ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা খুশিমতো চলতে দেয়ার নীতির কারণে ধনবাদী সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। তাই এ অবস্থা পরিবর্তন করে সমাজতান্ত্রিক বা মিশ্র অর্থনীতি গড়ে তুলে কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হয়।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা জানতে পারবো—
রাষ্ট্র বা সরকারের মালিকানাধীনে গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বা সরকারি প্রচেষ্টায় নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়ে থাকে। আবার, উপস্থিত কোনো বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত্ত বা জাতীয়করণ করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সাধারণত দেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সম্পদসমূহের সুষম বণ্টন প্রভৃতির উদ্দেশ্যে এবং কতকগুলো জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় স্থাপন করা হয়। তাছাড়া, দেশরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রপাতির নির্মাণ শিল্পের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্যে সরকার এরূপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে থাকে ।
যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকে এবং দেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিকানা থাকে রাষ্ট্রের হাতে। সেই হিসেবে সাধারণ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ের চেয়ে এ ধরনের সংগঠনের কিছু বাড়তি বৈশিষ্ট্য থাকে।
নিম্নে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো—
গঠন প্রণালী (Mode of fromation): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় মূলত সরকারি নিয়ম-কানুন পালন করে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে বা দেশের আইনসভার বিশেষ আইনবলে অথবা বেসরকারি ব্যবসায় জাতীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠিত হতে পারে ।
মালিকানা (Ownership): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিক হলো সরকার বা জনগণ। এর সকল সম্পদ রাষ্ট্রের এবং এর কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়। অবশ্য এরূপ ব্যবসায় সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ।
মূলধন (Capital): সরকার এরূপ ব্যবসায়ের মালিক হওয়ার কারণে তাকেই এর প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করতে হয় । এজন্য সরকার নিজস্ব কোষাগার থেকে অথবা প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করে এর মূলধন সংগ্রহ করে ।
উদ্দেশ্য (Objectives): রাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়। তারপরও বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে এ ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করে থাকে। এ মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা হয় অথবা জনস্বার্থে ব্যয় করা হয়।
আইনগত মর্যাদা (Legal status): রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসায় কৃত্রিম ও স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী। বিশেষ আইন দ্বারা গঠিত বলে এর একটি পৃথক আইনগত মর্যাদা রয়েছে।
জনকল্যান সাধন (Public Welfare): মুনাফা বৃদ্ধি কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। জনসেবা ও জনকল্যাণই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠিত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভোগ করে থাকে ।
স্বায়ত্তশাসন (Autonomy): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠন কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী । ফলে এ ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী । বিশেষ আইন বা অধ্যাদেশ বলে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অবসান ঘটানো যায় ।
গণ-কৈফিয়ত (Public accountability): এ ব্যবসায়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য জাতীয় সংসদে সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হয়।
সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কারবারের প্রচলন বেশি। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় উদ্দেশ্যগত দিক থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ের চেয়ে ভিন্ন । অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়। বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়।
উপসংহারে বলা যায়, রাষ্ট্রীয়করণকৃত অথবা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যে সকল শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি আওতাধীনে থাকে তাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে । মুনাফা অর্জন এ ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য নয়; মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ ।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় মূলত সরকারি নিয়ম-কানুন পালন করে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে বা দেশের আইনসভার বিশেষ আইনবলে অথবা বেসরকারি ব্যবসায় জাতীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠিত হতে পারে ।
নিম্নে এ ব্যবসায়ের সুবিধা আলোচনা করা হলো:
১ . সামাজিক ন্যায়বিচার (Social justice): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সমাজের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করে এবং জনগণের ভাগ্যেন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ।
২. জনকল্যাণ সাধন (Public welfare): এরূপ ব্যবসায় জনকল্যাণের উদ্দেশ্যেই মূলত গঠিত ও পরিচালিত হয়। জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন খাত; যেমন-ওয়াসা, রেলওয়ে, ডাক ও তার ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আমাদের দেশে এ ব্যবসায় জনগণের অশেষ উপকার সাধন করে ।
৩. অধিক কর্মসংস্থান (More employment): এ ব্যবসায় শ্রমিক-কর্মীদের শোষণ না করে বরং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও এতে প্ৰয়োজনীয় সংখ্যক লোক নিয়োগ করে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
৪. সুষম শিল্পায়ন (Balanced industrialization): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সকল অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া দেশে যাতে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থাৎ সকল ধরনের শিল্পের উন্নয়ন ঘটে তার প্রতিও নজর দেয়া হয় । ফলে দেশের সুষম শিল্পায়ন ঘটে ।
৫. চাহিদা ও যোগান সমতা বিধান (Balancing between demand and supply): এক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প সংক্রান্ত কার্যাবলি বিশেষত উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় ও ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। ফলে স্বল্প বা অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা হ্রাস পায় ।
৬. একচেটিয়া প্রভাব রোধ ( Resisting monopoly influence): ব্যক্তিমালিকদের মধ্যে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টির অসৎ প্রবণতা লক্ষণীয়। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় নানান ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা বন্ধ করা যায়।
৭. দুর্নীতি ও অপচয় রোধ (Resisting corruption and wastage): ব্যক্তিমালিকগণ অধিক মুনাফার আশায় অনেক সময় নানা ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতায় ভোগে। যা রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঘটে না। এছাড়া এ ব্যবসায় ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা রোধ করে অপচয় হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৮. ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ (Control of business) : দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উপর সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। দেশের আমদানি-রপ্তানির উপরও সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সরকার দেশের অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৯. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Best utilization of natural resources): বেসরকারি খাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ছেড়ে দেয়া হলে ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা হলে দেশের সকল মানুষ এর সুফল পায়।
১০. মন্দাজনিত সংকট রোধ (Resisting problem relating to recession): অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশের দেশের বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বেকার সমস্যা প্রকট হয়। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজারে পণ্যের তীব্র সংকট দেখা যায় । কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসায় এ ধরনের সংকট সৃষ্টি করে না।
১১. গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and development): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে উঠায় এবং আর আর্থিক সামর্থ্য ভালো থাকায় এক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নের সুযোগ বেশি থাকে । উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে এ ব্যবসায় সহজেই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
মুনাফা বৃদ্ধি কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। জনসেবা ও জনকল্যাণই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠিত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একচেটিয়া কৰ্তৃত্ব ভোগ করে থাকে।এর ফলে কিছু অসুবিধা দেখা দেয় নিম্নে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অসুবিধা সমূহ আরোচনা করা হলো:
১. স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশে বাধা (Hindrance towards normal economic development): সরাসরি মালিকানায় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হলে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ নিরুৎসাহিত হয়। এতে দেশের কার্যকরী কারবারি পরিবেশ বিপন্ন হয় ও স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় ।
২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা (Problem of taking quick decision): যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের উপর ব্যবসায় সাফল্য নির্ভর করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার কারণে সকল বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বিলম্বিত ও অকার্যকর করে।
৩. লালফিতার দৌরাত্ম্য (Suffering of red tapisim): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীদের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা বিদ্যমান থাকায় ধরাবাঁধা নিয়ম-কানুনের নিগড়ে সব কাজ গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে লালফিতার দৌরাত্ম্যের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সকল কাজের গতি অত্যন্ত ধীর ও মন্থর হয়ে থাকে ।
8. অলাভজনক সংস্থা (Unprofitable organisation): এরূপ ব্যবসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সরকারি সাহায্যে টিকে থাকে। অনবরত লোকসানের ফলে এরুপ ব্যবসায় সম্পর্কে জনমনে খারাপ ধারণা জন্মে এবং জাতির জন্য তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ।
৫. নমনীয়তার অভাব (Lack of flexibility): এরূপ ব্যবসায় সরকারি নিয়ম-নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে বিধায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল কারবারি অবস্থার সাথে সঙ্গতি বিধানে ব্যর্থ হয়। ফলে তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না ।
৬. দুর্নীতি ও স্বনজনপ্রীতি (Corruption and nepotism): সাধারণভাবে এ ব্যবসায়ে কর্তাব্যক্তিদের আলাদা কোন স্বার্থ না থাকায় তাদের মধ্যে অন্যায় পথে স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে এর অভ্যন্তরে দুর্নীতি বাসা বাঁধে। এ ছাড়া এরূপ ব্যবসায় সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আত্মীয় পোষণের ক্ষেত্রে পরিণত হয় ।
৭. নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন (Frequent change of policies): সরকারি প্রশাসনের ন্যায় এর পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকেও ঘন ঘন বদলি করা হয়। ফলে নির্বাহী বদলের সাথে নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের সাথেও এর নীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়। আর এরূপ নীতির পরিবর্তন ব্যবসায়ের অগ্রগতি ব্যাহত করে।
৮. গোপনীয়তা প্রকাশ (Expressing secrecy): আইনসভার বিশেষ আইনবলে এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিধায় সংসদে এর কার্যক্রম নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি বিভাগীয় সংগঠনের কাজ নিয়েও সরাসরি আলোচনার সুযোগ থাকে। ফলে ব্যবসায় গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
৯. বিলোপের অসুবিধা (Problem in dissolution): সরকারি প্রতিষ্ঠান বিধায় এর বিলোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংসদে ও জনসাধারণ্যে নানান কথা উঠে। শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আন্দোলনের সৃষ্টি হয় । এতে সরকার জনসমর্থনের বিষয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । ফলে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও এর বিলোপ করা যায় না।
বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড মূলত ল্যান্ডফোন সেবা প্রদান করে থাকে। এটির সেবা শহর অঞ্চল, উপশহর এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত। যদিও সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রে টেলিফোনের লাইসেন্স প্রদান করেছে তথাপি ল্যান্ডফোনের ক্ষেত্রে এটি এখনো একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। এটি শুধু ল্যান্ড ফোনের সেবাই প্রদান করে থাকে তা নয়, এটি আমাদের ৬৪ জেলায় ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে ।
শ
১৯৯৮ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে “টেলিটক” নামের আলাদা একটি কোম্পানি খোলে যেটি বর্তমানে মোবাইল সেবা প্রদান করছে। টেলিটক হচ্ছে দেশের একমাত্র পাবলিক মোবাইল অপারেটর। ২০১২ সালে টেলিটক 3G প্রযুক্তি যুক্ত করে মোবাইল ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। এ প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকরা কথা বলার সাথে সাথে যার সাথে কথা বলছে তার ছবিও দেখতে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানও দেখতে পাচ্ছে। আরো নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা। এটি ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ সালের ৭নং সরকারি অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর এটি বর্তমান নাম ধারন করে। বিআরটিসি যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটির গভর্ণিংবডির সদস্যদের মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রী, যোগাযোগ সচিব, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অন্যান্য অফিসার যাদের দ্বারা সরকার কর্তৃক একজন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়।
বিআরটিসি যাত্রীসেবা এবং পণ্য পরিবহন সেবা দুটোই প্রদান করে। বিআরটিসি তিনটি আন্তর্জাতিক বাসরুট রয়েছে; এগুলো হচ্ছে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলিগুড়ি। বাংলাদেশের মধ্যে এটি চট্টগ্রাম বগুড়া, কুমিল্লা, পাবনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা বাস ডিপো থেকে আন্তঃজেলা বাস সেবা দিয়ে থাকে । বর্তমানে ঢাকার যানযট নিরসনে বিআরটিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়ত বিআরটিসির বহরে নতুন নতুন বাস যোগ হচ্ছে। জানুয়ারি ২০১২ সাল পর্যন্ত বিআরটিসির মোট বাসের সংখ্যা ছিল ১১১৬টি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে আরো কিছু দোতালা বাস আমদানি করা হয়। বিআরটিসির সবচেয়ে আধুনিক সংযোজন হচ্ছে আর্টিকুলেটেড বা জোড়া বাস যেটি ২০১৩ সালে উদ্ভোধন করা হয়। বিভিন্ন উৎসব বা অনুষ্ঠানের সময় বিআরটিসি স্পেশাল সার্ভিস চালু করে; যেমন ঈদ স্পেশাল সার্ভিস।
বাস ছাড়াও পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য বিআরটিসি ট্রাক সেবা প্রদান করে থাকে। বিআরটিসি সাধারণত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য, সার, কাগজ এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে । তাছাড়া বিভিন্ন দূর্যোগের সময় ত্রান পরিবহনে সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ১৭১ টি ট্রাক বিআরটিসি বহরে রয়েছে।
বাস ও ট্রাক সেবা ছাড়াও বিআরটিসি চালকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এটির প্রধান চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অবস্থিত গাজিপুরের জয়দেবপুর। এছাড়াও ঢাকা, চট্রগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, ঝিনাইদাহেও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। বিআরটিসির প্রধান ওয়ার্কশপ ঢাকার তেজগাঁও এ অবস্থিত।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা (BSFIC) একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয় পহেলা জুলাই ১৯৭৬ সালে । এটি ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর ২৬ নং অর্ডারের ভিত্তিতে দুটি প্রতিষ্ঠান যথা বাংলাদেশ চিনিকল মিল কর্পোরেশন (BSMC) এবং বাংলাদেশ খাদ্য এবং সহায়ক শিল্প কর্পোরেশন (BFAIC) একিভূত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা খাদ্য মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। এটির সাধারণ প্রশাসনিক কার্যাবলি “বোর্ড অব ডিরেক্টরস” এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। “বোর্ড অব ডিরেক্টরস” এ থাকে একজন চেয়ারম্যান এবং ৫ জন পরিচালক যার মধ্যে থাকে একজন অর্থায়ন, একজন বিপণন, একজন উৎপাদন ও প্রকৌশলী, একজন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং একজন আখ উন্নয়ন ও গবেষণা।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Goal & Objective)
বাংলাদেশ চিনি ও শিল্প সংস্থার অধীনে চিনিকল গুলো নিম্নরূপঃ
ক্রমিক | প্রতিষ্ঠানের নাম | অবস্থান |
১ | পঞ্চগড় চিনিকল লি. | পঞ্চগড় |
২ | খেতাবগঞ্জ চিনিকল লি | খেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর |
৩ | ঠাকুরগাঁ চিনিকল লি. | ঠাকুরগাঁ |
৪ | শ্যামপুর চিনিকল লি. | শ্যামপুর, রংপুর |
৫ | জয়পুরহাট চিনিকল লি. | জয়পুরহাট |
৬ | নাটোর চিনিকল লি. | নাটোর |
৭ | উত্তরবঙ্গ চিনিকল লি. | গোপালপুর, নাটোর |
৮ | রাজশাহী চিনিকল লি. | রাজশাহী |
৯ | কুষ্টিয়া চিনিকল লি. | কুষ্টিয়া |
১০ | মোবারকগঞ্জ চিনিকল লি. | ঝিনাইদহ |
১১ | কেরু এন্ড কোম্পানি লি. | দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা |
১২ | ফরিদপুর চিনিকল লি. | মধুখালি, ফরিদপুর |
১৩ | পাবনা চিনিকল লি. | পাবনা |
১৪ | ঝিল-বাংলা চিনিকল লি. | দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর |
১৫ | রংপুর চিনিকল লি. | মহিমাগঞ্জ, গাইবান্ধা |
ওয়াসা (Wasa-Water and Swearage Authority)
পানি সরবরাহ এবং নর্দমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ।
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (BCIC)
বাংলাদেশে রাসায়নিক শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনে BCIC অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৯৭২ সালে BCIC প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সে সময় এটি (১) বাংলাদেশ সার, রসায়ন ও ভেষজ শিল্প সংস্থা (২) বাংলাদেশ কাগজ বোর্ড (৩) বাংলাদেশ টেনারিজ কর্পোরেশন এ তিনটি সংস্থায় বিভক্ত ছিল। পরবর্তীতে এ তিনটি সংস্থাকে একত্রিত করে BCIC প্রতিষ্ঠা করা হয়। BCIC বাংলাদেশের চামড়া শিল্প, কাগজ শিল্প, ভেষজ পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক সার প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা, মানোন্নয়ন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কার্যাবলি পালন করে থাকে । বর্তমানে এর অধীনে ৩০টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। বিদেশের সাথেও এ সংস্থার সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনে BCIC পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (BPC)
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পর্যটন শিল্পের উন্নত প্রসার ও বিকাশে সরকার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেছে। এ কর্পোরেশনের প্রধান লক্ষ্য ও কর্মসূচি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় স্থান সমূহ চিহ্নিত করা এবং প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার জন্য সেগুলোর সংস্কার, উন্নয়ন, সময়োপযোগী যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য পুস্তিকা, পোস্টার, স্পটসমূহের পরিচিতিমূলক হ্যান্ডবিল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে থাকে। এসব কাজের জন্য ঢাকায় এর কেন্দ্রীয় দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হলেও কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, রংপুর, সিলেট বিভিন্ন স্থানে এর শাখা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পট গুলোতে অভিজাত হোটেল, রেস্তোরা ও ক্রীড়াকেন্দ্রও স্থাপিত হয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পটগুলো হলো কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, জাফলং, রাঙামাটি, সিলেট, বাগেরহাট, কুমিল্লার ময়নামতি, দিনাজপুর।
ডাক যোগাযোগ (Postal Communication )
মানব সভ্যতার এক বিশেষ অবদান হচ্ছে ডাক ব্যবস্থা। প্রতিটি দেশেই ডাক ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে ডাক বিভাগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এর শাখা বাংলাদেশের গ্রামে- গঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বস্তুত বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার প্রায় ৮০০০ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারনের অবিরাম সেবা করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার রাজধানীর সাথে সকল জেলা সদর এবং জেলা সদরের সাথে সকল থানা সদরে ডাক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ জন্য ঢাকা থেকে সকল জেলা সদর ও জেলা সদর থেকে থানা সদরে সরাসরি মেইল ব্যাগ প্রবর্তনের মাধ্যমে নূন্যতম সময়ে ডাক আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জনগণের কল্যাণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বেশকিছু সার্ভিস বা সেবা প্রদান করে:
১. সাধারণ চিঠি: বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৩ টাকা ফি নিয়ে সাধারণ চিঠি বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের প্রাপকের নিকট পৌঁছে দেয়।
২.পার্সেল: পার্সেলের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট পরিমাপের পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো যায় । পার্সেল রেজিস্ট্রিকৃত এবং বিমা করা যায়।
৩. মানি অর্ডার: মানি অর্ডারের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে যেকোনো স্থানে টাকা প্রেরণ করা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরিজীবিদের জন্য এটি খুবই সাহায্যকারী।
৪. পোস্টাল অর্ডার: অর্থ হস্তান্তরের জন্য ডাক বিভাগে পোস্টাল অর্ডার বিক্রয় এবং ভাঙানোর ব্যবস্থা রয়েছে ।
৫. টেলিগ্রাফ: ডাক বিভাগের পুরাতন একটি সেবা হচ্ছে টেলিগ্রাফ। বর্তমানে অবশ্য টেলিগ্রাফ ব্যবহার কম হয়ে থাকে ।
৬. ডাকঘর সঞ্চয়পত্রঃ ডাক ঘর সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিত্তিতে জমা রেখে সুদ প্রদান করে।
৭. স্ট্যাম্প: জমি, ফ্ল্যাট, দোকান ক্রয়-বিক্রয়, চুক্তি ইত্যাদি কাজে দলিল লিখনে স্ট্যাম্প ব্যবহৃত হয়, ডাক বিভাগ এটি বিক্রয় করে থাকে ।
৮. প্রাইজবন্ড ক্রয়-বিক্রয়: বিভিন্ন উপহার এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে ড্র-এর মাধ্যমে জনসাধারণকে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ডাক বিভাগে প্রাইজবন্ড ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা আছে ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে (BR)
বাংলাদেশের রেলপথের পরিমাণ অল্প হলেও তা এদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেলপথ দেশের প্রধার শহর, বন্দর, বাণিজ্য ও শিল্প কেন্দ্রের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংযোগ রক্ষা করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস অত্যন্ত পূরাতন। এটির যাত্রা শুরু হয় ১৫ই নভেম্বর ১৮৬২ সালে। রেলওয়ে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের অধীন। আর ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন মহাপরিচালক । বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধরনের রেলপথ চালু আছে। পথগুলো হচ্ছে-মিটারগেজ রেলপথ, ব্রডগেজ রেলপথ ও ডুয়েলগেজ রেলপথ। যমুনা নদীর পূর্বাংশে মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজ এবং পশ্চিমাংশে ব্রডগেজ রেলপথ চালু আছে। যমুনা সেতু চালুর পূর্বে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৭৬৮ কি.মি. । বর্তমানে রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৫৫ কি.মি. এবং প্রায় ৩৪,১৬৮ জন কর্মরত আছে। এর মধ্যে ৬৬০ কি.মি. ব্রডগেজ (বেশিরভাগ পশ্চিমাঞ্চল), ১৮৩০ কি.মি. মিটারগেজ (বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় এবং পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত) এবং ৩৬৫ কি.মি. ডুয়েল গেজ। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর পূর্বে বিচ্ছিন্ন পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে যুক্ত হয় ।
উন্নত সেবা প্রদান করার জন্য রেলপথকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম অঞ্চল। দুটি অঞ্চলে দুজন ব্যবস্থাপক থাকেন যিনি মহাপরিচালকের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। প্রত্যেক অঞ্চলে দুটি ওয়ার্কসপ আছে; একটি পাহাড়তলী এবং অন্যটি সৈয়দপুরে অবস্থিত। রেলওয়ের নিজস্ব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাটল ট্রেন সেবা থেকে শুরু করে যাত্রী সেবা এবং পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। এত সেবা প্রদান করার পরেও রেল এখনো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হতে পারে নাই। এখনো সরকারকে এ খাতে ভর্তুকী দিতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রেলপথ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো হলো; ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা, ত্রুটিপূর্ণ সংকেত পদ্ধতি, ইঞ্জিন ও বগির অপ্রতুলতা, ইঞ্জিন ড্রাইভার সংকট, ওয়াগন স্বল্পতা, দুর্ঘটনা, রেলওয়ে স্লিপার, রেলওয়ে পাথরের অপর্যাপ্ততা, দুর্নীতি ইত্যাদি।
তবে আশার কথা বর্তমানে সরকার এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। কিছু কিছু রেলপথ যেগুলো বন্ধ ছিল তা সংস্কারের ব্যবস্থা করেছে। নতুন লাইন স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ভারত থেকে নতুন কোচ আমদানি করেছে এবং জাইকার সাথে মেট্রো রেলের চুক্তি হয়েছে। এগুলো সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করতে পারবে।
যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকে এবং দেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের যৌক্তিকতা আলোচনা করা হলো:
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত কারণে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এ ব্যবসায় প্রয়োজনীয়তার যথাথতা রয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কারবারের প্রচলন বেশি। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। তার পরেও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ,সম্পদসমূহের সদ্ব্যবহার ও সুষম বন্টনের ক্ষেত্রে অপিরিসীম অবদান রেখেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় নিম্নোক্তভাবে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায় (PPP) বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে প্রায় ৫০ টি প্রকল্প এই ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় যার মধ্যে ছিল টেলিযোগাযোগ, বন্দর নির্মাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। সরকারও তাদের বাজেট পরিকল্পনায় সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক (PPP) ব্যবসা বলতে কোন সরকারি সেবা বা বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেটি অর্থায়ন ও পরিকল্পনা করে সরকার এবং এক বা একাধিক প্রাইভেট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসায় বলতে বুঝায় পাবলিক কর্তৃপক্ষ এবং প্রাইভেট পক্ষের মধ্যে এমন একটি চুক্তি যেখানে বেসরকারি পক্ষ কোন পাবলিক সেবা দেয় বা প্রকল্পের যাবতীয় আর্থিক এবং কারিগরী ঝুঁকি বহন করে। কিছু কিছু সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসায়ে সেবা ব্যবহারের ব্যয় শুধূমাত্র এর ব্যবহারকারীরা বহন করে কোন কর প্রদানকারী বহন করে না। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী মূলধন বিনিয়োগ বেসরকারি পক্ষ বহন করে এবং সেবা সরবরাহের ব্যয় সম্পূর্ণ বা আংশিক সরকার বহন করে। অনেক সময় সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এককালীন অনুদান প্রদান করে মূলধন ভর্তুকী হিসাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার মুনাফা জাতীয় ভর্তুকী প্রদান করে সাহায্য করে থাকে। মুনাফা জাতীয় ভর্তুকী বলতে একটি নির্দিষ্ট সময় কর সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে GDP এর লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮% – ১০% । এ লক্ষ অর্জনের জন্য সরকার শক্তি উৎপাদন, জ্বালানি, বন্দর, যোগাযোগ, খাবার পানি, বর্জ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী খুঁজছে। কারণ এ প্রকল্পগুলো অত্যধিক ব্যয়বহুল। এগুলো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় । তাই সরকারি-বেসরকারিভিত্তিক (PPP) ব্যবসায় প্রয়োজন।