এক্স রে

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | | NCTB BOOK

      ১৮৯৫ সালে রন্টজেন পর্যবেক্ষণ করেন যে, দ্রুতগতি সম্পন্ন ইলেকট্রন কোনো ধাতুতে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক প্রকার বিকিরণ উৎপন্ন হয়। এর প্রকৃতি তখন বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল অজানা। এ বিকিরণকে বলা হয় এক্স-রে।

এক্স-রে দু প্রকার;

(ক) কোমল এক্স-রে এবং

(খ) কঠিন এক্স-রে।

     এক্স-রে যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্স-রে পাওয়া যায় তাকে কোমল এক্স-রে বলে। এক্স-রে যন্ত্রে প্রযুক্ত বিভব পার্থক্য বেশি হলে যে এক্স-রে উৎপাদিত হয় তাকে কঠিন এক্স-রে বলে ।

      বিজ্ঞানী রন্টজেন তড়িৎক্ষরণ নলে 10-3 mm পারদস্তম্ভ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎক্ষরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ করেন যে, নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড দ্বারা আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্স-রে।

     দ্রুতগতি সম্পন্ন ইলেট্রন কোনো ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন যে বিকিরণ উৎপন্ন হয়, এ বিকিরণকে এক্স-রে বলে।

এক্স-রে উৎপাদন

     ৮.৮ চিত্রে একটি 'এক্স-রে টিউব' এর প্রয়োজনীয় অংশসমূহ দেখানো হয়েছে। ফিলামেন্ট F এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ ক্যাথোড C-কে উত্তপ্ত করে। ফলে ইলেকট্রনগুলো ক্যাথোড থেকে তাদের বন্ধন মুক্তির যথেষ্ট গতিশক্তি পায় এবং তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় ক্যাথোড থেকে মুক্ত হয়ে আসে। তারপর একটি অতি উচ্চ বিভব পার্থক্য V-এর দ্বারা ইলেক্ট্রনগুলো ত্বরিত হয় ও অ্যানোডরূপী লক্ষ্যবস্তু T-তে আঘাত করে। ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে যাবার সময় ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পূর্বে ইলেক্ট্রনগুলো ৰিপুল পরিমাণে গতিশক্তি অর্জন করে। এ গতিশক্তি T-কে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা হয়,

   T= eV

চিত্র ৮.৮ : একটি এক্স-রে টিউবের প্রয়োজনীয় অংশ।

     এ ক্ষেত্রে e হলো ইলেকট্রনের আধান। ক্যাথোড ত্যাগের সময় ইলেকট্রনের যে গতিশক্তি থাকে তা eV-এর তুলনায় অনেক কম বলে আমরা এখানে তা উপেক্ষা করেছি। ক্যাথোড থেকে আগত ইলেকট্রনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের সময় এদের গতিশক্তির কিছু অংশ এক্স-রে উৎপন্ন করে। এক্স-রে টিউবে ইলেকট্রনের স্রোত নিয়ন্ত্রণ করে এক্স-রের তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধি  এবং ক্যাথোড ও লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বিভব পার্থক্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজন মত কোমল বা কঠিন যে কোনো ধরনের এক্স-রে উৎপন্ন করা যায় । 

   এক্স-রের ধর্ম

বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এক্স-রের নিম্নোক্ত ধর্মাবলি আবিষ্কৃত হয়েছে :

(১) এ রশ্মি সরলরেখায় গমন করে।

(২) এটি অত্যধিক ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন।

(৩) এক্স-রে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ। তড়িৎ ক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিক্ষিপ্ত হয় না।

(৪) এটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব ছোট, প্রায় 10-10m এর কাছাকাছি।

(৫) সাধারণ আলোর ন্যায় এক্স-রের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও সমবর্তন হয়ে থাকে।

(৬) ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে।

(৭) কোনো ধাতবপৃষ্ঠে এ রশ্মি পতিত হলে তা থেকে ইলেকট্রন নিঃসৃত হয়। সুতরাং এ রশ্মির আলোকতড়িৎ ক্রিয়া আছে।

(৮) জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম-প্লাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।

(৯) এটা আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ। গ্যাসের মধ্য দিয়ে যাবার সময় এটা গ্যাসকে আয়নিত করে।

(১০) এটি আধান নিরপেক্ষ।

     এক্স-রের ব্যবহার :

এক্স-রের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। এ রশ্মি চিকিৎসাবিজ্ঞানে, শিল্প কারখানায় ও গোয়েন্দাদের কাজে ব্যবহৃত হয়। 

(ক) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার :

১। স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙে যাওয়া হাড়, শরীরে বাইরের কোনো বস্তুর বা ফুসফুসের কোনো ক্ষতের ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।

২। ক্যানসারের চিকিৎসা ও সংক্রমণ বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।

৩। পরিপাক নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন অনুসরণ, আলসার ও দাঁতের গোড়ায় আলসার নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।

(খ) শিল্পে ব্যবহার :

১। ধাতব ঢালাইয়ের দোষ-ত্রুটিপূর্ণ ওয়েল্ডিং, ধাতব পাতের গর্ত ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। 

২। কেলাস গঠন পরীক্ষায় এক্স-রে ব্যবহৃত হয় এবং মনিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা শনাক্ত করতে পারেন।

৩। টফি, লজেন্স ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোনো কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়।

(গ) গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহার :

১। কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয় ।

২। কাস্টম কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন। কোনো নিষিদ্ধ পণ্য

কোনো কাঠের বাক্স বা ধাতুর বাক্সে থাকলে এদের মধ্য দিয়ে এক্স-রে প্রবেশ করিয়ে তা জানা যায়। 

এক্স-রে এর একক

এক্স-রের একক রন্টজেন (Roentgen)। যে পরিমাণ এই -রে প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে 2.58 x 10-4 কুলম্ব আধান উৎপন্ন করতে পারে তাকে এক রন্টজেন বলে । 

Content added || updated By
Promotion