কোম্পানি ব্যবসায়ের অসুবিধা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

নিবন্ধিত, বিধিবদ্ধ দায়সম্পন্ন বৃহৎ আকারের ব্যবসায় সংগঠন কোম্পানি সংগঠন। এটি অনেকগুলো সুবিধা ভোগ করলেও বিভিন্ন দিক বিচারে এর বেশ কিছু অসুবিধাও দৃষ্ট হয়। নিম্নে এসব অসুবিধাসমূহ আলোচিত হলো:

১। গঠনে জটিলতা (Complexity in formation): বিশেষত সার্বজনীন কোম্পানি গঠন করা বেশ জটিল। এজন্য বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর এ কোম্পানি গঠন করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এটি গঠন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।

২। অতি বৃহৎ আকার (Gigantic size): যৌথমূলধনী ব্যবসায়ের আয়তন এত বৃহৎ আকার ধারণ করে যে, এটি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়।

৩। স্বজনপ্রীতি (Nepotism): পরিচালকগণের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে স্বজনপ্রীতির প্রবণতা বেশি থাকে । 

৪। মালিকানা ব্যবস্থাপনায় বিচ্ছেদ Divorce between ownership ও and management): এ ধরনের কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারগণ সরাসরি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে না। ফলে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বিচ্ছেদ দেখা দেয় ।

৫। শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ (Forfeiture of shares): শেয়ারের তলবী অর্থ অনাদায়ী থাকলে পরিচালকমণ্ডলী পরিমেল নিয়মাবলি অনুসারে পরিচালকমণ্ডলীর সভায় প্রস্তাব পাস করে এটি বাজেয়াপ্ত করতে পারে। যেসব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয় এর প্রদত্ত অর্থ ফেরত দেয়া হয় না, ফলে শেয়ারহোল্ডরগণ বঞ্চিত হয় । 

৬। একচেটিয়া উদ্ভব (Growth of monopoly): বৃহদায়তন কোম্পানিগুলো ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে করতে এমন অবস্থায় এসে দাঁড়ায় যে, তারা তখন একচেটিয়া ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। 

৭। শ্রমিক শোষণ (Exploitation of workers): বৃহদায়তন কোম্পানিগুলোর দরকষাকষির ক্ষমতা অধিক থাকায় তারা কর্ম পরিবেশকে দূষিত করে শ্রমিক শোষণ করতে থাকে ।

৮। শ্রমিক-মালিক বিরোধ (Dispute between labour and owner): কোম্পানি পরিচালনার ভার পেশাদারি পরিচালকদের হাতে থাকায় শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে । 

৯। সমন্বয়ের অভাব (Lack of co-ordination): বৃহদায়তন কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাব থাকে । ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন হ্রাস পায় ।

১০। সরকারি নিয়ন্ত্রণ (Government Control): বৃহদায়তন কোম্পানিগুলোর কাজকর্মের উপর সরকারি নিয়ম-কানুন আরোপ করা হয়। বস্তুতঃপক্ষে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে, বিভিন্ন দুর্নীতির অবসান ঘটাতে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ খুবই উপযোগী। কিন্তু সরকারি প্রশাসনে গলদ থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হয়। ফলে কোম্পানির স্বাভাবিক কাজকর্মে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয় ।

পরিশেষে বলা যায়, যদিও এ ব্যবসায়ের অনেকগুলো অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবুও তুলনামূলক বিচারে এর সুবিধাই অনেক বেশি। সতর্কতার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এর অনেকগুলো সীমাবদ্ধতাই দূর করা সম্ভব। তাই সকল দেশেই এটি একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে ইতোমধ্যেই তার স্থান করে নিয়েছে।

Content added By
Promotion