এসএমই (SME) ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত সহায়তা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠাসমূহকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তায় সরকার বিশেষ যে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে তাই এসএমই ফাউন্ডেশন নামে পরিচিতি । SMES বলতে Small and Medium Enterprises বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে বুঝায় । ২০০৬ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে অমুনাফাভোগী (Non-profit) প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। যা ইতোমধ্যেই দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে এক নজীর সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র ঋণ প্রদানই নয় উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দান, সমর্থনমূলক বিভিন্ন সহায়তা প্রদান ও নারী উদ্যোক্তাদেরকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান অনন্য ভূমিকা রাখছে।

ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৩১ থেকে ১২০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও কারখানা বিল্ডিং বাদে ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা তাকেই ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান বলে । অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে ১২১ থেকে ৩০০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও কারখানা বিল্ডিং বাদে ১৫ কোটি টাকার অধিক থেকে ৩০ কোটি টাকা তাকে মাঝারি প্রতিষ্ঠান বলা হয়ে থাকে। সেবা ও অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বেলায় যেখানে ১০ থেকে ৫০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও সংশ্লিষ্ট দালান বাদে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা তাকে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এবং যেই প্রতিষ্ঠানে ৫১ থেকে ১২০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও দালান বাদে ২ কোটির অধিক থেকে ১৫ কোটি টাকা তাকে মাঝারি প্রতিষ্ঠান বলে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা গেছে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯০%ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত । দেশের সমগ্র শিল্পে নিয়োজিত জনশক্তির ৯০% ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের আওতাধীন। দেশের সমগ্র জনশক্তির ২৫% এ খাতের সাথে জড়িত। SME ফাউন্ডেশন করার পর এ খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় পুনঃঅর্থায়ন করায় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে ।

চিত্র: ঢাকার পান্থপথ এলাকায় SME ফাউন্ডেশনের কার্যালয়

SME ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক এসএমই খাতে বিতরিত ঋণের পরিমাণ ছিল ১,১০,২৮৭.৯৩ কোটি টাকা। এ সময়ে সর্বমোট ৭,০৯,০২৪টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। উল্লেখ্য SME ঋণ বিতরণে ১৫% ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। একই সময়কালে ৯৩,৯৮৭টি এসএমই নারী উদ্যোক্তার বিপরীতে ৩,৯৬৭.৯২ কোটি টাকা ঋণ প্রদত্ত হয়। এসএমই ঋণের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ৫০ হাজার টাকা। প্রদত্ত ঋণ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য নিম্নে প্রদত্ত হলো:

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে যে তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন করা হয়অর্থায়নকৃত এন্টারপ্রাইজের সংখ্যা (খাতভিত্তিক) বিভিন্ন মেয়াদি মোট ঋণ (কোটি টাকা)
শিল্পবাণিজ্যসেবামোট
ক. বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল৯,৫০২১৩,৮০৩৩,৭৫২২৭,০৫৭২,৬৩৯.৫৯
খ. আই. ডি.এ. তহবিল (বিশ্ব ব্যাংকের) ১,৩৬৮১,৩০৬৪৮৬৩,১৬০৩১২.৬১
গ. এডিবি তহবিল ১ ও ২ (এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের)৪,৫৬৫৯,৫৩১২,৮১৩১৬,৯০৯১,০৮১.৮৯
ঘ. জাইকা তহবিল৩৭৯০৯১২৫৫১৩৩৮৯.৬২
মোট১৫,৮১৪২৪,৬৪৯৭,০৭৬৪৭,৫৩৯৪,৪২৩.৭১

ব্যবসায় প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী এসএমই লোনের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা । ঋণের মেয়াদ প্রকল্প অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবে তা চলতি মূলধনের ক্ষেত্রে ১ বছর এবং মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি খাতে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত মঞ্জুর করা হয়ে থাকে । এরূপ ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের যে সকল যোগ্যতা বিবেচনা করা হয় তা হলো-

  • ঋণ প্রত্যাশী উদ্যোক্তার কমপক্ষে দু'বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়;
  • উদ্যোক্তাকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হয়; 
  • উদ্যোক্তার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হয়;
  • ঋণ প্রত্যাশীকে সুস্থ, শিক্ষিত ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল হতে হয়;
  • ঋণ খেলাপী, দেউলিয়া, উম্মাদ ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি এরূপ ঋণের আবেদন করতে পারে না,
  • মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় এবং ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জামানতে প্রদান করা হয়ে থাকে ইত্যাদি ।
Content added || updated By
Promotion