hsc

ভাষারীতি ও ভাষারূপ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা বাংলা ২য় পত্র | - | NCTB BOOK
1.3k
1.3k

বাংলা ভাষা প্রধান বা মৌলিক রূপ দুইটি । যথা- লৈখিক রূপ এবং মৌখিক । লেখার রীতি ভাষার মৌলিক রীতি। বাংলা চাষার প্রকারভেদ বা রীতিভেদ নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো যায় - লৈখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) সাধু, ২ ) চলিত

মৌখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) চলিত ২) আঞ্চলিক ( উপভাষা )

ক) সাধু রীতি

সংস্কৃত -ব্যতপত্তি সম্পন্ন মানুষের ভাষাকে " সাধু ভাষা " বলএ প্রথম অভিহিত করেন রাজা রামমোহন রায় ।বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে সাধু রীতির প্রচলন ছিল ।

খ) চলিত রীতি

সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কে " চলিত ভাষা " বলা হয় । চলিত ভাষার আদর্শরুপে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রতিম ভাষা । চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রমিত উচ্চারণ । কলকাতা অঞ্চলের মৌখিক ভাষাকে ভিত্তি করে চলিত ভাষা গড়ে উঠেছে । উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে ভাবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যয়ের হাতে চলিত রীতির প্রথম ব্যবহার হয় । তারপর প্যারীচাঁদ মিত্র ও কালী প্রসন্ন সিংহের রচনায় এর ক্রমবিকাশ ঘটে । আলালের ভাষা ছিল মূলত সাধু ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেবল কিছু বর্ণ্না এবং কোনো কোনো সংলাপ চলিত রীতির ; অপরপক্ষে, হুতোম লেখা হয়েছিল পুরোপুরি চলিত রীতিতে । প্রম্থ চৌধুরীর "সবুজপত্র "কে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালের দিকে এ গদ্যরীতির সাহিত্যিক স্বীকৃতি ও পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। প্রম্থ চৌধুরী "বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক " বলা হয় । তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করেন ।

প্রমিত চলিত ভাষারীতি

973
973

 প্রমিত চলিত ভাষারীতি:

 দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা ও শিক্ষা ও অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি। এই ভাষায় যেমন সাহিত্য সাধনা বা লেখালেখি করা যায়, তেমনি কথা বলার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সকলে বোঝে বলে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন কোনো অনুষ্ঠানে বা অপরিচিত জায়গায় বা আনুষ্ঠানিক (formal) আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এই ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, এই রীতি লেখ্য ও কথ্য উভয় রীতিতেই ব্যবহৃত হয়।

 বাংলা প্রমিত চলিত ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাগীরথী- তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষার উপর ভিত্তি করে। তবে, পূর্বে এই ভাষা সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তখন কেবল সাধু ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করা হতো। এ কারণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকাররা সাধু ভাষায় উপন্যাস, নাটক ও গল্প লিখেছেন। পরবর্তীতে, প্রমথ চৌধুরী চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার উপর ব্যাপক জোর দেন এবং তাঁর ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪) পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

Content added By

সাধু রীতি

1.4k
1.4k

সাধু রীতি:

 পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা ও অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়।

 

Content added By

আঞ্চলিক কথ্য রীতি

929
929

দেশ-কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ঘটে । অঞ্চল বিশেষের মানুষের মুখের ভাষাকে উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা বলে ।

- মেগো" শব্দের আঞ্চলিক রূপের শিষ্ট পদ্যরূপ"মোদের " ।

আঞ্চলিক কথ্য রীতি:

বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাকেই আঞ্চলিক কথ্য রীতি বা আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। সকল ভাষাতেই আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো কোনোভাবেই বিকৃত ভাষা নয়, এগুলো শুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক ভাষারীতি।

 

 প্রকৃতঅর্থে, প্রমিত চলিত ভাষারীতিও একটি অঞ্চলের কথ্য রীতির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেবল- ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে তখন প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অন্যগুলোকে প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

 

 তবে আঞ্চলিক কথ্য রীতি লেখ্য ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সকল অঞ্চলের মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা বুঝবে না। তবে কোনো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কোনো সাহিত্য রচিত হলে সেখানে আঞ্চলিক ভাষা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পূর্ণ বা পুরোটুকুই আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি শিল্পসম্মত উপন্যাস হলো হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি”।

সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য

1k
1k

সাধু ও চলিত রীতি পার্থক্য

সাধু রীতি

চলিত রীতি

পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনশীল ।
গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের পরিচায়ক সংক্ষিপ্ত , সহজবোধ্য ও কৃত্রিমতা বর্জিত ।
তৎসম শব্দ বহুল । তদ্ভব শব্দবহুল ।
শুধু লৈখিক রূপ আছে লৈখিক ও মৌখিক উভয় রূপ আছে।
নাটকের সংলাপ , বক্তৃতা এবং আলাপ - আলোচনার অনুপযোগী । নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা এবং আলাপ-আলোচনার উপযোগী ।
সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে । ক্রিয়া, সর্বনাম ওয়নুসর্গের পূর্ণ্রুপ ব্যবহ্নত হয় । সর্ব ও ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত ও সহজতর রূপ লাভ করে । ক্রিয়া ,সর্বনাম ও অনুসর্গের রূপ সংক্ষিপ্ত ।
Content added || updated By
Promotion