আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিক নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানী লেঞ্জ একটি সূত্র প্রদান করেন। এটি লেঞ্জের সূত্র নামে পরিচিত। এই সূত্রটিকে তাড়িতচৌম্বক আবেশের তৃতীয় সূত্রও বলা হয়।
সুতরাং লেঞ্জের সূত্র থেকে আমরা আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি ও প্রবাহের দিক জানতে পারি।
(5.6) সমীকরণের রাশির আগে যে ঋণাত্মক চিহ্ন বসানো হয়েছে এ কারণেই। সুতরাং
… (5.7)
দক্ষিণ মেরু যখন ভেতরে প্রবেশ করা হয় তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা বাম দিকে সরে যাবে। এর অর্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে A থেকে B এর দিকে। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের উপস্থিতি নির্দেশ করছে বর্তনীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির উদ্ভব হয়েছে যার ফলে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। ডান দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে কুণ্ডলীতে আৰ্টিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে চলছে (চিত্র ৫.৬)।
চুম্বকটিকে যখন কুণ্ডলীর মধ্যে স্থির অবস্থায় রাখা হয় তখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটা নড়বে না। এর অর্থ হচ্ছে বর্তনীতে কোনো আবিষ্ট প্রবাহ নেই।
দক্ষিণ মেরুকে কুণ্ডলী থেকে বাইরে নেওয়ার সময় গ্যালভানোমিটারের কাঁটা ডান দিকে সরে যাবে। এর অর্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে B থেকে A এর দিকে। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিক পূর্ববর্তী প্রবাহের বিপরীত তাই গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিচ্যুতিও বিপরীতমুখী । ডান দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে চলছে (চিত্র ৫.৭)
ধরা যাক, একটি দণ্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরুকে একটি তারের কুণ্ডলীর দিকে নেওয়া হচ্ছে [চিত্র ৫.৮]। তাড়িত চৌম্বক আবেশের ফলে কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহের উদ্ভব হবে। এখন এই তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ এমন হবে যেন তা তার উৎপত্তির কারণ অর্থাৎ চুম্বকের গতিকে বাধা দিবে।
এটি সম্ভব যদি দক্ষিণ মেরুর সম্মুখস্থ কুণ্ডলীর তলে দক্ষিণ মেরুর উদ্ভব হয়। এখন সলিনয়েডের নিয়ম থেকে আমরা জানি যে, যেদিক থেকে দেখলে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে প্রবাহিত হয় সেদিকটি হবে দক্ষিণ মেরু। সুতরাং চুম্বকটিকে বিকর্ষণ করতে হলে কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে সেদিক বরাবর চলবে। আবার চুম্বকের দক্ষিণ মেরুটিকে কুণ্ডলী থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে কুণ্ডলীটি চুম্বকটিকে আকর্ষণ করবে। সুতরাং প্রবাহের দিক এমন হবে যেন চুম্বকের নিকটবর্তী কুণ্ডলী তলে উত্তর মেরুর আবির্ভাব হয়। সেটি একমাত্র সম্ভব যদি কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে হয়। এভাবে আমরা আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি ও তড়িৎ প্রবাহের দিক নির্ণয় করতে পারি ।
Lenz's Law and Conservation of Energy
তাড়িতচৌম্বক আবেশের ফলে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো বন্ধ কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তির উৎস ছাড়াই তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি শক্তির নিত্যতার সূত্রের ব্যতিক্রম বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাড়িতচৌম্বক আবেশে শক্তির নিত্যতা সূত্র বিরোধী কোন ঘটনা ঘটে না। লেঞ্জের সূত্র থেকেই আমরা তা প্রমাণ করতে পারি। লেঞ্জের সূত্র থেকে আমরা জানি, কোনো কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি এর সৃষ্টির কারণকেই বাধা দেয় । কোনো কুণ্ডলী ও চুম্বকের মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতির জন্য কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের উদ্ভব হয় যা ঐ আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়। সুতরাং ঐ গতি বজায় রাখার জন্য সর্বদা কিছু যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই যান্ত্রিক শক্তিই তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। সুতরাং তড়িৎপ্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া শক্তির নিত্যতা সূত্র মেনে চলে।
Read more