিন ডাই (Aniline Dye )
১২. মিনারেল ডাই (Mineral Dye )
ডাইং মেশিন (Dyeing machine )
দুইটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ডাইং মেশিনের শ্রেণি বিভাগ করা হয়
ক) মেটারিয়াল টাইপ (Material type)
খ) মেটারিয়াল ও লিকার মুভমেন্ট (Material & Liquor movement )
মেটারিয়াল টাইপ এর উপর ভিত্তি করে ডাইং মেশিন প্রধানত ৪ প্রকার। যথা-
১. লুজ স্টক ফরম ডাইং মেশিন (Loose stock form dyeing machine )
২. হ্যাংক ফরম ডাইং মেশিন (Hank form dyeing machine )
৩. প্যাকেজ ফরম ডাইং মেশিন (Package form dyeing machine)
৪. ফেব্রিক ফরম ডাইং মেশিন (Fabric form dyeing machine )
ফেব্রিক ফরম এ ডাইং করার জন্য নিম্ন বর্ণিত শ্রেণির মেশিন রয়েছে।
১. জেড ডাইং মেশিন (Zet dyeing machine )
২. জিগার ডাইং মেশিন (Zigger dyeing machine)
৩. উইন্স ডাইং মেশিন (Winch dyeing machine)
৪. সলভেন্ট ডাইং মেশিন (Solvent dyeing machine )
৫. হাই প্রেসার ডাইং মেশিন (High pressure dyeing machine)
৬. প্যাড ডাইং মেশিন (Pad dyeing machine)
মেটারিয়াল ও লিকার মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে ডাইং মেশিন তিন প্রকার । যথা-
১. মেটারিয়াল মুভ (Material Move )
ক) জিগার ডাইং মেশিন (Zigger dyeing machine)
খ) উইন্স ডাইং মেশিন (Winch dyeing machine)
২. লিকার মুক্ত (Liquor Move )
ক) প্যাকেজ ডাইং মেশিন (Package dyeing machine)
খ) হ্যাঙ্ক ডাইং মেশিন (Hank dyeing machine )
৩. মেটারিয়াল ও লিকার মুভমেন্টের (Material and liquor movement )
ক) জেড ডাইং মেশিন (Zet dyeing machine)
কাপড় রং করার প্রয়োজনীয়তা
০ গ্রে রং বিহীন কাপড়কে রং করে এর উজ্জলতা বৃদ্ধি করা ।
০ বাহ্যিকভাবে কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ ও আকর্ষণীয় করা।
০ অভিজাতপূর্ণ রং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
০ ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রং বিহীন কাপড়কে রং করা ।
০ সর্বোপরি কাপড় রং করে রপ্তানী উপযোগী করা
বিভিন্ন ডাই-এর ধারণা
ডাইরেক্ট ডাই (Direct Dye )
যে সকল ডাই-এর ফাইবারের প্রতি সরাসরি আকর্ষণ আছে, সরাসরি প্রয়োগ করার জন্য কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই তাকে ডাইরেক্ট ডাই বলে।
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় প্রকার সেলুলোজ আঁশের প্রতি এ শ্রেণির ডাই-এর তীব্র আসক্তি ও রঞ্জন ক্ষমতা উল্লেখ করার মতো। কঠিন ও বিভিন্ন ধরনের ফাইবার যেমন- ভিসকোস, কিপ্রোমোনিয়াম ইত্যাদি রং করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। কিন্তু সেলুলোজিক ফাইবারের প্রতি এ ডাই-এর আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। কাজেই কখনও কখনও এটাকে সাবস্ট্যান্টিভ ডাই (Substantive dye) বা ডাইরেক্ট কটন কালারও বলা হয়ে থাকে।
ডাইরেক্ট ডাই-এর বৈশিষ্ট্য
০ ডাইরেক্ট ডাই খুব সহজেই প্রয়োগ করা যায় এবং দামেও অনেক সস্তা ।
০ এটি পানিতে অদ্রবণীয়।
০ ফাইবারের প্রতি এর আসক্তি প্রবল।
o সাধারণত সেলুলোজিক ফাইবারের প্রতি এর প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রোটিন ফাইবার রং করতেও এটি ব্যবহার করা হয়।
০ আলোতেও ধৌত করলে এর রং ছেড়ে দেয় ।
০ পরিশেষে ক্রিয়া ( After treatment) ছাড়া এর রং পাকা হয় না।
০ ডাইরেক্ট ডাই এসিড ডাই-এর মতোই সালফোনিক বা কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণ ।
০ এ ডাই দ্বারা বিভিন্ন ধরনের কালার শেড তৈরি করা যায় ।
ডাইরেক্ট ডাই-এর শ্রেণি বিভাগ (Classification of Direct dye )
প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে ডাইরেক্ট ডাইকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়-
১। ক্লাস-এ : সেলফ লেভেলিং ডাইরেক্ট ডাই (Class- A: Self Leveling Direct Dye )
২। ক্লাস-বি : সেলফ কন্ট্রোলেবল ডাইরেক্ট ডাই (Class B Self Controllable Direct Dye)
৩। ক্লাস-সি : তাপমাত্রা কন্ট্রোলেবল ডাইরেক্ট ডাই (Class - C : temperaure Controllable Direct Dye)
ডাইরেক্ট ডাই-এর বর্ণনা -
১। ক্লাস-এ : সেলফ লেভেলিং ডাইরেক্ট ডাই (Class - A: Self Leveling Direct Dye )
এ ক্লাসের ডাই-এর খুব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লেভেলিং ক্ষমতা আছে। কোন প্রকার লেভেলিং এজেন্ট ছাড়াই এ শ্রেণির ডাই-এর ফাইবারের স্থানান্তর বা পক্রিমণ করা সম্ভব।
২। ক্লাস-বি সেলফ কন্ট্রোলেবল ডাইরেক্ট ডাই ( Class- A Self Controllable Direct Dye )
ক্লাস-এ এর ন্যায় এ শ্রেণির ডাই-এর লেভেলিং ক্ষমতা নেই বিধায় এগুলোর লেভেলিং ক্ষমতা মোটামুটি নিম্ন পর্যায়ে । তবে লবণ ব্যবহারের মাধ্যমে এ শ্রেণির ডাই-এর শোষণ ক্ষমতা ও লেভেলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় ।
৩। ক্লাস-সি : তাপমাত্রা কন্ট্রোলেবল ডাইরেক্ট ডাই ( Class-C : temperature Controllable Direct Dye) -
শ্রেণি বি এর ন্যায় এ শ্রেণির ডাইগুলোরও লেভেলিং ক্ষমতা খুবই কম। কেবল লবণ দ্বারা এর শোষণ ক্ষমতা বা লেভেলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। লবণ ব্যবহারের পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ শ্রেণির ডাই-এর শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব ।
রং-করণ প্রণালি
প্রথমে যে ম্যাটারিয়ালসকে রং করতে হবে তার ওজন নিতে হবে। অভগর রেসিপি অনুযায়ী অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে পেস্ট তৈরি করা হয়। পেস্ট এর জন্য ব্যবহার পানি মোট ২০ গুণ পানি থেকেই নিতে হবে। পেস্ট তৈরির সময় ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করি। এখন রং এর ওজনের ১৫-২০% পানি নিয়ে স্টক দ্রবণ তৈরি করা হয় । অন্য দুইটি পাত্রে ৩% সোডা অ্যাস ও ২০% সোডিয়াম ক্লোরাইড এর দ্রবণ তৈরি করা হয় ।
এখন একটি বাথ-এ ম্যাটারিয়ালের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাশ দ্রবণ যোগ করে ৭০ - ৮০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করলে পানির খরতা দূর হয়। অতপর তাপমাত্রা ৮০° সে রেখে ডাই বাখে রং এর দ্রবণ যোগ করি। মেটারিয়ালকে ডাই বাথে নিয়ে ৩০ মিনিট ৮০-১০০ সে. তাপমাত্রায় নাড়াচাড়া করি । ডাই বাথে সোডিয়াম ক্লোরাইড যোগ করে আরও ৩০ মিনিট ম্যাটারিয়ালকে নাড়াচাড়া করি। পরিশেষে রং স্কুইজ করে প্রথমে গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি দ্বারা ধৌত (ওয়াশ করা হয় । এভাবেই কাপড়ে রং-করা সম্ভব।
রি-অ্যাকটিভ ডাই (Reactive dye )
রি-অ্যাকটিভ ডাই ফাইবারের সাথে কো-ভ্যালেন্ট লিংক সৃষ্টি করে ফাইবারের একটি অংশে পরিণত হয় । এ ধরনের ডাই মোলিকূলে কিছু রি-অ্যাকটিভ গ্রুপ আছে যা ফাইবারের ফাংশনাল গ্রুপ। যেমন সেলুলোজের (OH) গ্রুপ এবং প্রোটিন ফাইবারের (-NH2) গ্রুপের সাথে বিক্রিয়া করে। এজন্য এ সকল ডাইকে ফাইবার রি-অ্যাকটিভ ডাই বলা হয় ।
অতএব, যে ডাই ফাইবারের সঙ্গে কো-ভ্যালেন্ট লিংক সৃষ্টির মাধ্যমে ফাইবারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় তাকে রি-অ্যাকটিভ ডাই বলে ।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে অধিক পরিমাণে রি-অ্যাকটিভ ডাই ব্যবহার হচ্ছে। কারণ এ ডাই সহজে ব্যবহার যোগ্য, তুলনামূলক দামে সস্তা, বহু বিচিত্র বর্ণের পাওয়া যায় ও সকল প্রাকৃতিক ফাইবারে ব্যবহারযোগ্য। এছাড়া বর্ণের উজ্জ্বলতা ও স্থায়িত্ব ভালো।
রি-অ্যাকটিভ ডাই-এর গুণাবলি -
নিম্নে রি-অ্যাকটিভ ডাই-এর গুণাবলি আলোচনা করা হলো-
০ ডাই প্রসেসের সময় ডাই-এর রি-অ্যাকটিভ গ্রুপ ফাইবারের সঙ্গে কো-ভ্যালেন্ট বন্ড সৃষ্টি করে এবং ফাইবারের একটি অংশ হিসেবে থেকে যায়
০ এর ওয়েট ফাস্টনেস ভালো । তবে এর মাত্রা কো-ড্যালেন্ট বন্ডের স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে ।
• তুলনামূলক এ ডাই-এর উজ্জ্বলতা ও রাবিং ফাস্টনেস ভালো ।
০ এটি পানিতে দ্রবণীয়।
০ এটি সাধারণত সেলুলোজিক ও প্রোটিন ফাইবারকে ডাই করার জন্য ব্যবহার হয়।
০ ডাইং প্রসেস সাধারণত অ্যালকালি মিডিয়ামে করা হয়।
০ এ ডাই দ্বারা সব ধরনের সেড পাওয়া যায়।
০ এ ডাই দামে মোটামুটি সন্তা।
O এ ডাই-এর প্রয়োগ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ।
০ এ ডাই রি-জেনারেটেড সেলুলোজ ফাইবারকে ডাই করা যায় ।
o গ্যাস ফেডিং এবং ড্রাই ক্লিনিং এ ডাই-এর কোন ক্ষতি হয় না।
বর্ণনা
যে কাপড়কে রং করতে হবে তার ওজনের ১-৫% রং নিয়ে অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি যোগ করে প্রথমে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট এ ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০ গুণ পরিমাণ পানি দিয়ে ডাই-এর দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে । আলাদা দুইটি পাত্রে ২-৩% সোডা এ্যাশ ও ২০% লবণের দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে।
অতপর ডাই বাথে কাপড়ের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাস দ্রবণ যোগ করে ৭০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। ফলে পানির খরতা দূর হয়। বাথ এর তাপমাত্রা ৮০° সে. এ উঠানোর পর রং-এর দ্রবণ ও কাপড় দেয়া হয় এবং ৩০ মিনিট যাবৎ ক্রিয়া করা হয়। বাধের তাপমাত্রা ৯০-১০০° সে. পর্যন্ত উঠানোর পর লবণের দ্রবণ আস্তে আস্তে যোগ করা হয় এবং ৩০ মিনিট নাড়াচাড়া শেষে স্কুইজ করে অতিরিক্ত রং ফেলে দেওয়া হয় । অতপর প্রথমে গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি সহযোগে কাপড় ধোওয়া হয় ।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ডাই কী?
২. ডাই বলতে কী বুঝায়?
৩. কালারের সংজ্ঞা দাও?
৪. রি-অ্যাকটিভ ডাই কোন কোন ফাইবারের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়?
৫. যে কোন দুইটি রি-অ্যাকটিভ ডাই-এর বাণিজ্যিক নাম লেখ?
৬. রি-অ্যাকটিভ ডাই-এর সংজ্ঞা দাও?
৭. এসিড ডাই কোন ফাইবারের উপর প্রয়োগ করা হয়?
৮. রঙের কোন অংশ কালার বহনকারী?
৯. রংয়ের কোন অংশ দ্রবণীয় গুণ বহন করে?
১০. রি-অ্যাকটিভ ডাই ফাইবারের সাথে কী লিংক সৃষ্টি করে ফাইবারের অংশে পরিণত হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ডাইং এর উদ্দেশ্য লেখ?
২. ডাই-এর শ্রেণি বিভাগ কর?
৩. বিভিন্ন কাপড় বা আঁশে ব্যবহার ডাই-এর নাম লেখ?
৪. ডাই মেশিন সমূহের শ্রেণি বিভাগ কর?
৫. কাপড় রং করার প্রয়োজনীয়তা কি লেখ?
৬. রি-অ্যাকটিভ ডাই-এর গুণাবলি লেখ?
৭. কোন পদার্থকে কখন ডাই বলা যাবে না?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ডাইং ও প্রিন্টিং এর মধ্যে পার্থক্য লেখ?
২. যে কোন এক প্রকার ডাই সম্বন্ধে আলোচনা কর?
৩. ডাইরেক্ট ডাই দ্বারা কটন কাপড় রং-করণ প্রণালি বর্ণনা দাও?
৪. রি-অ্যাকটিভ ডাই দ্বারা কটন কাপড় রং-করণ প্রণালি বর্ণনা দাও?
১। পরীক্ষার নাম বিমের সুতা ঝাঁপের মধ্যে 'ব' গাঁথা।
ভূমিকা
বয়নের সময় ঝাঁপগুলি উপরে নিচে উঠানামা করে। প্রতিটি ঝাঁপে সকল 'ব' এর মাঝখানে একটি করে ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রসমূহকে 'ব' চক্ষু বলে। প্রতিটি 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে একটি করে সুতা প্রবেশ করানো হয়। 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে টানা সুতা প্রবেশ করার পদ্ধতিকে ড্রাফটিং বলে। ড্রাফটের মাধ্যমে ঝাঁপের সংখ্যা এবং টানা সুতাকে কোন ঝাঁপের মধ্যে ড্রাফটিং করা হবে তা নির্দিষ্ট করার উপর উৎপাদিত কাপড়ের ডিজাইন নির্ভর করে ।
সংজ্ঞা
'ব' গাথা বিম করা শেষ হলে টানা সুতার মাথাগুলো টেনে বের করে ডিজাইন অনুযায়ী একটি একটি করে বিমের সুতা ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের সাহায্যে টানতে হয়। 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ওয়ার্প সুতাকে টানার পদ্ধতিকে 'ব' গাঁথা বা ড্রাফটিং বলে ।
'ব' গাঁথার পদ্ধতি
প্লেইন উইভের ক্ষেত্রে সাধারণত দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় । টুইল উইভ এর ক্ষুদ্রতম ডিজাইন ৩x৩ অর্থাৎ ন্যূনতম ৩টি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়। নিমে ৩ ঝাঁপের টুইল ডিজাইন তৈরির জন্য পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো ।
৩x৩ টুইল ডিজাইনের জন্য ৩টি ঝাঁপের প্রয়োজন। প্রতিটি ঝাঁপের জন্য আলাদা আলাদা ট্রেডেল-এর প্রয়োজন । ৩টি ঝাঁপ বা ৩টি পিকের জন্য ৩টি ট্রেডেলের প্রয়োজন ।
প্রতি পিকে ২টি করে টানা সুতা উপরে ও ১টি করে টানা সুতা নিচে রাখতে হলে ঝাঁপ অর্থাৎ হিল্ড মাউন্টিং করার জন্য প্রথম ঝাঁপটি প্রথম ট্রেডেলের সাথে বাঁধতে হবে এবং ডিজাইনের প্রথম সুতাটি প্রথম ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর সাথে গাঁথতে হবে । অনুরূপভাবে দ্বিতীয় ঝাঁপটি দ্বিতীয় ট্রেডেলের সাথে ও দ্বিতীয় সুতাটি দ্বিতীয় ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর সাথে ড্রাফটিং করতে হবে । অনুরূপভাবে তৃতীয় ঝাঁপটি তৃতীয় ট্রেডেলের সাথে বাঁধতে হবে। আর বুননের সময় ২য় ঝাঁপটি প্রথম পিকে তৃতীয় ঝাঁপটি দ্বিতীয় পিকে এবং প্রথম ঝাঁপটি প্রথম পিকে পা দিয়ে চেপে ধরতে হবে ।
সতর্কতা
০ ডিজাইনকে সঠিক রাখার জন্য সঠিকভাবে ড্রাফটিং করতে হবে ।
০ ট্রেডেলকে চেপে ধরার সময় ভুল হলে ডিজাইন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
০ হস্তচালিত গতি বাড়ানোর জন্য তাঁতির কাজে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ।
২। পরীক্ষার নাম : শানার মধ্যে সুতা গাথা অর্থাৎ শানা গাঁথা ।
ভূমিকা
টানার সেডের মধ্যে পড়েন সুতা প্রবেশের পর উক্ত সুতাকে কাপড়ের পৃষ্ঠে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য যে বস্তুর সাহায্য নেওয়া হয় তাই শানা বা রিড। শানার ডেন্ট স্পিলিট এর ঘনত্বের উপরই কাপরের ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি জোড়া ডেন্ট এর ফাঁক দিয়ে দুইটি করে সুভা টানা হয়। বুননের সময় পড়েন সুতাকে উৎপন্ন কাপড়ের ফেল অফ দি ক্লথের পৃষ্ঠে মিশিয়ে দেওয়ার জন্যই এই পদ্ধতির প্রয়োজন । কাপড়ের গঠন সঠিক রাখার লক্ষ্যে সুতাকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য ডেন্টিং ভূমিকা পালন করে থাকে। অসম ডেন্টিং কাপড়ের ডিজাইনকে প্রভাবিত করে ।
সংজ্ঞা
ডেন্টিং যে পদ্ধতিতে শানার প্রতিটি ডেন্ট এর মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে ডিজাইন অনুযায়ী ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয় তাকে ডেন্টিং বা শালা গাঁথা বলে ।
শানা গাঁথা পদ্ধতি-
ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ওয়ার্থ সুতা প্রবেশ করার পর শানা বা রিডের ডেন্ট / স্পিলিট এর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে টেনে নিতে হয় । কটন উইভিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতি ডেন্টের মধ্য দিয়ে দুইটি করে সুতা টানা হয়। শানার দুই পার্শ্বে দুইজন শ্রমিক বসে একপাশ থেকে একজন দুইটি সুতা সনাক্ত করে অপর পার্শ্বের শ্রমিকের ডেন্টের মধ্যে প্রবেশ করানো ড্রইং হুকের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং দ্বিতীয় শ্রমিক ডেন্টের ফাঁকের মধ্য দিয়ে সুতা টেনে বের করে আনেন। এভাবে পুরো টানা সুতাকে ডেন্টিং করা হয় ।
সতর্কতা
০ ডেন্টিং করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রতিটি টানা সুতা সমান্তরালভাবে থাকে ।
০ কখনও অসম ডেন্টিং করা উচিত নয় ।
উপসংহার / মন্তব্য
৩। পরীক্ষার নাম : তাঁতের মধ্যে উইভারস্ বিম স্থাপন ।
ভূমিকা
প্রস্তুতকৃত উইভারস্ বিম 'ব' গাঁথা ও শানা পাঁথা সমাপ্ত হওয়ার পর তাঁতের মধ্যে স্থাপন করতে হয়। তাঁতে বিম, শানা ও ঝাঁপ স্থাপন করাকে মাউন্টিংও বলা হয়। তাঁতের পেছনে বিম স্ট্যান্ডে বিম স্থাপন, ঝাঁপ ও শানা মাউন্টিং করার পর তাঁত কাপড় তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়।
সংজ্ঞা
তাঁতে স্থাপনের পূর্বে টানা সুতা ওয়াইল্ডিং, ওয়ার্সিং, বিমিং, সাইজিং ইত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পর কাপড় তৈরির জন্য সমান্তরালভাবে জড়ানো বিমকেই উইভারস্ বিম বলা হয় ।
তাঁতের মধ্যে উইভারস্ বিন স্থাপন পদ্ধতি
হস্তচালিত তাঁতে বিম স্থাপন করার পদ্ধতির বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো-
প্রস্তুতকৃত বিম শানা ও ব গাঁথা অবস্থায় তুলে এনে তাঁতের পিছনে বিম স্ট্যান্ডে রাখা হয়। অতপর শানাকে দক্ষি এর সাথে শানার টুপি বা রিড ক্যাপ দ্বারা শক্ত করে আটকানো হয়। ঝাঁপগুলিও টপ রোলারের সাথে নির্দিষ্ট নিয়মে সঠিকভাবে বাঁধা হয় । রিড এর সাথে বাঁধা টানা সুতা খুলে খানিকটা আচড়িয়ে আরও কিছু সুতা বিম থেকে টেনে নিয়ে হাতের সাহায্যে টানা সুতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যা ক্লথ বিমে প্রস্থ বরাবর শক্ত করে পেছিয়ে বাঁধা হয়। এরপর সুতা দ্বারা অর্থাৎ লেট অফ ও কাপড় গুটানো গতি অর্থাৎ টেক আপ এর সমন্বয় করা হয়। এ অবস্থায় তাঁত কাপড় তৈরির জন্য প্রস্তুত হয় ।
সতর্কতা
০ লক্ষ রাখতে হবে টানা সুতা যেন পরস্পর সমান্তরালে থাকে । কখনও ক্রস বা কোনাকুনি না হয়ে যায় ।
০ টপ রোলারের সহিত ঝাঁপসমূহ ডিজাইন, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং স্থানের সাথে সমন্বয় করে বাঁধতে হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
৪। পরীক্ষার নাম : তাঁতে ঝাঁপ ও শানা বাঁধা
ভূমিকা
প্লেইন উইডের জন্য মাত্র দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় যা বাঁধা অত্যন্ত সহজ। কিন্তু টুইল বা অন্যান্য উইভের জন্য ঝাঁপ বাঁধা তুলনামূলক কঠিন। কারণ- ক্ষুদ্রতম টুইল ডিজাইনের জন্য ৩টি ঝাঁপের প্রয়োজন। রিড বা শানা স্নে অর্থাৎ দক্তির উপর রিড ক্যাপ দ্বারা আটকিয়ে বসানো হয়।
তাঁতে ঝাঁপ ও শানা বাঁধা পদ্ধতি
প্লেইন উইভের ক্ষেত্রে যেহেতু দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় কাজেই ঝাঁপ দুইটি টপ রোলারের দুই প্রান্তে চামড়ার স্ট্র্যাপ দ্বারা বাঁধা হয়। টপ রোলার এমনভাবে সামনে পিছনে ঘুরতে থাকে যাতে একটি ঝাঁপ উপরে এবং অপরটি ঝাঁপ নিচে নামবে। শানা বা রিড স্লে এর উপর স্থাপন করে রিড ক্যাপের মাধ্যমে নাট বোল্ট দ্বারা শক্তভাবে সে বা দক্তির সাথে আটকিয়ে রাখা হয়। পিকিং এর সময় স্লে সহ রিড বিটআপ দেয়।
সতর্কতা
০ রিড ক্যাপের সাথে আটকানোর সময় সতর্কতার সাথে আটকাতে হবে যাতে উৎপাদিত কাপড়ে রিড মার্ক সৃষ্টি না হয় ।
০ টপ রোলার বাঁধার সময় ট্রেডেলের সাথে সমন্বয় করে বাঁধতে হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
৫ । পরীক্ষার নাম : তাঁতের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে স্থাপন ।
ভূমিকা
হস্তচালিত অথবা শক্তিচালিত উভয় তাঁতই চালনা করার পূর্বে তাঁতের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং প্রতিটি অংশ সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে। যেমন- শাটেল বক্সে আছে কিনা, শাটেল এর মধ্যে সুতাপূর্ণ পার্ন ঠিক আছে কিনা, পিকার, পিকিং, স্ট্যাপ, ঝাঁপের পজিশন ইত্যাদি যথাযথ থাকার পরই তাঁত চালনা করা উচিত।
তাঁতের বিভিন্ন অংশ
o শাটেল
০ পিকার
০ চেক স্ট্র্যাপ এসেম্বলি
০ বাফার
০ সাটেল বক্স
o বক্স সুয়েল
0 ঝাঁপ
০ রিড
০ টেম্পল
০ দক্তি
০ লেট অফ
O টেক আপ
০ ট্যাপেট / ওয়াইপার ইত্যাদি
তাঁতের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে স্থাপন
ত্রুটিমুক্ত সঠিক উৎপাদন পেতে হলে এজন অভিজ্ঞ তাঁতি তাঁত চালনার পূর্বে তাঁতের উপরোক্ত সমস্ত অংশ যথাযথভাবে পরীক্ষা করে সঠিকভাবে স্থাপন করা আছে কিনা তা দেখে নেন। যদি কোন অংশ সঠিক না থাকে তা তাৎক্ষণাৎ ঠিক করে তবে তাঁত চালু করতে হবে। এখন তাঁত কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলো।
সতর্কতা -
০ তাঁতের প্রতিটি অংশ সঠিক না হলে তাঁত চালনা করা উচিত নয় ।
০ তাঁত চালনার পূর্বে অবশ্যই সব অংশ পরীক্ষা করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য -
৬। পরীক্ষার নাম : তাঁতের বিভিন্ন অংশ অংকন ।
ভূমিকা
একটি তাঁতের বিভিন্ন অংশ অংকনের মাধ্যমে উক্ত তাঁতের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সহজেই পরিচিতি লাভ করা সম্ভব ।
তাঁতের বিভিন্ন অংশ -
o শাটেল
০ শাটেল বক্স
o পিকার
০ ওয়ার্স বিম
o পা
০ ঝাঁপ বা হিল্ড শ্যাফট্
০ রিড বা শানা
০ টেম্পল
০ স্লে বা দক্তি ইত্যাদি
সতর্কতা ০ বারবার অংকনে ছবি নিখুঁত হয় । ০ অংকন করার জন্য কলমের বদলে পেন্সিল ও রাবার ব্যবহার করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য
৭। পরীক্ষার নাম হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বুনন
ভূমিকা
হস্তচালিত কাপড় বুননে একজন তাঁতির দক্ষতাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। তাঁতির দক্ষতার উপরই ত্রুটিমুক্ত কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বুনন পদ্ধতি-
কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা একজন তাঁতি তাঁতের গতি নিয়ন্ত্রণ ও তাঁত পরিচালনা করে কাপড় উৎপাদন করে থাকেন । তাঁত চালু অথবা থেমে থাকা উভয় সময়ই তাঁতি স্লে ক্যাপ অর্থাৎ দক্তির টুপির উপর হাত রেখে থাকেন। দক্তি সামনে টেনে আনা এবং পিছনে ঠেলে সরানোর মাধ্যমে বিট আপ কার্য সম্পাদন করে থাকেন। পা দ্বারা ট্রেডেল চেপে রেখে টানা সুতার মাঝে সেড গঠন করেন এবং অন্য হাত অর্থাৎ ডান হাত দ্বারা হাতল টেনে টেনে পিকিং কার্য সম্পাদন করেন। হাতলের সাথে রশিসহ মেড়া অর্থাৎ পিকার বাঁধা থাকে যা দ্বারা সাটেল এক বক্স থেকে অন্য বক্সে আসা যাওয়া করে।
সর্বোপরি পা দ্বারা সেডিং, ডান হাত দ্বারা পিকিং ও বা হাত দ্বারা বিটিং কার্য সম্পাদন করে একজন তাঁতি কাপড় উৎপাদন করে থাকেন ।
সতর্কতা
০ হস্তচালিত তাঁতে ত্রুটিযুক্ত কাপড় বোনার জন্য একজন তাঁতির মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ।
০ ত্রুটিমুক্ত ভালো কাপড়ের জন্য তাঁতির দক্ষতাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে ।
উপসংহার / মন্তব্য
৮ । পরীক্ষার নাম : আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে কাপড় বুনন
ভূমিকা
যে সকল তাঁত কায়িক পরিশ্রম অর্থাৎ মানব শক্তি দ্বারা চালিত হয় তাই হস্তচালিত তাঁত । হস্তচালিত তাঁত বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তাঁর মধ্যে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত সবচেয়ে সহজ ও উন্নত প্রণালির । এই তাঁতের কাপড় জড়ানো এবং টানা সুতা লেট অফ করার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয় ।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতের বর্ণনা-
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে দক্তির পেছনে একটি লোহার রড এর দুই প্রান্তে দুইটি হুইল থাকে যাকে ফ্লাই হুইল বলে । ফ্লাই হুইল দুইটি তাঁতের দুই প্রান্তে যুক্ত থাকার কারণে তাঁতের গতি খুব সহজ হয়ে যায় অর্থাৎ তাঁতির তাঁত চালনায় খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না ।
তাঁতি কাপড় বুননের জন্য ঝাঁপ উঠান, মাকু চালনা ও দক্তি টেনে শানা দ্বারা পিকিং আপ করে সুতা ফেল অব দ্যা ক্লথের পৃষ্ঠে বসানোর সময় পরিমাণমতো উৎপন্ন কাপড় জড়ানো ও টানা বিমের সুতা জড়ানো স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে বলে এই তাঁতকে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত বলে।
চিত্তরঞ্জন তাঁত একটি আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে কাপড় বুনন-
এই তাঁত লৌহ ও কাষ্ঠ নির্মিত । সাধারণ তাঁত অপেক্ষা এই তাঁতে ডবল কাজ হয়ে থাকে। এই তাঁতকে সেমি অটোমেটিক তাঁত বলা হয়। কারণ এতে টানা ছাড়া (Let off) এবং পড়েন জড়ানো (Take up) এই দুইটি কাজ মাত্র আপনা হতে এক সংগে হতে থাকে । অন্যান্য প্রক্রিয়া সাধারণ তাঁতের ন্যায়। সাধারণ তাঁতে কাপড়ের জমিন সর্বত্র সমান হয় না, কিন্তু এই তাঁতে সর্বত্র সমান হয়ে থাকে। যে কোন রকমের মোটা ও মিহি কাপড় বুনতে এটা খুবই উপযুক্ত । বর্তমানে প্রায় সর্বত্রই এই তাঁতের খুব বেশি প্রচলন । এই তাঁতই জাপানি তাঁত বলে পরিচিত ।
চিত্তরঞ্জন তাঁতে বুননকালীন দক্তি ঠেলার সংগে সংগে একসেট পিনিয়ন হুইল ইমারি রোলারের সাহায্যে কাপড় ক্লথ বিয়ে জড়ানো হয় এবং Warp beam হতে টানা প্রয়োজন মতো খুলে আসে।
উপসংহার / মন্তব্য
৯। পরীক্ষার নাম : গ্রাফ পেপার সম্পর্কে অবগত হওয়া ।
ভূমিকা
বিভিন্ন ডিজাইন কাপড়ে তোলার পূর্বে ডিজাইনটিকে সরল ও সহজবোধ্য করে বুঝানোর উদ্দেশ্যে এক প্রকার বর্গাকৃতি ঘর বিশিষ্ট কাগজে বিভিন্ন রং এর সংমিশ্রণে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমই হলো গ্রাফ পেপার ।
গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে।
যথা-
০ ডিজাইন পেপার
০ পয়েন্ট পেপার
০ স্কোয়ার পেপার ।
সংজ্ঞা
গ্রাফ পেপার পরস্পর সমান্তরাল কতগুলো আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি দুই সেট সরলরেখা সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে কতগুলো ছোট ছোট চৌকো ঘর সৃষ্টি করে, যে কাগজের উপর উপরোক্ত বর্গাকৃতি ঘরগুলো অংকিত হয় তাকে ছক কাগজ বা গ্রাফ পেপার (Graph paper) বলে ।
ডিজাইন তৈরির জন্য গ্রাফ পেপারের ব্যবহার
ডিজাইন করার সময় সাধারণত আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি উভয় দিকেই ইঞ্চি প্রতি ৮, ১০ অথবা ১৬ ঘরে অর্থাৎ ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ এর বার লাইন অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে, যাতে ব্যবহারের পূর্বেই ঘরগুলো সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হয় ।
পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি ও টানা সুতাকে লম্বালম্বি এর দিকে ধরা হয় ডিজাইনারের মতানুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে । টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিমের চিত্রের সাহায্যে বুঝানো হলো ।
০ ডিজাইন করার পূর্বে অবশ্যই রিপিটের টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা সনাক্ত করে নিতে হবে।
০ গ্রাফ পেপারের বার লাইন কত কত ঘরে আছে তা সনাক্ত করে ডিজাইন অংকন করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য
১০। পরীক্ষার নাম গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য ।
ভূমিকা-
ডিজাইন পেপারর কিছুই নয় শুধু কতগুলো স্কোয়ার ঘরের কাগজ। স্কোয়ার বা চৌকো ঘরগুলো দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে একই দূরত্বে থাকে এবং লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি রেখাসমূহ পরস্পর সমকোণে ভেদ করে চলে যায়। প্রতিটি গ্রাফ পেপারেরই একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বার লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয় যাতে সহজেই অংকিত ডিজাইনের ঘরসংখ্যা চিহ্নিত করা সহজ হয় ।
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য -
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো-
০ কাগজে অংকিত কতগুলো সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা ।
০ প্রতিটি সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা পরস্পর সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে চৌকো ঘরের সৃষ্টি করে ।
০ প্রতিটি চৌকো ছোট ছোট ঘর বর্গাকার।
০ সনাক্তকরণের সুবিধার্থে চৌকো ঘরগুলো ৮, ১০ অথবা ১৬ ঘর এর পর পর বার অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
০ গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে । যথা-ডিজাইন পেপার, পয়েন্ট পেপার, স্কোয়ার পেপার ।
সর্তকতা
ডিজাইন পেপারের স্কোয়ার ঘর কখনও কোণাকুণি হয় না অর্থাৎ প্রতি ঘরের ছেদ বিন্দু ৯০° কোণ করে থাকে ।
উপসংহার / মন্তব্য
১১। পরীক্ষার নাম : গ্রাফ পেপারের ব্যবহার
ভূমিকা
ওভেন কাপড় প্রস্তুতের জন্য টেক্সটাইল ডিজাইনের ব্যবহার বহুবিধ। ছোট ছোট ডিজাইন থেকে মধ্যম ও খুব বড় ডিজাইনও তাঁতের সাহায্যে প্রস্তুত করা সম্ভব। ডিজাইনারগণ ডিজাইন তাঁতে উঠানোর পূর্বে গ্রাফ পেপারে ডিজাইন অংকন করে থাকেন যাতে পূর্বেই কোন ভুল ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা সম্ভব হয় ।
গ্রাফ পেপারের ব্যবহার
ডিজাইন করার সময় পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি এর দিকে এবং টানা সুতা লম্বালম্বি এর দিকে ধরা হয়। টানা ও পড়েনের সংখ্যা হিসেব করার সুবিধার্থে প্রতি ইঞ্চিতে ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ যে কোন সংখ্যক চৌকো ঘরগুলোকে মোটা অথবা রঙিন লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য সহজেই ঘরগুলো সনাক্ত করা সম্ভব।
ডিজাইন অনুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে। টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিমের চিত্রের সাহায্যে বুঝানো হলো ।
সতর্কতা
০ ডিজাইন তৈরির পর রিপিটের চিহ্ন ও ডিজাইন শুরুর স্থানের চিহ্ন প্রদান করা উচিত
০ গ্রাফ পেপারে তৈরি ডিজাইনের ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানও অংকন করলে পরবর্তীতে তাঁতে কাপড় বুননের জন্য প্রস্তুত করতে সহজ হয় ।
উপসংহার / মন্তব্য
১২। পরীক্ষার নাম : কাপড়ের গঠন অনুযায়ী ছক কাগজে ডিজাইন অংকন ।
ভূমিকা
ওভেন ডিজাইনকে গ্রাফ পেপারে ব্যাখ্যা করতে হলে তিনটি মূল উপকরণ যেমন- উইভ প্লান, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং প্লান অংকন করতে হবে । এটি বিভিন্ন ভাবে সজ্জিত বা দেখানো যায়। তবে বহুল প্রচলিত নিয়ম হলো মূল ডিজাইন অর্থাৎ উইভ প্লানকে মূল ধরে তার ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান ও ডান পার্শ্বে লিফটিং প্লান এমনভাবে অংকন করা হয় যাতে টানা সুতাগুলোর সোজাসুজি ঠিক উপরে ড্রাফটিং এর জন্য ঝাঁপগুলো নির্দিষ্ট করা অংশে কোন টানা সুতা কোন ঝাপে যাবে তা উল্লেখ করা সহজ হয়। এভাবে লিফটিং পানও ডানে থাকার কারণে পড়েন সুতা প্রবেশের সময় কোন ঝাঁপটা উপরে থাকবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝানো সম্ভব হয় ।
কাপড়ের গঠন অনুযায়ী ডিজাইন অংকন
নমুনা কাপড় থেকে ডিজাইন অংকনের জন্য নিম্নলিখিত উপকরণগুলির প্রয়োজন-
ক) কাউন্টিং গ্লাস
খ) নিডেল
গ) গ্রাফ পেপার ইত্যাদি ।
o প্রথমে নমুনা কাপড়টি টেবিলের উপর বিছাই ।
০ অতপর কাউন্টিং গ্লাস কাপড়টির উপর রাখি।
০ কাউন্টিং গ্লাসের উপর চোখ রাখলে নমুনা কাপড়টি খুব স্পষ্ট দেখাবে কোন সুতা কোনটির উপর থাকবে তা স্পষ্ট দেখা যাবে।
o নমুনা কাপড়ের টানার দিক ও পড়েনের দিক প্রথমে সনাক্ত করি ।
০ গ্রাফ পেপারের চৌকো ঘরে যে সুতা পড়েন সুতার উপরে আছে সে সুতাকে আপ ধরে গ্রাফ পেপারে দাগাংকিত করি এবং যে অংশে পড়েন সুতা উপরে আছে তা খালি রাখি।
০ এভাবে গ্রাফ পেপারে ডিজাইনটি অংকন করি।
০ অতপর ডিজাইন থেকে ডিজাইনের রিপিটটি বের করি।
০ রিপিট থেকে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরি করি ।
সতর্কতা
o খুব সূক্ষভাবে নমুনা কাপড়ের ডিজাইন লক্ষ্য রেখে গ্রাফ পেপারে ডিজাইন অংকন করতে হবে। পাশাপাশি কোন সুতা বাদ পড়লে সঠিক ডিজাইন অংকন করা সম্ভব হবে না।
উপসংহার / মন্তব্য
১৩। পরীক্ষার নাম : ছক কাগজ থেকে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অংকন ।
ভূমিকা-
মূল ডিজাইন বা উইভ প্লানকে মূল ধরে তার ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান ও ডান পার্শ্বে লিফটিং প্লান এমনভাবে অংকন করা হয় যাতে টানা সুতাগুলোর সোজাসুজি ঠিক উপরে ড্রাফটিং এর জন্য ঝাঁপগুলো নির্দিষ্ট করা অংশে কোন টানা সুতা কোন ঝাঁপে যাবে তা উল্লেখ করা সহজ হয়। আবার পড়েন সুতাগুলোর সোজাসুজি ডানে লিফটিং প্লান থাকার কারণে পড়ে প্রবেশের সময় কোন কোন ঝাঁপ উপরে উঠবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝানো সম্ভব। মূল ডিজাইনে উলম্বভাবে টানা সুতাগুলো নির্দিষ্ট করা থাকে এবং আড়াআড়ি সুতাগুলো পড়েন সুতা হিসেবে নির্দিষ্ট করা থাকে। উইভ প্লানের মধ্যে যে বর্গাকার বা চৌকো ঘরগুলো ভরাট করা বা ক্রস চিহ্ন দ্বারা দাগাঙ্কিত থাকে উক্ত টানা সুতা অর্থাৎ যে ঘরে দাগাঙ্কিত থাকে তা টানা ভাসা প্রকাশ করে এবং শুন্য ঘরগুলো পড়েন ভাসা প্রকাশ করে ।
হুক কাগজ থেকে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অংকন-
ছক কাগজে অংকিত উইভ প্লান থেকে প্রথমে ড্রাফটিং ও পরে লিফটিং প্লান করা হয়। ড্রাফটিং প্রানের মধ্যে আড়াআড়ি ঘর অথবা রেখাগুলোকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয় এবং গ্রাফ পেপারের উলম্ব ঘরগুলো টানা সুতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল উইভ বা ডিজাইন থেকে যখন ড্রাফটিং প্লান তৈরি করা হয় তখন টানা সুতা বরাবর উপরে যে ঝাঁপগুলোতে বাইন্ডিং থাকে অর্থাৎ টানা ভাসা থাকে সেই ঝাঁপগুলোর মেইল আইতে টানা সুতাগুলো পাথা হয়।
মনে করা যাক, ১ম ঝাঁপের ১ম রিপিটের ১ নং সুতাটি গাঁথা হলো এবং পরবর্তী টানা সুতাগুলো মূল ডিজাইনের টানা ও পড়েনের একই রকম বন্ধনী প্রকাশ করে এমন সংখ্যার টানাগুলো একই ঝাপের মধ্যে গাঁথা হবে এবং অমিল টানাগুলো পৃথক ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা হবে । যদি কোন টানা সুতার সাথে কোন টানা সুতার মিল না থাকে তবে রিপিটের টানা সুতার সংখ্যার সমান ঝাঁপ নিতে হবে এবং একেকটি সুতা একেক ঝাঁপের মধ্যে যাবে। অর্থাৎ ৫x৫ ঘরের মূল ডিজাইনের জন্য ড্রাফটিং প্লান হবে ১, ২, ৩, ৪, ৫।
লিফটিং প্লান করার জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উপস্থ ঘর এবং পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান করতে হবে। উইভ পান ও ড্রাফটিং প্লান থেকে লিফটিং প্লান করার জন্য প্রথমে চিত্র অনুযায়ী ড্রাফটিং প্লান থেকে ঝাঁপগুলো তীর রেখা টেনে নিয়ে খাড়াভাবে অবস্থান করানো হয় ।
লিফটিং প্লানে ঝাঁপ উপরে উঠানোর জন্য উইভ প্রানের প্রথম পড়েন সুতার যে কয়টি টানা সুতা ভাসা আছে, উক্ত টানা সুতাগুলো যে ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা আছে সে ঝাঁপগুলো উপরে উঠাতে হবে । অর্থাৎ উক্ত বর্গাকার ঘরগুলো ভরাট করতে হবে । এভাবে দ্বিতীয় পড়েনের ক্ষেত্রে ভাসা টানা সমূহ দাগাঙ্কিত করে ভরাট করতে হবে। একইভাবে পর পর রিপিটের সাইজ অনুযায়ী পড়েন সুতা অর্থাৎ পিক বরাবর লিফটিং প্লান সম্পূর্ণ করতে হবে।
সতর্কতা
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান করার জন্য অতিমাত্রায় মনোযোগী থাকা দরকার । নতুবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । ভুল ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানে উৎপাদিত কাপড়ে ডিজাইনও ভুল হবে ।
উপসংহার / মন্তব্য
১৪ । পরীক্ষার নাম : ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অনুযায়ী ড্রাফটিং করতে হবে ।
ভূমিকা
কাপড় বুননের সময় ঝাঁপগুলি উপরে নিচে উঠানামা করে। প্রতিটি ঝাঁপে অনেকগুলো ব থাকে যার মাঝখানে একটি করে ছিদ্রযুক্ত চক্ষু বা আই তাকে মেইল আই ব চক্ষু বলে। প্রতিটি ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে একটি করে সুতা প্রবেশ করানো হয়। ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সুতা প্রবেশ করাকে ড্রাফটিং বলে। ড্রাফটের মাধ্যমে ঝাঁপের সংখ্যা ও তার মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে পথ দেখানো হয় ।
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অনুযায়ী ড্রাফটিং করার পদ্ধতি-
ড্রাফটিং করার জন্য প্রথমে একটি স্ট্যান্ড বা ফ্রেমের উপর উইভারস্ বিশ্বকে স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঝাঁপ ও রিড উক্ত স্ট্যান্ডে স্থাপন করা হয়। স্ট্যান্ডের দুই পার্শ্বে দুই জন অভিজ্ঞ শ্রমিক থাকে যারা ড্রাফটিং প্লান দেখে সহজেই টানা সুতাকে ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টেনে নিতে পারে। ডিজাইন অনুযায়ী এক পার্শ্বের শ্রমিক সুতা সনাক্ত করে এবং অপর পার্শ্বের শ্রমিক ড্রইং হুকের সাহায্যে উক্ত সুতা ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টেনে নেয়। এভাবে ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টানা সুতা টেনে নিয়ে ড্রাফটিং কার্য সমাধা করা হয় ।
সতর্কতা
ডিজাইন অনুযায়ী সুতা সনাক্তকরণ ও নির্দিষ্ট ঝীপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টানা সুতা টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় অতিমাত্রায় মনোযোগী হতে হবে। নতুবা স্থূল ড্রাফটিং এর কারণে তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ের ডিজাইনও ভুল হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
১৫। পরীক্ষার নাম : প্লেইন উইভ ডিজাইন অংকন করে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরিকরণ ।
ভূমিকা-
সবচেয়ে সহজ ও সরলতম উইড বা ডিজাইন হলো প্লেইন ডিজাইন। যে কোন সংখ্যক টানা সুতা পর্যায়ক্রমে জোড় ও বেজোড় সংখ্যক সুভাকে উপরে উঠিয়ে ও নিচে নামিয়ে প্লেইন উইভ তৈরি করা সম্ভব। এই উইভের মধ্যে সুতাগুলো একটি বাদে একটি বন্ধনীতে অংশ গ্রহণ করে ।
সংজ্ঞা
(ক) প্লেইন উইভ টানা ও পড়েন সুতার পর্যায়ক্রমিক ইন্টারলেসমেন্ট এর মাধ্যমে যে উইভ গঠন করা হয় । তাকে প্লেইন উইভ বলে । প্লেইন উইভে টানা ও পড়েন দুইটি সুতার বন্ধনীর মাধ্যমে সর্বাধিক দৃঢ়তা প্রমাণ করে ।
(খ) ড্রাফটিং প্লান যে পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নিয়মে টানা সুতা ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের মাধ্যমে টানা বা গাঁথা হয় তাকে ড্রাফটিং বলে এবং যে নিয়ম বা প্লানের মাধ্যমে এই কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে ড্রাফটিং প্রান বলে।
(গ) লিফটিং প্লান ঝাঁপ উপরে উঠানো ও নিচে নামানোর ফলে শাটেল চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে লিফটিং প্লান বলে ।
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরি করার পদ্ধতি
যেহেতু মাত্র ২x২ রিপিটে প্লেইন ডিজাইন করা হয় কাজেই এই ডিজাইনের ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান করা অত্যন্ত সহজ।
মূল উইডে ২ ঘর টানা ও ২ ঘর পড়েন সুতা দ্বারা প্লেইন ডিজাইনের রিপিট তৈরি করা হয়েছে। কাজেই ড্রাফটিং প্লানের জন্য আড়াআড়ি ঘর বা রেখাকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয়। যেহেতু প্লেইন উইভের রিপিটে ২টি মাত্র টানা সুতা রয়েছে। কাজেই এখানে মাত্র ২টি ঝাঁপ ব্যবহার করলেই চলে অর্থাৎ ঝাঁপের জন্য ২টি টানা সুতা ২টি ঝাপের মেইল আই এর মধ্যে টেনে নিলেই ড্রাফটিং সম্পন্ন হবে ।
অনুরুপভাবে লিফটিং প্লানের জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উলম্ব ঘর ও পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান করতে হবে ২টি পড়েন সুতা ও ২টি টানা সুতা দ্বারা রিপিটের জন্য লিফটিং পানও ২x২ ঘরে করলেই চলবে যা ডিজাইনের অনুরূপ হবে ।
সতর্কতা-
যে কোন ডিজাইন, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং প্লান তৈরি করার সময় মনোযোগী হওয়া উচিত নতুবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার / মন্তব্য
১৬। পরীক্ষার নাম : টুইল উইড কাপড়ের ডিজাইন অংকন করে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরিকরণ ।
ভূমিকা-
টুইল উইভের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো কাপড়ের উপর কোনাকুনি শিররেখা দেখা যায়। টুইল উইভের টানা সুতাগুলো এমনভাবে বন্ধনীতে অংশ গ্রহণ করে যে প্রতিটি টানা সুতার বন্ধনী বিন্দু পূর্ববর্তী টানা সুতার বন্ধনী বিন্দু সাপেক্ষে এক ঘর উপরে বা এক ঘর নিচে স্থানান্তরিত হয়ে এ টুইল রেখার সৃষ্টি হয়। এ টুইল লাইন কাপড়ের উভয় পার্শ্বে দৃষ্টি গোচর হয়। এটি সাধারণত ডান থেকে বামে অথবা বাম থেকে ডানে এইভাবে অগ্রসর হয়।
সংজ্ঞা-
যে উইন্ডের কাপড়ের উপরিভাগে টানা অথবা পড়েন ভাসা অথবা টানা পড়েন সম বা অসম কতগুলো কোনাকুনি শিররেখা ও ডায়াগোনাল রেখা দৃষ্ট হয় তা-ই টুইল উইভ।
ডিজাইন সহ ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরিকরণ-
ক) ডিজাইন- টুইল উইভের ক্ষুদ্রতম ডিজাইন ৩×৩ অর্থাৎ ৩ ঘর টানা সুতা ও ৩ ঘর পড়েন সুতা। কাজেই ৩×৩ টুইল ডিজাইন অংকন করার জন্য অর্থাৎ ২ সুতা আপ ও ১ সুতা ডাউন ধরে ডিজাইনটি অংকন করি । ১ম টানা সুতায় ১ম দুইটি পিক আপ অর্থাৎ চৌকো ঘরসমূহ ভরাট করি ও ৩য় পিক ডাউন অর্থাৎ চৌকো ঘর খালি রাখি। এভাবে ২য় টানা সুতায় এক পিক উপরে অর্থাৎ ২য় ও ৩য় পিক এর জন্য চৌকো ঘর ভরাট করি ও ১ম পিক এর জন্য চৌকো ঘর খালি রাখি। অনুরূপভাবে ৩য় টানা সুতায় ৩য় ও ১ম পিকের জন্য চৌকো ঘর ভরাট করি এবং ২য় পিকের জন্য চৌকো ঘর খালি রাখি । এভাবে পুরো ৩×৩ ঘরের টুইল ডিজাইন তৈরি করি ।
ড্রাফটিং প্লান-
মূল ডিজাইন অর্থাৎ উইভ প্লানকে মূল ধরে এর ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান করা হয়। ড্রাফটিং প্লানের মধ্যে আড়াআড়ি ঘর অথবা রেখাগুলোকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয় এবং ঝাঁপ সমূহের উল্লম্ব ঘরগুলোকে টানা সুতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন টানা সুতা বরাবর ঝাঁপগুলোতে বাইন্ডিং থাকে অর্থাৎ টানা ভাসা থাকে সেই ঝাঁপগুলোর মেইল আইতে টানা সুতা গাঁথা হয়। যেহেতু ৩x৩ ঘরের মূল ডিজাইনের জন্য ড্রাফটিং প্লান করতে হবে এবং ৩টি টানা সুতার বাইন্ডিং একটার সাথে অন্যটার কোন মিল নেই, কাজেই মোট ৩টি ঝাপ অর্থাৎ ড্রাফটিং প্লানের জন্যও মোট ৩×৩ ঘরের প্রয়োজন হবে। আমরা মূল ডিজাইনের ঠিক উপরে ৩x৩ ঘর ড্রাফটিং প্লানের জন্য নিয়ে নেই । অতপর ১ম টানা সুতার জন্য ১ম ঝাঁপ, ২য় টানা সুতার জন্য ২য় ঝাঁপ, ৩য় টানা সুতার জন্য ৩য় ঝাঁপ অর্থাৎ ৩টি ঘরের ১ম ঘরের ১ম ঝাঁপ, ২য় ঘরের ২য় ঝাঁপ ৩য় ঘরের ৩য় ঝাঁপ এভাবে ১, ২, ৩ চৌকো ঘরগুলো পূরণ করি এবং ড্রাফটিং প্লান সমাপ্ত করি ।
গ) লিফটিং প্লান-
যেহেতু ৩×৩ ঘরে মূল ডিজাইন ও ড্রাফটিং প্লানে ৩টি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই লিফটিং প্লানেও গ্রাফ পেপারে ৩×৩ ঘর নিতে হবে । লিফটিং প্লানের জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উল্লম্ব ঘর এবং পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান থেকে ঝাঁপগুলো তীর রেখা টেনে নিয়ে খাড়াভাবে অবস্থান করানো হয় ।
লিফটিং প্লানের ঝাঁপ উপরে উঠানোর জন্য উইভ প্লানের প্রথম পড়েন সুতার যে কয়টি টানা ভাসা আছে উক্ত টানা সুতাগুলো যে ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা আছে সে ঝাপগুলো উপরে উঠাতে হবে। অর্থাৎ উক্ত চৌকো ঘরগুলো ভরাট করতে হবে । আমাদের নির্ধারিত ডিজাইনের জন্য ১ম পিকে ১ ও ৩ নং ঘর, ২য় পিকে ১ ও ২ নং ঘর, ৩য় পিকে ২ ও ৩ নং ঘর ভরাট করা হলো। এভাবে লিফটিং প্লান সমাপ্ত করা হলো ।
উপসংহার / মন্তব্য
১৭। পরীক্ষার নাম স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং এ ব্যবহার বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের নাম ও সনাক্তকরণ।
ভূমিকা-
কাপড় থেকে অপদ্রব্য যেমন তৈল, চর্বি, মোম ও সাইজিং এর সময় ব্যবহার স্টার্চ বাদে অন্যান্য উপাদানসহ রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা ক্রিয়া করিয়ে দূর করাই স্কাওয়ারিং এর কাজ। আবার কাপড় হতে স্টার্চ জাতীয় পদার্থ, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য ডিসাইজিং ও স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে সম্পূর্ণভাবে দূর হয় না। কাজেই উপরোক্ত অপদ্রব্য দূরীকরণ ও কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টেক্সটাইল দ্রব্যের নিজস্ব রং অর্থাৎ প্রাকৃতিক রং দূর করার জন্য ব্লিচিং করার প্রয়োজন রয়েছে।
সংজ্ঞা
ক) স্কাওয়ারিং যে প্রক্রিয়ায় অ্যালকালি অথবা ডিটারজেন্ট যোগে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে তৈল, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা এবং টেক্সটাইল দ্রবাদিকে পরিষ্কার ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় তাকে স্কাওয়ারিং বলে ।
খ) ব্লিচিং যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করে ধবধবে সাদা করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে।
গ) সাওয়ারিং স্কাওয়ারিং পদ্ধতির থেকে যাওয়া অ্যালকালি দূর করার জন্য বা কাপড়কে প্রশমিত করার জন্য পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা পাতলা সালফিউরিক এসিড যে প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাকে সাওয়ারিং বলে ।
স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে ব্যবহার রাসায়নিক পদার্থের নাম
ডিটারজেন্ট, অ্যালকালি, অক্সিডাইজিং ও রিডিউসিং এজেন্ট এর নাম নিম্নে দেওয়া হলো ।
ক) ডিটারজেন্ট
০ টার্কি রেড ওয়েল
০ নিকাল এ
০ নিকাল বি. এক্স
০ আইজিপন এ
০ লিছাপল এল এস
০ নিছাপল ডি
০ লিছাপল এন
খ) অক্সিডাইজিং এজেন্ট
• অক্সিজেন
• ওজোন
• হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
• ম্যাংগানিজ ডাই অক্সাইড
• পটাশিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি।
গ) রিডিউসিং এজেন্ট
• হাইড্রোজেন
• কার্বন
• কার্বন মনোক্সাইড
• হাইড্রোজেন সালফাইড
• জিংক অক্সাইড ইত্যাদি।
ঘ) ব্লিচিং এজেন্ট
অক্সিডাইজিং ও রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট এর তালিকা
ক) অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট-
অক্সিডাইজিং এজেন্ট এর মাধ্যমে যে ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট বলে। যেমন-
• ক্লোরিন গ্যাস
• ওজোন
• হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
• সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্লিচিং পাউডার
• সোডিয়াম পার অক্সাইড ইত্যাদি
খ) রিডিউসিং ব্লিচিং
এজেন্ট এর মাধ্যমে যে ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তাকে রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট বলে। যেমন-
• হাইড্রোজেন সালফাইড
• সালফার ডাই অক্সাইড
• সোডিয়াম সালফেট ফেরাস সালফেট
• কার্বন মনোক্সাইড
• স্টেনাস ক্লোরাইড
সতর্কতা-
স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং এজেন্ট নির্বাচনের পূর্বে আঁশের ধরণ এজেন্টের মূল্য ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে ।
উপসংহার / মন্তব্য
১৮ । পরীক্ষার নাম : ডাইরেক্ট ডাই বা রং দ্বারা কটন কাপড় রং করার পদ্ধতি ।
ভূমিকা-
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় প্রকার সেলুলোজ আঁশের প্রতি ডাই-এর তীব্র আসক্তি ও রঞ্জন ক্ষমতা আছে। বিভিন্ন ধরনের ফাইবার যেমন- ভিসকোস, কিউপ্রোমেনিয়াম ইত্যাদি রং করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় । কিন্তু সেলুলোজিক ফাইবারের প্রতি ডাইরেক্ট ডাই-এর আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। কাজেই, কখনো কখনো সাবস্ট্যানটিভ ডাই বা ডাইরেক্ট কটন কালারও বলা হয় ।
সংজ্ঞা
ডাইরেক্ট ডাই যে সকল ডাই-এর ফাইবারের প্রতি সরাসরি আকর্ষণ আছে, সরাসরি প্রয়োগ করার জন্য কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই তাকে ডাইরেক্ট ডাই বলে ।
গ) পদ্ধতি
যে কাপড়কে রং করতে হবে তার ওজনের ১-৫% রং নিয়ে অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি যোগ করে প্রথমে পেস্ট তৈরি করতে হবে । পেস্ট এ ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০ গুণ পরিমাণ পানি নিয়ে ডাই-এর দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে । আলাদা ২টি পাতে ২-৩% সোড অ্যাশ ২০% লবণের দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে।
অতপর ডাই বাথে কাপড়ের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাশ দ্রবণ যোগ করে ৭০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। ফলে পানির ক্ষরতা দূর হয়। বাথ এর তাপমাত্রা ৮০ সে. এ উঠানোর পর কাপড় ও রং এর দ্রবণ দেওয়া হয় ও ৩০ মিনিট যাবৎ ক্রিয়া করানো হয়। বাথের তাপমাত্রা ৯০°-১০০° সে. পর্যন্ত উঠানোর পর NaCl দ্রবণ আস্তে আস্তে যোগ করা হয় ও ৩০ মিনিট নড়াচড়া করে স্কুইজ করে অতিরিক্ত রঙ ফেলে দিয়ে প্রথমে গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি সহযোগে কাপড় ধোয়া হয় ।
সতর্কতা-
০ ডাইরেক্ট ডাই-এর ফাইবারের প্রতি আসক্তি প্রবল কিন্তু পরিশেষ ক্রিয়া দ্বারা রং পাকা দ্বারা রং পাকা হয় না।
০ ডাইং করার সময় NaCl পরিমাণ মতো মিশাতে হবে নতুবা ডাই পেনিট্রেশন যথাযথ হবে না
উপসংহার / মন্তব্য
১৯। পরীক্ষার নাম রি-অ্যাকটিভ ডাই দ্বারা কাপড় রং করার পদ্ধতি ।
ভূমিকা-
রি-অ্যাকটিভ ডাই পানিতে দ্রবণীয়, এটি এক ধরনের রাসায়নিক রঞ্জক যৌগ বিশেষ। এখানে রং এর অনু আঁশের পলিমারের সংগে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। এজন্য এ শ্রেণির রংগুলোকে রি-অ্যাকটিভ ডাই বলে । কটনের উপর রি-অ্যাকটিভ ডাই সবচেয়ে উজ্জ্বল সেড তৈরি করে। এ ডাই ডাইং প্রিন্টিং সব কিছুর জন্যই উপযোগী। এর ওয়েট ফাস্টনেস বেশ ভালো ।
সংজ্ঞা-
রি-অ্যাকটিভ ডাই : ডাই-এর অনুতে রি-অ্যাকটিভ গ্রুপ বিদ্যমান এবং রং এর অনু আঁশের পলিমারের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে টেক্সটাইল দ্রব্যকে রঙিন করে বলে এ ডাইকে রি-অ্যাকটিভ ডাই বলে ।
রি-অ্যাকটিভ ডাই দ্বারা কাপড় রং করার পদ্ধতি -
বর্ণনা
যে কাপড়কে রং করতে হবে তার ওজনের ১-৫% রং নিয়ে অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি যোগ করে প্রথমে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট এ ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০গুণ পরিমাণ পানি দিয়ে ডাই-এর দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে । আলাদা দুইটি পাত্রে ২-৩% সোডা এ্যাশ ও ২০% লবণের দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে।
অতপর ডাই বাঘে কাপড়ের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাস দ্রবণ যোগ করে ৭০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয় । ফলে পানির খরতা দূর হয় । বাথ এর তাপমাত্রা ৮০° সে. এ উঠানোর পর রং এর দ্রবণ ও কাপড় দেওয়া হয় এবং ৩০ মিনিট যাবৎ ক্রিয়া করানো হয়। বাথের তাপমাত্রা ৯০-১০০° সে. পর্যন্ত উঠানোর পর NaCl দ্রবণ আস্তে আস্তে যোগ করা হয় এবং ৩০ মিনিট নাড়াচাড়া করে স্কুইজ করে অতিরিক্ত রং কে ফেলে দেওয়া হয় । অতপর প্রথমে গরম পানি ও পড়ে ঠান্ডা পানি সহযোগে কাপড় ধৌত করা হয়।
ভূমিকা
বয়নের সময় ঝাঁপগুলি উপরে নিচে উঠানামা করে। প্রতিটি ঝাঁপে সকল 'ব' এর মাঝখানে একটি করে ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রসমূহকে 'ব' চক্ষু বলে। প্রতিটি 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে একটি করে সুতা প্রবেশ করানো হয়। 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে টানা সুতা প্রবেশ করার পদ্ধতিকে ড্রাফটিং বলে। ড্রাফটের মাধ্যমে ঝাঁপের সংখ্যা এবং টানা সুতাকে কোন ঝাঁপের মধ্যে ড্রাফটিং করা হবে তা নির্দিষ্ট করার উপর উৎপাদিত কাপড়ের ডিজাইন নির্ভর করে ।
সংজ্ঞা
'ব' গাথা বিম করা শেষ হলে টানা সুতার মাথাগুলো টেনে বের করে ডিজাইন অনুযায়ী একটি একটি করে বিমের সুতা ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের সাহায্যে টানতে হয়। 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ওয়ার্প সুতাকে টানার পদ্ধতিকে 'ব' গাঁথা বা ড্রাফটিং বলে ।
'ব' গাঁথার পদ্ধতি
প্লেইন উইভের ক্ষেত্রে সাধারণত দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় । টুইল উইভ এর ক্ষুদ্রতম ডিজাইন ৩x৩ অর্থাৎ ন্যূনতম ৩টি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়। নিমে ৩ ঝাঁপের টুইল ডিজাইন তৈরির জন্য পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো ।
৩x৩ টুইল ডিজাইনের জন্য ৩টি ঝাঁপের প্রয়োজন। প্রতিটি ঝাঁপের জন্য আলাদা আলাদা ট্রেডেল-এর প্রয়োজন । ৩টি ঝাঁপ বা ৩টি পিকের জন্য ৩টি ট্রেডেলের প্রয়োজন ।
প্রতি পিকে ২টি করে টানা সুতা উপরে ও ১টি করে টানা সুতা নিচে রাখতে হলে ঝাঁপ অর্থাৎ হিল্ড মাউন্টিং করার জন্য প্রথম ঝাঁপটি প্রথম ট্রেডেলের সাথে বাঁধতে হবে এবং ডিজাইনের প্রথম সুতাটি প্রথম ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর সাথে গাঁথতে হবে । অনুরূপভাবে দ্বিতীয় ঝাঁপটি দ্বিতীয় ট্রেডেলের সাথে ও দ্বিতীয় সুতাটি দ্বিতীয় ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর সাথে ড্রাফটিং করতে হবে । অনুরূপভাবে তৃতীয় ঝাঁপটি তৃতীয় ট্রেডেলের সাথে বাঁধতে হবে। আর বুননের সময় ২য় ঝাঁপটি প্রথম পিকে তৃতীয় ঝাঁপটি দ্বিতীয় পিকে এবং প্রথম ঝাঁপটি প্রথম পিকে পা দিয়ে চেপে ধরতে হবে ।
সতর্কতা
০ ডিজাইনকে সঠিক রাখার জন্য সঠিকভাবে ড্রাফটিং করতে হবে ।
০ ট্রেডেলকে চেপে ধরার সময় ভুল হলে ডিজাইন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
০ হস্তচালিত গতি বাড়ানোর জন্য তাঁতির কাজে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ।
ভূমিকা
টানার সেডের মধ্যে পড়েন সুতা প্রবেশের পর উক্ত সুতাকে কাপড়ের পৃষ্ঠে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য যে বস্তুর সাহায্য নেওয়া হয় তাই শানা বা রিড। শানার ডেন্ট স্পিলিট এর ঘনত্বের উপরই কাপরের ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি জোড়া ডেন্ট এর ফাঁক দিয়ে দুইটি করে সুভা টানা হয়। বুননের সময় পড়েন সুতাকে উৎপন্ন কাপড়ের ফেল অফ দি ক্লথের পৃষ্ঠে মিশিয়ে দেওয়ার জন্যই এই পদ্ধতির প্রয়োজন । কাপড়ের গঠন সঠিক রাখার লক্ষ্যে সুতাকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য ডেন্টিং ভূমিকা পালন করে থাকে। অসম ডেন্টিং কাপড়ের ডিজাইনকে প্রভাবিত করে ।
সংজ্ঞা
ডেন্টিং যে পদ্ধতিতে শানার প্রতিটি ডেন্ট এর মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে ডিজাইন অনুযায়ী ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয় তাকে ডেন্টিং বা শালা গাঁথা বলে ।
শানা গাঁথা পদ্ধতি-
ঝাঁপের 'ব' চক্ষুর মধ্য দিয়ে ওয়ার্থ সুতা প্রবেশ করার পর শানা বা রিডের ডেন্ট / স্পিলিট এর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে টেনে নিতে হয় । কটন উইভিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতি ডেন্টের মধ্য দিয়ে দুইটি করে সুতা টানা হয়। শানার দুই পার্শ্বে দুইজন শ্রমিক বসে একপাশ থেকে একজন দুইটি সুতা সনাক্ত করে অপর পার্শ্বের শ্রমিকের ডেন্টের মধ্যে প্রবেশ করানো ড্রইং হুকের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং দ্বিতীয় শ্রমিক ডেন্টের ফাঁকের মধ্য দিয়ে সুতা টেনে বের করে আনেন। এভাবে পুরো টানা সুতাকে ডেন্টিং করা হয় ।
সতর্কতা
০ ডেন্টিং করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রতিটি টানা সুতা সমান্তরালভাবে থাকে ।
০ কখনও অসম ডেন্টিং করা উচিত নয় ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
প্রস্তুতকৃত উইভারস্ বিম 'ব' গাঁথা ও শানা পাঁথা সমাপ্ত হওয়ার পর তাঁতের মধ্যে স্থাপন করতে হয়। তাঁতে বিম, শানা ও ঝাঁপ স্থাপন করাকে মাউন্টিংও বলা হয়। তাঁতের পেছনে বিম স্ট্যান্ডে বিম স্থাপন, ঝাঁপ ও শানা মাউন্টিং করার পর তাঁত কাপড় তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়।
সংজ্ঞা
তাঁতে স্থাপনের পূর্বে টানা সুতা ওয়াইল্ডিং, ওয়ার্সিং, বিমিং, সাইজিং ইত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পর কাপড় তৈরির জন্য সমান্তরালভাবে জড়ানো বিমকেই উইভারস্ বিম বলা হয় ।
তাঁতের মধ্যে উইভারস্ বিন স্থাপন পদ্ধতি
হস্তচালিত তাঁতে বিম স্থাপন করার পদ্ধতির বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো-
প্রস্তুতকৃত বিম শানা ও ব গাঁথা অবস্থায় তুলে এনে তাঁতের পিছনে বিম স্ট্যান্ডে রাখা হয়। অতপর শানাকে দক্ষি এর সাথে শানার টুপি বা রিড ক্যাপ দ্বারা শক্ত করে আটকানো হয়। ঝাঁপগুলিও টপ রোলারের সাথে নির্দিষ্ট নিয়মে সঠিকভাবে বাঁধা হয় । রিড এর সাথে বাঁধা টানা সুতা খুলে খানিকটা আচড়িয়ে আরও কিছু সুতা বিম থেকে টেনে নিয়ে হাতের সাহায্যে টানা সুতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যা ক্লথ বিমে প্রস্থ বরাবর শক্ত করে পেছিয়ে বাঁধা হয়। এরপর সুতা দ্বারা অর্থাৎ লেট অফ ও কাপড় গুটানো গতি অর্থাৎ টেক আপ এর সমন্বয় করা হয়। এ অবস্থায় তাঁত কাপড় তৈরির জন্য প্রস্তুত হয় ।
সতর্কতা
০ লক্ষ রাখতে হবে টানা সুতা যেন পরস্পর সমান্তরালে থাকে । কখনও ক্রস বা কোনাকুনি না হয়ে যায় ।
০ টপ রোলারের সহিত ঝাঁপসমূহ ডিজাইন, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং স্থানের সাথে সমন্বয় করে বাঁধতে হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
কাপড় থেকে অপদ্রব্য যেমন তৈল, চর্বি, মোম ও সাইজিং এর সময় ব্যবহার স্টার্চ বাদে অন্যান্য উপাদানসহ রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা ক্রিয়া করিয়ে দূর করাই স্কাওয়ারিং এর কাজ। আবার কাপড় হতে স্টার্চ জাতীয় পদার্থ, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য ডিসাইজিং ও স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে সম্পূর্ণভাবে দূর হয় না। কাজেই উপরোক্ত অপদ্রব্য দূরীকরণ ও কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টেক্সটাইল দ্রব্যের নিজস্ব রং অর্থাৎ প্রাকৃতিক রং দূর করার জন্য ব্লিচিং করার প্রয়োজন রয়েছে।
সংজ্ঞা
ক) স্কাওয়ারিং যে প্রক্রিয়ায় অ্যালকালি অথবা ডিটারজেন্ট যোগে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি থেকে তৈল, চর্বি, মোম ও অন্যান্য অপদ্রব্য দূর করা এবং টেক্সটাইল দ্রবাদিকে পরিষ্কার ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় তাকে স্কাওয়ারিং বলে ।
খ) ব্লিচিং যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী হতে প্রাকৃতিক রং জাতীয় পদার্থ দূর করে ধবধবে সাদা করা হয় তাকে ব্লিচিং বলে।
গ) সাওয়ারিং স্কাওয়ারিং পদ্ধতির থেকে যাওয়া অ্যালকালি দূর করার জন্য বা কাপড়কে প্রশমিত করার জন্য পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা পাতলা সালফিউরিক এসিড যে প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাকে সাওয়ারিং বলে ।
স্কাওয়ারিং পদ্ধতিতে ব্যবহার রাসায়নিক পদার্থের নাম
ডিটারজেন্ট, অ্যালকালি, অক্সিডাইজিং ও রিডিউসিং এজেন্ট এর নাম নিম্নে দেওয়া হলো ।
ক) ডিটারজেন্ট
০ টার্কি রেড ওয়েল
০ নিকাল এ
০ নিকাল বি. এক্স
০ আইজিপন এ
০ লিছাপল এল এস
০ নিছাপল ডি
০ লিছাপল এন
খ) অক্সিডাইজিং এজেন্ট
• অক্সিজেন
• ওজোন
• হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
• ম্যাংগানিজ ডাই অক্সাইড
• পটাশিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি।
গ) রিডিউসিং এজেন্ট
• হাইড্রোজেন
• কার্বন
• কার্বন মনোক্সাইড
• হাইড্রোজেন সালফাইড
• জিংক অক্সাইড ইত্যাদি।
ঘ) ব্লিচিং এজেন্ট
অক্সিডাইজিং ও রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট এর তালিকা
ক) অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট-
অক্সিডাইজিং এজেন্ট এর মাধ্যমে যে ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে অক্সিডাইজিং ব্লিচিং এজেন্ট বলে। যেমন-
• ক্লোরিন গ্যাস
• ওজোন
• হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
• সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্লিচিং পাউডার
• সোডিয়াম পার অক্সাইড ইত্যাদি
খ) রিডিউসিং ব্লিচিং
এজেন্ট এর মাধ্যমে যে ব্লিচিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তাকে রিডিউসিং ব্লিচিং এজেন্ট বলে। যেমন-
• হাইড্রোজেন সালফাইড
• সালফার ডাই অক্সাইড
• সোডিয়াম সালফেট ফেরাস সালফেট
• কার্বন মনোক্সাইড
• স্টেনাস ক্লোরাইড
সতর্কতা-
স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং এজেন্ট নির্বাচনের পূর্বে আঁশের ধরণ এজেন্টের মূল্য ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
প্লেইন উইডের জন্য মাত্র দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় যা বাঁধা অত্যন্ত সহজ। কিন্তু টুইল বা অন্যান্য উইভের জন্য ঝাঁপ বাঁধা তুলনামূলক কঠিন। কারণ- ক্ষুদ্রতম টুইল ডিজাইনের জন্য ৩টি ঝাঁপের প্রয়োজন। রিড বা শানা স্নে অর্থাৎ দক্তির উপর রিড ক্যাপ দ্বারা আটকিয়ে বসানো হয়।
তাঁতে ঝাঁপ ও শানা বাঁধা পদ্ধতি
প্লেইন উইভের ক্ষেত্রে যেহেতু দুইটি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয় কাজেই ঝাঁপ দুইটি টপ রোলারের দুই প্রান্তে চামড়ার স্ট্র্যাপ দ্বারা বাঁধা হয়। টপ রোলার এমনভাবে সামনে পিছনে ঘুরতে থাকে যাতে একটি ঝাঁপ উপরে এবং অপরটি ঝাঁপ নিচে নামবে। শানা বা রিড স্লে এর উপর স্থাপন করে রিড ক্যাপের মাধ্যমে নাট বোল্ট দ্বারা শক্তভাবে সে বা দক্তির সাথে আটকিয়ে রাখা হয়। পিকিং এর সময় স্লে সহ রিড বিটআপ দেয়।
সতর্কতা
০ রিড ক্যাপের সাথে আটকানোর সময় সতর্কতার সাথে আটকাতে হবে যাতে উৎপাদিত কাপড়ে রিড মার্ক সৃষ্টি না হয় ।
০ টপ রোলার বাঁধার সময় ট্রেডেলের সাথে সমন্বয় করে বাঁধতে হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
হস্তচালিত অথবা শক্তিচালিত উভয় তাঁতই চালনা করার পূর্বে তাঁতের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং প্রতিটি অংশ সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে। যেমন- শাটেল বক্সে আছে কিনা, শাটেল এর মধ্যে সুতাপূর্ণ পার্ন ঠিক আছে কিনা, পিকার, পিকিং, স্ট্যাপ, ঝাঁপের পজিশন ইত্যাদি যথাযথ থাকার পরই তাঁত চালনা করা উচিত।
তাঁতের বিভিন্ন অংশ
o শাটেল
০ পিকার
০ চেক স্ট্র্যাপ এসেম্বলি
০ বাফার
০ সাটেল বক্স
o বক্স সুয়েল
0 ঝাঁপ
০ রিড
০ টেম্পল
০ দক্তি
০ লেট অফ
O টেক আপ
০ ট্যাপেট / ওয়াইপার ইত্যাদি
তাঁতের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে স্থাপন
ত্রুটিমুক্ত সঠিক উৎপাদন পেতে হলে এজন অভিজ্ঞ তাঁতি তাঁত চালনার পূর্বে তাঁতের উপরোক্ত সমস্ত অংশ যথাযথভাবে পরীক্ষা করে সঠিকভাবে স্থাপন করা আছে কিনা তা দেখে নেন। যদি কোন অংশ সঠিক না থাকে তা তাৎক্ষণাৎ ঠিক করে তবে তাঁত চালু করতে হবে। এখন তাঁত কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলো।
সতর্কতা -
০ তাঁতের প্রতিটি অংশ সঠিক না হলে তাঁত চালনা করা উচিত নয় ।
০ তাঁত চালনার পূর্বে অবশ্যই সব অংশ পরীক্ষা করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য -
ভূমিকা
একটি তাঁতের বিভিন্ন অংশ অংকনের মাধ্যমে উক্ত তাঁতের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সহজেই পরিচিতি লাভ করা সম্ভব ।
তাঁতের বিভিন্ন অংশ -
o শাটেল
০ শাটেল বক্স
o পিকার
০ ওয়ার্স বিম
o পা
০ ঝাঁপ বা হিল্ড শ্যাফট্
০ রিড বা শানা
০ টেম্পল
০ স্লে বা দক্তি ইত্যাদি
সতর্কতা
০ বারবার অংকনে ছবি নিখুঁত হয় ।
০ অংকন করার জন্য কলমের বদলে পেন্সিল ও রাবার ব্যবহার করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
যে সকল তাঁত কায়িক পরিশ্রম অর্থাৎ মানব শক্তি দ্বারা চালিত হয় তাই হস্তচালিত তাঁত । হস্তচালিত তাঁত বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তাঁর মধ্যে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত সবচেয়ে সহজ ও উন্নত প্রণালির । এই তাঁতের কাপড় জড়ানো এবং টানা সুতা লেট অফ করার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয় ।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতের বর্ণনা-
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে দক্তির পেছনে একটি লোহার রড এর দুই প্রান্তে দুইটি হুইল থাকে যাকে ফ্লাই হুইল বলে । ফ্লাই হুইল দুইটি তাঁতের দুই প্রান্তে যুক্ত থাকার কারণে তাঁতের গতি খুব সহজ হয়ে যায় অর্থাৎ তাঁতির তাঁত চালনায় খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না ।
তাঁতি কাপড় বুননের জন্য ঝাঁপ উঠান, মাকু চালনা ও দক্তি টেনে শানা দ্বারা পিকিং আপ করে সুতা ফেল অব দ্যা ক্লথের পৃষ্ঠে বসানোর সময় পরিমাণমতো উৎপন্ন কাপড় জড়ানো ও টানা বিমের সুতা জড়ানো স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে বলে এই তাঁতকে আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত বলে।
চিত্তরঞ্জন তাঁত একটি আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁত।
আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতে কাপড় বুনন-
এই তাঁত লৌহ ও কাষ্ঠ নির্মিত । সাধারণ তাঁত অপেক্ষা এই তাঁতে ডবল কাজ হয়ে থাকে। এই তাঁতকে সেমি অটোমেটিক তাঁত বলা হয়। কারণ এতে টানা ছাড়া (Let off) এবং পড়েন জড়ানো (Take up) এই দুইটি কাজ মাত্র আপনা হতে এক সংগে হতে থাকে । অন্যান্য প্রক্রিয়া সাধারণ তাঁতের ন্যায়। সাধারণ তাঁতে কাপড়ের জমিন সর্বত্র সমান হয় না, কিন্তু এই তাঁতে সর্বত্র সমান হয়ে থাকে। যে কোন রকমের মোটা ও মিহি কাপড় বুনতে এটা খুবই উপযুক্ত । বর্তমানে প্রায় সর্বত্রই এই তাঁতের খুব বেশি প্রচলন । এই তাঁতই জাপানি তাঁত বলে পরিচিত ।
চিত্তরঞ্জন তাঁতে বুননকালীন দক্তি ঠেলার সংগে সংগে একসেট পিনিয়ন হুইল ইমারি রোলারের সাহায্যে কাপড় ক্লথ বিয়ে জড়ানো হয় এবং Warp beam হতে টানা প্রয়োজন মতো খুলে আসে।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
হস্তচালিত কাপড় বুননে একজন তাঁতির দক্ষতাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। তাঁতির দক্ষতার উপরই ত্রুটিমুক্ত কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বুনন পদ্ধতি-
কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা একজন তাঁতি তাঁতের গতি নিয়ন্ত্রণ ও তাঁত পরিচালনা করে কাপড় উৎপাদন করে থাকেন । তাঁত চালু অথবা থেমে থাকা উভয় সময়ই তাঁতি স্লে ক্যাপ অর্থাৎ দক্তির টুপির উপর হাত রেখে থাকেন। দক্তি সামনে টেনে আনা এবং পিছনে ঠেলে সরানোর মাধ্যমে বিট আপ কার্য সম্পাদন করে থাকেন। পা দ্বারা ট্রেডেল চেপে রেখে টানা সুতার মাঝে সেড গঠন করেন এবং অন্য হাত অর্থাৎ ডান হাত দ্বারা হাতল টেনে টেনে পিকিং কার্য সম্পাদন করেন। হাতলের সাথে রশিসহ মেড়া অর্থাৎ পিকার বাঁধা থাকে যা দ্বারা সাটেল এক বক্স থেকে অন্য বক্সে আসা যাওয়া করে।
সর্বোপরি পা দ্বারা সেডিং, ডান হাত দ্বারা পিকিং ও বা হাত দ্বারা বিটিং কার্য সম্পাদন করে একজন তাঁতি কাপড় উৎপাদন করে থাকেন ।
সতর্কতা
০ হস্তচালিত তাঁতে ত্রুটিযুক্ত কাপড় বোনার জন্য একজন তাঁতির মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ।
০ ত্রুটিমুক্ত ভালো কাপড়ের জন্য তাঁতির দক্ষতাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
বিভিন্ন ডিজাইন কাপড়ে তোলার পূর্বে ডিজাইনটিকে সরল ও সহজবোধ্য করে বুঝানোর উদ্দেশ্যে এক প্রকার বর্গাকৃতি ঘর বিশিষ্ট কাগজে বিভিন্ন রং এর সংমিশ্রণে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমই হলো গ্রাফ পেপার ।
গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে।
যথা-
০ ডিজাইন পেপার
০ পয়েন্ট পেপার
০ স্কোয়ার পেপার ।
সংজ্ঞা
গ্রাফ পেপার পরস্পর সমান্তরাল কতগুলো আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি দুই সেট সরলরেখা সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে কতগুলো ছোট ছোট চৌকো ঘর সৃষ্টি করে, যে কাগজের উপর উপরোক্ত বর্গাকৃতি ঘরগুলো অংকিত হয় তাকে ছক কাগজ বা গ্রাফ পেপার (Graph paper) বলে ।
ডিজাইন তৈরির জন্য গ্রাফ পেপারের ব্যবহার
ডিজাইন করার সময় সাধারণত আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি উভয় দিকেই ইঞ্চি প্রতি ৮, ১০ অথবা ১৬ ঘরে অর্থাৎ ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ এর বার লাইন অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে, যাতে ব্যবহারের পূর্বেই ঘরগুলো সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হয় ।
পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি ও টানা সুতাকে লম্বালম্বি এর দিকে ধরা হয় ডিজাইনারের মতানুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে । টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিমের চিত্রের সাহায্যে বুঝানো হলো ।
০ ডিজাইন করার পূর্বে অবশ্যই রিপিটের টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা সনাক্ত করে নিতে হবে।
০ গ্রাফ পেপারের বার লাইন কত কত ঘরে আছে তা সনাক্ত করে ডিজাইন অংকন করা উচিত।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
ডিজাইন পেপারর কিছুই নয় শুধু কতগুলো স্কোয়ার ঘরের কাগজ। স্কোয়ার বা চৌকো ঘরগুলো দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে একই দূরত্বে থাকে এবং লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি রেখাসমূহ পরস্পর সমকোণে ভেদ করে চলে যায়। প্রতিটি গ্রাফ পেপারেরই একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বার লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয় যাতে সহজেই অংকিত ডিজাইনের ঘরসংখ্যা চিহ্নিত করা সহজ হয় ।
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য -
গ্রাফ পেপারের বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো-
০ কাগজে অংকিত কতগুলো সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা ।
০ প্রতিটি সমান্তরাল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি সরলরেখা পরস্পর সম দূরত্বে ও সমকোণে ভেদ করে চৌকো ঘরের সৃষ্টি করে ।
০ প্রতিটি চৌকো ছোট ছোট ঘর বর্গাকার।
০ সনাক্তকরণের সুবিধার্থে চৌকো ঘরগুলো ৮, ১০ অথবা ১৬ ঘর এর পর পর বার অথবা মোটা রেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
০ গ্রাফ পেপার বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে । যথা-ডিজাইন পেপার, পয়েন্ট পেপার, স্কোয়ার পেপার ।
সর্তকতা
ডিজাইন পেপারের স্কোয়ার ঘর কখনও কোণাকুণি হয় না অর্থাৎ প্রতি ঘরের ছেদ বিন্দু ৯০° কোণ করে থাকে ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
ওভেন কাপড় প্রস্তুতের জন্য টেক্সটাইল ডিজাইনের ব্যবহার বহুবিধ। ছোট ছোট ডিজাইন থেকে মধ্যম ও খুব বড় ডিজাইনও তাঁতের সাহায্যে প্রস্তুত করা সম্ভব। ডিজাইনারগণ ডিজাইন তাঁতে উঠানোর পূর্বে গ্রাফ পেপারে ডিজাইন অংকন করে থাকেন যাতে পূর্বেই কোন ভুল ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা সম্ভব হয় ।
গ্রাফ পেপারের ব্যবহার
ডিজাইন করার সময় পড়েন সুতাকে আড়াআড়ি এর দিকে এবং টানা সুতা লম্বালম্বি এর দিকে ধরা হয়। টানা ও পড়েনের সংখ্যা হিসেব করার সুবিধার্থে প্রতি ইঞ্চিতে ৮x৮, ১০×১০ বা ১৬×১৬ যে কোন সংখ্যক চৌকো ঘরগুলোকে মোটা অথবা রঙিন লাইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য সহজেই ঘরগুলো সনাক্ত করা সম্ভব।
ডিজাইন অনুসারে ছোট চৌকো ঘরগুলো ভরাট করে পড়েন সুতার উপরে টানা সুতা ভাসা বুঝাবে এবং চৌকো ঘরে কোন দাগাঙ্কিত না থাকলে তা টানার উপরে অর্থাৎ পড়েন ভাসা বুঝাবে। টানা ভাসা পড়েন ভাসা নিমের চিত্রের সাহায্যে বুঝানো হলো ।
সতর্কতা
০ ডিজাইন তৈরির পর রিপিটের চিহ্ন ও ডিজাইন শুরুর স্থানের চিহ্ন প্রদান করা উচিত
০ গ্রাফ পেপারে তৈরি ডিজাইনের ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানও অংকন করলে পরবর্তীতে তাঁতে কাপড় বুননের জন্য প্রস্তুত করতে সহজ হয় ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
ওভেন ডিজাইনকে গ্রাফ পেপারে ব্যাখ্যা করতে হলে তিনটি মূল উপকরণ যেমন- উইভ প্লান, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং প্লান অংকন করতে হবে । এটি বিভিন্ন ভাবে সজ্জিত বা দেখানো যায়। তবে বহুল প্রচলিত নিয়ম হলো মূল ডিজাইন অর্থাৎ উইভ প্লানকে মূল ধরে তার ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান ও ডান পার্শ্বে লিফটিং প্লান এমনভাবে অংকন করা হয় যাতে টানা সুতাগুলোর সোজাসুজি ঠিক উপরে ড্রাফটিং এর জন্য ঝাঁপগুলো নির্দিষ্ট করা অংশে কোন টানা সুতা কোন ঝাপে যাবে তা উল্লেখ করা সহজ হয়। এভাবে লিফটিং পানও ডানে থাকার কারণে পড়েন সুতা প্রবেশের সময় কোন ঝাঁপটা উপরে থাকবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝানো সম্ভব হয় ।
কাপড়ের গঠন অনুযায়ী ডিজাইন অংকন
নমুনা কাপড় থেকে ডিজাইন অংকনের জন্য নিম্নলিখিত উপকরণগুলির প্রয়োজন-
ক) কাউন্টিং গ্লাস
খ) নিডেল
গ) গ্রাফ পেপার ইত্যাদি ।
o প্রথমে নমুনা কাপড়টি টেবিলের উপর বিছাই ।
০ অতপর কাউন্টিং গ্লাস কাপড়টির উপর রাখি।
০ কাউন্টিং গ্লাসের উপর চোখ রাখলে নমুনা কাপড়টি খুব স্পষ্ট দেখাবে কোন সুতা কোনটির উপর থাকবে তা স্পষ্ট দেখা যাবে।
o নমুনা কাপড়ের টানার দিক ও পড়েনের দিক প্রথমে সনাক্ত করি ।
০ গ্রাফ পেপারের চৌকো ঘরে যে সুতা পড়েন সুতার উপরে আছে সে সুতাকে আপ ধরে গ্রাফ পেপারে দাগাংকিত করি এবং যে অংশে পড়েন সুতা উপরে আছে তা খালি রাখি।
০ এভাবে গ্রাফ পেপারে ডিজাইনটি অংকন করি।
০ অতপর ডিজাইন থেকে ডিজাইনের রিপিটটি বের করি।
০ রিপিট থেকে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরি করি ।
সতর্কতা
o খুব সূক্ষভাবে নমুনা কাপড়ের ডিজাইন লক্ষ্য রেখে গ্রাফ পেপারে ডিজাইন অংকন করতে হবে। পাশাপাশি কোন সুতা বাদ পড়লে সঠিক ডিজাইন অংকন করা সম্ভব হবে না।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
মূল ডিজাইন বা উইভ প্লানকে মূল ধরে তার ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান ও ডান পার্শ্বে লিফটিং প্লান এমনভাবে অংকন করা হয় যাতে টানা সুতাগুলোর সোজাসুজি ঠিক উপরে ড্রাফটিং এর জন্য ঝাঁপগুলো নির্দিষ্ট করা অংশে কোন টানা সুতা কোন ঝাঁপে যাবে তা উল্লেখ করা সহজ হয়। আবার পড়েন সুতাগুলোর সোজাসুজি ডানে লিফটিং প্লান থাকার কারণে পড়ে প্রবেশের সময় কোন কোন ঝাঁপ উপরে উঠবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝানো সম্ভব। মূল ডিজাইনে উলম্বভাবে টানা সুতাগুলো নির্দিষ্ট করা থাকে এবং আড়াআড়ি সুতাগুলো পড়েন সুতা হিসেবে নির্দিষ্ট করা থাকে। উইভ প্লানের মধ্যে যে বর্গাকার বা চৌকো ঘরগুলো ভরাট করা বা ক্রস চিহ্ন দ্বারা দাগাঙ্কিত থাকে উক্ত টানা সুতা অর্থাৎ যে ঘরে দাগাঙ্কিত থাকে তা টানা ভাসা প্রকাশ করে এবং শুন্য ঘরগুলো পড়েন ভাসা প্রকাশ করে ।
হুক কাগজ থেকে ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অংকন-
ছক কাগজে অংকিত উইভ প্লান থেকে প্রথমে ড্রাফটিং ও পরে লিফটিং প্লান করা হয়। ড্রাফটিং প্রানের মধ্যে আড়াআড়ি ঘর অথবা রেখাগুলোকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয় এবং গ্রাফ পেপারের উলম্ব ঘরগুলো টানা সুতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল উইভ বা ডিজাইন থেকে যখন ড্রাফটিং প্লান তৈরি করা হয় তখন টানা সুতা বরাবর উপরে যে ঝাঁপগুলোতে বাইন্ডিং থাকে অর্থাৎ টানা ভাসা থাকে সেই ঝাঁপগুলোর মেইল আইতে টানা সুতাগুলো পাথা হয়।
মনে করা যাক, ১ম ঝাঁপের ১ম রিপিটের ১ নং সুতাটি গাঁথা হলো এবং পরবর্তী টানা সুতাগুলো মূল ডিজাইনের টানা ও পড়েনের একই রকম বন্ধনী প্রকাশ করে এমন সংখ্যার টানাগুলো একই ঝাপের মধ্যে গাঁথা হবে এবং অমিল টানাগুলো পৃথক ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা হবে । যদি কোন টানা সুতার সাথে কোন টানা সুতার মিল না থাকে তবে রিপিটের টানা সুতার সংখ্যার সমান ঝাঁপ নিতে হবে এবং একেকটি সুতা একেক ঝাঁপের মধ্যে যাবে। অর্থাৎ ৫x৫ ঘরের মূল ডিজাইনের জন্য ড্রাফটিং প্লান হবে ১, ২, ৩, ৪, ৫।
লিফটিং প্লান করার জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উপস্থ ঘর এবং পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান করতে হবে। উইভ পান ও ড্রাফটিং প্লান থেকে লিফটিং প্লান করার জন্য প্রথমে চিত্র অনুযায়ী ড্রাফটিং প্লান থেকে ঝাঁপগুলো তীর রেখা টেনে নিয়ে খাড়াভাবে অবস্থান করানো হয় ।
লিফটিং প্লানে ঝাঁপ উপরে উঠানোর জন্য উইভ প্রানের প্রথম পড়েন সুতার যে কয়টি টানা সুতা ভাসা আছে, উক্ত টানা সুতাগুলো যে ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা আছে সে ঝাঁপগুলো উপরে উঠাতে হবে । অর্থাৎ উক্ত বর্গাকার ঘরগুলো ভরাট করতে হবে । এভাবে দ্বিতীয় পড়েনের ক্ষেত্রে ভাসা টানা সমূহ দাগাঙ্কিত করে ভরাট করতে হবে। একইভাবে পর পর রিপিটের সাইজ অনুযায়ী পড়েন সুতা অর্থাৎ পিক বরাবর লিফটিং প্লান সম্পূর্ণ করতে হবে।
সতর্কতা
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান করার জন্য অতিমাত্রায় মনোযোগী থাকা দরকার । নতুবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । ভুল ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লানে উৎপাদিত কাপড়ে ডিজাইনও ভুল হবে ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা
কাপড় বুননের সময় ঝাঁপগুলি উপরে নিচে উঠানামা করে। প্রতিটি ঝাঁপে অনেকগুলো ব থাকে যার মাঝখানে একটি করে ছিদ্রযুক্ত চক্ষু বা আই তাকে মেইল আই ব চক্ষু বলে। প্রতিটি ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে একটি করে সুতা প্রবেশ করানো হয়। ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সুতা প্রবেশ করাকে ড্রাফটিং বলে। ড্রাফটের মাধ্যমে ঝাঁপের সংখ্যা ও তার মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে পথ দেখানো হয় ।
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান অনুযায়ী ড্রাফটিং করার পদ্ধতি-
ড্রাফটিং করার জন্য প্রথমে একটি স্ট্যান্ড বা ফ্রেমের উপর উইভারস্ বিশ্বকে স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঝাঁপ ও রিড উক্ত স্ট্যান্ডে স্থাপন করা হয়। স্ট্যান্ডের দুই পার্শ্বে দুই জন অভিজ্ঞ শ্রমিক থাকে যারা ড্রাফটিং প্লান দেখে সহজেই টানা সুতাকে ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টেনে নিতে পারে। ডিজাইন অনুযায়ী এক পার্শ্বের শ্রমিক সুতা সনাক্ত করে এবং অপর পার্শ্বের শ্রমিক ড্রইং হুকের সাহায্যে উক্ত সুতা ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টেনে নেয়। এভাবে ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টানা সুতা টেনে নিয়ে ড্রাফটিং কার্য সমাধা করা হয় ।
সতর্কতা
ডিজাইন অনুযায়ী সুতা সনাক্তকরণ ও নির্দিষ্ট ঝীপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে টানা সুতা টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় অতিমাত্রায় মনোযোগী হতে হবে। নতুবা স্থূল ড্রাফটিং এর কারণে তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ের ডিজাইনও ভুল হবে।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
সবচেয়ে সহজ ও সরলতম উইড বা ডিজাইন হলো প্লেইন ডিজাইন। যে কোন সংখ্যক টানা সুতা পর্যায়ক্রমে জোড় ও বেজোড় সংখ্যক সুভাকে উপরে উঠিয়ে ও নিচে নামিয়ে প্লেইন উইভ তৈরি করা সম্ভব। এই উইভের মধ্যে সুতাগুলো একটি বাদে একটি বন্ধনীতে অংশ গ্রহণ করে ।
সংজ্ঞা
(ক) প্লেইন উইভ টানা ও পড়েন সুতার পর্যায়ক্রমিক ইন্টারলেসমেন্ট এর মাধ্যমে যে উইভ গঠন করা হয় । তাকে প্লেইন উইভ বলে । প্লেইন উইভে টানা ও পড়েন দুইটি সুতার বন্ধনীর মাধ্যমে সর্বাধিক দৃঢ়তা প্রমাণ করে ।
(খ) ড্রাফটিং প্লান যে পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নিয়মে টানা সুতা ঝাঁপের ব চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের মাধ্যমে টানা বা গাঁথা হয় তাকে ড্রাফটিং বলে এবং যে নিয়ম বা প্লানের মাধ্যমে এই কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে ড্রাফটিং প্রান বলে।
(গ) লিফটিং প্লান ঝাঁপ উপরে উঠানো ও নিচে নামানোর ফলে শাটেল চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে লিফটিং প্লান বলে ।
ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরি করার পদ্ধতি
যেহেতু মাত্র ২x২ রিপিটে প্লেইন ডিজাইন করা হয় কাজেই এই ডিজাইনের ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান করা অত্যন্ত সহজ।
মূল উইডে ২ ঘর টানা ও ২ ঘর পড়েন সুতা দ্বারা প্লেইন ডিজাইনের রিপিট তৈরি করা হয়েছে। কাজেই ড্রাফটিং প্লানের জন্য আড়াআড়ি ঘর বা রেখাকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয়। যেহেতু প্লেইন উইভের রিপিটে ২টি মাত্র টানা সুতা রয়েছে। কাজেই এখানে মাত্র ২টি ঝাঁপ ব্যবহার করলেই চলে অর্থাৎ ঝাঁপের জন্য ২টি টানা সুতা ২টি ঝাপের মেইল আই এর মধ্যে টেনে নিলেই ড্রাফটিং সম্পন্ন হবে ।
অনুরুপভাবে লিফটিং প্লানের জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উলম্ব ঘর ও পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান করতে হবে ২টি পড়েন সুতা ও ২টি টানা সুতা দ্বারা রিপিটের জন্য লিফটিং পানও ২x২ ঘরে করলেই চলবে যা ডিজাইনের অনুরূপ হবে ।
সতর্কতা-
যে কোন ডিজাইন, ড্রাফটিং প্লান ও লিফটিং প্লান তৈরি করার সময় মনোযোগী হওয়া উচিত নতুবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
টুইল উইভের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো কাপড়ের উপর কোনাকুনি শিররেখা দেখা যায়। টুইল উইভের টানা সুতাগুলো এমনভাবে বন্ধনীতে অংশ গ্রহণ করে যে প্রতিটি টানা সুতার বন্ধনী বিন্দু পূর্ববর্তী টানা সুতার বন্ধনী বিন্দু সাপেক্ষে এক ঘর উপরে বা এক ঘর নিচে স্থানান্তরিত হয়ে এ টুইল রেখার সৃষ্টি হয়। এ টুইল লাইন কাপড়ের উভয় পার্শ্বে দৃষ্টি গোচর হয়। এটি সাধারণত ডান থেকে বামে অথবা বাম থেকে ডানে এইভাবে অগ্রসর হয়।
সংজ্ঞা-
যে উইন্ডের কাপড়ের উপরিভাগে টানা অথবা পড়েন ভাসা অথবা টানা পড়েন সম বা অসম কতগুলো কোনাকুনি শিররেখা ও ডায়াগোনাল রেখা দৃষ্ট হয় তা-ই টুইল উইভ।
ডিজাইন সহ ড্রাফটিং ও লিফটিং প্লান তৈরিকরণ-
ক) ডিজাইন- টুইল উইভের ক্ষুদ্রতম ডিজাইন ৩×৩ অর্থাৎ ৩ ঘর টানা সুতা ও ৩ ঘর পড়েন সুতা। কাজেই ৩×৩ টুইল ডিজাইন অংকন করার জন্য অর্থাৎ ২ সুতা আপ ও ১ সুতা ডাউন ধরে ডিজাইনটি অংকন করি । ১ম টানা সুতায় ১ম দুইটি পিক আপ অর্থাৎ চৌকো ঘরসমূহ ভরাট করি ও ৩য় পিক ডাউন অর্থাৎ চৌকো ঘর খালি রাখি। এভাবে ২য় টানা সুতায় এক পিক উপরে অর্থাৎ ২য় ও ৩য় পিক এর জন্য চৌকো ঘর ভরাট করি ও ১ম পিক এর জন্য চৌকো ঘর খালি রাখি। অনুরূপভাবে ৩য় টানা সুতায় ৩য় ও ১ম পিকের জন্য চৌকো ঘর ভরাট করি এবং ২য় পিকের জন্য চৌকো ঘর খালি রাখি । এভাবে পুরো ৩×৩ ঘরের টুইল ডিজাইন তৈরি করি ।
ড্রাফটিং প্লান-
মূল ডিজাইন অর্থাৎ উইভ প্লানকে মূল ধরে এর ঠিক উপরে ড্রাফটিং প্লান করা হয়। ড্রাফটিং প্লানের মধ্যে আড়াআড়ি ঘর অথবা রেখাগুলোকে ঝাঁপ হিসেবে নির্দেশ করা হয় এবং ঝাঁপ সমূহের উল্লম্ব ঘরগুলোকে টানা সুতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন টানা সুতা বরাবর ঝাঁপগুলোতে বাইন্ডিং থাকে অর্থাৎ টানা ভাসা থাকে সেই ঝাঁপগুলোর মেইল আইতে টানা সুতা গাঁথা হয়। যেহেতু ৩x৩ ঘরের মূল ডিজাইনের জন্য ড্রাফটিং প্লান করতে হবে এবং ৩টি টানা সুতার বাইন্ডিং একটার সাথে অন্যটার কোন মিল নেই, কাজেই মোট ৩টি ঝাপ অর্থাৎ ড্রাফটিং প্লানের জন্যও মোট ৩×৩ ঘরের প্রয়োজন হবে। আমরা মূল ডিজাইনের ঠিক উপরে ৩x৩ ঘর ড্রাফটিং প্লানের জন্য নিয়ে নেই । অতপর ১ম টানা সুতার জন্য ১ম ঝাঁপ, ২য় টানা সুতার জন্য ২য় ঝাঁপ, ৩য় টানা সুতার জন্য ৩য় ঝাঁপ অর্থাৎ ৩টি ঘরের ১ম ঘরের ১ম ঝাঁপ, ২য় ঘরের ২য় ঝাঁপ ৩য় ঘরের ৩য় ঝাঁপ এভাবে ১, ২, ৩ চৌকো ঘরগুলো পূরণ করি এবং ড্রাফটিং প্লান সমাপ্ত করি ।
গ) লিফটিং প্লান-
যেহেতু ৩×৩ ঘরে মূল ডিজাইন ও ড্রাফটিং প্লানে ৩টি ঝাঁপ ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই লিফটিং প্লানেও গ্রাফ পেপারে ৩×৩ ঘর নিতে হবে । লিফটিং প্লানের জন্য প্রথমেই ঝাঁপের সংখ্যার সমান উল্লম্ব ঘর এবং পড়েন সুতার সংখ্যার সমান আড়াআড়ি ঘর নিয়ে লিফটিং প্লান থেকে ঝাঁপগুলো তীর রেখা টেনে নিয়ে খাড়াভাবে অবস্থান করানো হয় ।
লিফটিং প্লানের ঝাঁপ উপরে উঠানোর জন্য উইভ প্লানের প্রথম পড়েন সুতার যে কয়টি টানা ভাসা আছে উক্ত টানা সুতাগুলো যে ঝাঁপের মধ্যে গাঁথা আছে সে ঝাপগুলো উপরে উঠাতে হবে। অর্থাৎ উক্ত চৌকো ঘরগুলো ভরাট করতে হবে । আমাদের নির্ধারিত ডিজাইনের জন্য ১ম পিকে ১ ও ৩ নং ঘর, ২য় পিকে ১ ও ২ নং ঘর, ৩য় পিকে ২ ও ৩ নং ঘর ভরাট করা হলো। এভাবে লিফটিং প্লান সমাপ্ত করা হলো ।
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় প্রকার সেলুলোজ আঁশের প্রতি ডাই-এর তীব্র আসক্তি ও রঞ্জন ক্ষমতা আছে। বিভিন্ন ধরনের ফাইবার যেমন- ভিসকোস, কিউপ্রোমেনিয়াম ইত্যাদি রং করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় । কিন্তু সেলুলোজিক ফাইবারের প্রতি ডাইরেক্ট ডাই-এর আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। কাজেই, কখনো কখনো সাবস্ট্যানটিভ ডাই বা ডাইরেক্ট কটন কালারও বলা হয় ।
সংজ্ঞা
ডাইরেক্ট ডাই যে সকল ডাই-এর ফাইবারের প্রতি সরাসরি আকর্ষণ আছে, সরাসরি প্রয়োগ করার জন্য কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই তাকে ডাইরেক্ট ডাই বলে ।
গ) পদ্ধতি
যে কাপড়কে রং করতে হবে তার ওজনের ১-৫% রং নিয়ে অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি যোগ করে প্রথমে পেস্ট তৈরি করতে হবে । পেস্ট এ ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০ গুণ পরিমাণ পানি নিয়ে ডাই-এর দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে । আলাদা ২টি পাতে ২-৩% সোড অ্যাশ ২০% লবণের দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে।
অতপর ডাই বাথে কাপড়ের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাশ দ্রবণ যোগ করে ৭০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। ফলে পানির ক্ষরতা দূর হয়। বাথ এর তাপমাত্রা ৮০ সে. এ উঠানোর পর কাপড় ও রং এর দ্রবণ দেওয়া হয় ও ৩০ মিনিট যাবৎ ক্রিয়া করানো হয়। বাথের তাপমাত্রা ৯০°-১০০° সে. পর্যন্ত উঠানোর পর NaCl দ্রবণ আস্তে আস্তে যোগ করা হয় ও ৩০ মিনিট নড়াচড়া করে স্কুইজ করে অতিরিক্ত রঙ ফেলে দিয়ে প্রথমে গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি সহযোগে কাপড় ধোয়া হয় ।
সতর্কতা-
০ ডাইরেক্ট ডাই-এর ফাইবারের প্রতি আসক্তি প্রবল কিন্তু পরিশেষ ক্রিয়া দ্বারা রং পাকা দ্বারা রং পাকা হয় না।
০ ডাইং করার সময় NaCl পরিমাণ মতো মিশাতে হবে নতুবা ডাই পেনিট্রেশন যথাযথ হবে না
উপসংহার / মন্তব্য
ভূমিকা-
রি-অ্যাকটিভ ডাই পানিতে দ্রবণীয়, এটি এক ধরনের রাসায়নিক রঞ্জক যৌগ বিশেষ। এখানে রং এর অনু আঁশের পলিমারের সংগে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। এজন্য এ শ্রেণির রংগুলোকে রি-অ্যাকটিভ ডাই বলে । কটনের উপর রি-অ্যাকটিভ ডাই সবচেয়ে উজ্জ্বল সেড তৈরি করে। এ ডাই ডাইং প্রিন্টিং সব কিছুর জন্যই উপযোগী। এর ওয়েট ফাস্টনেস বেশ ভালো ।
সংজ্ঞা-
রি-অ্যাকটিভ ডাই : ডাই-এর অনুতে রি-অ্যাকটিভ গ্রুপ বিদ্যমান এবং রং এর অনু আঁশের পলিমারের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে টেক্সটাইল দ্রব্যকে রঙিন করে বলে এ ডাইকে রি-অ্যাকটিভ ডাই বলে ।
রি-অ্যাকটিভ ডাই দ্বারা কাপড় রং করার পদ্ধতি -
বর্ণনা
যে কাপড়কে রং করতে হবে তার ওজনের ১-৫% রং নিয়ে অল্প পরিমাণ ঠান্ডা পানি যোগ করে প্রথমে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট এ ওয়েটিং এজেন্ট যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০গুণ পরিমাণ পানি দিয়ে ডাই-এর দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে । আলাদা দুইটি পাত্রে ২-৩% সোডা এ্যাশ ও ২০% লবণের দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে।
অতপর ডাই বাঘে কাপড়ের ওজনের ২০ গুণ পানি নিয়ে তার মধ্যে সোডা অ্যাস দ্রবণ যোগ করে ৭০° সে. তাপমাত্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয় । ফলে পানির খরতা দূর হয় । বাথ এর তাপমাত্রা ৮০° সে. এ উঠানোর পর রং এর দ্রবণ ও কাপড় দেওয়া হয় এবং ৩০ মিনিট যাবৎ ক্রিয়া করানো হয়। বাথের তাপমাত্রা ৯০-১০০° সে. পর্যন্ত উঠানোর পর NaCl দ্রবণ আস্তে আস্তে যোগ করা হয় এবং ৩০ মিনিট নাড়াচাড়া করে স্কুইজ করে অতিরিক্ত রং কে ফেলে দেওয়া হয় । অতপর প্রথমে গরম পানি ও পড়ে ঠান্ডা পানি সহযোগে কাপড় ধৌত করা হয়।
আরও দেখুন...