“Prospectus is an advertisement of a company " সাধারণত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি জনগণের কাছে শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয়ের জন্য কোম্পানির পরিপূর্ণ তথ্য সম্বলিত যে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, সেটি বিবরণ পত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা চালানো হয়। একে কোম্পানির দর্পণের (Mirror) সাথে তুলনা করা হয় ।
সাধারণত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধনের ছাড়পত্র সংগ্রহের পর মূলধন সংগ্রহের নিমিত্তে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা জানিয়ে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে যে পত্র রচনা করা হয় তাকে বিবরণপত্র বলে । মূলত কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র পাবার নিমিত্তে নিবন্ধনের ছাড়পত্র অর্জনের সাথে সাথে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির প্রবর্তক বা উদ্যোক্তাগণ যে পত্রের মাধ্যমে জনগণকে শেয়ার বা ডিবেঞ্চার ক্রয়ের আহবান জানায় তাকে বিবরণপত্র বা প্রসপেকটাস বলে ।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি যখন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় বা নতুন কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহের সময় জনসাধারণকে অবহিত করা বা উৎসাহিত করার জন্যই বিবরণী প্রচার করে থাকে। বিবরণ পত্রে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা জনগণকে এ কোম্পানি সম্পর্কে পূর্ণ
বিবরণ দিতে সক্ষম ।
একটি বিবরণ পত্রে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত তা নিরূপ—
১. কোম্পানির নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্যাবলি ।
২. অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ও বিবরণ।
৩. শেয়ার ক্রয়ের আবেদন, আবণ্টন ও তলবে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ এবং আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ।
8. ন্যূনতম মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ।
৫. প্রাথমিক খরচের পরিমাণ।
৬. পরিচালকদের নাম, ঠিকানা ও পেশা ।
৭. পরিচালকদের যোগ্যতাসূচক শেয়ার ক্রয়ের সংখ্যা ও মূল্য।
৮. পরিচালকদের পারিশ্রমিকের পরিমাণ ।
৯. পরিচালক পর্ষদের সদস্যদের স্বাক্ষর।
১০. সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ।
১১. পরিচালকদের দেয় অর্থ ও অন্যান্য সুবিধা ।
১২. লভ্যাংশ বণ্টন পদ্ধতি ।
১৩. কোম্পানির নিরীক্ষকের নাম ও ঠিকানা ।
১৪. কোম্পানি আইন উপদেষ্টার নাম ও ঠিকানা।
১৫. কোম্পানির ব্যাংকারের নাম ও ঠিকানা।
১৬. কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষণের নিয়মাবলি ।
১৭. তৃতীয় পক্ষের সাথে সম্পাদিত চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ।
১৮. স্মারকলিপির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ।
১৯. পরিমেল নিয়মাবলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
২০. পরিচালকগণের স্বার্থ ।
২১. শেয়ারের শ্রেণীবিভাগ ও প্রত্যেক শেয়ারের সংখ্যা।
২২. প্রতি শেয়ারের বিক্রয়মূল্য এবং পরিশোধ পদ্ধতি ।
২৩. কোম্পানিতে শেয়ার মালিকদের স্বার্থ ।
২৪. শেয়ার বণ্টনের দায় কেউ গ্রহণ করলে তার নাম ও ঠিকানা।
২৫. কোম্পানির পূর্ব ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
২৬. ম্যানেজিং এজেন্ট বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নাম, ঠিকানা, পারিশ্রমিক এবং নিয়োগ পদ্ধতি ।
২৭. চলতি মূলধনের পরিমাণ ।
২৮. শেয়ার আবেদনের সময় এবং বরাদ্ধের জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে তার পরিমাণ ।
২৯. কোম্পানির নিকট সম্পত্তি বিক্রেতাদের নাম ঠিকানা ও পরিচয় ।
৩০. কোন উদ্যোক্তাদের নাম, ঠিকানা এবং কোনো অর্থ বা সুবিধা প্রদান করা হলে তার বিবরণ ।
৩১. কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিসমূহের তারিখ, পক্ষসমূহ।
৩২. কোম্পানির ব্যবসায় চালু থাকলে বিগত কয়েক বছরের উদ্বৃত্ত পত্র ও লাভ -ক্ষতির হিসাব বিবরণী।
৩৩. বিবরণপত্র প্রচারের তারিখ ও পরিচালকদের প্রত্যেকের স্বাক্ষর ইত্যাদি।
পরিশেষে বলতে পারি যে, সব ধরনের কোম্পানির বিবরণপত্রেই উল্লেখিত সবগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত নাও থাকতে পারে । প্রবর্তক বা পরিচালকরা বিচার-বিবেচনা করে কোম্পানির বিবরণপত্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে থাকে। তবে কোনো অবস্থাতেই বিবরণ পত্রে মিথ্যা তথ্য-পরিবেশন করা যাবে না ।
শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির বিবরণপত্র নিবন্ধকের নিকট পেশ করা এবং সেগুলো জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রচার করা বাধ্যতামূলক। তবে কোম্পানিকে সর্বক্ষেত্রেই তা প্রচার করতে হবে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক সময় দেখা যায় কোম্পানির প্রবর্তকগণ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আর বিবরণপত্র প্রচার করার প্রয়োজন হয় না । তখন ১৯৯৪ সালের আইনে বর্ণিত তফসিল-৪ অনুযায়ী একটি বিকল্প বিবরণপত্র প্রস্তুত করতে হয় এবং তার এক কপি নিবন্ধকের নিকট প্রেরণ করতে হয় । তা না হলে কোম্পানি শেয়ার বা ঋণপত্র বিলি করতে পারে না। অর্থাৎ, একটি কোম্পানি গঠনের প্রয়োজনীয় মূলধন যখন প্রবর্তকগণ তাদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন অথবা অন্য কোনো উৎস থেকে সংগ্রহ করতে সমর্থ হন তখন বিবরণপত্র প্রচারের পরিবর্তে নিবন্ধকের নিকট যে বিবৃতি প্রদান করা হয় তাকে বিবরণপত্রের বিকল্প বিবৃতি বলে অভিহিত করা হয় ।
আরও দেখুন...