ঋণপত্র হলো ঋণের দলিল। অর্থনৈতিকভাবে সংকটগ্রস্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির অর্থ সংগ্রহের অন্যতম হাতিয়ার এ ঋণপত্র। ঋণপত্রের মাধ্যমে কোম্পানি একদিকে অর্থ সংগ্রহ করে অন্যদিকে অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সুদ প্রাপ্তির মাধ্যমে আয়ের বিষয় নিশ্চিত হয় । যারা ঋণপত্র ক্রয় করে তাদেরকে কোম্পানির পাওনাদার বলে ।
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি স্বীয় সীলমোহরযুক্ত যে দলিলের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর সুদ প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে জনগণের নিকট থেকে ঋণ হিসেবে মূলধন সংগ্রহ করে তাকে ঋণপত্র বলে । ঋণপত্রে কোম্পানির নামযুক্ত সীলমোহর থাকে। এর উপর প্রদেয় সুদ, জামিন, পরিশোধের সময় প্রভৃতি শর্তাবলির উল্লেখ থাকে। শেয়ারের মতো এরও একটি আঙ্কিক মূল্য থাকে। উল্লেখ্য যে, কোম্পানি আইন অনুযায়ী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ঋণপত্র বিলি করে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ঋণপত্র বিক্রি করতে পারে না ।
ঋণপত্রের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Debenture)
ঋণপত্রকে ঋণের দলিল বলা হয়। কোম্পানির মূলধন গঠনের জন্য এ দলিলটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে । সুতরাং, ঋণপত্র বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। ঋণের জামানত, ঋণ পরিশোধের শর্ত, হস্তান্তর ও পরিবর্তনের সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদির ভিত্তিতে ঋণপত্রকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। কোম্পানির ঋণ দাতারা সুযোগ এবং চাহিদা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করে থাকে ।
ঋণপত্রকে নিােক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়—
১. সাধারণ বা জামানত বিহীন ঋণপত্র (Ordinary or Unsecured Debenture): যে ঋণপত্র বিলি করতে কোম্পানিকে কোনো প্রকারের জামিন দিতে হয় না তাকে সাধারণ বা জামানত বিহীন ঋণপত্র বলে। এ জাতীয় ঋণপত্রে শুধু ঋণের টাকা ও সুদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি থাকে। বাজারে কোম্পানির যথেষ্ট সুনাম থাকলে তার উপর ভিত্তি করে জনসাধারণ জামিন ছাড়াই এরূপ ঋণপত্র ক্রয় করে থাকে। সুনামই ক্রেতার কাছে জামানত হিসেবে কাজ করে। এরূপ ঋণপত্রের মালিকগণ কোম্পানির সাধারণ পাওনাদার বলে বিবেচিত হন।
২. বন্ধকী বা জামানতযুক্ত ঋণপত্র (Mortgage or Secured Debenture): ব্যবসায়ের কোনো সম্পত্তি বন্ধক রেখে বা জামিন রেখে কোম্পানি যেসব ঋণপত্র ইস্যু করে, সেগুলোকে বন্ধকী ঋণপত্র বলা হয়। এতে কোম্পানির ঋণগ্রহীতাগণ ঋণের আসল ও সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা লাভ করে। এ জাতীয় ঋণপত্র বিলির ক্ষেত্রে কোম্পানিকে ঋণপত্রের জামানতকৃত সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে নিবন্ধকের কাছে জানাতে হয় ।
বন্ধকী/জামানতযুক্ত ঋণপত্রকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়:
৩. নিৰ্দিষ্ট জামানত যুক্ত ঋণপত্র (Fixed Charge Debenture): কোম্পানির বিশেষ সম্পদের উপর জামিন রেখে যে ঋণপত্র বিলি করা হয় তাকে বলে নির্দিষ্ট জামানতযুক্ত ঋণপত্র। এসব ক্ষেত্রে ঋণপত্রধারীদের অনুমতি ছাড়াই লেনদেন করে থাকে ।
১. পরিশোধ্য ঋণপত্র ( Redeemable Debenture): নির্দিষ্ট সময় শেষে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে সব ঋণপত্র কোম্পানি ইস্যু করে থাকে সেগুলোকে বলে পরিশোধ্য ঋণপত্র। সাধারণভাবে ঋণপত্রে উল্লেখিত শর্তানুসারে এরূপ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়।
২. অপরিশোধ্য ঋণপত্র (Irredeemable Debenture): যে ঋণপত্রের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ থাকে না এবং ঋণপত্রধারিগণ তাদের প্রদত্ত অর্থ দাবি করতে পারে না তাকে অপরিশোধ্য ঋণপত্র বলে। এরূপ ঋণপত্রকে চিরস্থায়ী ঋণপত্র বলে ।
১. নিবন্ধিত ঋণপত্র ( Registered Debenture): যে ঋণপত্রে ক্রেতার নাম কোম্পানির বইতে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে নিবন্ধিত ঋণপত্র বলে। এ ধরনের নিবন্ধন পত্রে ক্রেতার নাম, ক্রমিক নম্বরসহ উল্লেখ থাকে। হস্তান্তর দলিল সম্প্রদান করে এ ধরনের ঋণপত্রের ধারক সংশ্লিষ্ট ঋণপত্র কোম্পানিকে জানিয়ে বিক্রি করতে পারে ।
২. অনিবন্ধিত ঋণপত্র (Un- Registered Debenture): যে ঋণপত্রে ক্রেতার নাম এবং এর বিলিকারী কোম্পানির বইতে লিপিবদ্ধ থাকে না তাকে অনিবন্ধিত ঋণপত্র বলে। এ ঋণপত্রে ক্রেতার নাম ও ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে না। এ ধরনের ঋণপত্র হস্তান্তরের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না ।
১. রূপান্তরযোগ্য ঋণপত্র (Convertible Debenture): শর্তানুসারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ঋণপত্রের মালিকগণ ইচ্ছা করলে তাদের ঋণপত্রকে শেয়ারে রূপান্তর করতে পারে। এ ধরনের ঋণপত্রকে পরিবর্তনীয় বা রূপান্তরযোগ্য ঋণপত্র বলে ।
২. অরূপান্তরযোগ্য ঋণপত্র (Unconvertible Debenture): যে ঋণপত্রকে কখনই শেয়ারে রূপান্তর করা যায় না তাকে অরূপান্তরযোগ্য ঋণপত্র বলে। কেবল অর্থের মাধ্যমে এ ঋণপত্রের টাকা পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোম্পানি জগতে বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রের ব্যবহার ব্যাপক। বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র কোম্পানির অর্থায়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে।
আরও দেখুন...